নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের সিংহ ভাগই কাটিয়েছেন পদ্মা, ইছামতি, নাগর, আত্রাই নদী বিধৌত উত্তরবঙ্গের সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা নাগর নদীর তীর পতিসরে।পল্লী বাংলার সাধারন মানুষ, চাষী, মুটে-মজুর, হিন্দু, মুসলমান প্রজা, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ ক্ষেত খামার ও হাল লাঙ্গল এসবই তাঁর মনের মাটিতে একাকার হয়ে যায়।জমিদারী দেখাশুনা করতে তিনি ঘুরে বেড়াতেন তিনটি জেলায়।কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাংলাদেশে ছিল ৩ টি জমিদারী।
ক্রয়সূত্রে ১৮৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর কালিগ্রাম পরগনা জমিদারির অন্তর্ভূক্ত করেন। পতিসর কালিগ্রাম পরগনার সদর দপ্তর। নওগাঁ, বগুড়া ও নাটোর জেলার ৬ শ টি গ্রাম নিয়ে কালিগ্রাম পরগনা গঠিত। এর আয়তন ছিল ২৩০ বর্গমাইল।আঁকা-বাঁকা ছোট্র নদী নাগরের তীরে অবস্থিত এই পতিসর। পূর্ব-দক্ষিনে চলন বিল ও আত্রাই নদী। পশ্চিম-উত্তরে রক্তদহ বিল। অসংখ্য খাল-বিল, নদী-নালা পরিবেষ্টিত কালিগ্রাম পরগনা। (সেই সময়) বছরের প্রায় ৬ মাস পানিতে ডুবে থাকতো। তখন গ্রাম গুলোকে মন হতো যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। রবীন্দ্রনাথ সর্ব প্রথম এ বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আসেন ১৮৯১ সালে।
পতিসরের প্রতি রবীন্দ্রনাথের ছিল অগাধ ভালবাসা, ছিল এখানকার মানুষের প্রতিও। তার বিচক্ষনতা দিয়ে প্রজাহ্নদয় জয় করেছিলেন। জমিদারি পরিচালনা পদ্ধতিও ছিল আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত। তাই তিনি তাদের আপনজন হয়ে যান। কালিগ্রাম ”হিতৈষী সভা ” নামে একটি সংগঠন তৈরী করেন। কালীগ্রাম পরগনার প্রজাদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে পতিসর, রাতোয়াল ও কামতা ৩টি বিভাগে ৩টি মধ্য ইংরেজী (এম.ই) স্কুল ও পতিসরে ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে ১টি হাইস্কুল স্থাপন করেন। স্কুলের ভবন, ছাত্রাবাস নির্মাণ ও অন্যান্য খরচ এস্টেট থেকে বহন করা হতো। পূর্ব বাংলায় ’জমিদারি’ করতে এসে রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতই নিজেকে আবিস্কার করেছিলেন নতুন করে। পতিসরে বসেই তিনি গোরা ও ঘরে বাহিরে (অংশ বিশেষ) উপন্যাস, ছোট গল্প ’প্রতিহিংসা’ ও ঠাকুরদা, লিখার রসদ পেয়েছিলেন। পূর্ণিমা, সন্ধ্যা, চৈতালি-মধ্যাহ্ন, পল্লীগ্রামে, সামান্য লোক, দুর্লভ জন্ম, খেয়া, কর্ম , মেঘদূত, দিদি , পরিচয়, অনন্তপথে ’র মত অনেক কবিতা রচনা করেছিলেন।
মহাজনদের হাত থেকে কৃষকদের মুক্ত করতে সমবায় পদ্ধতিতে ১৯০৫ সালে কালিগ্রাম পরগনার পতিসরে কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন ।নওগাঁ শহর থেকে ৩৬ কিলোমিটার দুরে পতিসরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পতিসর কুঠিবাড়ী অবস্থিত।পতিসরকে ছুঁয়ে এঁকে বেঁকে গেছে নাগর নদী। একদা এই নদীতে কবির প্রিয় “পদ্ম-বোট” এ বসে কবি রচনা করেছিলেন, তালগাছ এক পায়ে দাড়িয়ে/ সবগাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে।কবির প্রিয় সেই নাগর নদী আজো প্রবাহমান। কিন্তু কবির নেই তালগাছটি আজ আর নেই। ১৯৬২ সালে এক প্রবল ঝড়ে সেই তালগাছটি ভেঙ্গে পড়ে। তালগাছটির স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে সেখানে এখনো বয়েছে একটি মাটির উঁচু ভিটে। নতুন করে একটি শিশু তালগাছ গজিয়ে তার স্মৃতিকে জানান দিচ্ছে। ১৯৩১ সালে বিখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদা শংকর রায় ছিলেন নওগাঁর মুহকমা প্রশাসক। সেই সময় এই দুই ব্যক্তিত্বের সাক্ষাত ঘটেছিল। একবার অন্নদা শংকর রায় আত্রাই ষ্টেশনে গিয়েছিলেন কবির আহবানে।
