নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...............

শ্রাবণধারা

" আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোক ঘরে বসিয়া নানারূপ কল্পনা করে, অবশেষে কার্যক্ষেত্রে নামিয়া ঘাড়ে লাঙল বহিয়া পশ্চাৎ হইতে ল্যাজমলা খাইয়া নতশিরে সহিষ্ণুভাবে প্রাত্যহিক মাটি-ভাঙার কাজ করিয়া সন্ধ্যাবেলায় এক-পেট জাবনা খাইতে পাইলেই সন্তুষ্ট থাকে......."

শ্রাবণধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি একজন কানাডিয়ান?

৩০ শে জুন, ২০২৪ রাত ১০:৩৮


আগামীকাল, পয়লা জুলাই কানাডা ডে, সরকারি ছুটির দিন। ইতিহাসের এই দিনে কি যে হয়েছিলো সেটা আমার জানা নেই। গুগল করা যায়। গুগল, তুমি কি জানো পয়লা জুলাই কেন কানাডা ডে পালন করা হয়? অন্তর্জাল জানালো ১৮৬৭ সালের এই দিনে কানাডার বিচ্ছিন্ন প্রদেশগুলো এক হয়েছিলো। আগে সেগুলো ছিলো ব্রিটিশদের এক-একটি আলাদা আলাদা কলোনি, ইতিহাসের সেই দিনটি থেকে প্রদেশগুলো হল সঙ্ঘবন্ধ রাজ্য।

শনি-রবিবার মিলিয়ে গ্রীষ্মের তিন দিনের ছুটিতে মানুষের নানা রকম ভ্রমণ পরিকল্পনা থাকে। কেউ তিন-চার ঘণ্টা ড্রাইভ করে যায় লেকের ধারে কটেজে দিন কাটাতে। নির্জন বনের ধারে অবসর কাটে ছোট সরু নৌকা নিয়ে লেকের জলে ছল-ছল শব্দ তুলে ঘুরে বেড়িয়ে। কেউ বৃক্ষে ছাওয়া বাগানের শীতল ছায়ায় হ্যামোক পেতে শুয়ে বসে বই পড়ে কাটিয়ে দেয় বেলা। কেউবা ব্যাগপ্যাক পিঠে বেঁধে যায় পাহাড়ে ঘুরতে, সেখানে পাথুরে ঝরণার পাশ ঘেষে ট্রেইল ধরে মাইলের পর মাইল হেঁটে যায় উঁচুতে। পাহাড়ের চূড়া থেকে নীলাভ-সবুজ রঙের লেকগুলোকে মনে হয় "জীবনের সমুদ্র সফেন"।

আমাদের মতো অভিবাসী পরিবারগুলো, যাদের অনেকগুলো ডলার খরচ করে লং-উইকেন্ডকে স্মৃতিময় করে রাখার আকাঙ্ক্ষা নেই, তারাও বেড়িয়ে পড়ে দেড়-দুই-তিন ঘণ্টার দূরত্বে, দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসার ভ্রমণে। যাওয়ার আগে বাড়ির কাছের দেশি রেস্তোরাঁ থেকে গাড়িতে তুলে নেই বিরিয়ানির ট্রে। সাথে ওয়ান-টাইম থালা-বাসন, কোক-পেপসি-পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট, আর ঘাসের উপর বিছানো যায় এমন মাদুর। এক বিরিয়ানিতে তিন-চারটি পরিবারের দুপুরের খাবার দিব্যি হয়ে যায়। লেকের জলে শরীর-ঢাকা ভারী কাপড় পরে দাপাদাপি করে ক্লান্ত হয়ে বিরিয়ানি মুখে দিতেই কেমন মাখনের মতো গলে যায়। লেকের জলের পাশে খোলা উদ্যানের বেঞ্চ দখল করে আমরা যখন সেই এলাচ-লবঙ্গ-জাফরানের ঘ্রাণ ওঠা বিরিয়ানি গপাগপ খাই, তখন অন্য জাতির লোকেরা জাফরানের ঘ্রাণেই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, আমাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে। আমরা অবশ্য পরোয়া করি না। এদেশের সকলেই আমাদের মতো ইমিগ্র্যান্ট!

