নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...............

শ্রাবণধারা

" আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোক ঘরে বসিয়া নানারূপ কল্পনা করে, অবশেষে কার্যক্ষেত্রে নামিয়া ঘাড়ে লাঙল বহিয়া পশ্চাৎ হইতে ল্যাজমলা খাইয়া নতশিরে সহিষ্ণুভাবে প্রাত্যহিক মাটি-ভাঙার কাজ করিয়া সন্ধ্যাবেলায় এক-পেট জাবনা খাইতে পাইলেই সন্তুষ্ট থাকে......."

শ্রাবণধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

টরন্টোর চিঠি ২ - কানাডায় পাঁচ বছর

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৩৩



কানাডায় আসার আজ পাঁচ বছর হলো। পাঁচ বছর এই বড় দেশ, মাটি, জনপদ, এমনকি ব্রামটনের যে পাড়ায় আমরা থাকি সেটা ভাল করে চেনার জন্য যথেষ্ট না হলেও, আমাদের জীবন প্রবাহে এই পাঁচ বছরের প্রভাব অত্যন্ত গভীর।

কানাডায় প্রথম দিকের বছরগুলো ছিল উদ্বেগের, কষ্টের, বিষাদের। দিক ও কূলবিহীন অনিশ্চিত যাত্রাপথে উৎকন্ঠার শেষ ছিল না। অপরিচিত দেশে নতুন করে জীবন শুরু করার ক্লেশ আর জীবিকার সন্ধান দীর্ঘ ক্লান্তিকর। এ যেন কানাডার শীতকাল - কঠিন আর বিলম্বিত। দিনের পর দিন সূর্যের আলো দেখা যায়না, হীম ঠাণ্ডা রাতগুলো এত বড় যে শেষই হতে চায় না। যখন মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের আপাত স্থিত সামাজিক জীবন, বন্ধু-বান্ধব আর ঈদ বা অন্য কোন সময়ে লম্বা ছুটিতে দেশে যাবার কথা মনে পড়তো, তখন বিষাদে মন ছেঁয়ে যেত।

যে কোন যাত্রাপথে একটা সময় যেমন পথই পথ দেখায়, তেমনি পাঁচ বছর পরে আজ দেখতে পাচ্ছি স্রোতের টানে অনেকটা পথ পার হয়েছি। কাজের কাজ তেমন কিছু করতে পারিনি হয়তো, সঞ্চয় বলতে নোনা-শেওলা আর কচুরিপানা ছাড়া মূল্যবান কিছু নেই। তবে পথ চলার যে আনন্দ তা পেয়েছি। নতুন কে চেনার যে স্ফূর্তি তার পুলক জড়িয়ে আছে আলো আধারের এই পাঁচ বছরের পথ চলায়।

এদেশে আসার আগে আগে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে একটা মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছিলাম। এখানে ভর্তির সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটা এপার্টমেন্টে থাকার সুযোগ হয়েছিল। লালচে-ধুসর রংয়ের চারটি উচু বিল্ডিং খোলা মাঠের মধ্যে পাশাপাশি দাড়ানো। বিল্ডিংগুলো ১৫ তলা উচু আর দেখতে একেবারে একই রকমের। বিল্ডিংয়ের পাশে বাচ্চাদের খেলার একটা ছোট প্লে-গ্রাউন্ড, পাশে গাড়ি পার্কিয়ের জায়গা ও খেলার মাঠ। শীতের সময়ে যদিও সেই প্লে-গ্রাউন্ড বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকে, কিন্তু গ্রীষ্মকালে বাচ্চাদের কল-কল্লোলে সেটা মূখরিত হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলো ১০-১৫ মিনিটের হাটা পথের মধ্যে। আমার মেয়ের স্কুল একটু দূরে, যেতে হয় স্কুল-বাসে করে। স্কুল-বাস কাছেই একটা বিল্ডিংয়ে এসে থামে। মেয়েকে স্কুল-বাসে তুলে দিতে এসে বা ফেরার সময় অন্য অভিভাবকদের সাথে পরিচয় হয়। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ পিএইচডি কেউবা মাস্টার্স করছেন। বাসের জন্য দাড়িয়ে থাকার অবসরে এখানে আমাদের বেশ কিছু বাঙ্গালী পরিবারের সাথেও সুসম্পর্ক হয়েছিল। বাচ্চাদের জন্মদিনে, ঈদ বা অন্য কোন পার্বণে আমরা প্রায়ই কারো বাসায় একত্রিত হতাম।

