নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি হলো আমার জগত, আমার মানস ভ্রমণের অখন্ড মানচিত্র । কল্পনার চরিত্রগুলোকে আমি লেখার জগতে বাস্তবতার ন্যায় সদর্পে চারণ করাতে চাই। আমি তাদের হাসি কান্না সুখ দুঃখে তুলির আঁচড় ছুঁয়ে দিয়ে অপছন্দের আঁকগুলো ইরেজার দিয়ে ঘষে তুলে বসাতে চাই কল্পনার রঙ ।

শাফায়াত উল্লাহ রহমত

খুব জটিল,ভীষণ সহজ এবং আবেগী নিতান্তই সহজ-সরল খোলা মনের মানুষ...আমার অভিধানে কান্না বলে কিছু নেই, তবে কষ্ট পাই খুব সহজে... যে যা দেয় তা ফিরিয়ে দেই। সে যদি হয় ভালোবাসা, তবে ভালোবাসা, অবহেলা হলে অবহেলা, কষ্ট হলে কষ্ট... আমার এ নীতি থেকে আজ পর্যন্ত বিচ্যুত হইনি,হতে চাইও না...।

শাফায়াত উল্লাহ রহমত › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি একজন খাঁটি প্রকৃতি প্রেমিক..!!!

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩২

ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতির যে পরিবর্তন বোধকরি তা পৃথিবীর ২য় কোন দেশে নেই। আর সেই শৈশবকাল হতেই প্রকৃতিকে আমি বরাবরই খুব পছন্দ করি... কিন্তু কবে থেকে করি আজ হঠাৎ করে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম... মস্তিক বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে স্মৃতি হাতড়ে উওর দিল -

তখন আমি খুব ছোটো, ক্লাস থ্রী বা ফোরে পড়ি, স্কুল থেকে যাওয়া আমার প্রথম পিকনিক এর দিন ভোরবেলা একেবারে সূর্যোদয়ের সময় আমাকে ঘর হতে বের হতে হল গাড়ী ধরার জন্য। আমাদের বাড়ী হতে স্কুলের রাস্তা পূর্বদিকে তাই বের হতেই সূর্যেরপ্রথম আলো আমার চোখে এসে পরল, আর তাতে পূর্বাকাশের সোনালী আভা ছড়ানো রঙ আমার এত ভালো লেগেছিলো যে তারপরে আরও অনেক দিন আমি ভোর বেলা সেই আলোর প্রত্যাশায় পূর্বদিকে তাকিয়ে বসে থাকতাম, হয়ত সেদিনই আমি ভোরের প্রেমে পড়েছিলাম... আর তাই আজও সেই ভোরের আলো আমাকে টেনে নিয়ে বেড়ায়।

আর পাঁচটা মানুষের মত কিশোর বয়সে আমিও যখন যা দেখতাম তাই হৃদয়ে দাগ কেটে যেত... চোখে দেখা দৃশ্যটাই স্বপ্ন হয়ে ধরা দিত। একসময় স্বপ্ন দেখতাম রাস্তার উপরে দাঁড়িয়েগলায় ঝুড়ি বেঁধে বাদাম বিক্রেতা ছেলেটির মত বাদাম বেঁচব বলে, স্বপ্ন দেখতাম দুরন্ত কিশোর হয়ে পড়শীর গাছের আমগুলো কিভাবে চুরি করাযায়... স্কুল থেকে ফিরে বসার ঘরের চেয়ার এবং ছোট বোনের পুতুলগুলি কে কত বার যে ছাএ বানিয়ে পিটিয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। নদীর পাড়ে জেলেদের মাছধরার দৃশ্য দেখে কতবারইনা জেলে হতে চেয়েছিলাম, কখনো বাড়ির ছাদের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান দেখে পাইলট হবার স্বপ্ন দেখতাম... আবার কখনো গ্রামে গেলে স্বপ্ন দেখতাম গাঁয়ের রাখাল সেঁজে গরুমোষ চরাব বলে।