এ দেশের জাতীয় সংগীতটা যেন কী? স্ত্রীকে ডেকে বলি, "কানাডা ডেতে একটু জাতীয় সঙ্গীতটা গেয়ে শোনাও দেখি।" সে প্রথমে সতর্ক হয়ে ওঠে। মতলবটা যে কি, সেটা বোঝার চেষ্টা করে। পরে যখন বোঝে যে বিপদ কিছু নেই, তখন সুর করে গেয়ে ওঠে, "ও কানাডা.."। পুরো গানের সে শুধু এই দুটি শব্দই বলে!

- এর পরে কি?
- তুমিই বল না, এর পরে কি?
- আমি কি আর জানি যে এর পরে কি।
- তাহলে আমিই বা জানবো কি করে?
- কেন তুমি না অনেকটা মুখস্থ করেছিলে নাগরিকত্বের পরীক্ষার সময়ে?
- সে কি আর মনে আছে।
- না, ভেবেছিলাম তোমার স্মৃতিশক্তি তো ভালো, হয়তো তোমার মনে থাকতে পারে আরও কিছুদূর।

কোভিডের সময়ে আমাদের নাগরিক হয়ে ওঠার পরীক্ষা ছিল। সে সময় ইংলণ্ডের রানীর প্রতি আনুগত্য, কানাডার ইতিহাস, এ দেশের আইন, প্রজাতন্ত্র, আদিবাসী সমাজ বিষয়ে একটি পুস্তিকা পড়ে অনলাইনে কুড়ি-পঁচিশ মিনিটের একটা পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। পুস্তিকা পড়তে বা পরীক্ষা দিতে মন্দ লাগেনি, কিন্তু এর আগে যখন সিটিজেনশিপের আবেদনপত্র পূরণ করতে হয়েছিলো তখন বিরক্ত লেগেছিল।
অভিবাসী-নীতিগুলো উন্নত দেশগুলোর বানানো কৌশল বই আর কিছু নয়। এই কৌশলে তারা দেশের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে। অভিবাসীদের কাজ এদের শ্রমিকের স্বল্পতাকে পূরণ করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা আর নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া। বিনিময়ে আমরা এদের লেকের জলে দাপাদাপি করার সুযোগ পাই, ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে এমন বহু-লেনের রাস্তায় গাড়ি দাবড়িয়ে পিকনিক স্পটে যাই। আমাদের সন্তানেরা বিনে-মাইনের মানসম্পন্ন স্কুলে পড়ে। আবার টাকার অভাবে যেন বিনা চিকিৎসায় মরে যেতে না হয়, সেরকম এক ব্যবস্থা যার নাম "ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার" এমন প্রশংসনীয় বন্দোবস্তের অন্তর্ভুক্ত হই ।

এ সব সুবিধা প্রাপ্তির বিনিময়ে সকল শ্রমিকের বেতন থেকে আয়কর বাবদ বড় অংকের টাকা কাটা যায়। প্রজাদের টাকাগুলো যখন এক পাত্রে জমা হয়ে শিক্ষা-চিকিৎসা-নিরাপত্তা জালের মতো অনেকগুলো মানব-হিতকর সুবিধা হয়ে ফিরে আসে, তখন কৃত্রিম ভাবে হলেও এদের সমাজে এক ধরনের সাম্যের সৃষ্টি হয়। তখন মনে হয় দেশটিতো বেশ, আমি নাই বা পারলাম এদের সংস্কৃতিতে মিশতে!

