নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জোছনা ও জননীর গল্প

৩১ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:০৮

‘জোছনা ও জননীর’ গল্প মুক্তিযুদ্ধের মহৎ এক কাহিনীচিত্র। শুধু উপন্যাস নয়, উপন্যাসের চেয়ে বেশি কিছু। এ হচ্ছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত এক মহাকাব্য। "জোছনা ও জননীর গল্প" মূলত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে উপন্যাস হলেও এতে প্রেম,ভালোবাসা সবই আছে। হুমায়ুন তার স্বভাবসুলভ গল্প বলার ভঙ্গিতে ৭১'এর সেই ভয়াল ৯ মাসের কথা বলেছেন পাঠকদের।উপন্যাসের শুরু হয়েছে নীলগঞ্জ স্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজুদ্দীন কাশেমপূরীকে দিয়ে যিনি ঢাকায় তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসেন।... তারপর শাহেদ আর আসমানীর মমতায় পরিপূর্ণ সংসারজীবনের গভীরে যেতে যেতে পাঠকের পরিচয় ঘটবে নিজের চেনা জগতের সঙ্গে। শাহেদের বড় ভাই ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরির ঢাকায় আসা, রাস্তা হারিয়ে ফেলা, ভুল ঠিকানা, পরিশ্রম আর ক্লান্তিতে বিপর্যস্ত জীবন অস্থির উত্তাল মিছিল স্লোগানমুখর ঢাকায় তার বিপন্ন জীবনবোধ শুরু করিয়ে দেয় এক মহাযাত্রার। শাহেদের অফিস। দৃশ্যপট নতুন। ঘটনা একই। সতর্ক কেউ কেউ।



সংক্ষেপে হুমায়ুন আহমেদ বর্ণনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং হলের ছাত্রদের উপর চালানো বর্বরতার কথা। যদিও খুব বেশি বিষদ বিবরণ নেই কোনো ঘটনার কিন্তু তাতে যুদ্ধের ভয়াবহতার কোনো কমতি ছিলো না। খুব সহজ ভাষায় হানাদারদের নয় মাসের বিভৎষতার বর্ণনা দিয়েছেন সাথে সাথে "বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র" থেকে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনাও তুলে ধরেছেন। পিরোজপুর মহকুমার সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান তার অস্ত্রভাণ্ডার দিয়ে দেন সাধারণ মানুষকে ৫ মে মিলিটারিরা হত্যা করে তাকে। তিনি খুব নিস্পৃহভাবে লেখক পিতার মৃত্যুবর্ণনা দেন তাঁর মা সন্তানদের নিয়ে বাঁচবার যে চেষ্টা করেন মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে পরিবারগুলো তো তাই করেছিল। কবি কলিমউদ্দিন নামে একজন যুবককে উপন্যাসের সূত্রধর হিসেবে আমরা দেখি। শামসুর রাহমানের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া থেকে শুরু করে, মাঝেমধ্যে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রবেশ, শেষে আলবদর হয়ে ওঠা পুনরায় শান্তিকামী বাঙালি রূপধারণ অনেক চেনা ঘটনাকেই স্পষ্ট করে। একটি জাতির স্বাধীনতাযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে আশ্রয় করে লেখা নানা কারণেই অত্যন্ত দুরূহ। আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে ব্যক্তি যেভাবে মিশে আছে, সে ভাবেই গভীরে আছে সমাজ এবং রাজনৈতিক আদর্শ।



এই মহান উপন্যাসটিতে আলোকপাত করা হয়েছে মুজিব পরিবারকে নিয়ে ।যুদ্ধকালীন সময়ে বেগম মুজিবের অসহায় দিনযাপন। বড় মেয়ে হাসিনার সন্তান প্রসব। কামালের ভারতে গমন। ছেলে জামালের স্বভাবগত অস্থিরতা মায়ের মনে যে দোলাচল এনে দিয়েছে, লেখক তা নিপুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এর একটি অনন্য দলিলস্বরূপ তা বলতে দ্বিধা নেই। হুমায়ুন আহমেদ প্রমাণ করেছেন যে আসলেই তিনি কতো বড় লেখক। ২০ মার্চ রাতে যে বাড়িতে শাহেদ আশ্রয় নেয় কঙ্কন তাদের মেয়ে। মা-বাবাকে হারিয়ে ফেলেছে। পথভ্রষ্ট শিশু কঙ্কনকে রিফিউজি ক্যাম্পে নিয়ে যায় শাহেদ। অলৌকিকভাবে খুঁজে পায় তার স্বজনদের। বইটির সমাপ্তি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরেই। ডিসেম্বরকে আমরা এখন বিজয়ের মাস বলছি। আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিষাদ-আনন্দ-উল্লাসের মাস ডিসেম্বর; ফেব্রুয়ারি যেমন বইমেলা, বাংলা ভাষা নিয়ে।