গ্রীষ্ম কালীন ছুটি এলেই বাবা নিয়ে যেত গ্রামের বাড়ীতে আর শুরু হত আমগাছ, জামগাছ আর কাঁঠাল গাছ বেয়ে বেড়ানো। প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে গ্রীষ্মের খোলা মাঠে ঘুড়ি ওড়াবার লাটাইয়ের সুতাবেয়ে আমার স্বপ্ন উড়ে যেত দিগন্ত ছাড়িয়ে। প্রখর রোদে ক্লান্ত হয়ে শতবর্ষের বট গাছটার নিচে মেহনতি মানুষের শুয়ে থাকার দৃশ্য আমার স্বপ্ন ছুঁয়ে যেত! এখনো খুব ইচ্ছে করে নারিকেল পাতার তৈরি মাদুর বিছিয়ে ওই বটগাছের ছায়ায় শুয়ে থাকতে...

ভরা বর্ষায়-খাল বিল নদী ছাপিয়ে যখন বয়ে যেত শ্রাবনের ঢল-আমার মন তখন আনমনে ভেসে যেত অজানা এক স্বপ্নের জগতে... একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় বন্ধুদের সাথে ভিজতে ভিজতে ফেরার পথে কদম ফুল পেড়েছিলাম গাছে উঠে। টিনের চাল দেয়া ঘরে খালি গায়ে কাঁথা গলা পর্যন্ত টেনে জানালার পাশের বিছানায় শুয়ে যে মানুষ বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমায় নাই সে কি কখনও বুজবে এই শব্দের মর্মকথা...আর বৃষ্টি ভেজা কর্দমাক্ত মাঠে ফুটবল খেলার সেই দিনের আনন্দ আজও আমাকে বাধ্য করে বৃষ্টিতে ভিজতে...

আমাদের বাসা ছিল পল্লবী রূপনগরে , বাড়ির পাশে ইষ্টান হাউজিং এর মাটি ভরাট চলছিল, সেইখানে শরৎ কালে কাশবনে বন্ধুদের সাথে- সাদা সাদা কাশফুলের ঝোপের আড়ালে লুকোচুরিখেলার সময়-আমার স্বপ্নেরা ডানা মেলে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল এক রঙ্গীন ভুবনে! দলবেধে বন্ধুদের নিয়ে মাটিতে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে সাদা শুভ্র মেঘের ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য দেখতে যদি আমাকে এখনও কেউ বলে না খেয়ে বসে থাকতে হবে তবে আমি তাতে প্রস্তুত...

নানা মারা গিয়েছিলেন কার্ত্তিক মাসে, সেই সময় আমি অনেক ছোট, আর তাই হয়তবা তার মৃত্যুর কষ্টের চেয়ে প্রবল বাতাসে হেমন্তের ধান ক্ষেতে সোনালী ধানের শীষের ঢেউ খেলানোর দৃশ্য আমাকে নাড়া দিয়েছিল বেশী.. পরবর্তীতে হেমন্ত এলেই মৃদু মৃদু শীতের আগমনে আমি স্বপ্ন দেখতাম চাষীদের মাঝে, কাস্তে হাতে ধানের সারি কেটে মাথায় করে বোঝাবয়ে নিতে...

কোন এক শীতের সকালে খেজুর বাগানে গাছের মাথায় চড়ে-পাতিল ভর্তি মিষ্টি রস পেড়েনিয়ে এসেছিল ছোট মামা, ঠনঠনে শীতে বাড়ির আঙিনায় বসে রসের পিঠা খাওয়ার স্মৃতি জীবনে ভুলা যেমন আমার পক্ষে সম্ভব নয়,ঠিক তেমনই ঘনকুয়াশার চাঁদর সরিয়ে উঁকি দেয়া ভোরের আলোতে দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ক্ষেত দেখার আকুলতা আমার দু-চোখে স্রোতহীন একটি নদীর ন্যায় এখনওতার সকল দুঃখের পসরা সাজিয়ে বসে আছে।

