নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...............

শ্রাবণধারা

" আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোক ঘরে বসিয়া নানারূপ কল্পনা করে, অবশেষে কার্যক্ষেত্রে নামিয়া ঘাড়ে লাঙল বহিয়া পশ্চাৎ হইতে ল্যাজমলা খাইয়া নতশিরে সহিষ্ণুভাবে প্রাত্যহিক মাটি-ভাঙার কাজ করিয়া সন্ধ্যাবেলায় এক-পেট জাবনা খাইতে পাইলেই সন্তুষ্ট থাকে......."

শ্রাবণধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শৈশবের স্কুল-কলেজ

০৮ ই জুন, ২০২২ সকাল ৯:০১



(লেখাটি শ্রদ্ধেয় ব্লগার খায়রুল আহসানকে নিবেদিত, সম্প্রতি যার কাছ থেকে স্মৃতিচারণমূলক লেখা লিখবার বিষয়ে অনেক উৎসাহ পেয়েছি।)

ছাত্রাবস্থায় নিতান্ত গাধা ছিলাম। তবে বুদ্ধিবৃত্তি গাধাতুল্য হলেও, নিরীহ এই প্রাণীটির মত সুবোধ ছিলাম না মোটেও। এত চঞ্চল ছিলাম যে এই অস্থিরতাকে কেবল ছাগশিশুর সাথে তুলনা করা চলে। ছাগশাবকের মতই সদ্য গজিয়ে ওঠা শিং দিয়ে যত্রতত্র গুতোগুতি করে অনিষ্টের চুড়ান্ত করতাম। আমাদের শিক্ষকদের বিচারে স্নেহ নিরঙ্কুশ জয়ী হতো বলে, বহু দৌরাত্ম্য করেও শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেতাম। আজ ভাবি, কি অপরিসীম ধৈর্য নিয়েই না আমাদের শিক্ষকেরা জন্মেছিলেন!

বর্ণপরিচয়ে যখন পড়তাম "অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে, আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে", তখন মনে হতো অজগর চলে আসার আগেই গাছ থেকে আম পেড়ে খেতে হবে। এত অল্প সময়ে আম পেড়ে খাওয়া হবে কিনা এই নিয়ে খুব উৎকন্ঠায় থাকতাম। আমাদের পাড়াগায়ের স্কুলে প্রথম দিকের ক্লাসগুলোতে ইংরেজী শেখার বালাই ছিলনা। তাই ভাষা শিক্ষার সাথে সাথে কল্পনা আর ভাবের রূপান্তর হতো। তখন ভাবতাম, বাড়ির কাছে ঘাঘট নদীর ওপারেই ডালিমকুমারের রাজপ্রাসাদ আর রাত গভীর হলেই বড় বড় গাছের মগডালে ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমীরা কথা বলতে শুরু করে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যামিনী স্যার পড়াতেন বিজ্ঞান, নজিব স্যার গণিত, আর অপু স্যার শেখাতেন ড্রইং। অপু স্যার ক্লাসে ঢুকেই ব্লাকবোর্ডে এমন চমৎকার ছবি আঁকতেন যে, ক্লাস শেষে ছবিগুলো মুছে ফেললে আমার খারাপ লাগতো। আর ছিলেন গানের ম্যাডাম। ম্যাডামের নাম ছিল "খুকু", আমরা ডাকতাম "খুকু আপা"। কোন এক আশ্চর্য কারনে স্কুলের শিক্ষিকাদের ম্যাডাম না ডেকে আমরা "আপা" সম্বোধন করতাম! খুকু ম্যাডাম তার তিন বা চার বছরের বেনী দোলানো সুন্দর মেয়েকে নিয়ে ক্লাসে আসতেন। হারমোনিয়াম বাজিয়ে তিনি যখন গাইতেন, "আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়/ লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা/ নীল আকাশে কে ভাসালে/ সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই- লুকোচুরি খেলা", তখন সেই গান শ্রাবণের বৃষ্টি শেষে স্নিগ্ধ বাতাসের মত প্রশান্তি জাগাতো। সারাটা সপ্তাহ জুড়ে গানের রেশ থেকে যেত মনে। স্কুলের খোলা মাঠে রঙ্গীন কাপড় আর বাঁশের তৈরি প্যান্ডেলে বাৎসরিক অনুষ্ঠান হতো। সেখানে স্কুলের ছেলেমেয়েরা নীল-সাদা ইউনিফর্ম পড়ে, সাদা জুতোয় তাল দিতে দিতে গাইতো "প্রজাপতি প্রজাপতি/ কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গীন পাখা/ টুকটুকে লাল নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা'। মাইকের গমগমে শব্দে, হারমোনিয়ামের সুরে "টুকটুকে লাল নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা" শুনলেই মনে হতো, প্রজাপতিগুলো বুঝি অসংখ্য লাল-নীল ঝালর হয়ে চারপাশে পাখির মতো উড়ছে।

