নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...............

শ্রাবণধারা

" আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোক ঘরে বসিয়া নানারূপ কল্পনা করে, অবশেষে কার্যক্ষেত্রে নামিয়া ঘাড়ে লাঙল বহিয়া পশ্চাৎ হইতে ল্যাজমলা খাইয়া নতশিরে সহিষ্ণুভাবে প্রাত্যহিক মাটি-ভাঙার কাজ করিয়া সন্ধ্যাবেলায় এক-পেট জাবনা খাইতে পাইলেই সন্তুষ্ট থাকে......."

শ্রাবণধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

টরন্টোর চিঠি - "অতএব জাগ, জাগ গো ভগিনী!"

১৭ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:৩৭


গত বছর গ্রীষ্মের শুরুতে টরন্টোয় বসবাসরত আমার জন্মস্থান জেলা-শহর থেকে আগত অভিবাসীদের একটি পিকনিকে গিয়েছিলাম। ৫০–৬০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সকলে ছিলেন নারী। তাদের সবার শৈশব-কৈশোর কেটেছে সেই ছোট মফস্বলে। জীবনের নানা বাঁকে তারা আজ প্রবাসী হলেও, মাতৃভূমির স্মৃতি বয়ে চলেছেন পরম মমতায়।

পিকনিকে বিভিন্ন আয়োজনের ফাঁকে ফাঁকে এই নারীদের সঙ্গে আমার কথা হল। কথা বলার সময় শৈশবের বহু পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলোই যেন ফিরে ফিরে এল। একজন ভদ্রমহিলা অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছিলেন; তার গলার স্বর শুনে মনে পড়ল, আমি যখন ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি, তখন শহরের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বা অন্য কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ৩০–৩৫ বছর আগে তাকে উপস্থাপনা করতে দেখেছি।

তাদের অনেকেই কানাডায় এসেছেন বহু বছর আগে। কারও বিয়ে হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে, কারও উচ্চমাধ্যমিক পাস করে। কিন্তু কানাডায় এসে পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফলে কর্মজীবনে তারা সকলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বিদেশে এসে সংসার, সন্তান পালনের পাশাপাশি কলেজে পড়ালেখা করেছেন, সংসার জীবনের পাশাপাশি কর্মজীবনও গড়ে নিয়েছেন। এখন তাদের কেউ কোনো প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার, কেউ ডে-কেয়ারের পরিচালক, কেউ সরকারি দপ্তরের কর্মচারী। কানাডার সমাজে নারীর যে মর্যাদা, অধিকার ও সুযোগ রয়েছে, এই নারীদের সকলে সেই জায়গায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশ থেকে দূরে এসে ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার মধ্যে থেকেও তারা মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকারী হয়েছেন।

তারাই আজ ৫০–৬০ জন লোকের পিকনিকের যাবতীয় আয়োজন করেছেন। বাজার-সদাই থেকে শুরু করে রুই মাছের ঝোল, মুরগির রোস্ট ইত্যাদি রান্না করেছেন। পার্কের স্পট বুকিং দিয়েছেন, এমনকি শহরের নাম লেখা ব্যানারটিও হৃদয়ের সুচারু অনুভূতি দিয়ে তৈরি করে নিয়ে আসতে ভোলেননি। তাদের আন্তরিকতা, দক্ষতা ও নেতৃত্ব দেখে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না।

আমার শৈশবের সেই বেণী-দোলানো, ত্রস্ত, লাজুক মেয়েরা - যাদের কাউকে কাউকে হয়তো আমি নীল-সাদা বা সবুজ-সাদা ইউনিফর্ম পরে স্কুলের পথে যেতে দেখেছি, যাদের কেউ আমার বড় বোন তুল্য, কেউ মাতৃসম। সেই বেণী-দোলানো মেয়েদের দলে আমার নিজের বোনেরাও ছিল। তাদের মাঝে যারা আজ প্রবাসী হয়েছেন তাদের চলার পথে, মর্যাদার পথে কেউ বাধা সৃষ্টি করেনি। কেউ প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়নি যে তারা পুরুষের সমকক্ষ নয়, তাদের অধিকার খর্বিত। কর্মক্ষেত্রে, পেশাগত জীবনে কেউ তাদের হয়রানি করেনি। কোনো দুশ্চরিত্র দূর্জন কোমরের বেল্ট খুলে তাদের পেটানোর দুঃসাহস দেখায়নি। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়ি খেলেও, কোনো বদমায়েশ তাদের মারতে যায়নি।

