নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাজি মুহম্মদ মুহসীন

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৩

একদিন রাতে তাঁর ঘরে এক চোর ধরা পড়ল। চোর ভাবল এবার প্রাণটাই বুঝি যায়! কিন্তু গৃহকর্তা চোরকে কোনো শাস্তি না দিয়ে চোরের অভাবের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তাকে খাবার, টাকা -পয়সা আর ভালো হওয়ার উপদেশ দিয়ে বিদায় করলেন। এমন মানবদরদি মানুষটি হলেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন। অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল ইতিহাস ও বীজ গণিতে। অশ্বারোহণ ও অস্ত্র চালনায় ছিলেন পারদর্শী। নিজ হাতে রান্না করে খেতেন তিনি। মানুষকেও খাওয়াতেন। বহু নবাব-নাজেম রাজপুরুষ তার কাছে যেতেন। কিন্তু তিনি কখনো রাজদরবারে যেতেন না।

মহসীন ছিলেন সংসারবিরাগী মানুষ। ঘর-সংসার, ধন -দৌলতের প্রতি তার কোন লোভ ছিল না। কিন্ত বোনের এই বিশাল সম্পত্তি নিয়ে তিনি এখন কি করবেন। তাঁর তো ঘর নেই, সংসার নেই এ সম্পত্তি ভোগ করার মত কোন বংশধরও নেই। তাছাড়া তিনি নিজেও এখন বৃদ্ধ। বয়স সত্তর বছর। আর ক’দিনইবা বাঁচবেন। তাই তিনি স্থির করলেন এই বিশাল সম্পত্তি তিনি মানব জাতির কাজে ব্যয় করবেন। দেশের দ্বীন-দুঃখী ও দুস্থদের সেবায় তিনি নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেবেন। তার সম্পত্তির অধিকাংশই তিনি ব্যয় করেন শিক্ষার উন্নয়নের জন্য। তৎকালীন অনগ্রসর মুসলিম সমাজে শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন অনেকগুলো স্কুল, কলেজ। মুসলমান ছেলে মেয়েদের জন্য প্রবর্তন করলেন মহসীন বৃত্তি। গঠিত হল মহসীন ফান্ড। ভারতের মুসলমান ছেলে মেয়েরা এই ফান্ড থেকে আজো বৃত্তি পেয়ে থাকে। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হুগলীর ইমামরারা, হুগলী মহসীন কলেজ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনাথদের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন কয়েকটি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। তাঁর দান কর্ম নিয়ে প্রচলিত আছে অনেকগুলো গল্প। তিনি রাতে সাথে টাকা নিয়ে ছদ্ম বেশে শহরের অলি-গলিতে ঘুরে বেড়াতেন। দ্বীন-দুঃখী, অন্ধ, যাকে সামনে পেতেন তাকে মুক্ত হস্তে দান করতেন।

হাজি মুহসীন জন্মেছিলেন ১৭৩২ সালের ১ আগস্ট। তাঁর পিতা হাজি ফয়জুল্লাহ। জানা যায়, তাঁর পূর্বপুরুষেরা এসেছিলেন সুদূর ইরান বা পারস্য থেকে। তবে তাঁদের আদি বাস ছিল আরবে। আরবি-ফারসি ভাষাশিায় মুহসীন অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। কুরআন, হাদিস, সাহিত্য, গণিত, ইতিহাস, দর্শন সব কিছুতেই অসামান্য ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। সে যুগের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ ভোলানাথ ওস্তাদের কাছে মুহসীন কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীত শিক্ষা করেছিলেন। খুলনার হাজী মহসীন কলেজও ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হাজি মুহাম্মাদ মহসীনের নামে ছাত্রাবাস আছে।

স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসন্তান মন্নুজান তাঁর সম্পত্তি মুহসীনকে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এতে রাজি হননি মুহসীন। অবশেষে মন্নুজান ১৮০২ সালে সমুদয় সম্পত্তি লন্ডনের সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে মুহসীনকে দান করেন। পরে মুহসীন ১৮০৬ সালের ২০ এপ্রিল হুগলীতে এক অছিয়তনামা রেজিস্ট্রি করেন। তাতে মেধাবী ছাত্রছাত্রীসহ মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্য তাঁর সম্পত্তি থেকে আয়ের অর্থ ব্যয় করার কথা বলেন।

মুহসীন ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। সেই সাথে মক্কা, মদিনা, কুফা, কারবালা প্রভৃতি পবিত্র স্থানে যান। পবিত্র হজ পালন করেন। এরপর দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

মানবদরদি মুহসীন ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ নভেম্বর হুগলিতে ইন্তেকাল করেন। ইমামবাড়ার পাশের বাগানে তাকে দাফন করা হয়। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৮

খেলাঘর বলেছেন:


ফালু, কর্নেল ফারুক, তারেক, মেজর মান্নান, সালমান রহমান, খালেদা জিয়া, জয়দের কিভাবে এই পোস্টটি পাঠানো যায়?

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩২

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: হাজ্বী মুহম্মদ মুহসীন এর জীবন থেকে শিক্ষা নিলে আমরাও মানুষ হতে পারতাম।
মানুষ রুপি আর থাকতাম না।
প্রকৃত মানুষ হয়ে যেতাম।


ধন্যবাদ শিক্ষণীয় পোষ্টটি করার জন্য।

৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০০

বংশী নদীর পাড়ে বলেছেন: আমি যদি হাজি মুহসীনের মতো হতে পারতান। ভাই খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.