![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেষ কবে স্টারের কাচ্চি খেয়েছিলাম আমার মনে নেই। আগে একটা সময় ছিল যখন কাচ্চির নাম নিলে যে নামগুলো সবার প্রথমে সামনে আসতো তার ভেতরে এই স্টারের নাম থাকতো। এখনকার মতো এত ফ্যানসি কাচ্চির দোকান তখন আসেনি। তখন নান্না হাজি কিংবা স্টার। আর যাদের একটু টাকা-পয়সা বেশি তাদের ছিল ফকরুদ্দিন। আমাদের মতো ছাপোষা ছাত্রদের জন্য স্টার আর নান্নার থেকে ভালো কিছু ছিল না। তাই আমাদের বেশিরভাগ বন্ধুদের ট্রিট এই স্টারেই হতো।
প্রথম স্টারে খেয়েছিলাম যখন একেবারে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। ট্রিটটা আমিই দিয়েছিলাম। প্রথম মাসের টিউশনির বেতন পেয়ে। পুরান ঢাকায় যে স্টারের শাখাটা আছে সেখানে গিয়ে হাজির হলাম। সত্যি বলতে এই কাচ্চি আমার কাছে দারুণ ভালো লেগেছিল। তখন দামটা কত ছিল সেটা আমার স্পষ্ট মনে নেই। সম্ভবত প্লেট প্রতি কাচ্চির দাম ছিল ১২৫ টাকা। একটা বড় খাসির মাংস, একটা বড় কাবাব সাথে ডাল আর আলু।
মোটামুটি সেই থেকেই শুরু। তারপর থেকে আমাদের বন্ধুদের যেকোনো ট্রিট হলেই সেটা হয় এই স্টার কাবাবে হতো নয়তো নান্না বিরিয়ানিতে। এখানে একটা কথা বলে রাখি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আমাদের ১০/১২ জনের একটা গ্রুপ ছিল। এই গ্রুপটার প্রায় সবাই ছিল একটু ফাঁকিবাজ টাইপের। আমাদের ক্লাসে যখন গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হতো এদের কেউই বলতে গেলে সেটা করতো না। সব দায়িত্ব এসে পড়তো আমার আর আরেকজনের ঘাড়ে। তখন আমরা দুজন নিয়ম করলাম যে এসব আর হবে না। ফ্রি ফ্রি নম্বর হবে না। তখন তারা পরামর্শ দিল যে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ আমরাই করব তবে এর বিনিময়ে তারা আমাদের কাচ্চি খাওয়াবে। আমরা রাজি হয়ে গেলাম। প্রত্যেক সেমিস্টারে যত অ্যাসাইনমেন্ট হয়েছে তার বেশিরভাগ আমরা দুই-তিনজন মিলে শেষ করতাম আর বাকিরা আমাদের কাচ্চি ট্রিট দিতো। এই ট্রিটের বেশিরভাগই হতো এই স্টার কাবাবে নয়তো নান্নার বিরিয়ানিতে। এছাড়া কারো জন্মদিন হলে সেও আমাদের এখানেই ট্রিট দিত।
বন্ধুদের ট্রিট দেওয়ার জন্য এই স্টার বা নান্না ছিল আদর্শ। তখন ছাত্র অবস্থায় কারো হাতেই অফুরন্ত টাকা-পয়সা থাকতো না। সবারই হিসাবের টাকা। সেখানে হাজার-পনেরশো টাকার ভেতরেই সব খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকে যেত। পুরো গ্রুপের খাবার হয়ে যেত।
তবে পড়াশোনা শেষ করার পরে এই স্টারের আবেদন আমাদের কাছে খানিকটা কমে এল। আমরা সবাই ঢাকার নানান প্রান্তে থাকতাম। ট্রিটের সময়টা মূলত হতো আমাদের ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময়ে। তাই সমস্যা হতো না খুব একটা। কিন্তু যখন আর ক্যাম্পাসে যাওয়া হতো না তখন আলাদাভাবে ঢাকার নানান প্রান্ত থেকে এই স্টারে আসার আগ্রহ অনেকেরই থাকতো না। পুরান ঢাকার নান্নাতেও তাই আর যাওয়া হয়নি।