আমরা যখন কানাডায় আসি তখন আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। আমাদের ইচ্ছা ছিল যে মধ্যপ্রাচ্যেই আমাদের সন্তানের জন্ম হবে, তারপর তিন-চার মাস পরে আমরা কানাডায় যাবো। কিন্তু যখন জানতে পারলাম সন্তান জন্মের পরে কানাডায় যেতে হলে বাচ্চার জন্য নতুন করে ভিসার আবেদন করতে হবে, তখন পরিকল্পনা পাল্টাতে হলো। ইতিপূর্বে ইমিগ্রেশনের জন্য যতগুলো দরখাস্ত লিখতে এবং আবেদনপত্র পূরণ করতে হয়েছে, সেই সব কাগজ একসাথে জোড়া দিলে চীনের প্রাচীরের সমান না হলেও পদ্মা-সেতুর সমান হবার সম্ভাবনা, অতএব নতুন করে আর কাগজপত্র পূরণ করার ধৈর্য ছিলনা।

এখানে এসে স্ত্রীর চেক আপের জন্য মিড-ওয়াইফারি বা ধাত্রী-সেবা ক্লিনিকে রেজিষ্ট্রেশন করেছিলাম। সেই ক্লিনিকে প্রথম দিকে দু-সপ্তাহ পর-পর আর ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে এলে সপ্তাহে একবার আমাদের যেতে হতো। মিড-ওয়াইফ যাবতীয় সব চেক আপ করে প্র‌য়োজন অনুসারে আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পাঠাতেন। মিড-ওয়াইফের চেক আপের একটা অংশ ছিল কাউন্সেলিং বা পরামর্শ। গর্ভবতী নারী বা তার পরিবার যাতে তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বাচ্চার জন্ম বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে, পরামর্শের উদ্দেশ্যে সেটা নিশ্চিৎ করা। কাউন্সেলিংগুলো গর্ভাবস্থা সম্পর্কে পুরোদস্তুর বায়োলজি ক্লাস। আমার স্ত্রী তো বটেই প্রতি সপ্তাহে আমাকেও সেই ক্লাসে অংশ নিতে হতো। কানাডার সমাজ যে জ্ঞান-নির্ভর তা অনুভব করেছিলাম।

সে বছর অক্টোবরে আমাদের ছেলের জন্ম হলো। আমার স্ত্রীর সাথে অপারেশন থিয়েটারে আমাকেও থাকতে হয়েছিল। পর্দার আড়ালে বসে ডেলিভারির সময়টায় আমার কাজ ছিল শক্ত করে স্ত্রীর হাত ধরে থাকা। বন্দোবস্তটা সেভাবেই করা। জ্ঞানের সাথে সাথে মানবিকতা এবং সেবাকে এরা সংস্কৃতির অংশ করতে পেরেছিল। পরবর্তি সময়ে যাত্রাপথে আমরা যখন সেই মিড-ওয়াইফারি ক্লিনিকের সামনে দিয়ে যেতাম, তখন সেই দিনগুলোর এবং সেবাদানকারী মানুষগুলোর কথা মনে পড়তো।