স্কুলের অনুষ্ঠানে আমার মা যেতেন সাথে। গানের সুর আমার মাকেও স্পর্শ করে থাকবে। মা চাইতেন আমিও জুতোয় তাল দিতে দিতে মঞ্চে দাড়িয়ে গান গাই। কিন্তু খুকু ম্যাডাম আমার বেসুরো গলার গান শুনিয়ে অন্যদের আতঙ্কিত করার ঝুকি নিতে চাইতেন না বলে আমার মায়ের এই ইচ্ছাটি অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিল। স্কুলে গানের দলে সুযোগ না পেলেও ২৬ শে মার্চ বা ১৬ ই ডিসেম্বরে বিকট ড্রামের শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে কুচকাওয়াজে অংশ নিতাম। শহরের স্টেডিয়ামে অন্য অনেক স্কুল কলেজের সাথে আমাদের স্কুল প্যারেডে যোগ দিতো। স্কুলের শরীরচর্চা শিক্ষক লালু স্যার ছিলেন সফল ক্রীড়া সংগঠক। শহরের যে কোন এথলেটিক্স প্রতিযোগিতা, প্যারেড বা খেলার আসরে তিনি ছিলেন অপরিহার্য। এই ধরনের অনুষ্ঠানে শহরের প্রধান দলনেতার ভুমিকা ছিল তার। শৈশবের দিনগুলোতে বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রাথমিক ধারণাটা একুশে ফেব্রুয়ারীর প্রভাত ফেরী, স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছিল।

স্কুলে প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে চয়নিকা নামে আমরা আরেকটি বাংলা বই পড়তাম। অনেকগুলো ছড়া আর গল্পের সংকলন এই বইটি। চয়নিকার ছড়াগুলো ছিল মজার, যেমন:
মামুদ মিয়া বেকার
তাই বলে কি সাধ নেই তার
বিশ্ব ঘুরে দেখার?
আসল যখন চেকার
মামুদ মিয়া বললো হেসে
ট্রেন কি তোমার একার।

চয়নিকার গল্পগুলো ছিল বেশ সুখপাঠ্য। অবশ্য মাঝে মাঝে রবীন্দ্রনাথের তোতা-কাহিনীর মতো ভারিক্কি গল্পও সেখানে থাকতো। বনের পাখি ধরে নিয়ে এসে কেন যে রাজার লোকেরা পাখিটাকে ঠেসে ঠেসে পুঁথি মানে কাগজ খাওয়াতো, তার অর্থ ভাল বুঝতাম না। গল্পের শেষে পাখিটি মরে যায় বলে গল্পটি আমার ভালো লাগতো না। এতদিন পরে অন্য সব গল্পের কথা ভুলে গেছি, অথচ এই গল্পটি মনে আছে!

সেই সময়ে আমাদের বাসায় পাঠ্যপুস্তক ছাড়া ছোটদের পড়ার মতো বই বিশেষ ছিলনা। ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় কি ভাবে যেন সাজেদুল করিমের হাসির গল্প নামে একটা বই আমার হাতে এল। এই লেখকের "বুদ্ধিমতী মেয়ে" গল্পটি ক্লাস থ্রির বাংলা বইয়ে আমাদের পাঠ্য ছিল। সাজেদুল করিমের হাসির গল্পই পাঠ্যপুস্তকের বাইরে পড়া আমার প্রথম বই। বইটা পাঠের আনন্দ অনেকদিন আবিষ্ট করে রেখেছিল। আরেকটু বড় হয়ে পড়েছিলাম জুল ভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস "আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ"। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় যদি বলি, এই দুটো বই ছিল আমার শৈশবের মেঘদূত।

সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে মনে হয়, যাদের প্রেরণায়, প্রচেষ্টায়, স্নেহে আমাদের হাতেখড়ি হয়েছিল, যারা ছিলেন ভাষা শিক্ষার অগ্রদূত, যাদের প্রতিটি বাক্য শৈশবের কল্পনার ছাঁচগুলোকে অদৃশ্য হাতে গড়ে তুলেছিল, তাদের অনেকেই ছিলেন অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, অবহেলিত মানুষ। এখন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সরকারী বেতম কাঠামোয় মোটামুটি জীবন ধারণ করতে পারলেও আজ থেকে ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে আমাদের শিক্ষকেরা জীবিকার ভারে দুঃসহ জীবন কাটাতেন। পারিবারিক ব্যাবসা বা অর্থ উপার্জনের অন্য উপায় যাদের ছিল না, তারা মুজতবা আলীর পাদটীকা গল্পের পন্ডিতমশায়ের মতো কায়ক্লেশে জীবন পার করতেন।

