![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মানে হচ্ছে সদা উন্নত শীর...... স্বাধীন চিন্তা আর যুক্তিবাদীতার মুর্ত প্রতীক । ১৮৩৯ সালের ২২ এপ্রিল 'হিন্দু ল কমিটি'র পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই পরীক্ষাতেও যথারীতি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ১৬ মে ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে 'বিদ্যাসাগর' উপাধিটি ব্যবহৃত হয়।সংস্কৃত কলেজে বারো বছর পাঁচ মাস অধ্যয়নের পর তিনি এই কলেজ থেকে অপর একটি প্রশংসাপত্র লাভ করেন।বেতন ছিল মাসে ৫০ টাকা। ১৮৪৭ সালের ১৬ জুলাই কলেজ পরিচালনার ব্যাপারে সেক্রেটারি রসময় দত্তের সঙ্গে মতান্তর দেখা দেওয়ায় সংস্কৃত কলেজের সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।এমন দেশ প্রেমিক ভালোমানুষ আমাদের খুবই দরকার। যারা অনাহারি মানুষের মুখে খাবার তুলে দিবে, অসুস্থ মানুষের জন্য তৈরি করবে নিরাপদ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খাদ্য আর পানিতে মেশাবে না বিষাক্ত কেমিক্যাল, পড়া-শোনার জন্য তৈরি করবে সুস্থ বিদ্যাপীঠ, সামাজিক বৈষম্য আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ে যাবে আমৃত্যু।
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর অর্জিত সকল বস্তগত সম্পদই শুধু অকাতরে বিলিয়ে জান নি; সত্য আর ন্যায় প্রতিষ্ঠায় নিজের সামাজিক অবস্থান- খ্যাতিকে পদদলিত করতে এক মুহুর্ত বিলম্ব করেন নি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই লাভ করেন বিদ্যাসাগর উপাধি। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন।বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই।ভাবতে অবাক লাগে প্রায় দেড় শতাধিক বছর আগেই তিনি নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবেছিলেন।নিজের আয়ের একটা বড় অংশ ব্যয় করতে দুস্থ ও অসুস্থ মানুষে সেবায়।চিন্তা-ভাবনায় এত আধুনিক হয়েও চলা ফেরায় ছিলেন একেবারেই সাদামাটা।রচনা করেছেন জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ, একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্ম তারিখ: সেপ্টেম্বর ২৬, ১৮২০ । জন্ম স্থান: বীরসিংহ, তদনীন্তন হুগলি জেলা (অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) ।মৃত্যু তারিখ: জুলাই ২৯, ১৮৯১ (৭০ বছর) মৃত্যু স্থান: কলকাতা, বাংলা প্রেসিডেন্সি (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ), ব্রিটিশ ভারত (অধুনা ভারত) ।দাম্পত্য সঙ্গী: দীনময়ী দেবী, পিতামাতা: ঠাকুরদাস, বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভগবতী দেবী, সন্তান: নারায়ণচন্দ্র বিদ্যারত্ন ।পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে তাঁর স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী কলকাতার আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিদ্যাসাগর সেতু তাঁরই নামে উৎসর্গিত। ১৮৩০ সালে সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতেও ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র। ১৮৩১ সালের মার্চ মাসে বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য মাসিক পাঁচ টাকা হারে বৃত্তি এবং ‘আউট স্টুডেন্ট’ হিসেবে একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ ও আট টাকা পারিতোষিক পান।১৮৪৯ সালে মার্শম্যানের হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে রচনা করেন বাঙ্গালার ইতিহাস দ্বিতীয় ভাগ গ্রন্থখানি।১৮৫৩ সালে জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে স্থাপন করেন অবৈতনিক বিদ্যালয়। ১৮৫৭ সালের ২৪ জানুয়ারি স্থাপিত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা সমিতির অন্যতম সদস্য তথা ফেলো মনোনীত হন বিদ্যাসাগর মহাশয়।
১৮৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব – প্রথম পুস্তক প্রকাশিত।বিধবা বিবাহ আইনসম্মত করতে ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ সরকারের নিকট বহুসাক্ষর সম্বলিত এক আবেদনপত্রও পাঠান। দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে।মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মশক্তি ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি। নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রবল সমর্থক ছিলেন তিনি। হিন্দু বিধবাদের অসহনীয় দুঃখ, তাঁদের প্রতি পরিবারবর্গের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল তাঁকে। এই বিধবাদের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন সর্বস্ব পণ করে সংগ্রাম করেছেন।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অন্যতম কৃতিত্ব শিক্ষা সংস্কার। বর্ণপরিচয় গ্রন্থে তাঁর লিপিসংস্কারই পরবর্তীকালে বাংলা লিপির আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। আজ পর্যন্ত এই লিপিই বাংলায় প্রচলিত।কর্মজীবনে তিনি ছিলেন প্রবল জেদী ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন।দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অন্নসত্র খুলে সকলকে দুই বেলা খাওয়াতেন। একবার কয়েকজন অন্নসত্রে খিচুড়ি খেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি সকলকে দুইবেলা মাছ ভাত খাওয়ানোর নির্দেশ দেন।
বিদ্যাসাগর ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের বংশে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি অতীতের প্রথা ও বিশ্বাসের মধ্যে মানুষ হয়েছিলেন।-- এমন দেশে তাঁর জন্ম হয়েছিল, যেখানে জীবন ও মনের যে প্রবাহ মানুষের সংসারকে নিয়ত অতীত থেকে বর্তমান, বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের অভিমুখে নিয়ে যেতে চায় সেই প্রবাহকে লোকেরা বিশ্বাস করে নি, এবং তাকে বিপজ্জনক মনে করে তার পথে সহস্র বাঁধ বেঁধে সমাজকে নিরাপদ করবার চেষ্টা করেছে।
বিদ্যাসাগর জন্মের ১৭৫ বছর অতিক্রান্ত। তথাপি তিনি আজও আমাদের সন্মুখে উজ্বল আদর্শ নিয়ে দন্ডায়মান। বর্তমানে আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বব্যাপী নৈরাজ্য, অঃধপতন, অনৈক্য ও মণুষ্যত্বহিনতার দিনে অন্ধকার থেকে আলতে উত্তীর্ণ হবার উজ্বল দিশারী বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরের কাল থেকে আমরা অনেক এগিয়ে এসেছি। আরো এগিয়ে যাবে কাল। কিন্তু মানুষের কল্যাণসাধন চিরকালীন সত্য বলেই যুগযুগান্তরে ভবিষ্যত প্রজন্মের দীক্ষাগুরু ও সহযাত্রি হিসেবে বিদ্যাসাগর থাকবেন সকলের পুরোভাগে।
"কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়িয়া যায়,
তেমনি গোপনে কৌশলে মানব-ইতিহাসের
বিধাতা বঙ্গভূমির প্রতি বিদ্যাসাগরকে মানুষ
করিবার ভার দিয়াছিলেন।"
©somewhere in net ltd.