এরপর আরও একটা কারণও ছিল। স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টে সব সময়ই মানুষের ভিড় থাকতো। ছাত্র থাকা অবস্থায় আমাদের এই ভিড়ে খুব একটা সমস্যা না হলেও একটু বড় হওয়ার পর আমরা সবাই একটু নিরিবিলি স্থান খুঁজতাম, এমন একটা জায়গা যেখানে খাওয়ার আগে এবং পরে একটা লম্বা সময় শান্তিমতো গল্প করা যাবে। স্টারে সেই সুযোগ ছিল না। সেখানে খাওয়া শেষ করার আগেই দেখা যেতো একদল এসে দাঁড়িয়ে আছে। তাই ধীরে ধীরে স্টারে যাওয়া কমে এল। এক সময়ে একেবারে বন্ধই হয়ে গেল।
শেষ আমি কবে স্টারে বসে খেয়েছি সেটা আমার মনেও নেই। সম্ভবত চার-পাঁচ বছর আগে হবে, ব্লগের বন্ধু মাসুম আর আরেকজনের সাথে গিয়েছিলাম সেখানে। তারপরে আর সেখানে ঢোকা হয়নি।
গতকাল অনেক দিন পরে আবার স্টার রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। আমার বন্ধু এসেছিল ঢাকায় ল্যাপটপ নিয়ে। আমি সাধারণত ছুটির দিনে একদম বের-টের হই না। এই দিনে আমার সারাদিনের কাজ হচ্ছে ল্যাটকাইয়া শুয়ে শুয়ে বই পড়া। এমনকি পিসিও চালু করি না। তাই এই দিনে আমার সাথে কেউ দেখা করতে এলে আমি সাধারণত নানান অজুহাতে মানা করে দিই। কিন্তু এই বন্ধুটি কাছের একজন মানুষ। তাই তাকে মানা করলাম না। সকাল থেকে তার সাথে এদিক-ওদিক ঘুরাফিরা করলাম। মাল্টিপ্লান সেন্টারে ল্যাপটপটা ঠিক করে তারপর নামাজে গেলাম। নামাজের পরে দুজন মিলে দুপুরের লাঞ্চ এই স্টারে। অনেক দিন পরে। সব কিছু আমার কাছে আগের মতোই মনে হলো। আমাদের ঠিক পাশেই একদল কম বয়সী ছেলে-মেয়ে বসে ছিল। স্পষ্টই মনে হলো যে বন্ধুদের ট্রিটেই এসেছে সবাই। আমরা যেভাবে আসতাম।
কাচ্চির টেস্ট আমার কাছে আগের মতোই মনে হলো। তবে এখন মাংসের সাইজ একটু ছোট। এমনকি যে কাবাবটা সাথে, সেটা আগেরটার থেকে অনেক চিকন। খাওয়া-দাওয়া বেশ ভালোই হলো। দেখলাম ওয়েটারগুলো যেমন ছিল তেমনই আছে। খাবার দিয়েই গায়েব হয়ে যায়। আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু যখনই বিল দিতে গেলাম তখন ঠিক আগের মতোই টিপস নিতে হাজির।
স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টের সাথে অনেক অনেক সুমধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে যখন এগুলো মনে পড়ে তখন মনে হয় সে সময়টা কতই না চমৎকার ছিল। এখন সেটা বুঝতে পারছি বেশ ভালোভাবেই।
(কাল ছবি তুলতে ভুলে গেছি। উপরের ছবিটা নেট থেকে নেওয়া)
১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:১০
অপু তানভীর বলেছেন: সুলতান ডাইনের ঐ কাহিনী আসলে ভুয়া ছিল। মাংসের সাইজ ছোট দেখে অনেকের মনে করেছি কুকুরের মাংস। কিন্তু বাস্তবে এটা আসলে একেবারে অসম্ভব। যদি এমন হত যে ছোট ছোট তেহরীর মাংসের ভেতরে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে কুকুররের মাংস তবুও একটা কথা ছিল। আস্তো একটা কুকুরের মাংসের পিচ, এটা অসম্ভব একটা ব্যাপার। মুখে দিএলি টের পাওয়া যাবে। ওটা নেটের হুজুগে বাঙাল ছাড়া আর কিছু নয়।
এখন অনেক কিছু বের হয়েছে। সেই সম্যে এতো কিছু ছিল না।
২| ১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৩২
নকল কাক বলেছেন: দিলেন তো জিভে পানি এনে....