মেঘদূতের যক্ষ যেমন রামগিরি পর্বতে নির্বাসিত হয়েছিল, আমরাও তেমন প্রমত্ত পদ্মা-তীরে ক্যাডেট কলেজে নির্বাসিত হয়েছিলাম। বয়স তখন কেবল বারো, বিপুলা পৃথিবী তখনো অজ্ঞাত। অজানা পৃথিবীর সাথে নবীন পরিচয়ের দূত হয়ে এসেছিলেন শিক্ষকেরা। মেঘদূতের কবি বর্ষার মেঘ দেখে উদ্বেলিত হয়ে মেঘের সাথে সাথে নদী, পাহাড়, মাঠ, জনপদের উপর দিয়ে কাল্পনিক যাত্রা করেছিলেন। স্রোতোস্বিনী পদ্মার পাড়ে বন্দী হয়ে আমরাও কাল্পনিক যাত্রায় পৃথিবীর পথে বের হয়েছিলাম। এই যাত্রাপথে সারথি ছিলেন আমাদের শিক্ষকেরা।

ক্যাডেট কলেজে প্রথম দুটি বছর কঠিন ছিল। অল্প বয়সে পরিবার-পরিজন ও চেনা পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হবার অস্ফুট বেদনা, প্রাক-মিলিটারি জীবনের কঠোর শৃঙ্খলা ও অপরিচিত পরিবেশে নিজের সামঞ্জস্যহীনতা দেখে সেই বয়সে জীবনের উপর যতখানি বীতরাগ সম্ভব তা হয়েছিল। মনে হতো মরুভূমির উপর দিয়ে হাটছি, পায়ের নিচে তপ্ত বালু, চারপাশে উষ্ণ বাতাস, কোমল শীতল মায়ের আঁচল কোথাও পাতা নেই।

অবশ্য অল্পদিনের মধ্যে একটা মরুদ্যান খুঁজে পেয়েছিলাম। সেটা ছিল কলেজের আর্ট গ্যালারি। আর্ট গ্যালারি ছিল আমাদের চারু ও কারুকলা শিক্ষকের ডিপার্টমেন্ট, স্টুডিও ও কর্মশালা। মূল একাডেমিক ভবন থেকে কিছুটা আড়ালে এর অবস্থান। নতুন, পুরাতন ছাত্রদের এবং স্যারের আঁকা অনেক ভালো ছবি ঘরময় ছড়ানো থাকতো। অয়েল পেইন্ট, জল রং, স্কেচ সবই ছিল সেখানে। কোন ছবি বাধাই করা, কোনটা বাধাই হয়নি। কোন ছবি অনেকদিন আগে পাশ করে যাওয়া ছাত্রের আঁকা, কোনটা সেই সময়ে কলেজে পড়ুয়ার। সারা ঘরে রংয়ের গন্ধ, ছড়ানো ছিটানো রং-তুলি, ইজেল, ক্যানভাস। ঘরের এক কোণায় টেবিলের সাথে লাগানো খুব বড় একটা পেন্সিল কাটার যন্ত্র, মাঝখানে প্রশস্থ উচু টেবিল, সাথে বসার জন্য টুল। রুমটা ছিলো বেশ বড়। আমদের শাখার ২৫ জন ছাত্র অনায়াসেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে ছবি আঁকতে পারতাম। স্যারের একজন সহযোগী ছিলেন, তার নাম আজগর ভাই। স্যারের মত আজগর ভাইও অত্যন্ত ভালো আঁকিয়ে। আর্ট গ্যালারীতে গেলে তিনি নানা ভাবে ছবি আঁকায় সাহায্য করতেন। আজগর ভাইয়ের আরেকটি পরিচয় ছিল, সেটা হলো তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে আমাদের মেকাপম্যান। যে কোন অভিনয়ে আজগর ভাইয়ের রূপসজ্জা ছাত্রদের মুখে ও পোশাকে নতুন জীবন দান করতো। আর্ট গ্যালারীকে মনে হতো ক্যাডেট কলেজের বাইরের কোন স্থান। সেখানে মিলিটারী নিয়মের কঠোরতা নেই, পড়া মুখস্থের বালাই নেই, তটস্থ হয়ে থাকবার প্রয়োজন নেই। স্যার এবং আজগর ভাইয়ের গলার স্বর শুনলে মনে হতো এ যেন তপোবন।

