নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চারিপাশ, আমার ভাবনা, আমার অনুভুতি,আমার চাওয়া, আমার অভিযোগ, আমার আত্মস্বীকারোক্তি, গঠনমুলক সমালোচনা

রহিম রুমন

বাচ্চা সাংবাদিক।

রহিম রুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মরারে মারো কেন? নড়েচড়ে তো না !!!

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ৩ এবং ৪ নং রোডের [মেইন রোড] মাঝামাঝি একটা গাছ তলায় বসে জীবিকার তাগিদে কারো কাছে হাত না পেতে ছোট্ট একটা পান সিগারেটের বক্স নিয়ে ব্যাবসা করছিলেন এক প্রতিবন্দি লোক । সিটি কর্পোরেশনের নতুন আইনের কারনে উচ্ছেদ করা হয়েছে তার দোকান, আর এই দোকান উচ্ছেদ অভিযানের নামে যেন লোকটির পেটে লাথি মেরে না খাইয়ে মারার ব্যাবস্থা করেছে সিটি কর্পোরেশন ।
গলায় দড়ি দেওয়া লাগবো না হয় ভিক্ষায় নামা লাগবো...
ঠিক এমন করে-ই বলছিলেন প্রতিবন্দি এক গরিব পান সিগারেট বিক্রেতা নামঃ আলাউদ্দিন বয়স ৫৫ আর তার সারা শরীর ভরে আছে হাজার হাজার টিউমার তিনি সোজা হয়ে দাড়াতেও পারেন না কারন তার বয়সের ভার আর এক ভয়াবহ রোগ [টিউমার] এর কারনে , এক কথায় তিনি পুরোপুরি উপযুক্ত ভিক্ষা বৃত্তির জন্য, যদি সে আপনার কাছে ভিক্ষা চায় আর আপনি যদি যে কোন কারন বশত তা দিতে না পারেন খুব লজ্জায় পড়ে যাবেন , [যদি আপনার সামান্য পরিমানে ও বিবেক থেকে থাকে] , তার পরেও লোকটি জীবন সংগ্রামের এক লড়াকু সৈনিক তিনি ভিক্ষা করেন না, তার থেকে অনেক কম বয়সী এবং তার থেকে সুস্থ অনেক ভিক্ষুক আমি অহরহ দেখি এমন কি প্রতিনিয়তই দেখি , কিন্তু লোকটি কাজ করেই খান চাইলেই তিনি তার এই পেশা পরিবর্তন করতে পারেন এবং ভিক্ষার মতো একটি বিনা পুজির কাজ-ও করতে পারেন সেটা তার জন্য খুব সহজ এবং লাভজনক ও বটে । কিন্তু লোকটি তা করেন না কারন তার আত্মসম্মানবোধ তাকে এই [ভিক্ষার] কাজের অনুমতি দেয়না , ভালোই যাচ্ছিলো লোকটির দিনগুলি আয় রোজগার ও যা করতেন ভালোই চলে যেত তার পরিবারের তিন ছেলেমেয়ে আর স্ত্রী কে নিয়ে, লোকটির দুই ছেলের মধ্যে একটি তার মতো প্রতিবন্দি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি তিনি-ই, মাঝপথে বাধ সাধল সিটি কর্পোরেশন, সাম্রতিক সময়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নতুন আইন করেছে ফুটপাতের সব দোকান উচ্ছেদ করার জন্য,উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা ও হয়েছে কিন্তু এই এলাকায় এই উচ্ছেদ অভিযানের নামে শুধুমাত্র এই মানুষটিকে –ই উচ্ছেদ করা হয়েছে !!!
