![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
বনলতা সেন জনপ্রিয়তম বাংলা কবিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রধানত একটি রোমান্টিক গীতি কবিতা হিসেবেই এটি সমাদৃত।আপাতঃ দৃষ্টিতে 'বনলতা সেন' একটি প্রেমের কবিতা যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বনলতা সেন নামীয় একটি রমণীর স্মৃতি রোমন্থন। বনলতা সেন ছাড়াও জীবনানন্দের কাব্যে বেশ কিছু নারী চরিত্রের উপস্থিতি আছে ; যেমন শ্যামলী, সুরঞ্জনা, সুচেতনা, সরোজনী, শেফালিকা বোস, সুজাতা ও অমিতা সেন। তবে ১৯৩২ খৃস্টাব্দে লিখিত এবং প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল অন্তরালবাসী কারুবাসনা নামীয় উপন্যাসে প্রথম 'বনলতা সেন' নামটি পাওয়া যায়। অধিকন্তু 'হাজার বছর ধরে খেলা করে', 'একটি পুরোনো কবিতা' এবং 'বাঙালি পাঞ্জাবী মারাঠি গুজরাটি' শীর্ষক আরও তিনটি কবিতায় এ নামটি আছে।১৯৩০ খৃস্টাব্দে লাবণ্য দাশকে বিয়ের আগেই এই বালিকার প্রতি যুবক জীবনানন্দ গভীর অনুরাগ অনুভব করেছিলেন। কবি জীবনানন্দ দাশের মনে যেমন আঁচল ফেলেছিল একজন বনলতা সেন,কবি ফখরুখ আহমেদের মনে যেমন ঠাঁই নিয়েছিল একজন দিলরুবা । কবি র্যাবোর মনে যেমন প্রেমের জোয়ার এনেছিল একজন আফেলিয়া এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে যেমন ঝংকার তুলেছিল একজন নীরা তেমনি কবি শফিকুল ইসলামের মনে কবিতার ডানা মেলে উড়ে চলেছে একজন সুলতা।
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
'বনলতা সেন' কবিতাটি সম্ভবত বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বহুল পঠিত কবিতাগুলোর একটি। বনলতা সেনের চুলকে তুলনা করা হয়েছে বিদিশা নগরীর আঁধারের রহস্যময়তার সাথে, মুখশ্রীকে তুলনা করা হয়েছে শ্রাবস্তী’ র কালজয়ী শিল্প উপাদান হিসেবে। বনলতা’র চোখ পাখির নীড়ের মতো আশ্রয়দাত্রী, ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়া।বনলতা সেন রচনার পচাত্তর বছর পূর্তিতে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে অশোক মিত্র জানাচ্ছেন তিনি নিজে কবি জীবনানন্দ দাশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এই ‘বনলতা সেন’ কে? কবি বনলতা সেন কে এই প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব দেন নি। শুধু বলেছেন, বনলতা সেন নামটি কবি পেয়েছিলেন পত্রিকা থেকে। সে সময় নিবর্তক আইনে বনলতা সেন নামে এক একজন রাজশাহী জেলে বন্দিনী ছিলেন। সেখান থেকেই কবি এই নামটি গ্রহণ করেন। এই বনলতা সেন পরে কলকাতার কলেজে গণিতের শিক্ষকতা করতেন। শুদ্ধ প্রেম ও নিষ্ঠায় বাঙালিও বিশ্বাস রয়েছে; তারা প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য হৃদয়ের সবচেয়ে গোপন ও প্রিয় অধ্যায়টি অতিযত্নে সংরক্ষণ করতে ভুল করে না। মানুষ বারবার প্রেমে পড়তে পারে; আবার কেবল একজনকে ঘিরেও আবর্তিত হতে পারে তার প্রেমের ঘর-বারান্দা। কবিরাও তাই প্রেমের কবিতায় অনেকের ছবি যেমন আঁকতে পারেন; তেমনি একজনকে নিয়েও লিখতে পারেন অনেক কবিতা।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
জীবনানন্দ দাশের অন্য লেখায়ও নাটোরে তাঁর আগমন সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে গবেষকদের কাছে বনলতা সেন রয়ে গেছেন এক রহস্যময়ী নারী। তবে গবেষকেরা বনলতা সেনকে রহস্যময়ী মানবী হিসেবে চিত্রিত করলে কী হবে; নাটোরের মানুষের কাছে কিন্তু বনলতা রক্তমাংশের মানুষ, পরম আপনজন। এমনকি তাঁকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কাহিনী। যদিও এসব কাহিনী ইতিহাসের কোনো সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত হয়নি। বিচ্ছিন্নতাবোধ থেকেই জীবনানন্দ দাশ তাঁর ইতিহাস চেতনার মধ্যে ভয়াবহ বেদনার চিত্র অঙ্কন করেছেন। অতীত ইতিহাসের কোথাও গিয়ে তাঁর কবিসত্তা স্বস্তি পায় নি। আঘাতের পর আঘাত, বেদনার পর বেদনার অভিঘাতে তিনি একবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন।বাঙালি জীবনে প্রেমের অবকাশ ও সম্ভাবনা সংকীর্ণ বলে অনেক সময় কল্পনার নারীকে নিয়েও রচিত হয়েছে প্রেমের কবিতা; সামনে কেউ নেই, হয়তো কখনো ছিল না, তবু কবি তাঁর রক্তমাংসস্বপ্নের প্ররোচনায় লিখতে থাকেন কম্পমান পদাবলি। তাই বাঙালির কবিদের দয়িতার নাম আমাদের কাছে অজানা কিংবা অস্পষ্ট রয়ে যায়; যেমনটা জানা যায় কীটস- বোদলেয়ার বা রিলকের প্রেমিকা বা প্রেমিকাদের নাম। জীবনানন্দ কার বা কাদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন যন্ত্রণা ও মধুমাখা কবিতাবলিতে এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলে না।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