ক্যাডেট কলেজে লাইব্রেরি ছিল অতি সমৃদ্ধ, নাম "রব পাঠাগার"। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রবের নামে নাম, তবে আমার মনে হতো এই নামের আরো অনেক অর্থ আছে। "রাব্বি জিদনি ইলমা" - পড় তোমার রব বা প্রভুর নামে। আবার রব মানে ধ্বনি বা শব্দ। রবীন্দ্রনাথের লাইব্রেরি প্রবন্ধের "মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল .. এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে"। সপ্তাহে একদিন ক্লাসের দুটি ঘন্টা আমরা কলেজ লাইব্রেরিতে বই পড়তে পারতাম। তবে, প্রথম দুই বছর সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকলীন সময়ে আমরা কোন বই ইস্যু করতে পারতাম না। আমাদের হাউজগুলোতে ছোট পাঠাগার ছিল। দূঃখের বিষয় হাউজ লাইব্রেরির বইও সেই বয়সে আমাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। ঠিক কি কারনে জানি না, তবে বোধহয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "ভালবাসা, প্রেম নয়" এবং এ জাতীয় আরো দুচারটি বইয়ের জন্য আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। শুধুমাত্র মসজিদ লাইব্রেরি সে সময় উন্মুক্ত ছিল। সেখানে বইয়ের সংখ্যা বেশি ছিল না। মসজিদের ভিতরে দুটো শেলফে বই থাকতো। ক্যাডেটদের মধ্যে কেউ ভলান্টিয়ার হয়ে শেলফের চাবি রাখতো আর বই আদান-প্রদানে সাহায্য করতো। প্রতিদিন জোহরের নামাজের পরে আমি হয় বই পড়তাম নয়তো নতুন বই ইস্যু করতাম। আমার আগ্রহ দেখে আমাদের ধর্ম স্যার, তিনি কলেজ মসজিদের ঈমামও বটে, আমাকেই মসজিদ লাইব্রেরির ভলান্টিয়ার বানিয়ে দিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে আমাদের কলেজের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীরা অংশ নিয়েছিলেন, অনেকে দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। আমাদের সৌভাগ্য, এমনি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আমরা শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম। আমাদের শিক্ষক রাজশাহীর চারঘাট-বাঘা এলাকায় বন্দুক হাতে সম্মূখ-সমরে অংশ নিয়েছিলেন। রনাঙ্গনে তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শ্রেণিকক্ষে পিতার প্রতিমূর্তি। স্যার ক্লাসে আসলেই আমরা তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে চাইতাম। তিনি তাঁর পাত্র উজাড় করে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া যুদ্ধের ময়দানের লোমহর্ষক গল্প বলতেন। স্যারের সেই অমূল্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তার কোন ছাত্র বা অন্য কেউ কোথাও লিপিবদ্ধ করেছিলেন কী না, আমার জানা নেই।

আর ছিলেন আমাদের বাংলার ম্যাডাম। তার গল্প বলার প্রতিভা এত অসামান্য ছিল যে সেই গল্পের প্রভাব আমার জীবনে সূদুরপ্রসারী হয়েছিল। ম্যাডাম যদিও ছিলেন বাংলা ভাষার অধ্যাপিকা, তার গল্পের বিষয়বস্তু শাখা প্রশাখায় বহুবিস্তৃত ছিল। আশাপূর্ণা দেবীর গল্প যেমন তার কাছে শুনেছি, তেমনি শুনেছি সাইন্স ফিকশন, ইংরেজি এডভেঞ্চার, এমনকি সেসময়ে বিটিভিতে প্রচারিত হওয়া নাটকের গল্পও। ক্যাডেট কলেজে সপ্তাহে একটি দিনে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে অল্প কিছু সময় আমাদের টিভি দেখার সুযোগ ছিল। মঙ্গলবার রাতে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটকগুলো দেখতে পেতাম না। কলেজ বন্ধকালীন সময়ে বাড়িতে ছুটি কাটাতে এলে ধারাবাহিকের কিছু পর্ব দেখতে পারতাম। হুমায়ুন আহমেদের "কোথাও কেউ নেই" তখন খুব জনপ্রিয়। এ নাটকের কিছু পর্ব বাড়িতে বসে দেখেছিলাম। এর শেষ পর্ব যখন প্রচারিত হলো তখন আমরা ক্যাডেট কলেজে ফিরে গেছি। মঙ্গলবার রাতে প্রচারিত হয়েছিল বলে এই পর্বটি দেখতে পাইনি। পরদিন ম্যাডামের ক্লাস। তিনি ক্লাসে ঢোকা মাত্রই ক্লাসের সবাই আগের রাতে প্রচারিত নাটকের গল্প শুনতে চাইলাম। ক্লাসে পিনপতন নিস্তব্ধতা, ম্যাডাম যাদুকরী দক্ষতায় "কোথাও কেউ নেই" এর গল্প বলে শোনালেন। গল্প শোনার এই অনুভুতিকে মন্ত্রমুগ্ধ বললে কিছু কম বলা হবে। তবে দর্শকদের অনুরোধে, পরের শুক্রবার সকালে বিটিভি এই পর্বটি পূনঃপ্রচার করেছিল। অতএব মঙ্গলবার রাতে না দেখতে পারলেও শুক্রবার সকালে আমরা পর্বটি দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। টিভিতে নাটকটি ভাল লেগেছিল, কিন্তু দেখার পরে মনে হলো কদিন আগে ম্যাডামের কাছে শোনা গল্পের কিছু অংশ যেন টিভিতে দেখায়নি। আসলে, তুলনায় সেদিন টিভিতে দেখা নাটকের চেয়ে ম্যাডামের কাছ থেকে শোনা নাটকের গল্পই আমার বেশি ভালো লেগেছিল।