আমাদের মতো শ্রম দিতে আসা শ্রমিকদের নিয়ে এদের নীতি, অর্থনীতির একটি মাত্র অংশ। অর্থনীতি কেন্দ্রিক অভিবাসন-নীতির আরেকটি অংশে আছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কুখ্যাত অপরাধী থেকে শুরু করে অসৎ রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, আমলা, সরকারি চাকুরেদের অবৈধ অর্থ নিরাপদ স্বর্গে টেনে নিয়ে আসা। কালো টাকা বাংলাদেশে ট্যাক্স দিয়ে সাদা করা যায়। কিন্তু গরীব দেশের ট্যাক্স দিয়ে লাভ কি? বরং কোনো এক ভাবে কানাডায় টাকা পাচার করা গেলে এমন স্বর্গ আর নেই। বিষয়টি নিয়ে এদের উচ্চবাচ্য নেই বরং একধরনের নীরব সমর্থন আছে। গরীর দেশের সম্পদ তাদের দেশে আসলে সব দিক থেকেই তাদের লাভ। অর্থনীতি চাঙ্গা হয়।

নাগরিক হয়ে গেলে আস্তে আস্তে নিজের দেশ থেকে শিকড়টা আলগা হতে থাকে, আর বাড়তে থাকে এখানকার শিকড়। তখন নিজের বাড়িটাকে কেমন ছোট ছোট মনে হয়। মনে হয়, ইস যদি একটা বড় বাড়ি কেনা যেত! বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডটা যেন একটু বড় হয়, গ্রীষ্মের দিনগুলোতে বাচ্চারা যেন খেলতে পারে। সেই পিছন-উঠোনে নিজের হাতে গড়া লাউয়ের মাচাওয়ালা বাগানটি বন্ধু-বান্ধবদের দেখিয়ে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। নতুন বাড়ি কিনতে আরও ডলারের দরকার। কী করা যায়, কী করা যায়? উপায় বের হয় যে দেশে থাকা বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়া হবে। কে আর যাবে দেশে, ছেলে মেয়েগুলো এখানেই সব সেটেলড। তারা কি আর দেশে গিয়ে গরম আবহাওয়ায় টিকতে পারবে। দেশে যা কিছু আছে, দাও সব বিক্রি করে। সেই টাকার সাথে, জমানো টাকা আর ব্যাংক লোন মিলিয়ে এখানেই আরেকটি বাড়ি কেনো।

যাদের বাড়ি ছোট, তাদের বড় বাড়ির দরকার হয়। যাদের একটা বাড়ি আছে, তাদের দুটি বাড়ি না হলে চলে না। এই তো চাই, এই তো চাই! এদের অর্থনীতি এই ধরনের মানুষই চায় যাদের উচ্চাকাঙ্খা আছে। এই উচ্চাকাঙ্খা, এই বিপুল লোভ ধনতন্ত্রের চালিকা শক্তি। আরেকটি বাড়ি না কিনলে ব্যাংক নতুন করে লোন দেবে কাকে? এদেশে ব্যাংকের কাছে যার বড় অংকের লোন নেই (মূলত মর্টগেজ বা বাড়ি ক্রয়ের লোন), ব্যাংকের কাছে সে এক বিচিত্র ঘৃণিত মানুষ, যাকে পারলে তারা যাদুঘরে রেখে আসতেন।

আমার মেয়ে শীতের সময়টায় তার এক বন্ধবীর সাথে সপ্তাহে একদিন পিয়ানো ক্লাসে যেত। সেই আর্ট স্কুলে পিয়ানো ছাড়াও স্কুল-পড়ুয়া বাচ্চাদের আরও কিছু সাংস্কৃতিক অনুশীলন হত। শীতের তুষার-পরা দুপুরগুলোয় আমরা যখন ওদের ক্লাসে পাঠিয়ে ভিজিটর কক্ষে বসে বসে ঝিমোতাম, তখন সেখানে আরেকটা ঘরে নাটকের রিহার্সাল চলতো। নাইন-টেনে পড়ুয়া ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নাটক। নাটকের কিছু কিছু সংলাপ এবং দেয়ালে ঝুলানো পোস্টার দেখে বুঝলাম নাটকটি হ্যান্স অ্যান্ডারসনের "ছোট্ট মৎসকন্যা (The Little Mermaid)" এর নাট্যরূপ। তবে সেটি ছিলো গীতিনাট্য- গানে গানেই সব সংলাপ। নাটকের যিনি নির্দেশক, একজন বয়স্ক কানাডিয়ান মহিলা, তিনি আমাদের ঝিমানো দেখে একদিন আমাদেরকে ধরে বসলেন।