এদেশে এসে আরেকটা জিনিস আমার ভাল লেগেছিল। সেটা হলো নারীর ক্ষমতায়ন বা নারীর স্বাধীনতা। শুধু যে অফিস আদালতে বা মন্ত্রীসভায় এদেশে নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তা নয়। পেশায়, চিন্তায়, মননে এদেশের নারীরা পুরুষের সমান শুধু নয় বরং এগিয়ে। আমাদের দেশে যখন কোন মেয়ে তার পেশায় বা কাজে উন্নতি করে তখন তাকে পুরুষের সাথে পাল্লা দিতে হয়। পাল্লা দিতে গিয়ে তাকে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের মত হয়ে উঠতে হয়। এদেশে নারীরা শরীরের জড়তা কাটিয়ে উঠেছে বলেই হয়তো সহজাত নারীর গুনগুলো নিয়ে সবদিকে উৎকর্ষ সাধন করতে পারে। তাই দেখি অফিসের কাজে একসাথে অনেকদিকে খেয়াল রাখার বিষয়ে তাদের সমকক্ষ কোন পুরুষই নয়। কানাডার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমানে ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার) তখন নাফটা চুক্তি নিয়ে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে দফায় দফায় বৈঠক আর দরদস্তুর করছেন। তিন সন্তানের মা এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বৈঠকগুলোকে তার গর্ভাবস্থায় প্রথম সংকোচন (contractions), দ্বিতীয় সংকোচন, তৃতীয় সংকোচন এভাবে তুলনা করেছিলেন। এমন অদ্বিতীয় তুলনা আমি আর কখনো শুনিনি। নারীর স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে মানবাধিকার বলে কিছু নেই।

মাস্টার্স প্রোগামের মাঝামাঝি সময়ে আমি একটা কাজ পেলাম। বেল নামের একটা ফোন কোম্পানীতে কাজ, তবে আমার চাকরী পার্মানেন্ট নয় চুক্তিবদ্ধ। আপাতত ছয় মাসের চুক্তি, কাজ পছন্দ হলে তারা চুক্তির মেয়াদ বাড়াবেন। মাস্টার্স প্রোগামের কোর্সগুলো বিকেল বা সন্ধ্যায় নেবার সুযোগ ছিল, অতএব দেরী না করে কাজে ঢুকে পড়লাম। কাজে ঢোকার পরে ব্যস্ততা বাড়লো। বিকেল পর্যন্ত আপিস করে বাসায় ফিরি, তারপর সন্ধ্যায় ক্লাসে যাই। আগে বাসায় যে সময় দিতে পারতাম তা দেওয়া হয় না। তারপরও সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনগুলো মন্দ যায় না। গ্রীষ্মের বন্ধে বন্ধুরা মিলে সপরিবারে ঘুরতে বের হই। কখনো লেকের ধারে সৈকত বা উদ্যান, কখনো নায়াগ্রা ফলস বা অন্য কোন লেক, অথবা সরু পাথুরে নদীর তীরে বা জঙ্গলের ধারে আমাদের চড়ুইভাতি বসে।

অকূল পাথারে যে পাতার ভেলা ভাসিয়েছিলাম, জীবনের স্রোতে তা ভেসে চলেছে। ঢেউ একটু কমলে যখন নিজের দিকে তাকাই, তখন মনে হয় এ কোথায় এলাম, কোথায় যাচ্ছি।

"পাতার ভেলা ভাসাই নীরে,
পিছন-পানে চাই নে ফিরে॥
কর্ম আমার বোঝাই ফেলা, খেলা আমার চলার খেলা।
হয় নি আমার আসন মেলা, ঘর বাঁধি নি স্রোতের তীরে॥
বাঁধন যখন বাঁধতে আসে
ভাগ্য আমার তখন হাসে।
ধুলা-ওড়া হাওয়ার ডাকে পথ যে টেনে লয় আমাকে--
নতুন নতুন বাঁকে বাঁকে গান দিয়ে যাই ধরিত্রীরে॥" (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - গীতবিতান)

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৩

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ছবিটি এতো অসাধারণ হয়েছে যে, জাস্ট তাকিয়ে থাকার মতো।

পোস্ট দারুণ লাগলো।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৩:১৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মোহাম্মদ গোফরান ভাই মন্তব্যের জন্য। পোস্ট ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভাল থাকবেন।

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২৬

কামাল৮০ বলেছেন: কানাডায় বসবাসের কথা সুন্দর ভাবে লিখেছেন।এখানকার সমাজের একটা চিত্র তুলে ধরেছেন যথাযথ ভাবে। একটা অভিজ্ঞতা শুধু নাই,চাকরি খোজা।
গত রোববার হলো বৃহত্তর ঢাকা মেলা।অনেক আনন্দ হলো।।সামনে আছে বাংলা মেলা। আসলে হয়তো দেখবো কিন্তু চেনা হবে না।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৩:২৬