বসন্তের পাতা ঝরা দিনে ছোট একটি আম গাছের চারার সদ্য গজানো দুইটি কুড়ি পাতা এখনো আমাকে গাছে গাছে নতুন পাতার মাঝে উঁকি দেয়া ফুলকুড়িদের সাথে ভ্রমরের মত উড়ে উড়ে গান শোনানোর স্বপ্ন দেখতে বাধ্য করে, বাধ্য করে স্বপ্ন দেখতে গাছের ডালে ফুল আর পাখিদের সাথে বন্ধুত্ব করার, পরিযায়ী পাখির মত উড়ে যেতে দূর হতে দুরান্তরে...

সবই ছিলো আমার বালক বেলার অবচেতন মনের আজব সব স্বপ্নের মেলা ! এমনি হাজার বিচিত্র স্বপ্ন বুকে নিয়ে দিনে দিনে আমি আর সকলের মতএকদিন পৌঁছে গেলাম যৌবনে! জীবনের নানান ক্ষেত্রে নানান রঙের দৃশ্যমানতা আমাকে সবসময় টানত... কিন্তু অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ায় আমার ভেতর থেকে আমাকে আমি নিজে কখনই প্রকাশিত হতে দিতে পারি নাই... আমি কি চাই, কি আমারভালো লাগে এই বিষয়গুলোকে আমি কোনো দিনও গুরুত্ব দিতে পারিনি। অল্প বয়সে পরিবার এর চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টারত অবস্থায় একদিন সারা দিনের পরিশ্রম শেষে রাতে বাসায় ফিরে এক ফালতি চাঁদ জানালা দিয়ে যখন দেখছিলাম তখন একটু স্বস্থি বোধ করে ভাবছিলাম আমি খুব ভালোই আছি। কিন্তু সারারাত্রি অবিরাম বর্ষনের পরে ফিনকী দেয়া জ্যোৎস্না ছড়াতে না ছড়াতেই ডুবে গেল সেই চাঁদ।সেই অল্পক্ষনের ভালোলাগার অনুভুতিটাই আজও পূর্ণিমা রাত কে আমার চাঁদ দেখার উপলক্ষে পরিণত করে রেখেছে...

রঙ আর বেরঙের মধ্যে, রূপ আর অরূপের মধ্যে, মূর্তি আর পুতুলের মধ্যে,চিন্তা আর দর্শনের মধ্যে যে পার্থক্য; আমার মনে হয়ে আমার সাথে আমার নিজেরই সেই পার্থক্যের কারনে আমি খারাপ থাকি। আবার সর্বক্ষেত্রে ভাল থাকার অভিনয় করতে গিয়ে আমার অন্তদর্শনকেও আমি ভালো এবং সুস্থ রাখতে পারিনা। সেক্ষেত্রে আমার চলমান জীবন প্রবাহটাই কেমন যেন ওলোট-পালোট আর অনেক বেশী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে নিজের উম্মুক্ত চিন্তা চেতনা হতে..

বৃষ্টিটাকে আমি বরাবরই খুব ভালবাসি আর তার প্রধান কারণ বৃষ্টির মাঝেই আমি লোকচক্ষুর অন্তরালে কাদতে পারি ... হৃদয়ের কষ্ট ঝাড়তে পারি... আমি কাদি কারনআমি বিশ্বাস করি কান্না শুদ্ধতম আবেগ প্রকাশের একমাত্র উৎকৃষ্ট মাধ্যম।

প্রকৃতিই আমাকে সাহায্য করে সবার কাছ থেকে নিজের কষ্ট লুকাতে, শত ব্যস্ততা, কোলাহল, ভাল থাকার মিথ্যে অভিনয় আর এই পৃথিবীর সকল বঞ্চনার মাঝেও নিজের ইচ্ছে শক্তি কে পুনর্জীবিত করতে, কিছুটা সময়ের জন্য হলেও আলাদা করে বেচে থাকার অনুপ্রেরনা যোগাতে...

আর তাই আমি একজন খাটি প্রকৃতি প্রেমিক...!!!!









মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.