-তোমরা আসছো তো, তোমাদের সন্তানদের নিয়ে নাটক দেখতে? বললেন সেই মহিলা।

তার চোখে মুখে নাটকের কলাকুশলিদের মতই উচ্ছ্বাস। এই নাটক মিস করলে যেন জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে এমন ভাব। তাদের নাটকের শো হবে পরের মাসে শহরের ডাউনটাউনের মনোরম এক থিয়েটারে, যে থিয়ে টারের ভিতরে কোনদিন না ঢুকলেও আমরা দূরে থেকে দেখেছি। তিনি পই পই করে বলে দিলেন, বাচ্চাদের নিয়ে আমরা যেন অবশ্যই যাই।

- খুব ভালো মুজিকাল বুঝেছো, বাচ্চা রা খুব উপভোগ করবে এমনকি তোমরা বড়রাও।

এ ধরনের শোতে টিকিট কিনতে হয়। তিনি আমাদের কিছু ফ্রি টিকিটও দিয়ে দিলেন। হয়তো জানেন যে নতুন ইমিগ্রান্ট, পয়সা খরচ করে নাটক দেখার মানুষ এরা নয়। আমার সেই বন্ধুর তেমন ইচ্ছে নেই। আমারও যে খুব একটা ইচ্ছে ছিলো তাও নয়।
এদেশের মুসলিমপ্রধান এলাকার মসজিদগুলোয় ছুটির দিনগুলোতে মাদ্রাসা বা মক্তব বসে। সেখানে কোরান শিক্ষার বিভিন্ন ক্লাস হয়। কিছুদিন থেকে ভাবছিলাম মেয়েকে সেই কোরান শিক্ষার ক্লাসে দেব। আবার এই গ্রীষ্মে নাকি বাচ্চাদের বাংলা ভাষা শিক্ষার একটা ক্লাস শুরু হতে পারে, সেই ক্লাসেও সন্তানদের পাঠাবো বলে ভাবছি।

আমরা যে বছর কানাডায় আসি তখন আমার নতুন-পুরানো মিলিয়ে তিনটি পাসপোর্ট একসাথে জোড়া লাগানো ছিলো। তিনটি পাসপোর্ট নিয়ে চলার কারণ, শুনেছিলাম যে এতে নাকি পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়ে। এয়ারপোর্ট পুলিশ নাকি এ ধরনের পাসপোর্ট ওয়ালাদের কিছু সম্মানের চোখে দেখেন। কানাডার ইমিগ্রেশনের লাইন সেই মোটা পাসপোর্ট দিয়ে পার হলাম। কিন্তু কয়দিন পরে আরেকটি ছোট শহরে যাবার জন্য বিমানে ওঠার আগে যখন আইডি হিসেবে পাসপোর্ট এগিয়ে দিলাম, তখন চীনা চেহারার সপ্রতিভ এয়ারলাইন কর্মী আমার পাসপোর্টটি নেড়ে চেড়ে বললেন, এত ভারী পাসপোর্ট তুমি বহন করো কি করে?

নাগরিকত্ব অনুষ্ঠান বলে এখানে একটা অনুষ্ঠান আছে। সেখানে একজন বিচারপতি নতুন নাগরিকদের শপথ পাঠ করাণ। অনুষ্ঠানের এক পর্বে ইংরেজি এবং ফরাসি (কানাডার আরেকটি জাতীয় ভাষা) দুই ভাষাতেই জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হয়। নাগরিকত্ব শপথে তখন কি বলেছিলাম মনে নেই। তবে মনে আছে যে আমার হেঁড়ে গলায় ফরাসি ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া দেখে আমার স্ত্রী খুব হেসেছিলেন। নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানের শেষ পর্ব হলো সেই বিচারপতির সাথে ছবি তোলা। যদিও অনলাইনে নাগরিকত্ব অনুষ্ঠান, কিন্তু সেই বিচারপতিকে মনিটরে রেখে তার সাথে অনেকেই ছবি তুলেছিলেন, আমরাও বাকি রাখিনি।