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কামাল ভাই মন্তব্যের জন্য। আপনি ঠিকই বলেছেন, চাকরি খোঁজার কষ্টের কথা এখানে সেভাবে উল্লেখ করা হয়নি। আর আমাদের ইমিগ্যান্টদের জন্য এটাই সব চেয়ে বড় কষ্ট।

চাকরির প্রস্তুতি হিসেবে অনলাইনে, ইউটিউব ভিডিও দেখে অনেকটা সময় দিয়েছিলাম। YMCA এর ক্যারিয়ার বিষয়ক ওয়ার্কশপ গুলোতে অংশ নিতাম। অনেক চাকরিতে দরখাস্ত করলেও, শুধুমাত্র দু-একটা রিক্রুটমেন্ট কোম্পানী ছাড়া তেমন কোন ডাক পেতাম না।

আশা করি আপনার সাথে হয়তবা কোন এক সময়ে হয়তো দেখা হয়ে যাবে। ভাল থাকবেন।

৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৩৯

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আকুল পাথারে যে পাতার ভেলা ভাসিয়েছিলাম. জীবন স্রোতে তা ভেসে চলছে। ঢেউ একটু কমলে যখন নিজের দিকে তাকাই, তখন মনে হয় এ কোথায় এলাম, কোথায় যাচ্ছি।

এ যে এক কঠিন প্রশ্ন। যা হোক মন খারাপ করবেন না, সামহ্যারইন ব্লগের সবাই আছে আপনার সাথে।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৪০

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জ্যাক স্মিথ ভাই।

লেখাটা যখন লিখছিলাম তখন উল্লেখিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের কলিগুলো মাথায় ঘুরছিল। তাই অনকেটা গানের সাথে একটা সংযোগ স্থাপনের জন্য ঐ লাইন গুলো লিখেছিলাম।

জীবনতরী আমাদের সবাইকেই ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে। ঢেউ যখন বেশি তখন নিজের দিকে তাকাবার অবসর পাওয়া যায় না। আর তুচ্ছ, ক্ষুদ্র মানুষ যেহেতু, তাই আমাদের জীবনতরী পাতার ভেলার মতই ক্ষণভঙ্গুর।

সে যাক, মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আর আপনার জন্য শুভকামনা।

৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ২:৩৬

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:



চিঠি পড়ে ভালো লাগলো।নারী স্বাধীনতার দৃশ্যপট চোখে ভাসতে লাগলো।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৪৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ শূন্য সারমর্ম। নারী স্বাধীনতার সৌন্দর্য কানাডার মত দেশে অনন্য। তবে এটা আমাদের দেশের অসুন্দরকেও মনে করিয়ে দেয় যেটা বিষাদময়।

ভাল থাকবেন।

৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ ভোর ৬:১৮

কাছের-মানুষ বলেছেন: এক সময় ইচ্ছে ছিল কানাডায় সেটেল হব, পরে বিভিন্ন কারনে আর হয়ে উঠেনি, সব সময় ঠান্ডা ব্যাপারটা আমার ভাল লাগে না!
মধ্যপাচ্যের কোথায় থাকতেন? মধ্যপ্রাচ্য দেশ থেকে কাছে হওয়ায় সেখানে নিশ্চয়ই ভাল লাগার কথা, তাছাড়া বাঙ্গালী কমিউনিটিও অনেক বড় সম্ভবত ।

আপনার প্রবাস জীবন ভাল কাটছে নিশ্চইয়ই। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:০৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: আন্তরিক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কাছের-মানুষ। কানাডায় আসলেই বেজায় ঠাণ্ডা।
মধ্যপ্রাচ্যে আমরা কাতারে ছিলাম প্রায় ছয় বছর। মধ্যপ্রাচ্যে সময়টা মন্দ কাটেনি। বেশ সামাজিকতা আর আন্তরিকতায় ভরা ছিল আমাদের সেই জীবন।
এখনকার প্রবাস জীবন একটু ভিন্ন, তবে মোটের উপর মন্দ নয়।

