নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
" আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোক ঘরে বসিয়া নানারূপ কল্পনা করে, অবশেষে কার্যক্ষেত্রে নামিয়া ঘাড়ে লাঙল বহিয়া পশ্চাৎ হইতে ল্যাজমলা খাইয়া নতশিরে সহিষ্ণুভাবে প্রাত্যহিক মাটি-ভাঙার কাজ করিয়া সন্ধ্যাবেলায় এক-পেট জাবনা খাইতে পাইলেই সন্তুষ্ট থাকে......."
টরন্টো থেকে শিকাগো সাড়ে আটশো কিলোমিটারের পথ। কানাডার হাইওয়ে ধরে শিকাগো যাবার রাস্তা অতি চমৎকার। যাত্রাপথে তিনবার বিরতি দিয়ে শিকাগো যেতে আমাদের সময় লেগেছিল ১৩ ঘণ্টা। অবশ্য এর মধ্যে দুটি ঘণ্টা কালক্ষেপণ হয়েছিল বর্ডার পার হয়ে আমেরিকার ড্রেট্রয়েট শহরে সহযাত্রীদের হারিয়ে ফেলে পুনরায় খুঁজে পেতে।
শিকাগো নাম শুনলে প্রথমেই মনে পড়ে শিয়ার্স টাওয়ারের কথা। বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রকৌশলী এফ আর খানের নাম এই বহুতল অট্টালিকার সাথে জড়িত। ১৯৭৩ সাথে বিল্ডিংটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে পরবর্তী ২৫ বছর পর্যন্ত এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ইমারত। শিয়ার্স টাওয়ার নাম বদলে এখন হয়ে গেছে উইলিস টাওয়ার। এখন এটি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু না হলেও, গর্বিত স্থাপত্য আর গগনচুম্বী অট্টালিকার শহর শিকাগোতে এখনও এটি উচ্চতায় সর্বপ্রথম।
(বড় শহরগুলো পার হলে পথের ধারের ভূ-প্রক্বতি প্রায় একই ধরনের)
শিকাগো শহর আরো অন্তত দুটি কারণে বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে পরিচিত। আজ থেকে ১৩০ বছর আগে শিকাগোর বিশ্ব-মেলা উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বিশ্বের ধর্ম সংসদে স্বামী বিবেকানন্দ ভাষণ দিয়ে দেশে-বিদেশে বিখ্যাত হয়েছিলেন। সেই ভাষণটি না হলেও, ১৮৯৩ সালের বিশ্ব-মেলার কথা শিকাগোবাসী এখনো মনে রেখেছে। শিকাগোর পতাকায় চারটি তারার একটি শিকাগোতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব-মেলাকে নির্দেশ করে।
(শিকাগোর আকাশ-রেখা। বাম পাশের কালো উচু ইমারতটা শিয়ার্স টাওয়ার , নাম বদলে এখন যেটা উইলিস টাওয়ার)
শিকাগোর অদূরে আর্বানা নামের ছোট এক শহরে রবীন্দ্রনাথ কয়েক মাস অবস্থান করেছিলেন। সেটি ছিল ১৯১২-১৩ সালের কথা। সেসময় কবির সঙ্গে ছিল পুত্র রথীন্দ্রনাথ এবং পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। আর্বানায় ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাস রয়েছে। সেখানে কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথ কয়েক বছর আগে কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে এসেছিলেন। সেবার তাদের আর্বানাতে যাবার কারণ ছিল রথীন্দ্রনাথের স্নাতকোত্তর পড়ালেখা। সে বছরই আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে ১৯১৩ সালের নভেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পান।
(আর্বানায় বরীন্দ্রনাথ যে বাড়িতে ছিলেন)