বাংলার আরেকজন অধ্যাপক পরম মমতায় আমাদের বিভূতিভূষণের "পথের পাচাঁলী" পড়াতেন। আমরা তখন কিছুটা বড় হয়েছি। ততদিনে জেনে গেছি যে পদ্মা নদীর ওপারে আসলে নীলকমল আর লালকমলের রাজপ্রাসাদ নেই। সেখানে দূর দিগন্তের আবছা গ্রামগুলো আসলে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার কোন গ্রাম। তবে আমার মনে হতো অপু আর দূর্গার নিশ্চিন্দিপুর গ্রামটা হয়তো ওখানেই কোথাও হবে। ইছামতির তীরের নিশ্চিন্দিপুর। আমি কল্পনায় নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের একটা মানচিত্র বানানোর চেষ্টা করতাম। অপুদের বাড়ির পাশেই নীলমণি রায়ের পোড়ো ভিটা, আর অনেকটা হেটে গেলে তাদের ধনী প্রতিবেশী ভুবন মুখুজ্যেদের বাড়ি। অপুদের বাড়ির রান্নাঘরের পিছনে সজনেতলা, লেবুফুলের গন্ধ সেখান থেকে ভেসে আসতো। শাঁখারীপুকুরটা ভুবন মুখুজ্যেদের বাড়ি ছাড়িয়ে আরেকটু দূরে, আর সোনাডাঙ্গার মাঠ বেশ দূরে গ্রামের সীমানায়।

ক্যাডেট কলেজে বাইরের দৃষ্টিসীমা ছিল নির্দিষ্ট, কিন্তু মনের চোখগুলোকে খুলবার অজস্র আয়োজন সেখানে ছিল। একাডেমিক পড়াশুনার পাঠ্ক্রম, খেলাধূলা আর শরীরচর্চার পাশাপাশি আমাদের সাপ্তাহিক রুটিন আবৃত্তি, নাটক, চিত্রকলা, বিতর্ক, বক্তৃতা এবং বিবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ঠাসা থাকতো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো ছিল অত্যন্ত মানসম্পন্ন। মনে আছে, যে বছর ক্যাডেট কলেজে ভর্ত্তি হয়েছিলাম, তার কয়েক মাস পরেই রবীন্দ্রনাথের "অচলায়তন" নাটকটি কলেজ অডিটরিয়মে মঞ্চায়িত হয়। শিক্ষকদের তত্বাবধানে কলেজের ছেলেরা চমৎকার অভিনয় করে সে নাটকে এতটাই প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে যে, অন্ধ গোঁড়ামি আর প্রাণহীন প্রথার বিরুদ্ধে মনের ভিতরে একটা বিদ্রোহের ভাব তৈরি হয়েছিল।

এখানে আমাদের শিক্ষকদের কাজ ক্লাসের পাঠদানে সীমাবদ্ধ ছিল না। সকাল থেকে রাত অব্দি ছাত্রদের নিয়ে তাঁরা ব্যস্ত থাকতেন। ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, শরীরচর্চা, ক্লাসের পড়াশোনা, খেলা, প্রার্থনা, এমনকি খাদ্য গ্রহনের সময়েও শিক্ষকদের তদারকি চলতো। দৈনন্দিন রুটিনের বাইরে যেসব আয়োজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগীতা বা বিশেষ কোন অতিথির কলেজ পরিদর্শন, সবক্ষেত্রে তাঁদের দায়িত্ব ছিল পাহাড় সমান। নিজের জীবন ছাত্রদের জন্য সম্পূর্ণ উৎসর্গ না করলে কোন মানুষের পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব নয়। এখন মাঝে মাঝে ভাবি, কী এমন পূণ্য করেছিলাম যে আমার মতো অশিষ্ট গরুর জন্য এতগুলো মানুষ প্রাণপাত করেছিলেন?

পৌরাণিক গল্পে আছে স্বর্গ উদ্ধারের জন্য, অসুরকে মারার অস্ত্র বানাতে ঋষি দধীচি জীবন বিসর্জন দিয়ে তার শরীরের হাড় দিয়েছিলেন। ক্যাডেট কলেজে আমাদের শিক্ষকেরা ছিলেন এযুগের দধীচি। নিজের জীবন, মেধা, অবসর সবই তারা বিসর্জন দিয়েছিলেন আমাদের জন্য। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রসন্ন কুমার পাল স্যার ছিলেন এমনি একজন মূর্তিমান দধীচি। ধীর-স্থির স্বভাবের, স্মিতবদন, মৃদুভাষী। প্রজ্ঞা আর পরিমিতিবোধের অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। স্যার আমাদের পড়াতেন সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া, সূর্যের আলো থেকে কি করে উদ্ভিদ নিজের খাবার নিজে প্রস্তুত করে তার প্রনালী। বৃক্ষের মধ্যে যেমন মহীরুহ, তিনি ছিলেন তেমনি মহীরুহ। আমার মতো অনেক ছাত্র অনায়াসে তার সুশীতল ছায়া পেত। আমাদের জানা ছিলো না, এই মহীরুহর মনে ভয়ানক হৃদয়বিদারক কষ্ট চাপা দেওয়া আছে। তার মৃত্যুর পরে জেনেছিলাম ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, তার সকল নিকট আত্মীয়ের সাথে গ্রামের অর্ধশত বা তারো বেশি মানুষকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একই দিনে একসাথে মেরে ফেলেছিল। তারপর থেকে প্রতিবছর এপ্রিল মাসে স্যার তীব্র মানসিক বিষাদে আক্রান্ত হতেন। মানসিক বিষাদ বেড়ে মানসিক ব্যাধির জন্ম হয়েছিল - যার পরিনতি আত্মহত্যা। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে কলেজের উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়ে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। মানসিক রোগের কোন চিকিৎসা দেশের কোথাও তিনি পেয়েছিলেন কী না, আমার জানা নেই। মানসিক রোগ বাংলাদেশে চিরকাল অবহেলিত।