তাদের সফলতা দেখে আনন্দের পাশাপাশি মনে গভীর বেদনারও সঞ্চার হলো। বেদনার কারণ এই যে, কানাডার সমাজ অভিবাসী নারীদের জন্য যে মর্যাদার পথ ও সুযোগগুলো সৃষ্টি করেছে, বাংলাদেশের সমাজ সেই সুযোগগুলো দিনের পর দিন নষ্ট করা হয়েছে - ধর্মান্ধতা দিয়ে, বর্বর, বিশ্রী ও কদর্য কুযুক্তি দিয়ে, কূৎসা রটিয়ে, ভয় দেখিয়ে।

আজ থেকে একশ বছর আগে বেগম রোকেয়া "স্ত্রীজাতির অবনতি" প্রবন্ধে নারীদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, “অতএব জাগ, জাগ গো ভগিনী!”, লিখেছিলেন, “...জাগিয়া ওঠা সহজ নহে, জানি; সমাজ মহা গোলযোগ বাধাইবে, জানি; ভারতবাসী মুসলমান আমাদের জন্য ‘কৎল’-এর বিধান দিবেন, জানি।” আশ্চর্য হয়ে ভাবি, বেগম রোকেয়ার সময় থেকে একশ বছর পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশ কী করে সেই অন্ধকারে রয়ে যেতে পারল?

ধর্মব্যবসা আর বর্বর মোল্লাতন্ত্রের মিথ্যার মধ্যে পুরুষতন্ত্রের যে মোহ, সেখানে শুধু নারী নয়, আমাদের পুরো সমাজটাই বন্দি হয়ে আছে। তাই এই অন্ধকার থেকে নারীমুক্তি মানে আমাদের সকলের মুক্তি, সমাজের মুক্তি। বহু বছর পিছনের দিকে হাঁটার পরে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যুক্তি।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:১৩

যামিনী সুধা বলেছেন:



আপনি ধর্মান্ধতার যিকির তুলছেন? ব্লগার সোনাগাজীর এক পোষ্টে আপনি ১টি কমেন্ট করেছিলেন, যেখানে প্রমাণতি হয়েছিলো যে, আপনি মক্তবের মোল্লাদের মতো অজ্ঞ; কমেন্টটা আমার মনে পড়ছে না এই মহুর্তে। তবে, সোনাগাজী আপনাকে শক্ত করে ধরার পর, আপনি বেশ লম্বা সময় ধরে ব্লগে হাজিরা দেননি।

আপনার মাঝে সততার অভাব আছে।

১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:৪০

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার উদ্ধত ও বেয়াদবি পূর্ণ মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে অযথাই মুখ তেতো করতে হয় এবং আপনার বয়সের প্রতি সম্মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

আমি নিশ্চয়ই অনেক কিছুতেই অজ্ঞ হতে পারি। মক্তবের মোল্লাদের মতোও হতে পারি। তবে আপনি যে মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন, সেটি ছিল রসিকতা করে বলা। দুঃখজনকভাবে সেটা আপনি বোঝেননি।

যা হোক, ব্লগে বেশ কিছুদিন অনুপস্থিত ছিলাম, কারণটা কর্ম সংক্রান্ত। কাজের প্রয়োজনে শহর পরিবর্তন করতে হয়েছে।

২| ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:৪১

কামাল১৮ বলেছেন: আজকে কানাডা প্রবাসি বাংলাদেশির দুটি পোষ্ট আসছে।আপনার পোষ্টটি পড়ে আপনাকে জ্ঞানপাপী বলে মনে হচ্ছে।আপনার আগের পোষ্ট এবং মন্তব্যবের সথে আজকের পোষ্টটি স্ববিরোধী।

১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:৫৬

শ্রাবণধারা বলেছেন: বলেন কী! কোন পোস্ট?

আমার আগের পোস্টে কি নারী-স্বাধীনতা বিরোধী কিছু ছিল?

