![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার লেখালেখির পেছনে চালিকাশক্তি- সর্বগ্রাসী পুঁজিবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে মানবিক সমাজের আকাঙ্খা ও শ্রেনীদর্শন।
মোবাইল ফোন আসার আগে মানুষের সাথে মানুষের সাথে যোগাযোগটা খুব কঠিন ছিলো। আমরা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তাদের বাসায় যেতাম। প্রায়ই দেখতাম বন্ধু বাসায় নেই, মাত্র বেরিয়ে গেল, আমরা বন্ধুকে খুজতে বেরিয়ে পড়তাম। আবার অনেক সময় বন্ধুর বাবা রাগী সুরে বলতেন ও তো এখন পড়তে বসেছে তোমরা পরে এসো। আমরা বিরস মনে ফিরে আসতাম।
তখন মামা বা খালাদের হাতে দুটা ডাব অথবা এক পাতিল রসমালাই হাতে করে বাসায় বেড়াতে আসাটা খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা ছিলো। দেখা যেতো বাসায় তখন ভালো কোনো রান্না নেই। মা’রা আমাদের হাতে একশ টাকা একটা নোট দিয়ে বলতেন যা তাড়াতাড়ি এক কেজি গরুর মাংস কিনে নিয়ে আয়। তখন গরুর মাংসের কেজি ছিলো আশি টাকা। আমার এক ভ্যাগাবন্ড বেরসিক মামা ছিলেন যিনি আকস্মিক রাত বিরাতে এসে হাজির হতেন। তার কপালে কখনো গরুর মাংস জুটতো না। আলুর ভর্তা বড়জোড় ডিম ভাজি ছিল তার বরাতে। এভাবে হঠাৎ বাসায় আত্মীয়স্বজন চলে আসাটা ছিলো আমাদের কাছে এক অনাকাঙ্খিত আনন্দ। আমরাও এমনি করে হঠাৎ মামা খালাদের বাসায় যেয়ে তাদের চমকে দিতাম।
সে যুগে আমরা আমাদের প্রেমিকাদের চিঠি লিখতাম। দুরুদুরু বুকে সুন্দরীতে হাতে চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে চ্যাঙড়া ছেলেরা সাবালক হতো। প্রেমিকার চিঠি বুক পকেটে নিয়ে সাইকেলে ছুটে যাওয়ার অনুভূতির কাছে ফেরারী, মার্সডিজও নস্যি। তখন চিঠি পাঠানোটা কোন সাদামাটা ব্যাপার ছিলো না। প্রেমিকার বদরাগী বাবার অগ্নিদৃষ্টি ও পাড়ার বড় ভাইদের হুমকি উপেক্ষা করে চিঠি পাঠাতে রীতিমত মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হতো। শতশত বার পড়া চিঠি গুলো ছিলো একেকটা কবিতার মতো, যারা পড়া শেষ হয়ে যাবার পর অতি যত্নে আশ্রয় নিতো আমাদের বইয়ের ফাঁকে ও মনের গহীনে।
তারপর চলে এলো মুঠোফোনের যুগ। আমরা এখন আর বন্ধুদের খুজতে তাদের বাড়িতে যাই না। যেকোন ছোটখাটো প্রয়োজন ফোনেই সেরে নেই। এখন আর বন্ধুর বাবার রাগী চেহারাও দেখতে হয় না। সময় অসময়ে কেউ এখন আর চলে আসে না। সবাই ফোন দিয়ে আসে। হঠাৎ করে ডাব বা রসমালাইয়ের হাড়ি হাতে মামা খালাদের আসার পথও বন্ধ। তাতে করে ডাব বা রসমালাইয়ের বিক্রি কমেছে কিনা জানি না, কিন্তু চমকে যাওয়ার যে আনন্দ তা আজ আর পাওয়ার উপায় নেই। বেরসিক ভ্যাগাবন্ড মামাদের রাত বিরাতের উৎপাতও বন্ধ। আমরা আজ খুব সহজে বলে দেই “ আজ তো আমি খুব ব্যস্ত আপনি আরেকদিন আসেন”।
আমাদের প্রেমিকারাও এখন আর আমাদের চিঠির অপেক্ষায় থাকে না। চিঠির মতো করে কবিতাগুলো আর লেখা হয় না। আজ আধুনিক যুগে সব পরিপাটি ও সুন্দর ছকে বাধা। কোন স্থুল আবেগের এখানে কোন জায়গা নেই। আমাদের কবিতাগুলো সব হারিয়ে গেছে।
©somewhere in net ltd.