১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন: তবে আর দেরী কেন ? দুপুর তো হয়ে এল । এক প্লেট কাচ্চি মেরে দিন!
৩| ১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৬
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আমাদের সময়ে ট্রিট হতো ধানমন্ডি ৪ এর উল্টাদিকে মিং হাউজ আর কাটাবনে টুংকিং চায়নিজ রেস্টুরেন্টে। অথবা ধানমন্ডির লা বাম্বা আর হেলভেশিয়াতে। আর ছোটখাটো ট্রিটের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাস এ। খাবার-দাবার নিয়ে কোনকালেই আমার বিশাল রকমের আকর্ষণ ছিল না। ''পাইলে খাইলাম, না খাইলে নাই'' টাইপের। তাই বলে আবার ভাববেন না যে, একেবারেই নিরামিশ ছিলাম। বেশী স্বাস্থ্য সচেতন হলে যা হয় আরকি!!! তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে জিম করতাম নিয়মিত!!!!
বিরিয়ানী আমার খুব প্রিয় খাবার হলেও রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওই জিনিস কমই খেতাম। আমার আম্মা দারুন বিরিয়ানী রান্না করতেন।
মাঝে-মধ্যে স্মৃতিচারণ করতে ভালোই লাগে!!!
১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:০৫
অপু তানভীর বলেছেন: আমার আবার বলতে পারেন উল্টা। বাসায় বানানো বিরিয়ানী আমার একদম অপছন্দ। আমাদের এখানে লোকাল একটা বিরিয়ানীর দোকান আছেন। এখানে এক সময় প্রায় দিনই খাওয়া হত। ভাতের থেকে বিরিয়ানী আর আর তেহরী খেয়েছি বেশি তবে এখন একটু বুড়ো হওয়ার কারণে খাওয়াদাওয়াতে একটু কন্ট্রোল এনেছি। দিন হিসাবে সপ্তাহে একদিন মাত্র।
লা বাম্বাটা এখনও আছে তবে হেলভেশিয়া আর আগে জায়গাতে নাই। কই গেছে কে জানে।
৪| ১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: চায়ের দোকানের সামনের অংশে একটা পলিথিন দিয়ে ছাদ তৈরী করা হয়, বৃষ্টির দিনে সেই ছাদে জমে অনেক পানি; মাঝ বরাবর ঝুলে থাকে। পাছে ঐ পানির চাপে ছাদ ছিড়ে পড়ে, দোকানী মাঝে মধ্যেই মাঝখানটা উঁচু করে দিয়ে পানি ফেলে দেয়। তখন ঝপ করে একগাদা পানি পড়ে। একবার আমার মাথায় পড়েছিলো; দোকানী মামা খেয়াল না করেই উঁচু করে দিয়েছেন, আর আমার মাথায় পড়লো পানি।
সেভাবে হাজারো স্মৃতি হঠাৎই আপনার পোষ্ট পড়ার সময় মাথায় পড়লো। ভিজে গেলাম সেই সব স্মৃতিতে!
আমি সব থেকে বেশী কাচ্চি খেয়েছি ওদের ধানমন্ডি ২নম্বর ব্রাঞ্চ থেকে, এরপর বনানীরটা থেকে। অন্য গুলিতে খুব একটা যাওয়া হয় নি।
১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:০৮
অপু তানভীর বলেছেন: আমাদের সবারই এমন অনেক স্মৃতি রয়ে গেছে। সময় সুযোগ পেলেই সেগুলো উকি ঝুকি মারে!
