নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবেগ থাক হৃদয়ে, যুক্তি থাক কথায়-কাজে।

যাহার পা-দুটা আছে, সেই ভ্রমণ করিতে পারে; কিন্তু হাত দুটা থাকিলেই তো আর লেখা যায় না ! সে যে ভারি শক্ত। - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

জুনায়েদ রাহিমীন

জুনায়েদ রাহিমীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী, তুমি নারী হও!

০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:১২

তথাকথিত নারীবাদী সমাজের প্রধান সমস্যা হচ্ছে এরা পুরুষদের প্রতিযোগী ভাবে এবং নিজেদের উন্নয়নের স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে পুরুষকেই সামনে রাখে। নারী-পুরুষ কখনো প্রতিযোগী না, বরং একে অপরের পরিপূরক এই সহজ ব্যাপারটা তাদের মাথায় ঢুকে না। প্রতিযোগী মনোভাবের কারণে এই অকালতত্ত্বজ্ঞানী নারীবাদী সমাজ কিছু হাস্যকর ধারণা নারীদের মন, মনন এবং মগজে ঢুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেমন নারী পুরুষ সমান সমান তাই পুরুষ সমাজ যা পারে নারী সমাজও তাই তাই সমানভাবে পারবে। নারী পুরুষের সব কাজ সমানভাবে পারবে এবং পুরুষ নারীর সব কাজ সমানভাবে পারবে এমনটা সত্যি হলে প্রকৃতিতে নারী-পুরুষ দুই প্রজাতির অস্তিত্ব দরকার ছিলো না। প্রাণী সমাজ একলিঙ্গিক হয়ে যেতো। প্রকৃতির উদ্দেশ্য নিশ্চই তা না। নারী তার ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং পুরুষ তার ক্ষেত্র তৈরি করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজেদেরকে সেরা এবং পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে তুলে ধরবে প্রকৃতির চাওয়া নিশ্চই এমন। নইলে শুধু পুরুষ কিংবা শুধু নারী পাঠিয়েই মানব সমাজ গঠনের কাজটা খুব হয়ে যেতো!



নারী এবং পুরুষ দুইয়ের অবস্থান সমাজে সমান সমান হওয়া উচিত তা মানি। নূন্যতম বোধ থাকলে সেটা মানতে হয়। তবে সমান সমান হওয়ার প্রচলিত যে মানদণ্ড তাতে আমার আপত্তি আছে। একটা ছেলে বাইরে গেলে, একটা মেয়েকেও বাইরে গিয়ে তার সমান হতে হবে, একটা ছেলে হুন্ডা হাঁকায় চললে তার সমান হতে হলে একটা মেয়েকেও তাই পারতেই হবে এসব বাঁধাধরা মানদণ্ডে কিছু মৌলিক সমস্যা আছে। যদি নারীবাদী সমাজ নারী-পুরুষ সমান সমান বলে ধরে নেয় এবং এই সমান সমান হতে হলে উভয়কেই একই কাজে সমানভাবে পারদর্শী হতে হবে এমন ধারণা নিয়ে বসে থাকে তো তাদের ধারণা আর সমান সমান হওয়ার যে শর্ত তা পরস্পরবিরোধী হয়ে যায়। কারণ, তাত্ত্বিকভাবে একটা মেয়ে ছেলেদের মতো সব কাজ সমানভাবে করতে পারলেও একটা ছেলের পক্ষে কখনোই কিছু কাজ করা সম্ভব না। সন্তান ধারণ, লালন পালনের কিছু সাধারণ ব্যাপার সহ অনেক কিছুই একটা ছেলের পক্ষে সম্ভব না। তাহলে সমান সমান হওয়ার শর্তে ছেলেরা কখনোই পেরে উঠে না অর্থাৎ মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে উপরে।