মাঝে মাঝে ভাবি নাগরিক হয়ে ওঠা বিষয়টি কেমন? নাগরিকত্বের পরীক্ষা দিয়ে যে নাগরিক হয়ে ওঠা যায় না, সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। দ্বিতীয় নাগরিকত্বের বিষয়টি বড় ঘোলাটে, বড় স্বার্থপর। এই ভাবনাটি আমাকে কিছু বিভ্রান্ত করে ফেলে। অভিবাসীরা নাকি স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করে আর শরণার্থীরা দেশ থেকে চলে আসতে বাধ্য হন। হৃদয়ের গভীরে আমি জানি যে দেশত্যাগের সাথে সাথে আমিও আসলে শরণার্থী হয়ে গেছি, অন্ততপক্ষে সংস্কৃতিগতভাবে হলেও। আশ্রয় পাওয়া শরণার্থী নই, আশ্রয়হীন শরণার্থী।

যে দুঃখের ভিতর দিয়ে আমি দরিদ্র দেশ-মাতার সন্তান হয়ে ছিলাম, সেই দুঃখের গ্রন্থি যখন ছিন্ন করেছি তখন থেকেই সে আমার পর হয়ে গেছে!

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪১

আরইউ বলেছেন:



শ্রাবণধারা,
আপনার লেখাটা খুব পেসিমিস্টের মত মনে হলো। আমি বিষয়টা এভাবে দেখিঃ আমার দুটো দেশ। দুটো দেশই দেশ হিসেবে আমার কাছে সমান, তবে একটা দেশই শুধু আমার মাতৃভূমি, আমার জন্মভূমি।
ভালো থাকুন। শুভ কানাডা দিবস!

০১ লা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৭:১৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

লেখাটির টোন কিছুটা নেতিবাচক মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মনের ভিতরে ভাবনাগুলোয় আলো ফেলবার চেষ্টা করছিলাম। জানি না সেই আলো-আধারিতে শুধু বিষাদই ধ্বনিত হল কি না।

বিষয়টি নিয়ে আপনার ভাবনা সরল, কিন্তু অকিঞ্চিতকর নয়। এমন করে ভাবতে পারলেও মন্দ হয় না।

২| ৩০ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪৩

কামাল১৮ বলেছেন: লেখাটি বেশ দীর্ঘ।তার পরেও পড়ে শেষ করলাম।আমিও একই পথের পথিক কিনা।আমার ভাবনয় সবসময় থাকে আমি বিশ্বের নাগরিক।কোন একটা দেশের মধ্যে আমার চিন্তাকে সীমাবদ্ধ করতে চাই না।জাতিয়তাবাদ আমার পছন্দের না।আমি আন্তর্জাতিকতা বাদী।

০১ লা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৭:৪৯

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ কামাল ভাই, কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য। শেষের অংশটুকু, যা প্রথমে তেমন পরিষ্কার ছিল না, সেটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করলাম।

আপনার 'আন্তর্জাতিকতাবাদী' শব্দটি পড়ে আমার নিজের একটি ঘটনা মনে পড়লো। দশ বছর আগের ঘটনা, সেবার খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে স্ত্রী এবং তিন বছরের কন্যা নিয়ে প্যারিসে গিয়েছিলাম। যাবার সময় আমার মনে কি উচ্ছ্বাস - মপাসাঁ আর হুগোর দেশে, দেকার্তে আর পাসকালের দেশে, সার্ত্র আর ক্যামুর দেশে যাচ্ছি। শার্ল দ্য গল এয়ারপোর্টে নামতেই দেড়-দু'শো লোকের মধ্য থেকে শুধু আমাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট এবং নামের আগে মোহাম্মদ লেখা দেখে বলে 'follow me'।

তারপর প্রায় দুই ঘন্টা একটা ঘরের বেঞ্চে বসিয়ে রেখে সে কি জেরা! কেন এসেছি, কয়দিন থাকবো, কত টাকা বেতন পাই তারও হিসাব। এই হলো আসল আন্তর্জাতিকতাবাদ! কি বলেন?