আমাদের এক বন্ধু যখন শিকাগো যাবার প্রস্তাব করলো তখন মনে হলো সড়ক পথে দীর্ঘ সময় গাড়িতে বসে থাকার ধকল সহ্য করতে পারবো তো? এই বন্ধুটি যাবে শিকাগো শহর ছেড়ে আরও ৬৫০ কিলোমিটার দুরে আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। আমরা গেলে তারা কয়েকটা দিন শিকাগোয় কাটিয়ে তারপর যাবে মিনেসোটা। গত সোমবার ৭ তারিখে সরকারি ছুটি থাকায় শনি-রবি মিলে তিন দিনের ছুটি ছিল। ঠিক হলো শনিবার খুব সকালে আমরা তিনটি পরিবার যাত্রা শুরু করবো। দুই দিন থেকে মঙ্গলবারে ফিরে আসবো। যাত্রার প্রস্তুতি চললো কয়েক সপ্তাহ ধরে। হোটেল, এয়ার-বিএনবি আর যে জায়গাগুলোতে যেতে চাই তার টিকেট বুকিং এই আসল কাজ।
শনিবার সকাল আটটার আগে আগে আমরা বেরিয়ে পরলাম। আমাদের প্রথম যাত্রাবিরতি লন্ডন শহরের (কানাডায় লন্ডন নামের একটি ছোট শহর আছে) একটি ফাস্টফুড রেস্তোরাঁয়। হাইওয়ে ধরে ১২০-১২৫ কিলোমিটার বেগে গাড়ি ছুটছে। শহর থেকে কিছুদূর যেতেই দুপাশে সবুজ বনভূমি, মাঝে মাঝে ছোট লোকালয়। চারপাশে বিস্তীর্ণ ভুট্টা বা বার্লির মাঠ। মাঠের মধ্যে রোলারের মত গোল করে পেচিঁয়ে রাখা খড়ের স্তূপ।
লন্ডনে সকালের নাস্তা সেরে আমরা যখন আবার রওনা দিলাম তখন সাড়ে দশটা বেজে গেছে। সকালের ঠান্ডা আবহাওয়া আর নেই। আকাশ একটু মেঘলা, সাথে বাতাসের আর্দ্রতার কারণে গরম বোধ হচ্ছে। এখান থেকে আমাদের গন্তব্য কানাডা-আমেরিকার বর্ডার পেরিয়ে নিকটবর্তী ড্রেট্রয়েট শহরে। অল্প কিছু সময় ড্রেট্রয়েট শহর ঘুরে দেখে কোন একটা রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাওয়া সেরে নেব এই ছিল আমাদের পরিকল্পনা।
একটানা হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালিয়ে কানাডার বর্ডারের শেষ মাথার শহরে আমরা পৌঁছলাম। শহরের নাম উইন্ডসর। দুই লক্ষাধিক মানুষের শহরটাকে মনে হলো পরিপাটী সুন্দর। কোথাও কোলাহল নেই, নাগরিক ব্যস্ততা নেই। তবে এ শহরের একটা রাস্তায় আজ যানবাহনের ভিড় লেগে গেছে। তিন দিনের ছুটিতে আমাদের মত অনেকে যাচ্ছে আমেরিকায় বেড়াতে। একটা ব্রিজের উপর দিয়ে ড্রেট্রয়েট নদী পার হয়ে আমাদের আমেরিকায় ঢোকার কথা। জিপিএসে ডাউনটাউন ড্রেট্রয়েটকে গন্তব্য উল্লেখ করার কারণেই বোধহয় আমরা গেলাম নদীর নিচের টানেল দিয়ে।
টানেলে ওঠার আগে আমেরিকান কাস্টমস ও বর্ডার পুলিশ আমাদের পাসপোর্ট স্ক্যান করে জানতে চাইলো, আমাদের কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র আছে কি না। মনে মনে ভাবলাম, গাড়ি ভর্তি যা কিছু আছে তাতে করে একটা প্লাটুনের এক সপ্তাহের রসদ হয়ে যাবে, তবে এ যাত্রায় বন্দুকটাই শুধু আমাদের সাথে নেই।
টানেল পার হয়ে কিছুদূর যেতেই ডাউনটাউন ড্রেট্রয়েট। ড্রেট্রয়েট আমেরিকার পুরাতন শহর। এক সময় গাড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই শহরটি এখন অনেকটা পরিত্যক্ত। আমাদের গাড়িগুলো একে অপরকে অনুসরণ করে চললেও বর্ডার এবং টানেলে যানবাহনের ভিড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। ফোনে আমেরিকায় ব্যবহারের উপযুক্ত প্যাকেজ নেওয়া সত্ত্বেও কোন কারণে কারো ফোনেই নেটওয়ার্ক কাজ করছিল না। যোগাযোগ না করতে পেরে, আমরা একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনর্থক ড্রেট্রয়েট শহরের এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। অবশেষে ফোনের নেটওয়ার্ক সচল হলো। হারিয়ে যাওয়া সহযাত্রীদেরও খুঁজে পেলাম।