কাম অন, বড় ভাই, পাঠক- মান আরেকটু বাড়াতে হবে তো!

৩| ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৩৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:১৫

মেঠোপথ২৩ বলেছেন: এত চমৎকার একটা পোস্টে ব্লগের দুই প্রবীন ব্লগারের মন্তব্যে কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। এই দুইজন শিষ্টাচারের সকল মাত্রা অতিক্রম করে প্রতিনিয়ত কমেন্ট করছে।

১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪২

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ, মেঠোপথ২৩। প্রবীণ এই দুই ব্লগারের মন্তব্যে সত্যি বিস্মিত হয়েছি।

সম্ভবত তাদের পছন্দের গণহত্যাকারী, লুটেরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দলটির বিরুদ্ধে আমার বহু পোস্টে এবং মন্তব্যে ঘৃণা প্রকাশ করেছি বলেই তারা আমার এই পোস্টে এমন অসংলগ্ন মন্তব্য করেছেন।

৫| ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:২৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো একটা কাজ করেছে তারা।

১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪৬

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনি প্রায়ই রাজনীতির ময়দানের অজানা তথ্য মন্তব্যে উল্লেখ করেন; ভেবেছিলাম, এবারও তেমনই কিছু বলবেন। তবে দেখলাম, এবারের মন্তব্যটি সরল ও স্পষ্ট। নারীদের মৈত্রী যাত্রায় আপনার সমর্থন আছে জেনে ভালো লাগলো।

৬| ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৪২

অপু তানভীর বলেছেন: মোদীর ভাই কামাল্লাকে আপনি এখনও আপনার ব্লগে মন্তব্য করতে দেন কেন? এই দালাল জীবনে কোন পোস্ট ঠিক মত পড়ে না। পোস্ট না পড়েই মন্তব্য করে জ্ঞানী ভাব ধরে বসে থাকে। এদের পোস্ট থেকে দুর করেন।

আমাদের দেশে ধর্মান্ধদের প্রধান টার্গেটই হচ্ছে নারী। সুযোগ পেয়ে তাই এই মোল্লাগুলো সবার আগে সেই কাজই শুরু করেছে।

১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

শ্রাবণধারা বলেছেন: এ কথা সত্য যে কামাল১৮ প্রায়ই পোস্ট পুরোটা না পড়েই মন্তব্য করেন। সম্ভবত, বয়সজনিত অমনোযোগজাতীয় কোনো সমস্যায় তিনি ভুগছেন। তিনি হয়তো ভেবেছেন, আমার আগের পোস্টটি ধর্মীয় ছিল। হা হা! :) :)

ধর্মান্ধদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন একদম 'টু দ্য পয়েন্ট' এবং স্পষ্ট।

৭| ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৩১

কামাল১৮ বলেছেন: আপনার চিন্তা চেতনার কথা বলছি।নারী স্বাধীনতা নিয়ে বলছি না।নারী স্বাধীনতা নিয়ে আপনার কোন পোষ্ট পড়েছি বনে মনে পড়ে না।

১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরোধিতা মানেই প্রগতিশীলতার বিপক্ষে নয়।

নারীদের এই মৈত্রী যাত্রাতেও অংশগ্রহণকারীরা গণহত্যাকারী, লুটেরা, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন।

৮| ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪৫

আজাদী হাসান রাজু বলেছেন: ভালো লাগল

১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৫৫

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৯| ১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭

জুন বলেছেন: আমি এপ্রিল মাসে এক ঝটিকা সফরে টরেন্টো ঘুরে আসলাম সাত দিনের জন্য। সময় থাকলে আপনি সোহানী আর কামাল সাহেবের সাথে দেখা করে আসতাম শ্রাবনধারা। আসলে এত অল্প সময়ের জন্য গিয়েছি শুধু ছেলেকে এক নজর দেখতে। ওকে আমি তিন বছর হয় দেখি না। এই দেখেন আমার তোলা নায়াগ্রা ফলস এর ছবি :)

১০| ১৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১

যামিনী সুধা বলেছেন:



আপনি ছুপা মৌলবাদী ও যথাসভব ১৯৭১ সালের জাতীয় বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষের মানুষ। আপনার লেখা হাবিজাবি ছিলো সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.