৩| ৩০ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪৬

নিমো বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন বললেও কম বলা হয়। বহু বছর আগে ইমদাদুল হক মিলনের পরাধীনতা নামক একটা বই পড়েছিলাম, সেটার কথা মনে হয়ে গেল।

০১ লা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৭:৩৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নিমো। লেখাটি ভালো লেগেছে জেনে আপ্লুত।

বয়সকালে ইমদাদুল হক মিলনের ব হু প্রেমের উপন্যাস আমি পড়েছিলাম, কিন্তু কোন কারণে পরাধীনতা বইটি বোধহয় বাদ পড়েছিলো, এর কোন স্মৃতিই মনে করতে পারছি না।

আপনার ক্ষুরধার মন্তব্যগুলোর এই ব্লগে প্রয়োজন আছে বলে মনে করি, সেগুলো আমার মতের বিপক্ষে গেলেও।



৪| ০১ লা জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:১৭

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: কিছু ব্যাক্তি আক্রমণ কারী গরু ছাগল, ধর্মান্ধ মোল্লা ও পিনাকী ছাগুর চ্যালাদের ব্লগিং এর নামে ম্যাওপ্যাও ও হাউকাউ দেখে আমি হতাশা থেকে যদি ব্লগিং এর প্রতি ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলি তখন আপনি, হাসান মাহবুব সহ আরও অনেকের পোস্ট আমায় মুগ্ধ করে ব্লগে ফিরিয়ে আনে।

বি: দ্র: আমিও ব্যাক্তি আক্রমণ কারী দের তাদের ভাষাতেই জবাব দেই। আমি নিজে আগে থেকে কখনই কাউকে ব্যাক্তি আক্রমণ করিনি।

আমার টাইপ:
আমি কার সাথে কেমন ব্যাবহার করব সেটা তার আচরণ এর উপর নির্ভর করে।

০১ লা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৭:৩৮

শ্রাবণধারা বলেছেন: আবার শুরু করলেন?

আপনার "এই বর্ষায় সুযোগ পেলেই প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করবেন। (ছবি ব্লগ)" এই পোস্টে ভাবলাম মন্তব্য করি। কেননা মনে হলো আপনার ছবির সেন্স খুব ভালো। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই সুন্দরীদের অনর্থক যুক্ত করে জনপ্রিয়তা বাড়াতে গিয়ে ভার কমিয়ে ফেলেন।

কিন্তু যে ভাবে ক্যাচাল শুরু করলেন, তাতে মনে হল, না থাক!

৫| ০১ লা জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:৫২

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


কানাডা গরীবদেশের নাগরিকদের কি দিয়ে কি নিয়ে যায়?

০১ লা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৭:৪১

শ্রাবণধারা বলেছেন: গরীব দেশের যারা শ্রম দিতে পারবে, তাদের উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে নিয়ে যায়।

ক্যানেডিয়ান ড্রিম, আমেরিকান ড্রিমের মতই প্রায়।

৬| ০১ লা জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১২

এম ডি মুসা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আমি এই পরিবেশ জন্মগ্রহণ করেছি, যেখানে চিনেছি মানুষ আর প্রকৃতি

০১ লা জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৪৫

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ এম ডি মুসা। কমেন্টের জন্য উপহার হিসেবে আপনার জন্য রবি সাহেবের গান: :)

"সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।
সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে ॥
জানি নে তোর ধনরতন আছে কি না রানীর মতন,
শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে ॥"

৭| ০১ লা জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:২১

আরইউ বলেছেন:



আমার মনে হয়েছে, লেখটা একটু একতরফাঃ আপনি না চাইতেও হয়ত হাহাকার আর বেদনাটাই হয়ে উঠেছে মুখ্য। তবে, আপনার লেখা ভালো লেগেছে, আপনার ভাবনার প্রতিও আমার শ্রদ্ধা আছে।

একটা মজার বিষয়, বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও কোন এয়ারপোর্টে আমি কখনো সিকিউরিটি স্ক্রিনিং-এর জন্য সিংগেলড আউট হইনি! আমার জার্মান এক বন্ধু আছে, সে সবসময়, ফিগারেটিভলি না, লিটারেলি সবসময় এই স্ক্রিনিং-এ পরে। অদ্ভুত!

০১ লা জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৫১

শ্রাবণধারা বলেছেন: পুনরায় মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। হ্যা, আপনার সাথে একমত যে লেখাটা কিছু একতরফা।

বিষাদের ছায়ায় বিদেশে আমাদের প্রাপ্তির হিসেবটা ভালো করে উল্লেখ করা হয়নি। ল এন্ড অর্ডার, হিউম্যান রাইটস, কর্ম ক্ষেত্রে অ্যাবিউজ না হওয়া - অনেক ভালো দিক আমরা পেয়েছি, শিখেছিও।

৮| ০১ লা জুলাই, ২০২৪ দুপুর ২:১৮

শেরজা তপন বলেছেন: নিঃসন্দেহে অসাধারণ লিখেছেন।
কিন্তু অনেক কথা অল্প পরিসরে বলতে চেয়েছেন সেজন্য কিছু কথা অধরা রয়ে গেছে!
দেশ ছেড়ে যে কোন পরিস্থিতিতেই অন্য দেশের নাগরিক হওয়াটা আমার পছন্দের না সেটা যত লোভনীয়, স্বস্তির বা আরামদায়ক হোক না কেন। তবে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে মানসিকভাবে আমি কামাল ১৮ এর অনুসারী। অন্য দেশের নাগরিক হওয়ার বিষয়টা আমার কাছে ভিন্ন ব্যাপার। এটা মূলত আমার চারপাশের চিরচেনা মানুষগুলো আর পরিবেশকে ছেড়ে যেতে চাই না। তবুও দেশের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে সার্বিকভাবে অবনতি হচ্ছে তাতে এক সময় মনে হয় দেশটা ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাই করতে হবে। কোন একদিন হয়তো বেঁচে থাকলে আমি আপনার মত নব্য নাগরিকত্বের পরীক্ষা দিব।
আপনার লেখা মনে দাগ কেটে গেল। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন যেখানেই থাকেন না কেন। যেখানে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন যেখানে আপনার ভালো লাগবে সেটাই আপনার দেশ।

০১ লা জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার উল্লেখিত পয়েন্টগুলো সবকটি গুরুত্বপূর্ণ।

দেশ বনাম বিদেশের হিসাব-নিকেসটা জটিল। প্রাগমাটিকদের কাছে আমার এইসব বিষাদগ্রস্থ মনের বিলাপ একটিও ধোপে টিকবে বলে মনে হয়না।

নব্য নাগরিকত্বের পরীক্ষা দেবার বিষয়ে নিরুৎসাহীত করবো না মোটেও। এর মধ্যে হয়তো একটু খানি গ্লানি আছে, আবার অনেক বড় শিক্ষাও আছে বলে মনে হয়।

শুভকামনা রইলো।

৯| ০১ লা জুলাই, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
কানাডা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হলো। আপনি বুকের গভীরে দেশকে লালন করেন যতই অস্বীকার করতে চান না কেন ? জন্মভূমির দায় এড়ানো যায়না, মন পড়ে চেতনে, অবচেতনে তাইতো আপনার লিখনিতেও ধারা দিয়েছে দেশপ্রেম। ভাল থাকবেন।

০১ লা জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:১১

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার। এই লেখাটায় হয়তো কানাডার ভালো দিকগুলো তেমনটি উল্লেখ হয়নি, যেটা উপরে আরইউ
চিহ্নিত করেছেন।