ডেট্রয়েটের কাছে ডিয়ারবর্ন নামের ছোট এক শহরে দুপুরের খাবারের বিরতি শেষে আমরা যখন আবার রওনা দিলাম তখন ঘড়ির কাটা পৌনে চারটা। ততক্ষণে আমরা কেবল ৩৫০ কিলোমিটার রাস্তা পার হয়েছি। সামনে তখনও ৫০০ কিলোমিটার পথ।
হাইওয়েতে কিছুদূর পরপর রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। চার লেনের রাস্তায় কোনো কোনো জায়গায় শুধু দুই লেন খোলা রয়েছে। রাস্তা যখন শহরের উপর দিয়ে পার হচ্ছে তখন সেটা চওড়া হয়ে কোথাও ছয় বা আট লেনের। হাইওয়ের দুপাশে কোথাও অগভীর বনভূমি, কোথাও বা বিস্তৃত ভুট্টার ক্ষেত। হাইওয়ের উপর থেকে লোকালয় খুব বেশি চোখে পড়লো না। আমরা যাচ্ছি আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের উপর দিয়ে। মিশিগান পার হয়ে ইন্ডিয়ানা, তারপর ইলিনয়। শিকাগো শহর এই ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। আমরা যে রাস্তা দিয়ে চলেছি সেখান থেকে সুবিশাল হ্রদ লেক মিশিগানের দূরত্ব বেশি নয়। রাস্তার পাশের প্রকৃতি যতটুকু দেখা যায় তা দেখে মনে হলো টরন্টো বা তার আশেপাশের জায়গাগুলো থেকে আমেরিকার এই অঞ্চলটি খুব ভিন্ন নয়।
রাস্তায় আরেকবার কফি বিরতি নিয়ে সন্ধ্যার অল্পক্ষণ পরে আমরা শিকাগো পৌঁছলাম। তখন সেখানে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি । শিকাগোর রাস্তা টরন্টোর রাস্তার চেয়ে জটিল। রাস্তা ভুল করার সম্ভাবনা খুব বেশি। আর রাস্তা ভুল করা মানেই গন্তব্যে পৌঁছার সময় বেড়ে যাওয়া। হাইওয়ে থেকে টোলের রাস্তা, তারপর আরও কয়টি রাস্তা পেরিয়ে যখন হোটেলে পৌঁছলাম তখন আমরা বেশ ক্লান্ত। শেষের দুই ঘণ্টা মনে হচ্ছিল রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না।
পরের দিন সকালে আমরা গেলাম মিলেনিয়াম পার্কে। এ পার্কটি শিকাগো শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। আবহাওয়া সেদিন মেঘলা। শিকাগোকে বলা হয় ঝড়ো বাতাসের শহর। আজ অবশ্য ঝড়ো বাতাস নেই, তবে মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। কি একটা কনসার্ট উপলক্ষ্যে সেদিন শিকাগোর ডাউন টাউনে বহু মানুষের সমাগম হয়েছে। টহলরত প্রচুর পুলিশ চোখে পড়লো। মিলেনিয়াম পার্কের ক্লাউড গেট বা বিন এখানে একটি দর্শনীয় স্থাপত্য। মিলেনিয়াম পার্ক থেকে শিকাগোর সুউচ্চ সব টাওয়ারগুলো চোখে পড়ে। শিম বা উপবৃত্তাকার আকৃতির আয়নার মতো পৃষ্ঠাটি শিকাগোর আকাশ রেখাকে প্রতিফলিত করে। আবার উপবৃত্তাকার বলে প্রতিফলনটি কেমন মোচড়ানো দেখায়। এই বিনের পাশে একটি এম্পিথিয়েটার। এম্পিফিয়েটারের সামনের প্যাভিলিয়নের নকশা ঝিনুকের খোসার মত। পুরো কাঠামোটি স্টিলের পাইপ দিয়ে ছাতার শলাকার মত করে ঢাকা। মনে হলো এই সব গগনচুম্বী অট্টালিকার স্থাপত্য শৈলী আর ইস্পাতের কাঠিন্য এই হলো ডাউন টাউন শিকাগোর মূলভাব।
ডাউন টাউনের কাছেই লেক মিশিগানের তীরে নেভি পিয়ার। অনেকখানি জায়গার উপরে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, পার্ক আর তার একপাশে তিন হাজার ফুট লম্বা একটা নাগরদোলা বা স্কাই-হুউল। এ ধরনের নাগরদোলা প্যারিস, লন্ডন বা অন্য অনেক বড় শহরে দেখা যায়। এ জায়গাটিতেও আমাদের মত প্রচুর দর্শনার্থী। আমরা অবশ্য এখানে খুব বেশি সময় থাকলাম না।