আসলেই কি তাই? আমাদের সমাজে কি এমনটাই সত্য? পুরুষরা নারীদের সব কাজ সমান কিংবা আংশিক না পেরেও যদি নারীর সমান হতে পারে নারীকে কেন পুরুষের মতো সব কাজ পারতেই হবে? সমান হওয়ার এই অদ্ভুত ধারণা কার মাথায় প্রথম আসছে জানি না। আজকে প্রথম আলোয় একটা ছবি দেখলাম, হুন্ডার সামনে মেয়ে, পিছনে ছেলে বসায় নারী উন্নয়নের ধারা বুঝানো হচ্ছে। এখানেও সেই প্রতিযোগীতার মনোভাব। পুরুষের মতো কিছু করতে পারলেই নারী এগিয়ে যাচ্ছে নয়তো না- এই ধারণা মোটেও ঠিক না। এই ধারণা মেয়েদের মনে ঢুকায় দিয়ে একটা কথাই বুঝানো হচ্ছে মেয়ে তুমি ছেলে হও, নয়তো তুমি পিছিয়ে পড়া মানুষ। তুমি হুন্ডা চলাও নয়তো তুমি পিছিয়ে পড়া মানুষ। কেন? হুন্ডা চালাতে পারা, ছেলেদের মতো শারীরিক পরিশ্রম করতে পারা ইত্যাদি একটা মেয়ের গুণ হতে পারে, আপত্তি নাই। কিন্তু এসব না পারলে একটা মেয়েকে পিছিয়ে পড়া মেয়ের তকমা গায়ে দিয়ে দেয়া হবে কেন? আমার মা তো দুই যুগ ধরে সংসারের প্রাণ হয়ে সংসারটা কে নিবিড় যত্নে আগলে রেখে সামনে আগায় নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আর দশটা পরিবারের মা'ও তাই করে যাচ্ছে। হয়তো বাইরে চাকরি করে কিংবা ঘরে মমতার পসরা সাজায়। তাতে আমাদের এই মায়েরা পিছিয়ে পড়া নারী হয়ে গেলো? যে মেয়েটা হুন্ডা হাঁকাচ্ছে সেই শুধু উন্নত নারী, এগিয়ে যাওয়া নারী, আর আয়েশা ফয়েজের মতো রত্নগর্ভা মায়েরা যিনি পুরুষের মতো কিংবা একজন পিতার মতো করে অনেককিছুই করতে পারেন নাই তবে একজন মায়ের মতো করে তার চেয়ে বেশি কিছু করে গেছেন। এরা তো নারীবাদীদের চোখে শুধুই নারী। কারণ এরা পুরুষের মতো করে নিজেদেরকে এগিয়ে নেয় নাই। এগিয়ে নিয়ে গেছে মায়ের মতো, নারীর মতো। মেয়েদেরকে কে বুঝাবে নারী হতে পারা পুরুষ হতে পারা থেকেও অনেক বড় ব্যাপার, অনেক চমৎকার ব্যাপার! তারা নিজেদের নারীত্ব নিয়ে অস্বস্তিবোধ করে, নারীসত্বার মতো শক্তিশালী স্বত্বা আড়াল করে স্বকীয়তা হারায়। নারীবাদী বুলির প্রভাবে নারীসত্বা, মাতৃসত্ত্বাকে নিজেদের দুর্বল সত্ত্বা ভেবে নিয়ে পুরুষের মতো হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে!



নারীদের কি নিজেদের কোন স্বকীয়তা নাই? একজন পুরুষ তো সন্তানধারণে অক্ষমতা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে না। তবে একজন নারী কেন পুরুষের মতো সব কাজ না পারলে হীনমন্যতায় ভুগবে? পুরুষ তার ক্ষেত্রে সেরা, নারী তার ক্ষেত্রে সেরা এমনটা ভাবলে কি খুব ভুল হয়? একজন নারী, পুরুষ যা পারে তা করতে পারলে ভালো, তবে না পারলে সেটা খারাপ, সেই নারী পিছিয়ে পড়া নারী এসব ধারণা বাদ দেয়া উচিত। পুরুষ সমাজ নারী সমাজের অনেক কাজই করতে পারে না, পারবেও না তাতে পুরুষ সমাজের সমান সমান হওয়ায় কোন সমস্যা হয় না শুধু মেয়েদের বেলাতেই সমান সমান হতে হলে ছেলেদের সব কাজ করতে পারার শর্ত চলে আসে! দিস ইজ নট জাস্টিস! নারীরা নারীর মতো অনবদ্য হোক।



নারীবাদী সমাজের জনপ্রিয় বুলি- "নারী থেকে মানুষ হয়ে উঠো" কথাটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নারীরা বলতে শিখুক- "আমরা নারী, আমরা অনবদ্য। নারীকে মানুষ ভাবতে শেখো"

যেদিন নারীরা সমান সমান হওয়ার খেলায় পুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় যাবে না, পুরুষের কাজকে স্ট্যান্ডার্ড মেনে সামনে আগানোর চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেরাই নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে নিয়ে সামনে আগাবে, নারীত্বের গর্ব নিয়ে সেদিনই নারী-মুক্তি ঘটবে। তার আগ পর্যন্ত পত্রপত্রিকায় পুরুষেরাই ঠিক করে দিবে কী করলে নারী এগিয়ে যাবে!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:১৭

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
কঠিন ব্যাপার-স্যাপার কম বুঝি আর কি মনে কর !