আপনিও ভালো থাকবেন।

১০| ০১ লা জুলাই, ২০২৪ দুপুর ২:৩১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


ধর্ম আর ধর্মীয় সন্ত্রাসের কারণেই আপনাদেরকে প্যারিসে বসিয়ে রেখেছিল বলে মনে হয়।
সেই সাথে নামের আগে মোহাম্মদও একটা ব্যাপার থাকতে পারে।
বিশ্বনাগরিক পরিচয়ের পথে ধর্ম একটা বিরাট বাধা।

০১ লা জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:১৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: আমার পোস্টটি ঠিক ধর্ম আর ধর্মীয় সন্ত্রাসের উপর ছিলো না।

বিশ্বনাগরিক পরিচয়ের পথে ধর্ম একটা বিরাট বাধা কি না, এটা নিয়ে এখনও ভাবিনি।

তবে আমার নিজের বিশ্বনাগরিক হবার কোন ইচ্ছে নেই। আমি গরীর ঘরের, গরীব মায়ের ছেলে, পারলে তারই কিছু দুঃখ ঘুচিয়ে যেতে চাই। আপনারা থাকুন বিশ্বনাগরিকত্ব নিয়ে।

১১| ০১ লা জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৫

ঢাবিয়ান বলেছেন: পোস্টে ++।সব প্রবাসির মনের কথাগুলোই লিখেছেন। আমার একটা বিশাল সুবিধা যে, আমি দেশের খুব কাছে থাকি। সত্যি বলতে কি জন্মভুমি নিয়ে আমার কষ্টটা এই কারনেই বেশি। মাত্র চার ঘন্টার ব্যবধানের ( প্লেন জার্নি) দুই দেশের মাঝে কি আকাশ পাতাল ফারাক। বিদেশ আমাদের কি দেয়নি! শিক্ষাগত যোগ্যতানুযায়ী চাকুরি , বাড়ী, গাড়ি, হেলথ কেয়ার ফেসিলিটি , উন্নত জীবন যাত্রা, উচ্চ মান সম্পন্ন স্কুলে সন্তানদের এডুকেশন, কিউ এস প্লোবাল রেংকিং দশের মাঝে থাকা ইউনিভার্সিটিতে সন্তানের পড়াশোনা---। মাঝে মাঝে বিস্ময়ের সাথে ভাবি যে অচেনা অজানা একটি দেশের মানুষ কতটা মানবিক ও সভ্য হলে আরেক দেশ থেকে মাইগ্রেট করে আসা মানুষকে এমন জীবনযাত্রার সুযোগ করে দেয়। অথচ নিজ দেশে এর ১% পাবার সুযোগও নাই ।কিন্ত এরপরেও কেন যেন মনের ভেতর এক কষ্ট গুমড়ে মরে। বয়স যত বাড়ছে জন্মভুমির প্রতি টান তত বাড়ছে। নাড়ীর টান মনে হয় একেই বলে।

০৩ রা জুলাই, ২০২৪ সকাল ৮:০০

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার মন্তব্যের প্রতিটি কথার সাথে একমত না হয়ে উপায় নেই।

দেশের সব "নাই-নাই" এর সাথে একেবারে কাছের দেশ সিঙ্গাপুরের "আছে" এর তুলনা করতে গেলে বিমূঢ় হতে হয়! দেশের এই অবনতির জন্য নিজের দায়বদ্ধতাকে স্বীকার না করে পারিনা।

দেশে থাকলে কিছুই করতে পারতাম না, ঠিক। কিন্তু সেই না করতে পারার ব্যর্থতার চেয়ে বিদেশের জীবনে পাওয়া সফলতাকে তুলনা করার জন্য মনের যে গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় ততদূর আত্মদর্শী মানুষ সংসারে দুর্লভ। এ যন দারিদ্রের দুষ্টচক্র- আমরা গরীর সে কারণে কিছুই করতে পারিনা, আবার কিছুই করতে পারিনা বলেই গরীব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.