অবাক করা এক কাহিনি পাঠক, আপনি চিন্তা ও করতে পারবেন না যে এই অসহায় লোকটির দোকান ছাড়া এখানের সব দোকান-ই আগের মতো আছে ৪নং রোডের দোকানটা আছে ৩নং রোডে কোন দোকান ছিলনা এখনো নেই ২নং রোডের দোকানটা ও আছে কিন্তু উচ্ছেদ হয়েছে শুধুমাত্র তার দোকানটা মাত্র !!! এর কারণটা জানতে চাইলাম আমি তিনি আমাকে বললেন যে এই এলাকার কিছু চ্যালা-ব্যালা তার কাছে চাঁদা নিতো এই প্রতিবন্দি ব্যাক্তিতির কাছথেকে!!! তাদের হাতে পায়ে ধরে কোন লাভ হয়নি একপর্যায়ে তিনি এই এলাকার কমিশনারের দ্বারস্থ হন কিন্তু তাতে কোন কাজ-ই হয়নি বরং কমিশনার সাহেব তাকে এখান থেকে দোকান তুলে নেবার পরামর্শ দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের নিয়মের বুলি দিয়ে , অথচ এই কমিশনার ই হয়তো ক’দিন আগে তাকে নানা আশার বানি দিয়ে তার কাছ থেকে ও ভোট নিয়েছিলেন কিন্তু তাতে কি ভোট শেষ হওয়ার পরে তো আর সেটা মনে রাখার দরকার হয় না রাজনৈতিক সব নেতাদের –ই তো এটা একটা চিরচেনা রূপ , যাহোক লোকটি এর পরে পুলিশের দ্বারস্থ-ও হন কিন্তু পুলিশ ওতো আর কম কিছু না , তাকে আশা দিয়েছিলেন যে তারা বিষয়টা দেখবেন হয়তো তারা বিষয়টি পরে ভুলে গিয়েছেন ভেবে অসহায় লোকটি আবার তাদের [ পুলিশের] কাছে যান কিন্তু এবার যাওয়ার পরে পুলিশ তাকে আরও বেশি অবাক করে দিয়ে বলেন যে আপনি নানক সাহেবের [এম পি] কাছথেকে একটা অনুমতি নিয়ে আসেন তখন আর আপনাকে কেউ কিছু বলার থাকবে না অন্যথায় আপনি দোকান বন্ধ করেদিন!!!!!!
পাঠক , আপনি বলুন এখন তাহলে এই অসহায় লোকটির কি করে খাওয়া উচিৎ ভিক্ষাবৃত্তি ?
পাঠক হয়তো ভাবছেন আমি কেন তার হয়ে কথা বলছি , পাঠকের অবগতির জন্য জানাতে চাই আমি তার দোকানের একজন নিয়মিত খদ্দের ছিলাম আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছে লোকটির আত্মসম্মানবোধ, , লোকটির ব্যাবসায়িক সততা আর তার অসহায়ত্ব, যে জন্য আমি তার দোকানের নিয়মিত খদ্দের হয়েছি, হঠাৎ একদিন তার দোকানটি নেই দেখে ভাবলাম হয়তো কাল খুলবে কিন্তু পরেরদিন ও তাকে পেলাম না, মনে মনে ভাবছিলাম কি হল, হঠাৎ ৩/৪ দিন পড়ে তার সাথে আমার দেখা দেখি লোকটি একটি ছোট ট্রে করে সিগারেট ফেরি করে বিক্রি করছে , আমি জিজ্ঞেস করলাম চাচা কি খবর আপনার দোকান বন্ধ কেন? তিনি বললেন যে সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা উঠিয়ে দিয়েছে , আমি জিজ্ঞেস করলাম তাহলে এখন কি করবেন ? উত্তরে লোকটি বলল যে ‘‘ কি আর করার গলায় দড়ি দেওয়া লাগবো না হয় ভিক্ষায় নামা লাগবো ‘’ তাকে মিথ্যে সান্তনা দিয়ে বললাম চাচা সব ঠিক হয়ে যাবে গলায় দড়ি ও দেওয়া লাগবে না আর ভিক্ষায়ও নামা লাগবে না চাচা সান্তনা শুনে শূকরীয়া আদায় করলেন [আলহামদুল্লিলাহ] অসহায় এই লোকটির জন্য কি আমাদের কিছুই করার নেই? আছে অবশ্যয় আছে যেহেতু ২ এবং ৪ নং রোডে দোকান আছে, সুযোগ আছে ৩ নং রোডে তাকে দোকান করতে দেওয়ার যেহেতু সেখানে কোন দোকান নেই তাই লেখকের আকুল চাওয়া যেন এই অসহায় লোকটিকে ৩নং রোডে তার আগের বক্সটা নিয়ে বসতে দেওয়া হয় ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.