জীবনানন্দ দাশ একবার ব্যক্তিগত কাজে ট্রেনে করে দার্জিলিং যাচ্ছিলেন। তখন নাটোর হয়ে যেত দার্জিলিং মেল। একাকী কামরায় বসেছিলেন কবি। নাটোর স্টেশনে হঠাৎ অপরূপ সুন্দর একটা মেয়েকে নিয়ে ট্রেনে উঠলেন এক বৃদ্ধ। বৃদ্ধের নাম ভুবন সেন। তিনি নাটোরের বনেদি সুকুল পরিবারের তারাপদ সুকুলের ম্যানেজার। ভুবন সেনের সঙ্গিনী তাঁরই বিধবা বোন, বনলতা সেন। অচিরেই পথের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েন ভুবন সেন। কামরায় জেগে থাকেন শুধু দুজন−জীবনানন্দ দাশ আর বনলতা সেন। এই নীরব মুহুর্তে বনলতা সেনের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন এমনিতে মুখচোরা কবি। একান্তে একসঙ্গে কেটে যায় বেশ কিছু সময়। একসময় মাঝপথে কোনো এক স্টেশনে নেমে যান বনলতা সেন। কামরায় আবার এক হয়ে যান জীবনানন্দ। বনলতা সেন চলে গেলেন কিন্তু রেখে গেলেন কবির মনে এক বিষণ্নতার ছাপ। তারই অবিস্নরণীয় প্রকাশ নাকি ‘থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’।বনলতার সাথে জীবনানন্দের পরিচয় কিংবা জানা-শোনা থাকা-না-থাকা নিয়ে রয়েছে অনেক বিতর্ক, অনেক আশা-নিরাশার দোলা। সত্যিকার অর্থে কবির কল্পনায়, সংসার ও পৃথিবীর যাবতীয় যাতনা থেকে মুক্তির কিংবা পলায়নের অভিপ্রায়ে, এক মোহনীয় নারীর রূপকল্প জেগে থাকতে দেখা যায় নানানভাবে। জন্ম-জন্মান্তরে যার সাথে পথ চলা যায়, এমন এক স্বপ্নমানবীর রূপ তিনি বারবার ভেবেছেন; হয়তো পৃথিবীর আলো-বাতাসে খুঁজেছেনও তাকে। মাঝে মাঝে তাঁর কল্পনায় সাজানো নায়িকার মতো দেখতে কাউকে দেখে চমকে উঠেছেনও বোধহয়; কিন্তু শরীরি বনলতাকে তিনি দেখেননি কখনো; ছুঁয়ে দেখাতো স্বপ্ন মাত্র।
বাস্তবের নারী নয় বনলতা; কল্পনার শোভন ঘরে তার সামনে কেবল নির্জন অবসরে নির্বাক বসে থাকার অভিনয় করা চলে। হাত বাড়ালে তাকে ধরা যায় না। চোখ মেললে তাকে দেখা যায় না। অবশ্য এমনও হতে পারে জীবনানন্দ যে নারীকে কল্পনার দয়িতারূপে ভেবেছেন, এরকম কেউ হয়তো কোনো কালে ছিল; হয়তো মরে গেছে বহু আগে। তার অপেক্ষায় হয়তো বহুকাল স্টেশনে ট্রেনের প্রতীক্ষায় যাত্রীর মতো অমিত সময় পার করেছেন কবি। কিংবা মনের টানাপড়েনে পুড়ে পুড়ে মরেছেন, মনের মতো হৃদয়ের রানীকে না-পাবার যাতনায়। কে জানে কী রকম এক নারীর জন্য সারাটা জীবন ধরে হাহাকার করতে হয়েছে নীরব-অন্তর্মুখি এই জীবনানন্দকে; কে বলতে পারে, হয়তো ওই নারীর জন্য জীবনের সব আনন্দ বিসর্জনও দিয়েছেন কবি কুসুমকুমারী দাশের স্বপ্নপুত্র জীবনানন্দ (মা কুসুম লিখেছিলেন: আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে/ কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবে!”)। জীবনের সব আনন্দ বাতাসে মিলিয়ে যেতে দেখা কবি তাই, ঘোরের মধ্যে, লিখছেন “শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন” কবিতা। এই কবিতায় আমরা জীবনানন্দের বনলতাকে দেখি গভীর রাতের অনুপস্থিতি-উপস্থিতির দোলাচলের রঙিন মোড়কে:
২| ১৯ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:৩৩
শব্দহীন জোছনা বলেছেন:
অসাধারণ ----অসাধারণ......।
++++++++++++
+++++++
৩| ২০ শে জুন, ২০১২ সকাল ১১:০৬
েরজা , বলেছেন:
ধন্যবাদ
৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৪১
জািকর েহােসন002 বলেছেন: অসাধারণ
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:২৯
মাহবুব রোকন বলেছেন: গল্পের লোক বলে জানতাম, কবিতা নিয়ে ভাল কাজ হচ্ছে দেখে খুশি। লেখাটাও চমৎকার। ইত্তেফাকে আছেন এখনো ?। শুভকামনা। রোকন-মহেশখালী দ্বীপ থেকে................