দুপুরে হোটেল ছেড়ে দিয়ে আমরা গেলাম এয়ার বিএনবির দুদিনের জন্য ভাড়া করা বাসায়। উইনফিল্ড বলে জায়গাটি ডাউনটাউন থেকে ১ ঘণ্টার দূরত্বে। লোকালয়টি এই দুপুরে একেবারে শুনশান হয়ে যেন দিবানিদ্রায় মগ্ন। একটি পুরোনো ধাঁচের কাঠের বাংলো বাড়ি, ভিতরে ঢুকে দেখা গেল সেটি পরিপাটি করে সাজানো। মূল ফ্লোরে তিনখানা শোবার ঘর। বেজমেন্ট বা নিচতলায় বাচ্চাদের ঘর, ছোট অফিস রুম ছাড়াও খেলার জায়গা আছে। বাড়ি দেখে সবার পছন্দ হলো।
দুপুরের খাবার শেষ করে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। গন্তব্য সেই ডাউন-টাউনে। শিকাগো নদীতে আমাদের নৌকা ভ্রমণের টিকেট কাটা ছিল। নৌভ্রমণের উদ্দেশ্য নদীর দুপাশের সুউচ্চ দালানগুলোর স্থাপত্য শৈলী সম্পর্কে পরিচিত হওয়া। শেষ বিকেলের আলোয় দেখা শিকাগোর আকাশ রেখা হয়ত আমাদের অনেক দিন পর্যন্ত মনে থাকবে। অনেক উঁচু দালান। দেখে মনে হয় একটা আরেকটার সাথে পাল্লা দিচ্ছে। নৌকা থেকে দেখলে ট্রাম্প টাওয়ারকে (ডোনাল্ড ট্রাম্পের মালিকানাধীন একটি হোটেল) সবচেয়ে উঁচু মনে হয়। গাইড টুর জানালেন, তা নয়। শিয়ার্স টাওয়ার এখন পর্যন্ত শিকাগোর সবচেয়ে উঁচু দালান। টুরের দেড় ঘণ্টা সময়ের পুরোটাই গাইড-টুর কথা বলছিলেন। তিনি দুই বার এফ আর খানের নাম বললেন। শিয়ার্স টাওয়ার ছাড়াও আরও একটি ঐতিহাসিক দালানের মূল প্রকৌশলী তিনি।
পরের দিন সকালে আমরা গেলাম শেড অ্যাকোয়ারিয়াম নামে একটা জায়গায়। ডাউন টাউনের কাছে, লেক মিশিগানের সাথে লাগোয়া অ্যাকোয়ারিয়াম। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী, ডলফিন, পেঙ্গুইন, এমন কি বেলুগা তিমি বলে ছোট আকৃতির তিমি মাছ এখানে আছে। তিন ঘণ্টা ঘুরে ঘুরে আমরা সব দেখে শেষ করতে পারলাম না। এখান থেকে এয়ার-বিএনবির ভাড়া বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল। সেদিন বিকেলে আমাদের আর কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না। পরিবারের মেয়েরা গেলেন শপিংয়ে।
শিকাগোর ডিপ ডিশ পিজা খুব বিখ্যাত। রাতের ডিনারে সেদিন আমাদের আয়োজন ছিল স্থানীয় দোকান থেকে কেনা ডিপ ডিস পিজা। বাচ্চাদের সাথে সাথে বড়রাও এই পিজা খুব আমোদ করে খাওয়া হলো। এই পিজার যেটা বৈশিষ্ট্য সেটা হল এই পিজাটা বেশ পুরু এবং বেশি করে চিজ দেয়া। সম্ভবত বেশি চিজের কারণেই পিজাটা অনেক রসালো এবং বেশ সুস্বাদু।
পরের দিন এগারোটায় আমরা রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। আমাদের ভ্রমণ সঙ্গীদের একটি পরিবার গেল উত্তর পশ্চিমে মিনেসোটার দিকে, আমরা পূবে টরন্টো অভিমুখে রওনা হলাম। ফেরার পথে গেলাম ইন্ডিয়ানা ডিউনস ন্যাশনাল পার্কে। চারপাশের ঠান্ডা জলবায়ুর মাঝখানে কি করে যে এখানে একটা বালিয়াড়ি তৈরি হল সে এক বিস্ময়। এই বালিয়াড়ির পাশেই লেক মিশিগানের মনোরম বালুকাময় সৈকত। আজকের গরম আবহাওয়া লেকের জলে সাঁতার কাটবার উপযুক্ত ছিল। কিন্তু হাতে তখন আর সময় নেই। আমাদের তখন বাড়ি ফেরার তাড়া।
(ইন্ডিয়ানা ডিউনস ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে লেক মিশিগানের সৈকত)
(গত বছর আগস্ট মাসের ৫ থেকে ৮ তারিখে ছিল এই ভ্রমনের সময়। ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উপরেরটা সহ এম্পিথিয়েটার, রিভার ক্রুজ, আর্বানায় রবীন্দ্রনাথ যে বাড়িতে ছিলেন মোট ৬টি ছবি নেট থেকে ধার করা, বাকিগুলো মোবাইল ফোনে আমার কাঁচা হাতের তোলা!)