রবীন্দ্রনাথ "শিক্ষা" প্রবন্ধে লিখেছিলেন "আমাদের বিদেশী গুরুরা প্রায়ই আমাদিগকে খোঁটা দিয়া বলেন যে, তোমাদের উদ্ভাবনাশক্তি জন্মিল না, কেবল কতকগুলো মুখস্থ বিদ্যা সংগ্রহ করিলে মাত্র।" যদি সামান্য উদ্ভাবনাশক্তিও থাকতো তবে হয়তো স্যারের গ্রামে গিয়ে সেই ইতিহাসের অনুসন্ধান করতাম, যা তাকে অসময়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ আরো লিখেছিলেন, "জীবনের সহিত শিক্ষার একটা রাসায়নিক মিশ্রণ হয় না বলিয়া আমাদের মনের শিক্ষিত ভাবগুলি কতক আটা দিয়া জোড়া থাকে, কতক কালক্রমে ঝরিয়া পড়ে"। আমাদের ক্ষেত্রেই বা এর ব্যতিক্রম কেন হবে?

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০২২ সকাল ৯:১২

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: এতো বড় লেখা পড়ার সময় কোথায়? তবে ছবিটা দেখে ছোট বেলার স্কুলে যাওয়ার কথা মনে পরে গেল।

০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:১১

শ্রাবণধারা বলেছেন: "এতো বড় লেখা পড়ার সময় কোথায়?" তাতো বটেই, ব্যস্ত সকলেই।

২| ০৮ ই জুন, ২০২২ সকাল ১০:০৬

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

বই হাতে নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলেন ছবির মত? আমি অবশ্য ব্যাগ ছাড়া যাইনি,স্মৃতি আছে লিখার মত।ক্যাডেট কলেজ আগের মত আছে?

০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:১৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: "ক্যাডেট কলেজ আগের মত আছে?" আমি ২৫-৩০ বছর আগের কথা লিখেছি।

৩| ০৮ ই জুন, ২০২২ সকাল ১০:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শৈশব-কৈশোর খুব আনন্দেই গেছে বোঝা যাচ্ছে।

০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:১৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: সবার মতই আমার শৈশব কৈশোরের দিনগুলো ছিল।

৪| ০৮ ই জুন, ২০২২ সকাল ১০:৩৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথমতঃ, এমন একটি চমৎকার লেখা নামোল্লেখপূর্বক আমার প্রতি নিবেদিত হয়েছে দেখে নিজেকে সম্মানিত এবং আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করছি। অশেষ ধন্যবাদ।

আমি নিশ্চিৎ, এ ব্লগের পল্লী পটভূমির অনেক পাঠককে শিরোনামের ছবিটা দেখামাত্র তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ে যাবে তাদের গ্রামীন শৈশবে। যেমন সুন্দর ছবিটা, তেমন কাব্যিক হয়েছে পরবর্তী ধারাবর্ণনা। বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান লেখকদের লেখা থেকে উদ্ধৃত বাক্যগুলো লেখাকে সমৃদ্ধ করেছে।

আপনার বাড়ীর কাছে ঘাঘট নদী ছিল? তাহলে তো আপনি নিশ্চয়ই রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা কিংবা বগুড়া জেলার লোক হবেন, কারণ এ চারটি জেলার উপর দিয়ে ঘাঘট নদী প্রবাহিত হয়েছে। রংপুর জেলার অংশে প্রবাহিত ঘাঘট নদী নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে। একবার গাইবান্ধার এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঘাঘট নদীটা ঘুরে ঘুরে তাদের বাসার ঠিক পেছন দিয়েই প্রবাহিত ছিল। সে স্মৃতিটাও এখন মনে ভাসছে।

