নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাটি আমার খুব প্রিয় একটি প্রানী

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৮

প্রানী হিসেবে হাতি অসাধারন। হাতির সারা শরীর জুড়ে মায়া-মায়া ভাব প্রবল। বন্য সমস্ত পশুর মধ্যে একমাত্র হাতি'ই আমাকে তীব্র আকর্ষণ করে। হাতিরা একা থাকতে পছন্দ করে না। তারা সব সময় দলবদ্ধ হয়ে থাকে। হাতি খুবই শান্তি প্রিয়। যার দাঁত সবচেয়ে বড় সেইই দলনেতা হয়। এটা একটা অলিখিত নিয়ম। হাতীরা দলবেধে চলে সবসময়। বাচ্চা হাতীদের খুব আদর করে দলের বড়রা। বাচ্চা হাতীরা খুব দুষ্টুমি করে। তারা এলোমেলো ছুটোছুটি করে। বাচ্চারা চোখের একটু আড়াল হলেই পাগলের মতো খুঁজতে থাকে দলের সবাই। রাজার মতো চালচলন তাদের। বড় সুখী সুখী ভাব। ১৯১৪ সালে আফ্রিকায় হাতির সংখ্যা ছিল ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি। ১৯৭৯ সালে তা এসে দাঁড়ায় ১৩ লাখে।

একটা মেয়ে হাতির সেক্স করার পর প্রায় দুই বছর সময় লাগে বাচ্চা প্রসব করতে। কচ্ছপ একশো বছর বাঁচলেও হাতি বাঁচে মাত্র ৬০/৭০ বছর। এই প্রানিটা একশো দুই বছর বাঁচলে ভালো হতো। আফ্রিকায় প্রতি ১৫ মিনিটে একটি হাতিকে হত্যা করা হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় একশ’ হাতি হত্যা করা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, গত বছর কমপক্ষে ৩৫ হাজার হাতিকে হত্যা করা হয়েছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দাঁতের জন্য নির্দ্বিধায় হাতি হত্যা করছে। হাতীর ডাক অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। ওটা গাঢ়, গভীর, সুদূর, কখনো ক্রুদ্ধ, কখনো করুণ, কখনোবা হালকা। হাতি যে দাঁতগুলো দিয়ে খায়, সেগুলো আমরা দেখতে পাই না। যে দাঁত দুটি আমরা দেখি, ও-দুটি তার শোভাবর্ধনকারী দাঁত। শুঁড়ে ঢাকা ভেতরের দাঁতগুলো অতি ধারালো ও তীক্ষ। তা ছাড়া হাতিরও মাহুত থাকে। সেই হস্তীচালক যেভাবে নির্দেশ দেয়, হাতি সেভাবেই চলে। কারণ, তারও পুরোপুরি স্বাধীনতা নেই যা খুশি করার।

পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি আছে, এশিয়ান হাতি ও আফ্রিকান হাতি, যদিও শারিকরিকভাবে দেখতে প্রায় একইরকম তবু এদের মধ্যে জৈবিক পার্থক্য রয়েছে। খাদ্য পছন্দের তালিয়ায় এশিয়ান হাতিরা বেশি পছন্দ করে ঘাস পক্ষান্তরে আফ্রিকান হাতির পছন্দ পাতা। বাংলাদেশের স্থায়ী বন্যহাতির আবাসস্থল হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইনা, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া; কক্সবাজারের কাসিয়াখালি, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ; বান্দরবানের লামা ও আলিকদম; রাঙ্গামাটির কাউখালি, কাপ্তাই ও লংদু এবং খাগড়াছড়িসহ দেশের ১১টি বনবিভাগে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। ‘হাতি মরলেও লাখ টাকা' – এ শুধু কথার কথা না। স্থলের সবচেয়ে বড় এ প্রাণীর দেহের কোন কোন অংশ কী কী কাজে লাগে সে বর্ণনায় না গিয়ে শুধু এটুকু বলা যেতেই পারে যে, হাতির দাঁতের যা দাম তার তুলনায় অন্য কোনো প্রাণীর সারা দেহও তুচ্ছ।