৬| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২৬

জুন বলেছেন: আপনার এই সিরিজটি খুব গুরুত্ব দিয়ে পড়ছি সাথে স্বামী সন্তানের সাথেও শেয়ার করছি শ্রাবণধারা। আপনি অত্যন্ত বাস্তব আর সঠিক তথ্য তুলে ধরেছেন যা বেশিরভাগ মানুষের কাছে শুনি না। তাদের জিজ্ঞেস করলে বলে এটা তো দেশ না একে বলতে পারেন স্বর্গ। যেই স্বর্গে গিয়ে আমার ছেলে ---- অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:১০

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ জুন আপু। নাহ কানাডাতে স্বর্গীয় কোন কিছুই তো এখনও চোখে পড়েনি। স্বর্গতো দূরের কথা, একটা দেশকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে মোটামুটি ভাবে চালাতে গেলেও অজস্র মানুষের নিরলস পরিশ্রমের প্র‌য়োজন। আর যারা এই পরিশ্রমের অংশ তাদের কাজ করে কূল পাবার কথা নয়। এতএব কোন দেশ স্বর্গ এই ধারনাটাই ফ্যালাসি।

আমাদের মত ইমিগ্রান্ট বা বিদেশী ছাত্রদের জন্য এই রথচক্রকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কষ্টটা খুব কঠিন সন্দেহ নেই। তবে আশা করি এই চাকাটা ঘোরা শুরু করলে, একসময় কষ্টটা কমে আসবে। আপনার ছেলের জন্য দোয়া আর শুভকামনা।

৭| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪২

অপ্‌সরা বলেছেন: জীবনের একটা সময় এসে হয়ত সবারই মনে হয়...... কতদিন আর এ জীবন ? কত আর এ মধু লগন......

অথচ শৈশব, কৈশোর আর তারুন্যের ছুটে চলার মাঝে সে কথা কারো মনেও পড়ে না।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৩২

শ্রাবণধারা বলেছেন: কি দারুন করেই না বললেন অপ্সরা! "কতদিন আর এ জীবন... কত আর এ মধু লগন?" এই প্রশ্ন সব রোমান্টিকের। আমার চিন্তা চেতনাতেও যেহেতু অনেকটা আপনার মত শৈশবে হান্স এন্ডারসন আর তারুন্যে রবীন্দ্রনাথ অতি প্রবল, তাই এই বয়সে এসে আমার মনেও এই অনুভূতি প্রবল।

তবে ইদানীং চেষ্টা করছি বুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক দর্শন পড়ে একটু শিখতে, যাতে এই ভীমরতিগুলো একটু কমে! :)

৮| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০৫

ঢাবিয়ান বলেছেন: আমার প্রতিবেশি একজন ইন্ডিয়ান ডাক্তার। খুব ভাল চাকুরি করতেন এখানে । বেশ কয়েক বছর প্রবাস কীবন কাটিয়ে এবার দেশে ফিরে যাচ্ছেন । খবরটা শুনে জিজ্ঞাসা করলাম হঠাত এই সিদ্ধান্ত কেন? তিনি বললেন যে , অনেক বছর দেশের বাইরে থেকেছেন , আর ভাল লাগছে না , তাই দেশে ফিরে যাচ্ছেন। দেশেও ভাল চাকুরি পেয়ে গেছেন । কথাটা শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়লাম। আমরা চাইলেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৫০

শ্রাবণধারা বলেছেন: খুব বড় সত্যি কথাটা অনেক সহজ করে বললেন ঢাবিয়ান ভাই।

বাংলাদেশটা ঘন কুয়াশার মত নিদারুন দূঃখ দিয়ে ঢাকা। দুঃশাসন, অপশাসন, অত্যাচার, নৈরাজ্য, বিচারহীনতা, অসহনশীলতা, নির্বিকারত্ব আর মিথ্যার বোঝা এত বড় হয়ে উঠেছে যে, সেখানে নিঃশ্বাস নেওয়াটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে পরিস্থিতি অনেকটা ভাল বলেই হয়তো সেই ডাক্তার ভদ্রলোক এমন সিদ্ধান্ত সহজে নিতে পেরেছেন, আমাদের জন্য যা কঠিন।

শুভকামনা রইলো।

৯| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৪৮

অপ্‌সরা বলেছেন: তুমিও আমার মত!!!!!!!!!!!!!!