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:২৮
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ঝটপট ভ্রমণ করতে পেরেছেন জেনে আপ্লুত।
সত্যি তাই! এধরনের ট্যুরগুলো একটু বেশি সময় নিয়ে করতে পারলে ভালো হয়। বাড়ি ফিরে মনে হয় কত কিছু দেখা হলো না। যেমন এই ট্যুরে শিকাগোর আর্ট ইন্সটিটিউটে যাওয়া হয়নি। এখানেই স্বামী বিবেকানন্দ তার শিকাগো ভাষণ দিয়েছিলেন। সে জায়গাটি এখন শিল্পকর্ম সংগ্রহের জন্য সুপরিচিত। ভ্যান গগের আঁকা বিখ্যাত কিছু চিত্রকর্ম সহ আরো বহু বিখ্যাত কিছু ছবি এখানে আছে।
২| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। নিজেরা গাড়ি চালিয়ে গিয়েছিলেন? নিশ্চয়ই প্রচণ্ড ধকল গেছে তাহলে।
২য় ছবিটা দেখে মনে হলো বাংলাদেশের কোনো এক নদীপাড়ের ছবি। আসলেই, দালান-কোঠা, ঘরবাড়ি বাদ দিলে পৃথিবীর সব ভূ-প্রকৃতি অভিন্ন।
এফ আর খানের নাম শুনে উইকি থেকে তার সম্পর্কে একটু খোঁজ নিলাম। বাংলার গর্ব ছিলেন তিনি। শিয়ার্স টাওয়ারে তার কন্ট্রিবিউশন কী ছিল?
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০২
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
হ্যা, গাড়ি চালিয়ে গিয়েছিলাম, তবে একটুও ধকল যায়নি। বরং এভাবে যাওয়াতে আমাদের সুবিধে ছিলো নিজের ইচ্ছে মত ভ্রমণ পরিকল্পনা করার। উত্তর আমেরিকায় মানুষ দীর্ঘ গাড়ি ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। সে হিসেবে ১০-১২ ঘন্টার ভ্রমণ নগন্য বলা চলে।
আমরা ছোটবেলায় জানতাম যে শিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতি ছিলেন এফ আর খান। এখন জানি যে শিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতি ব্রুস গ্রাহাম নামের একজন কলম্বিয়ান-আমেরিকান স্থপতি, যিনি এফ আর খানের সহকর্মী এবং অতি নিকট বন্ধু ছিলেন। এফ আর খান ছিলেন শিয়ার্স টাওয়ারের মূল প্রকৌশলী যিনি এই বিল্ডিংয়ের নতুন ধরনের কাঠামোটি আবিষ্কার করেন। তাই শিয়ার্স টাওয়ারের সাথে তার নাম স্ট্র্যাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার বা কাঠামো-প্রকৌশলী হিসেবে অতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।
৩| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: শুক্রবার সকালবেলা সুন্দর একটি পোষ্ট পড়লাম।
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৩
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৪| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
সুন্দর । খুব বিস্তারিত বর্ননা দিয়েছেন। তাই বেশি ভাল লেগেছে।
লম্বা টুরে একাধিক ফ্যামিলি হলে মজা প্রচুর বেশি। নির্জন বনভুমির ভেতর রাস্তায় ভয়ও কমে। তবে ৩ টি আলাদা গাড়ী নেয়াটা কিছুটা বোকামি, মজা কম। ৩ গাড়ী না নিয়ে একটি ৮-১০ সিটের একটা বড় গাড়ী ভাড়া নিলে মজাও বাড়তো, নিজের গাড়ীর উপর চাপ কমতো মাইলেজও।
আমিও আপনার মত দুরপাল্লার ট্রিপে গেলে দুই বা তিন ফ্যামিলি এক গাড়ীতেই যাই। ৮ সিটার ফোর রানার, বা হোন্ডা পাইলট, সাথে কয়েক মন খাবার। পালাক্রমে ৩ ধন্টা পর পর ড্রাইভার বদল, এতে একজনের উপর চাপ কমে। কোক পানি গ্যাস স্টেষন থেকে। হোটেলের চেয়ে এয়ারবিএনবি অনেক ভালো, বাহিরের ব্যায়বহুল জাঙ্কফুড না খেয়ে দেশী খাবার স্বাধীন ভাবে।
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৯
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
হ্যা, সত্যিই তাই! এক গাড়িতে যেতে পারলে এ ধরনের ভ্রমণের আনন্দ আরো বাড়ে সন্দেহ নেই। তার উপর পালা করে গাড়ি চালানো যায়।