‘ভোরের কাগজ’-এর সাহিত্য পাতায় হুমায়ূন আহমেদ ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেছিলেন তাঁর মনোজগৎ আচ্ছন্ন করে থাকা মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। বিশাল ক্যানভাসের উপন্যাসটি লেখার জন্য স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদ আরো কয়েক বছর আগে তাঁকে ৫০০ পৃষ্ঠার একটি খাতা উপহার দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের ছুটি নিয়ে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ লিখতে শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু কয়েক কিস্তি লিখে লেখা বন্ধ করে দেন। হুমায়ূন আহমেদ বলেন- ‘জোছনা ও জননীর গল্প কোনো ইতিহাসের বই নয়, এটি একটি উপন্যাস। তার পরও ইতিহাসের খুব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা আমি করেছি। সেখানেও ভুলভ্রান্তি হতে পারে। হওয়াটা স্বাভাবিক। উপন্যাস যেহেতু কোনো আসমানি কিতাব না, এসব ভুলভ্রান্তি দূর করার উপায় আছে। জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসটি শেষ করে হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, "এখন যদি আমার মৃত্যুও হয় তবুও আক্ষেপ নেই।"



এই উপন্যাসে চরিত্র হয়ে এসেছেন মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ইন্দিরা গান্ধী, ইয়াহিয়া খান, ভুট্টো, টিক্কা খান; অর্থাৎ সেই সময়কার সব শ্রদ্ধেয় ও নিন্দিত মানুষজন। ভারতীয় বাহিনীর চরিত্ররা এসেছে যে যার ভূমিকায়। মুক্তিযোদ্ধারা এসেছেন, রাজাকাররা এসেছে, শর্শিনার পীর সাহেব এসেছেন আর এসেছে সমগ্র দেশের নানা স্তরের নানা রকম মানুষ। ছোটবড় ও ঐতিহাসিক এত চরিত্রের সমাহার আর কোনো বাংলা উপন্যাসে এভাবে এসেছে কি না, এত সার্থকভাবে চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসের সব ঘটনাই সত্যাশ্রয়ী। কখনো আত্মজৈবনিক উপাদান, কখনো যুদ্ধদিনের অভিজ্ঞতা, কখনো বা গ্রন্থপাঠ বা অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে উপাদান সংগ্রহ করে লেখক নির্মাণ করছেন আলোচ্য উপন্যাসের কেন্দ্রীয় কাহিনী।



যদি ধরে নেয়া হয় ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ ইতিহাস, তাহলে উপন্যাস হিসেবে এর সার্থকতা কোথায়? হুমায়ূন আহমেদের কৃতিত্ব এই, তিনি ইতিহাসকে দান করেছেন উপন্যাস-অবয়ব। মুনীর চৌধুরীর (১৯২৫-১৯৭১) বাক্যবন্ধ ধার করে বলা যায়, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদ ‘ইতিহাসের দাস নন, শিল্পের বশ’। অ্যারিস্টটল বলেছেন, ইতিহাস হচ্ছে সত্য ঘটনার বিবরণ, আর ইতিহাস-আশ্রিত সাহিত্য হচ্ছে ইতিহাসের কঙ্কালের ওপর কবি-কল্পনার ঐশ্বর্য। ইতিহাসনির্ভর সাহিত্যে ইতিহাস ও কল্পনার মধ্যে একটি আনুপাতিক সম্পর্ক লেখককে সর্বদা রক্ষা করতে হয়। এ উপন্যাস বিষয়ে হুমায়ূন আহমেদের অকপট ভাষ্য-

একদিন হঠাৎ টের পেলাম অনেক সময় আমার হাতে নেই। সময় শেষ হয়ে গেছে। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ আর লেখা হবে না। তখন আমি শুয়ে আছি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালের একটা ট্রলিতে। যখন অচেতন হতে শুরু করেছি, তখন মনে হলো ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ তো লেখা হলো না। আমাকে যদি আর একবার পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয় আমি এই লেখাটি অবশ্যই শেষ করবো। দেশে ফিরে লেখায় হাত দিলাম। শরীর খুব দুর্বল। দিনে দুই-তিন পাতার বেশি লিখতে পারি না। এভাবেই লেখা শেষ করেছি। এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমি দেশমাতার ঋণ শোধ করার চেষ্টা করেছি। এ আনন্দের কোনো সীমা নেই।



উপন্যাসটির শেষ প্যারাটি এই রকম- "বাস্তবের সমাপ্তি এরকম ছিল না। নাইমুল কথা রাখে নি। সে ফিরে আসতে পারে নি তার স্ত্রীর কাছে। বাংলার বিশাল প্রান্তরে কোথাও তার কবর হয়েছে। কেউ জানে না কোথায়। এই দেশের ঠিকানাবিহীন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কবরের মধ্যে তারটাও আছে। তাতে কিছু যায় আসে না। বাংলার মাটি পরম আদরে তার বীর সন্তানকে ধারণ করেছে। জোছনার রাতে সে তার বীর সন্তানদের কবরে অপূর্ব নকশা তৈরি করে। গভীর বেদনায় বলে, আহারে! আহারে!"



মুক্তির মন্দির সোপানতলে

কতো প্রাণ হলো বলিদান

লেখা আছে অশ্রুজলে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১২ রাত ২:২৬

শিপন মোল্লা বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই, সুন্দর বর্ণনা করেছেন। ভাল লাগলো । প্লাস দিয়ে গেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.