১৯৮০ সালে বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ছিল ৩৮০টি। ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ২৩৯টি। একদিন দেখলাম কাটা বনে এক লোক হাতির উপর চড়ে ভিক্ষা করছেন। হাটিটা ছিল অনেক বড়। হাটিটা দোকানের সামনে গিয়ে শূর তুলে সালাম করছে। ভিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত দোকানের সামনে থেকে নড়ছে না। আমার অনেক টাকা থাকলে আমি অবশ্যই একটা হাতি কিনতাম। চীনে অভিনব দোকানগুলোতে হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি দামী মূর্তি ও গহনার রমরমা ব্যবসা রয়েছে। হাতির দাঁতের বহু ক্রেতারাই দৈত্যের মতো শুধু চোখের আড়ালেই থাকে না মনের আড়ালেও চলে যায়।

‘হাতির নাক শুধু আকারেই বড় নয়, এর ক্ষমতাও বেশি৷'' ভাল ঘ্রাণ নেয়ার ক্ষমতা কোনো প্রাণীকে সঙ্গী ও খাবার খুঁজতে সহায়তা করে। হাতির জন্য অদ্ভুত এক টান অনুভব করি। হাতির চোখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করি গভীর মমত্ব। হাতির কাছ থেকেই আমি ভালোবাসতে শিখেছি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফী আর ডিসকোভারীতে হাতির অনুষ্ঠান দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশাল একটা হাতির সমান। মানুষের লোভের শিকার পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, যা কিছু মহান ও বিশাল। মানুষের লোভের শিকার কি মানুষ নিজেও নয়? হস্তীদন্তের বাণিজ্য এখন আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু যাদের টাকা আছে তাদের আবার নিষেধ কিসের। পাগলা হাতি বাদ দিলে এমনিতে সত্যিই অনেক নিরীহ এ প্রাণীটা। কিন্তু সাথে দুধের বাচ্চা থাকলে কিংবা কোনভাবে কাউকে যদি শত্রু মনে করে তাহলে জঙ্গলের ত্রাশে পরিণত হয় এই বিশালদেহী প্রাণী।

বয়স ৩৬। ইংলিশ মডেল, সঙ্গীতশিল্পী ও ব্যবসায়ী ক্যাটি বলেছেন, ‘আমি হাতির মত সুন্দর। গায়ের চামড়া হাতির মত শক্ত। আমি সহজে কোনও কিছু ভুলতে পারি না।’ আমরা প্রতিদিন কফি খাই। আইভরি কফি, পৃথিবীর সব থেকে দামী কফি। ঠোঁটে একবার ছোঁয়ালে তার স্বাদ ভুলতে পারবেন না আমৃত্যু। আইভরির কফির স্বাদের পিছনে রয়েছে হাতির মলের অবদান। হাতির বিষ্ঠা থেকেই তৈরি হয় দুর্মূল্য ও বিশেষ স্বাদের এই কফি। কটা হাতি ৩ মাইল দূর থেকে পানির গন্ধ পায়! হাতি নিয়ে অসাধারন কিছু মুভি আছে। যদিও এই মুহূর্তে শুধু মনে পরছে- Dumbo মুভিটি।

টিভিতে দেখি, হাতির আশ্চর্য আনন্দমুখর ও শান্তিপূর্ণ জীবন। তারা খেলছে, তারা রঙ্গতামাশা করছে পরস্পরের সঙ্গে, কুস্তি করছে একে অন্যের সাথে। শিশুরা কাদা ছুড়ছে একে অন্যের দিকে, লুকোচুরি খেলছে, মারামারি করছে, সময়ে অসময়ে বিরক্ত করছে তাদের মায়েদের। মায়েরা তাদের শাসন করছে দুষ্টুমির মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে। এক বাচ্চা হাতিকে দেখলাম মায়ের ‘বকুনি’ খেয়ে লুকোবার চেষ্টা করছে গাছের আড়ালে। কিন্তু হাতীর শরীর কি তুচ্ছ গাছের আড়াল মানে? দারুণ হাসি পাচ্ছিল আমার শিশু হাতীটার কাণ্ড দেখে। আরো দেখলাম তরুণ হাতীদের প্রেমের লীলা। মেয়ে হাতীগুলো একটু শান্তশিষ্ট, সংযত তাদের আচার আচরণে, আর ছেলেগুলো ঠিক তার বিপরীত। দুরন্ত, অস্থির, চঞ্চল। তারা সারাক্ষণ মেয়েগুলোকে ধেয়ে চলেছে। উদ্দেশ্য একটাই, প্রেম। হাতী জাতির দাম্পত্য জীবন একটু ভিন্ন প্রকৃতির। বাচ্চা প্রসবের পর মায়েরা বাচ্চার দেখভাল নিয়েই ব্যস্ত সারাক্ষণ, আর পুরুষরা ছুটে বেড়াচ্ছে অন্য সঙ্গীর সন্ধানে। মানুষের চেয়ে খুব কি আলাদা তারা?