সেই সময়ের গ্রামীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্যার, 'আপা', সঙ্গীত শিক্ষিকা এবং শরীরচর্চা শিক্ষকের গল্পগুলো মন ছুঁয়ে গেছে। আর এর পরে এসে নিখুঁতভাবে আঁকা রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের অনুপম চিত্রটি ভালো লাগার কারণে কয়েকবার পড়তে হয়েছে। ১৯৬৬ সালে আমার আব্বা আমার জন্য রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের একটি ভর্তি ফরম কিনে এনেছিলেন। কিন্তু আমার বয়স সে সময় মাস খানেকের মত কম হওয়ায় তিনি ফরমটি তার এক কলীগকে (এবং আমাদের আত্মীয়ও বটে) দিয়েছিলেন তার ছেলেকে ভর্তি করানো চেষ্টা করার জন্য। কালক্রমে সেই ছেলেটি (এখন একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি) সেখানে পড়ে অনেক বড় হয়েছেন, তিনি এখন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করা প্রফেসর। আমি অবশ্য পরের বছর এমসিসি'র ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হই। আমার ক্যাডেট কলেজের স্মৃতিকথা নিয়ে রচিত আমার একটি ধারাবাহিক সিরিজ এ ব্লগে ব্লগিং শুরু করার প্রথম দিকে (নভেম্বর, ২০১৫ থেকে জুলাই, ২০১৬) "আমার কথা" (১-৩২) নামে প্রকাশ করেছিলাম। লেখাগুলো এখনও আছে, আগ্রহ থাকলে সময় করে কয়েকটা পর্ব পড়ে দেখতে পারেন। দু'জনের পাঠ্যকালের ব্যবধান অনেক হলেও, কিছুটা মিল হয়তো খুঁজে পাবেন। অথবা, সিরিজগুলো নিয়ে একটা বইও প্রকাশিত হয়েছে, নামঃ 'জীবনের জার্নাল'। আমি এখন অস্ট্রেলিয়ায় সফরে (কিছুটা পারিবারিক দায়িত্বেও) আছি। দেশে ফিরে গিয়ে আমি বইটির একটি কপি আপনার ঠিকানাতেও পাঠিয়ে দিতে পারবো।

আরেকবার এ পোস্টে আসতে হবে, আরও কিছু কথা বলার জন্য।

০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:৩০

শ্রাবণধারা বলেছেন: অতি চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ খায়রুল আহসান ভাই। আমার জানা ছিলো না যে আপনিও একজন এক্স-ক্যাডেট।

১৯৬৬ সালে আপনার আব্বার রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের ভর্তি ফরম কেনার ঘটনার কথা পড়ে আমারও ৩০-৩২ বছর আগের আমার পিতার ভর্তি ফরম কেনার ঘটনা মনে পড়ে গেল। জেনে খুব ভাল লাগলো যে আপনি মির্জাপুরের এক্স-ক্যাডেট।

আপনার লেখা ক্যাডেট কলেজের স্মৃতিকথার সিরিজটা অবশ্যই পড়বো। আর আপনার জীবনের জার্নাল বইটা পড়তে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। দেশে আবার ঠিক কবে নাগাদ যেতে পারবো তা এই মুহূর্তে একটু অনিশ্চিৎ, তবে দেশে গেলে অবশ্যই আপনার বইটি সংগ্রহ করবো। আবারো ধন্যবাদ আর শুভকামনা।

৫| ০৮ ই জুন, ২০২২ সকাল ১০:৫৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: দুইবার পড়লাম।
হারিয়ে গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:৩১

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ স্বপ্নবাজ সৌরভ লেখাটা পড়ার জন্য। শুভকামনা রইলো।

৬| ০৮ ই জুন, ২০২২ সকাল ১১:১৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনাদের 'বাংলার ম্যাডাম' এর গল্প বলার প্রতিভার কথা জেনে মুগ্ধ হ'লাম। আমাদের সময় বাংলা পড়াতেন আব্দুল্লাহ আল আমীন স্যার। উনি পরে সিলেট এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজেও অধ্যাপনা করেছেন। বছর কয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন, তার একজন পুত্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব ছিলেন (এখন হয়তো আরও পদোন্নতি পেয়ে থাকবেন)। ওনার সম্বন্ধে আমি আমার স্মৃতিকথায় "আমার শিক্ষকেরা" শীর্ষক কয়েকটি অধ্যাএর একটিতে উল্লেখ করেছি। ওনার যেদিন পড়ানোর মুড থাকতো, সেদিন আমরা তার লেকচার শুনে এতই মোহিত হতাম, মনে হতো যেন সে ক্লাস কখনো শেষ না হয়। আময়া চলে আসার ৭/৮ বছর পর বাংলার অধ্যাপক হিসেবে স্বনামধন্য রফিক কায়সার স্যার আমাদের কলেজে যোগদান করেছিলেন। উনি তার অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের কারণে ছাত্রদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত বই 'শঙ্খনীল কারাগার' তার নামে উৎসর্গিত।

আমনাদের 'উদ্ভিদ বিজ্ঞান' এর অধ্যাপক, 'মূর্তিমান দধীচি' শ্রী প্রসন্ন কুমার পাল এর তিরোধানের মর্মন্তুদ পটভূমির কাহিনী পড়ে অত্যন্ত ব্যথিত হ'লাম। মানসিক স্বাস্থ্য আজও আমাদের দেশে একেবারেই অবহেলিত বলা চলে। স্যারের পারলৌকিক শান্তি কামনা করছি।

প্রথম মন্তব্যটা পড়ে বেশ হতাশ হ'লাম! আপনি নিরুৎসাহিত হবেন না, নিজের লেখার প্রতি নিশ্চয়ই আপনার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে। পারিবারিক এবং কর্মজীবনের যাবতীয় ব্যস্ততা সত্ত্বেও যখনই সময় পাবেন, লেখালেখি চালিয়ে যাবেন, এখানে অথবা অন্য কোথায়ও।