তাহলে এখনও আনন্দ ফুরিয়ে যায়নি....... :)

যেমন আমি

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৫৯

শ্রাবণধারা বলেছেন: হুম, তবে বয়স যেহেতু হচ্ছে, এখন একটু ধর্ম-কর্মে মন দাও।

তবে ব্লগের ধার্মিকদের মত করে নয়, তাহলে দেখবে জাদিদ ভাইয়ের মত অকৃত্রিম লোকেরাও তোমার কথা শুনে ব্লগ ছেড়ে পালাচ্ছে। (একটু জোকস করলাম, আশাকরি কিছু মনে করবে না।)

১০| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৫

অপ্‌সরা বলেছেন: হাহা না আমি তেমন কিছু মনে করি না।

বিশেষ করে তোমার মত মানুষদের সাথে তো নয়ই....... :)

আর ধর্ম কর্ম আমি করি তো....... আমার মত করে :)

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:২৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: "ধর্ম কর্ম আমি করি তো.....আমার মত করে"। আবারো দারুন করেই বললে।

রোমান্টিকদের বকা দেওয়া আসলে বেশ কঠিন কাজ বটে, কেননা ধর্ম তাদের জীবনাচাঁরেরই অংশ। তারা নিজের মত করে আত্মানুসন্ধানে নিয়োজিত।

১১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৯

পোড়া বেগুন বলেছেন:
খুব ভালো বর্ণনা ও সুন্দর উপস্থাপনা।
মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:২৫

শ্রাবণধারা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই পোড়া বেগুন। শুভকামনা রইলো।

১২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ২:৫৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



কানাডায় আপনার প্রথম দিককার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
কানাডার স্বাস্থ্য সেবা, চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থার ভাল দিকগুলি কিভাবে
বাংলাদেশে ব্যবহার করা যায়, সেগুলি বাংলাদেশের আর্থ -সামাজিক ,
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিমাবদ্ধতা ও বাস্তবতার নিরীখে যতটুকু
সম্ভব খাপখাওয়ায়ে কিংবা যতার্থভাবে এডজাস্ট বা পুর্ণবিন্যাস করে
বাস্তবায়ন / প্রয়োগ করা যায় সে সব বিষয়ের উল্লেখ কিংবা
দিকনির্দেশনা দিয়ে আপনার কানাডার চিঠির পরের পর্বের
লেখায় অলোকপাত করলে অনেক উপকারে আসবে বলে
মনে করি । তবে, লেখায় লেখকের স্বাধিনতা সর্বাজ্ঞে ,
সেটাও সম্মানের সাথে সাদরে গৃহীত হবে ।

শুভেচ্ছা রইল

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:০৮

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আলী ভাই। আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন যে, কানাডার স্বাস্থ্য সেবা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মান অত্যন্ত উচু। যখন এগুলো দেখে দেশের সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার কথা মনে হয়, তখন ভাবি বৃটিশদের তৈরি করে দেয়া একটা কাঠামো কিন্তু আমাদের ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেগুলোর উন্নতি সাধন আমরা করতে পারিনি, বরং অবনতি হয়েছে।

সে যাক, আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনকে ধন্যবাদ। সামনের পর্বগুলো লেখার সময় আপনার উল্লেখিত পয়েন্টগুলো অবশ্যই মনে থাকবে।

১৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:১২

সোনালি কাবিন বলেছেন: ছবি ও লেখা মিলিয়ে মুগ্ধতা ।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২০