নোবেল পুরস্কারের ১লক্ষ ৮ হাজার টাকা এই ব্যাংকে বিনিয়োগ করা হয়। ১৯১০ সালে উত্তরবঙ্গের মহাপ্লাবনের পর আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় মহাশয়ের বন্যাত্রাণ ফান্ডে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হইয়াছিল এবং এই টাকায় আমেরিকা হইতে কয়েকটি ট্রাক্টর ক্রয় করা হয়। রবীন্দ্রনাথ একটি ট্রাক্ট্রর লইয়া পতিসর অঞ্চলে কলের লাঙ্গল দিয়া জমি চাষ প্রবর্তন করেন। ট্রাক্ট্রর পাওয়া গেলে, কিন্তু চালক পাওয়া গেল না। পুত্র রথীন্দ্রনাথ আমেরিকায় কৃষিবিদ্যা শিক্ষাকালে ট্রাক্ট্রর চালনা করিয়াছেন। পতিসরে তাই তিনি ট্রাক্ট্ররের ড্রাইভার রুপে আশে পাশে জমি চাষ করিয়াছেন। যন্ত্রদানবের কার্যকলাপ দেখিতে প্রথম দিন হাজার হাজার লোক পতিসরে উপস্থিত হইয়াছিল।
১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত পতিসর কঠির বাড়ি কর্মমূখর ছিল।১৯৪৭ সালের পর থেকেই ক্রমাগত বিলুপ্তি হতে থাকে, কবির সাজানো বাগান হারিয়ে যেতে থাকে কাচারী বাড়ির সকল জিনিসপত্র। দেশ বিভাগের পর ১৯৫২ সালের অর্ডিন্যান্স বলে তদানীন্তন পূর্বপাকিস্থান সরকার এই জামিদারি অধিগ্রহন করে। কবি পতিসরের বিদায়ের শেষ দিনটিতে কুঠিবাড়ীর সামনের রবীন্দ্র সরোবর ঘাটে সমবেত প্রজাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “ আমি অসুস্থ্য আর হয়তো তোমাদের কাছে আসিতে পারিব না, তোমরা আমাকে অনেক দিয়াছ, আমি তোমাদের কিছুই দিতে পারি নাই-আমি প্রার্থনা করি তোমরা সুখি হও, শান্তিতে থাকো। সেদিন সেই নিভৃত পল্লীতে নেমেছিল শোকের ছায়া।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মময় জীবনের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পতিসরের স্মৃতি। কবির স্মৃতিকে নিজের অনুভবের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য আজো কবি ভক্তরা ছুটে যান পতিসর।
প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুত্র মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৪২ বছর বয়সে মারা যান। তার সন্তানাদির নাম আর কিন্চিৎ পরিচয় ক্রমানুসারে নীচে দেখুন-
১। কন্যা: শিশুকালেই মারা যান। ২। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪০-৯১২৬): পন্ডিত । ৩। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪২-১৯২৩): সরকারী আমলা। ৪। হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪৪-১৮৮৪): বিজ্ঞানী। ৫। বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৪৫-১৯১৫): ৬। সৌদামিনী দেবী: (১৮৪৭- ১৯২০):৭। জোতিরিন্দ্রণাথ ঠাকুর ১৮৪৮- ১৯২৫): পন্ডিত, নাট্য ব্যাক্তিত্ব। ৮। সুকুমারী দেবী: ১৮৪৯- ১৮৬৪):৯। পুন্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৫০-১৮৫১):১০। শরৎকুমারী দেবী। (১৮৫৬- ১৯২০):১১। স্বর্ন কুমারী দেবী। (১৮৫৮- ১৯৩২):১২। বনকুমারী দেবী। (১৮৫৯- ১৯৩৪):১৩। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬০-১৯২৩): ১৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬১- ১৯৪১): নোবেল জয়ী বিশ্ব কবি। ১৫। বুধেন্দ্রনাথ ঠাকুর: (১৮৬৩- ১৮৬৪):
২| ০৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৫২
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
সত্যি রবি ঠাকুরের তুলনা হয় না
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
শফিক১৯৪৮ বলেছেন: লেখা ভাল লাগল।