০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৮

জুনায়েদ রাহিমীন বলেছেন: :-0 :P

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৭

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
যেসব কাজ মেয়েরা বেশি করে সেগুলোকে কেন ছোট মনে করা হয়। মেয়েরা এই টাইপের গান পছন্দ করে, এই টাইপের মুভি তো মেয়েদের জন্য, এই মুভি মেয়েদের ভাল লাগবে না, মানে বুঝানো হয় যে মেয়েদের সে স্ট্যান্ডার্ড নেই। পিঙ্ক পছন্দ মানেই টিপিকাল? মেয়েরা তো কখনও গিয়ে বলেনা, ও তো ছেলে তাই ওর ব্ল্যাক পছন্দ অথবা ইত্যাদি।

পোস্ট মোটামোটি ভাল লাগল। আমার কথা হল, ফর এক্সাম্পল বাইক সব ছেলেও চালায় না, যাদের ইচ্ছা ও সুযোগ আছে তারা। কোনো মেয়ের যদি মন চায় চালাবে, প্রবলেম হল যখন সেখানে বাঁধা আসে। ছেলে মেয়ে বড় কথা না, ননহার্মফুল কাজে যেন বাঁধা না আসে।

পুরুষের মতো কিছু করতে পারলেই নারী এগিয়ে যাচ্ছে নয়তো না- এই ধারণা মোটেও ঠিক না। সহমত।

০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪১

জুনায়েদ রাহিমীন বলেছেন: "যেসব কাজ মেয়েরা বেশি করে সেগুলোকে কেন ছোট মনে করা হয়।"
এটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে রুচিগত পার্থক্য থাকতে পারে। আমরা ভিন্ন রুচিকে সহজে সম্মান করতে পারি না। এটা মানুষ হিসেবে আমাদের সীমাবদ্ধতা। তবে মেয়েরা যা করে তার সবকিছুরই যে সমালোচনা হয় তা কিন্তু না।

"মেয়ের যদি মন চায় চালাবে, প্রবলেম হল যখন সেখানে বাঁধা আসে। ছেলে মেয়ে বড় কথা না, ননহার্মফুল কাজে যেন বাঁধা না আসে।"

আমার লেখায় কিন্তু মেয়েদেরকে কোথায় বাঁধা দেয়া উচিত কোথায় উচিত না এসব নিয়ে কোন কথা নাই। লেখার উদ্দেশ্য অনেকটা এমন- একটা মেয়ে হয়তো বাইক চালাতে পারে না, তার ইচ্ছাও নাই। সমাজের একটা অংশ দেখা যাবে, বাইক চালাতে পারে এমন একটা নারীকে ওই বাইক চালাতে না পারা নারীর সাথে তুলনা করে তাকে অনগ্রসর নারী বলে প্রমাণ করতে চাইবে। এটা ঠিক না। বাইক সব ছেলে না চালালেও সাধারণত ছেলেরা চালায় বলে ছেলের সমমানের হতে হলে একটা মেয়েকে বাইক চালাতে হবে কিংবা ছেলেরা বেশি করে এমন কোন কাজ করলেই কেবল একটা মেয়ে উন্নত, আধুনিক, অগ্রসর এমন বাধ্যবাধকতা আরোপ করাতেই আমার সমস্যা।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! :)

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৩১

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
আমার এক ফ্রেন্ডকে বললাম, নিউরোলজিস্ট হব। সে আমাকে বলে, গাইনেকোলিস্ট হ, তুই মেয়ে! তুই পারবি না!

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪৪

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
আমি আপনার পোষ্ট বুঝেছি। আমি শুধু ওই ব্যাপারটা অ্যাড করলাম।

আমি মাঝে মাঝে ফেইসবুকে বিভিন্ন মানুষকে দেখে আপনার কথাগুলো ভাবি।

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:১০

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: নারি দিবস উপলক্ষ্য কবিতা
************ পরিবেশ বন্ধু

জাগ ভগ্নি জায়া নারী
সকল অসভ্যতাকে দিয়ে পাড়ি
শোষক বঞ্চনার শিখল ভেঙ্গে
জাগ্রত আলোকিত চেতনার সঙ্গে
নারিরা গড়িতে জানে নব সমাজ
দেখিব নারির সভ্য কাজ
নারি মা , নারি বোন ,নারি হয় ঘরণী
স্নেহ মায়া মমতায় তারা সমাজের সঞ্জীবনী ।
নারি পরিবার এর সুপ্ত বাধন
তারা শান্তি ও সেবায় কতনা আপন
যুগে যুগে মহীয়সী নারির অবধান
আনে স্বপ্ন , ভেঙ্গে বাধা ব্যাবধান ।।

১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩৯

জুনায়েদ রাহিমীন বলেছেন: আরো বেশি বেশি কবিতা পড়েন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.