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সোনালি কাবিন।

১৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:০০

খায়রুল আহসান বলেছেন: অভিভূত হলাম আপনার টরন্টোর চিঠি ২ পড়ে। খুব সুন্দর লিখেছেন। চিঠিটা পড়ছিলাম আর কানাডার সাচকাচুয়ান প্রবাসী আমার ছেলের কথা ভাবছিলাম। সেও ২০১৭ তে সেখানে গিয়েছে। তাকেও নিশ্চয়ই একই ধরণের প্রতিকূলতার সাগর পাড়ি দিতে হয়েছে/হচ্ছে! সেও সেখানে গিয়ে এক পুত্রসন্তান লাভ করেছে।

আমি সপরিবারে ওমানের রাজধানী মাস্কাটে ছিলাম একটানা প্রায় সোয়া পাঁচ বছর, ১৯৮৭-৯২ এ। তখন সেখানে আমাদের সামাজিক জীবন অত্যন্ত প্রীতিময় ছিল। তখনকার কিছু অকৃত্রিম বন্ধু্ত্ব আজ অবধি অটুট আছে।

শিরোনামের ছবিটা খুব চমৎকার! আর খুব সুন্দর একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে চিঠিটা শেষ করেছেন। আটলান্টিকের ওপার থেকে আপনি আরও, আরও অনেক চিঠি লিখতে থাকুন, আর আমরা বুড়িগঙ্গার উত্তরে বসে সে চিঠিগুলো পড়তে থাকি!

চমৎকার এই পোস্টটিতে দশম প্লাস। + +

১১ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:১৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: লেখাটা ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম খায়রুল আহসান ভাই।

লেখাটা পড়ে আপনার ছেলের কথা মনে পরে যাওয়ায় মনে হল এই লেখা কিছুটা হলেও সার্থক হয়েছে। যদিও জানি এটা পড়তে পড়তে ছেলের কথা মনে পরায় আপনার মন খারাপই হয়েছে বেশি! কেন যে আমি আনন্দময় কিছু লিখতে পারি না, হাবিজাবি যা কিছু লিখি সেগুলো কেন যে বাংলা ছায়াছবির মত দুঃখময় হয়ে যায় এ এক রহস্য।

সে যাক, আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য অনেক দোয়া আর শুভকামনা রইলো।

১৫| ২০ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:১৪

আমি সাজিদ বলেছেন: প্রবাস জীবন ভালো কাটুক, নিরন্তর শুভকামনা।

২০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৩৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

১৬| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৭

মিরোরডডল বলেছেন:




এটা কি সিরিজ? তাহলে এই এক বছরে আর লেখা হয়নি যে!!!

প্রবাসীদের জীবনের গল্পগুলো অনেকটা একরকম। লেখাটা পড়ে আমিও আমার লাইফের সাথে মিল খুঁজে পেলাম।
স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যখন এখানে পড়তে আসি, সেই সময়গুলো ছবির মতো ভেসে উঠলো।

আমারও এখন ইচ্ছে করছে সেইসব দিনের কথা লিখতে :)

এই যে আমরা গল্প উপন্যাস পড়ি, মুভি দেখি, এ সবকিছু ছাড়িয়ে যায় যাপিত জীবনের কাহিনী।

জীবন নামের উপন্যাসে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত অদৃশ্য কালিতে কত গল্প রচনা হচ্ছে!

শ্রাবণের লেখাটা ভালো লেগেছে, পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।


১০ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:৫৬

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ মিরোরডডল সুন্দর মন্তব্যের জন্য। সত্যিই আমাদের প্রবাসীদের জীবনের গল্পগুলো প্রায় একই রকমের।

পরের একটা পর্ব বোধহয় এখানে দিয়ে দেয়া যায় যেটা ফেসবুকের একটা পোস্টে লিখেছিলাম। টরন্টো থেকে বাই-রোডে
শিকাগো ভ্রমনের সেই লেখাটা ছবি আপলোডের আলস্যের কারণে ব্লগে দেওয়া হয়নি। মনে হচ্ছে সেটা এখানে দিয়ে দেওয়া যায়।

আরেকটা লেখা এখন লিখবার চেষ্টা করছি পেটুক বাঙালীর ভোজনবিলাস সম্পর্কে। সে যাক, আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো। আপনার মৃত্যু বিষয়ক পোস্টটি বেশ ভালো লেগেছিল। মৃত্যুকে ভয় পাই বলে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছিলাম।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.