০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:৩৮

শ্রাবণধারা বলেছেন: রফিক কায়সার স্যারের কথা অনেক শুনেছি। শঙ্খনীল কারাগার' নামটা যে তারই দেওয়া এমনটা শুনেছিলাম। আব্দুল্লাহ আল আমীন স্যারের কথা আপনার স্মৃতিকথায় পড়ার আগ্রহ জন্মালো।

বড় লেখা পড়ার পাঠক কম, আর আমার পাঠকও কম তবে এটা আমাকে হতাশ করেনা। খুব ইচ্ছা করে লেখালেখিতে আরেকটু বেশি সময় দেই - সেটাই হয়ে ওঠে না - এটাই বরং আমার হতাশা।

আপনার মন্তব্যগুলো আমকে খুব উৎসাহ জোগালো খায়রুল আহসান ভাই। ভাল থাকবেন।

৭| ০৮ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১:০৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
স্কুল জীবন জীবনের শ্রেষ্ট সময়।
লেখাটি সবার স্কুল জীবনের সময়ের
সাথে মিল খুঁজে পাবেন সকল পাঠক।
খায়রুল আহসান ভাইকে ধন্যবাদ যার
লেখায় অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রাবণধারা এমন
চমতকার লেখাটি উপহার দিয়েছেন।

০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:৩৯

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ নূরু ভাই। কবিতার ভাষায় আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব খুশি হলাম। ভাল থাকবেন।

৮| ০৮ ই জুন, ২০২২ দুপুর ২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
আপনার সৃতি শক্তি অনেক ভালো।

০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:৪২

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এ লেখাটি পড়ে মন্তব্যের জন্য। আমার স্মৃতি শক্তি খুব যে বেশি ভালো তা বোধহয় নয়, তারপরও অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো।

৯| ০৮ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৩৭

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: খায়রুল ভাই এর বিনয় এবং ভদ্রতা আমাকে মুগ্ধ করে। আই লাভ হিম।

০৯ ই জুন, ২০২২ সকাল ৮:৪৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: যথার্ত বলেছেন মোহাম্মদ গোফরান ভাই। খায়রুল ভাই একজন অসামান্য মানুষ। আপনার এবং খায়রুল ভাই উভয়ের জন্য শুভকামনা রইলো।

১০| ২৭ শে জুন, ২০২২ সকাল ৮:৫৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: "দেশে আবার ঠিক কবে নাগাদ যেতে পারবো তা এই মুহূর্তে একটু অনিশ্চিৎ, তবে দেশে গেলে অবশ্যই আপনার বইটি সংগ্রহ করবো" - আমার বড় ছেলে কানাডায় থাকে। বউমা নাতিকে নিয়ে গতকাল ঢাকা ছেড়েছে, এখনো আকাশপথে। আমি ওর কাছে আপনাকে দেয়ার জন্য এক কপি "জীবনের জার্নাল" পাঠিয়েছি। পৌঁছার পর পোস্টে পাঠিয়ে দিতে পারবে, যদি আপনি আমাকে আপনার মেইলিং এ্যাড্রেসটা এই ঠিকানায় ইমেইল করে জানানঃ [email protected]

“Wandering Thoughts” নামে আমার একটি ইংরেজী কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে। আপনি যদি কোন বাংলাদেশি লেখকের ইংরেজী কবিতা পড়তে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে সেটাও জানাবেন, ওটারও একটা কপি একসাথে পাঠিয়ে দেয়া যাবে।

২৭ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: বই পাঠানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ খায়রুল আহসান ভাই। জেনে ভাল লাগলো যে আপনার বড় ছেলে কানাডায় থাকেন, আপনাকেও আমরা কানাডাতে দেখতে পাব আশা করি।

আমার ইমেইল এড্রেস [email protected] । আমি আপনাকে ইমেইলে আমার ঠিকানা জানাচ্ছি।

আপনার জীবনের জার্নাল পাঠের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। আর ইংরেজী কবিতার বইটা পাঠালে সাগ্রহে পড়ে দেখবো।

১১| ২৭ শে জুন, ২০২২ রাত ৮:৪৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: উফ কী চমৎকার স্মৃতিকথা !!!!
এক দৌড়ে চলে গেলাম আপনার লেখা পথ ধরে নিজের শৈশবে......
আহা চয়নিকা বই !!!
আম্মা বলেন পড় রে সোনা
আব্বা বলেন মন দে
পাঠে আমার মন বসে না
কাঁঠাল চাঁপা' র গন্ধে !!
আরও কতশত।
খুব খুব ভালোলাগা এবং প্রিয় তালিকায় রাখলাম।

২৮ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:৩৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ মনিরা আপা। শৈশবের স্মৃতির পথ ধরে হাটা আমাদের অনেকের জন্যই খুব আনন্দের। আমার আনাড়ি হাতের লেখা যদি সেই স্মৃতিগুলো জাগিয়ে তোলে, এর চেয়ে বড় পুরস্কার এ লেখার পক্ষে আর কিছু হতে পারে না। শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.