"সাথে কয়েক মন খাবার" - আমাদের ভ্রমণেও ঘটনা প্রায় একই ঘটেছিলো। গাড়ি নিয়ে যাবার এটা একটা বড় সুবিধা।
৫| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১২
রিজভী নেওয়াজ বলেছেন: অসাধারণ
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১০
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৬| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৫
নূর আলম হিরণ বলেছেন: বর্ননা ভালো হছে। পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে জার্নিটাও করে ফেলেছি।
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১৩
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
এই ভ্রমণ বৃত্তান্ত যদি কিছুটা হলেও আপনাকে ভ্রমণের অনুভূতি দেয় তাহলে সেটা আমার জন্য আনন্দের কারণ হবে!
৭| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২১
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
ছবিগুলো দেখেছি।
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১৪
শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ। অবশ্য খুব ভালো ছবি দিতে পারিনি।
৮| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১৭
মিরোরডডল বলেছেন:
শ্রাবণ, ভ্রমণ পোষ্ট এবং ছবি ভালো লেগেছে। অনেক কিছু জানলাম।
কিন্তু আছে একটা, ছবিগুলো ম্যাক্সিমাম সিটি ভিউ।
এতো লং জার্নিতে আরও কিছু ন্যাচারাল ভিউ এক্সপেক্ট করেছিলাম।
ইন্ডিয়ানা ডিউনস ন্যাশনাল পার্কের সেইরকম কিছু ছবি থাকতে পারতো।
শহরের চেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেশি ভালো লাগে।
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৪০
শ্রাবণধারা বলেছেন: একেবারে খাটি কথা মিরোরডডল!
ব্যক্তিগত ভাবে দালান-কংক্রিট-ইস্পাত আমার পছন্দ নয়। ঘুরতে গেলে আমার ভালো লাগে প্রকৃতি - খোলা হাওয়ার মাঠ, শান্ত লোকালয়, গাছপালা, অরণ্য, পাহাড়, লেক, নদী, সমূদ্র এবং বহু বিচিত্র ভূ-প্রকৃতি।
শিকাগোর শহরের ভিতরের কথাটাই আমার মনে হয়েছে ইস্পাত আর লৌহ কঠিন অতি উচু স্কাই-স্কাপার। অবশ্য মূল শহর ছেড়ে একটু বাইরে গেলেই এর রূপটি অন্যরকম- শান্ত এবং নীরব। আমাদের ভ্রমণে সেই দিকটি খুব একটা বেশি উদঘাটনের সময় বা সুযোগ ছিলো না।
ইন্ডিয়ানা ডিউনস ন্যাশনাল পার্কের প্রকৃতি কিন্তু বেশ রুক্ষ। অবশ্য অনেক বড় জায়গা জুড়ে এই পার্ক আর তার খুব অল্প একটু অংশ আমরা দেখেছি মাত্র।
৯| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৫
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: এসব পোস্ট দিবেন রাত ১২ টার পর। একটা ফীল নিয়ে পড়া যায় দারুণ পোস্টের সাথে ছবি। জাস্ট ওয়াও।
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৭
শ্রাবণধারা বলেছেন: ভ্রমণ সংক্রান্ত পোস্ট যে রাত ১২ টার পরে দিতে হয় এটা কিন্তু জানা ছিলো না! আপনার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে।
পোস্টটি যদি আপনাকে কিছুটা হলেও সেই "ফীল" দেয়, তবে সেটা আমার জন্য আনন্দের কারণ হবে।
অনেক ধন্যবাদ।
১০| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৭
কামাল১৮ বলেছেন: বিস্তারিত লিখেছেন বলে পড়ে ভালো লাগলো।
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। লেখাটি ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম।
১১| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৫৩
অপু তানভীর বলেছেন: সাড়ে আটশ কিলোমিটার মাত্র ১১ ঘন্টায় ! ঢাকা থেকে আমাদের বাসা মাত্র আড়াইশ কিলো যেতে সময় লাগে সাড়ে ৫ ঘন্টা !