দুই এ ব্রাঞ্চে অনেকবার খাওয়া হয়েছে । তবে বনানী বা কাওরান বাজারেরটাতে যাওয়াই হয় নি। কাওরান বাজারেরটার সামনে দিয়ে এখন প্রতিদিন আসি যাই কিন্তু ভেতরে ঢোকা হয় নি এখনও।
৫| ১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৭
শ্রাবণধারা বলেছেন: স্টারের কাচ্চি শেষ কবে খেয়েছি, আমারও মনে নেই। তবে আমিও ধানমণ্ডির ২ নম্বর স্টারটাতেই অনেকবার গিয়েছি। পরবর্তীতে উত্তরায় থাকার কারণে উত্তরার ৩ নম্বর ফখরুদ্দিনের কাচ্চি বেশ কয়েকবার খেয়েছি, গুলশান ১ নম্বরের টাতেও।
শেষবার যখন দেশে গিয়েছিলাম, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, তখন একদিন সন্ধ্যায় এক বন্ধুর সঙ্গে কারওয়ান বাজারের স্টারে গিয়ে কাবাব-পরাটা খেয়েছিলাম। বেশ ভালো লেগেছিল।
১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:১৩
অপু তানভীর বলেছেন: ফকরুদ্দিনের কাচ্চি বেশ চমৎকার। আমার বেশ পছন্দের । কারওয়ান বাজারের স্টারে আমি এখনও যাই নি। দেখি একবার যেতে হবে ।
৬| ১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৯
জুল ভার্ন বলেছেন: স্টার কাবাব এন্ড রেস্টুরেন্টের সব খাবারেরি ভক্ত আমি। তবে "নো বীফ" এর কারণে স্টার কাবাব বর্জন করে ছিলাম অনেক বছর....কিন্তু গত ছয় বছর প্রতি সপ্তাহেই কোর্টে যেতে হতো সকাল সকাল....আমি খুব সকালে খাবার খেতে পারিনা, তাই বাসায় নাশতা না করেই বের হয়ে যেতাম এবং অন্য সহ আসামিদের সাথে প্রতি সপ্তাহেই স্টার কাবাবে সকালের নাশতা করতাম। যাই হোক, ধানমণ্ডি-২ স্টার কাবাব এন্ড রেস্টুরেন্টের কনভেনশন হলে আমাদের অনলাইন এক্টিভিস্টদের একটা গেটটুগেদার অনুষ্ঠিত হবে নেক্সট উইকে। যার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় আমরা আয়োজকদের কয়েকজন গিয়েছিলাম ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কারার জন্য... আমরা ডিনার করেছি কাচ্চি বিরিয়ানি দিয়ে। মান ভালো।
১৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩১
অপু তানভীর বলেছেন: কাচ্চি জিনিস আমার নিজের বেশ পছন্দ । এক সময় আমি এই কাচ্চি খেয়েছি প্রচুর। এখনও খাই তবে একটু রয়ে সয়ে।
বো বীফ এর কারণে মানুষের আচরণ আমার কাছে বেশি বেশি আর অযথা মনে হয়েছে। আমি এই কারণে অবশ্য কোন দিন স্টারকে বয়কট করি নি। যদিও অনেক দিন সেদিনে যাওয়াও হয় নি।
৭| ১৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: বাহ ভোজন রসিকরা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে
১৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২
অপু তানভীর বলেছেন: বাঙাল যডি ভোজন রসিক না হয় তবে সে শত ভাগ ভাঙ্গালিই না।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫
জুন বলেছেন: আমরা সাধারণত ধানমন্ডি ২ নম্বর রোডের স্টারে যেতাম বেশি। ওদের কাচ্চিটা ফখরুদ্দিন এর চেয়েও অনেক মজার ছিল অপু। তবে সুলতান ডাইন না কি জানি এক রেস্তোরাঁর কাহিনী শুনে এসব দোকানে খেতে ভয় লাগে। কাল অবশ্য একটা দাওয়াত ছিল, তারা খুব ভোজন রসিক। ইব্রাহিম বাবুর্চির কাচ্চি অসাধারণ ছিল। তারপর ও খুব যে বেশি খেয়েছি তা নয়।
আপনার লেখায় ঢাবি জীবনের স্মৃতি ফিরে এলো।
+