হাতীসমাজের আরেকটা জিনিস আমার কাছে অসাধারণ মনে হল----তারা যেভাবে মৃত হাতীর শেষকৃত্য পালন করে। প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নেয় হাতীটা সত্যি সত্যি মারা গেছে কিনা। নাকি এমনি এমনি শুয়ে আছে মাটির ওপর। মৃত্যু ঘটেছে সেটা প্রমান হয়ে গেলে শুরু হয় শোকপর্ব। মারা গেছে বলে তার দেহটাকে তারা ফেলে রাখবে না জীবজন্তুর ভোগের সামগ্রী হবার জন্যে। তারা ওর চারদিকে সার বেঁধে ঘুরবে, একপ্রকার শোকনৃত্যও বলা যায়, যেন সবাই মিলে কান্নাকাটি করছে, এবং সংযত শৃঙ্খলার সাথে। এরকম করে তারা তিনদিন কি চারদিন শোকব্রত পালন করবে। এর মাঝে একমুহূর্তের জন্যেও তারা মৃত হাতীটার কাছে অন্য কোন প্রাণীকে আসতে দেবে না, ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে কেউ চেষ্টা করলে। এই ঘূর্ণনক্রিয়া তারা পালন করবে পালা করে---একদলের ডিউটি শেষ হলে আরেকদল আসবে। মানে সে এক অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য ব্যাপার। প্রকৃতির কি আশ্চর্য রূপ---এই সে বিশাল এক জীব, নিজের দেহের ভারে যে ব্যাহত আজীবন, যার কোনও মূল্যই দেওয়া হয়না মানবসমাজে, কেবল তার মূল্যবান দন্তযুগল ছাড়া, সেই উদ্ভট জীবটিরও কি অদ্ভুত নরম মন। পরস্পরের জন্যে কত না তাদের মায়ামমতা।

হাতির দাঁতের শিল্পকর্মে হাতির দাঁতের ব্যবহার খ্রিস্টজন্মের বহু পূর্ব থেকেই শুরু হয়েছে। প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতায় (খ্রি.পূ ২৩০০-১৭৫০) হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম জনপ্রিয় ছিল। হাতির দাঁত দুই ধরনের শক্ত ও নরম। শক্ত দাঁত উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ হয়, কিন্তু তা কাটা কঠিন। অন্যদিকে নরম দাঁত দিয়ে কাজ করা সহজ এবং তাতে ফাটল ধরে না। কাজ শুরুর আগে কল্পিত শিল্পের পরিমাপ অনুযায়ী দাঁত কেটে নেওয়া হয় এবং তার ওপর পেন্সিল দিয়ে নকশাটি আঁকা হয়কবাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরএ হাতির দাঁতের যেসব শিল্পকর্ম রয়েছে সেগুলির কোনো কোনোটিতে কালো রঙের সূক্ষ্ম কাজ রয়েছে। এখানে সংগৃহীত শিল্পকর্মের মধ্যে আকর্ষণীয় ও মূল্যবান নিদর্শনটি হচ্ছে হাতির দাঁতের তৈরি পাটি।

অতএব আসুন আমরা হাতিকে ভালোবাসি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশাল একটা হাতির সমান। 

০২ রা আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.