১৬ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:১৬
শ্রাবণধারা বলেছেন: হ্যা, এখানে হাইওয়ে ধরে অন্য শহরে দ্রুত চলাচলের সুবিধা আছে।
অনেক ধন্যবাদ।
১২| ১৬ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:৩১
আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: ছবি গুলো চমৎকার। লেখাটাকে জিবন্ত করে তুলেছে।
১৬ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:৪০
শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
১৩| ১৬ ই মার্চ, ২০২৪ ভোর ৫:৪৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর।
১৬ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:২৪
শ্রাবণধারা বলেছেন: পাঠ এবং অনুপ্রেরণাময় মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ!
১৪| ১৬ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:৩০
সোহানী বলেছেন: সেদিন অন্য একটা শহরে গেছি ৩+৩=৬ ঘন্টা ড্রাইভ করে। তারপর সারাদিন বিছানায়
কেমনে আপনার এতো লম্বা ড্রাইভ করেন!!!!!!!!!!!
১৬ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:০০
শ্রাবণধারা বলেছেন: ৬ ঘন্টা ড্রাইভ আপনাকে বেশ ক্লান্ত করেছে শুনে দুঃখিত হলাম।
সবাই যে লং-ড্রাইভ পছন্দ করেন তা নয়। তবে বিরতি দিয়ে দিয়ে ড্রাইভ করলে দীর্ঘ যাত্রাপথ সহনীয় হতে পারে। আমাদের ভ্রমণে বেশ কিছু দীর্ঘ যাত্রা বিরতি ছিল। তাই এটা ক্লান্তিকর ছিল না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১৫| ১৬ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
১৭ ই মার্চ, ২০২৪ ভোর ৪:৩০
শ্রাবণধারা বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ।
১৬| ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৮
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
উন্নত দেশগুলোতে ভ্রমণ করে নিশ্চয়ই খুব আনন্দের ব্যাপার।
আপনার নিশ্চয়ই অনেক ভালো লেগেছে ।
আপনার এ ধরনের ভ্রমণ আরো হোক।
নিরাপদ হোক সেই কামনাই করি।
১৮ ই মার্চ, ২০২৪ ভোর ৪:৪৭
শ্রাবণধারা বলেছেন: সত্যি বলতে কী আমার মতে এশিয়ার (বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) দেশ গুলোতে ভ্রমণ বেশি শিক্ষনীয়। ফিলিপিনস, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া (ইন্দোনেশিয়াটা আমি মিস করেছি, যাওয়া হয়নি কখনো), ভ্রমণ আমার ভিতরে যতটা রেখাপাত করেছে, ইউরোপ বা উত্তর-আমেরিকা ততটা নয়।
উত্তর আমেরিকার ভূ-প্রকৃতি অতি বৈচিত্রময়। খুব যে বেশি দেখেছি এখন পর্যন্ত তা নয়। তবে রকি মাউন্টেন ভ্রমণ মনের ভিতরে অতি উজ্জ্বল হয়ে আছে। সম্ভবত প্রকৃতি দেখতে চাইলে উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা আর মানুষের জীবন দেখতে চাইলে এশিয়া ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে উপযুক্ত। এ আমার একান্ত নিজস্ব মত অবশ্য...।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:২১
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার সাথে আমিও ঝটপট ভ্রমন করে নিলাম।
তবে এসব ভ্রমন একটু রয়ে সয়ে করলে ভাল হয়, খুব বেশী দৌড়ের উপর হয়ে গেছে।