নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
হুমায়ূন আহমেদের নিন্দুকেরা বলেন, হুমায়ূন আহমেদ হিমু চরিত্রটি সুবোধ ঘোষের 'শুন বরনারী' উপন্যাস থেকে নেয়া হয়েছে। খুবই হাস্যকর কথা। এ উপন্যাস সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন- অতি সাধারণ উপন্যাসও মুগ্ধ হয়ে বারবার পড়েছি। উদাহরণ, সুবোধ ঘোষের শুন বরনারী। আবার কাউকে বলতে শুনেছি- হিমু চরিত্রটা শীর্ষেন্দুর কাগজের বৌ উপন্যাস থেকে নেওয়া। বোকা গুলো জানে না হুমায়ূন আহমেদ নিজেই বলে গেছেন হিমু বা মিসির আলী চরিত্রটি কিভাবে তিনি আবিস্কার করেছেন। সবচেয়ে বড় সত্য কথা হলো, একদল সমালোচক সব জাগায় থাকবেই। সব বিখ্যাত মানুষই সমালোচকদের খপ্পড়ে পড়েছে- রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আইনস্টাইন পর্যন্ত।
হুমায়ূন আহমেদ একজন সহজ সরল ভাল মানুষ। সারা জীবন সহজ সরলভাবে জীবন-যাপন করেছেন। তিনি নিজে বারবার মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছেন কিন্তু জীবনে কাউকে ঠকাননি। হুমায়ূন আহমেদ কোনো কিছু লুকাতে জানেন না, আড়াল করতে জানেন না। তিনি তাস খেলেন মাটিতে বসে। সম্পূর্ণ নিজের মতো একটি জীবন তিনি যাপন করেন। যা ভালো লাগে, বিশ্বাস করেন, তা-ই করেন। তাঁর পিতার স্মরণে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করে নিজ গ্রামে একটা স্কুল করেছেন। সেই স্কুলের ডিজাইন ও পরিবেশ স্কটল্যান্ডের মতো। কলকাতা থেকে ডেকে এনে নুহাশ পদক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সমরেশ মজুমদারকে।
হুমায়ূন আহমেদ একমাত্র বাঙালি লেখক, যিনি সাত বছর ধরে কোলকাতার 'দেশ' পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় উপন্যাস লিখেছেন। এই সৌভাগ্য বাংলাদেশের আর কোনো বাঙালি লেখকের হয়নি। ভাবতে বিস্ময় লাগে, পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি মাপের রোগা-পটকা একজন মানুষ কোন মন্ত্রবলে এমন আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠেন, কী করে হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি! নিজের গ্রামে বাবার নামে একটা পাঠাগার করলেন হুমায়ূন আহমেদ। নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ুন আজাদ সহ অনেকে নিয়ে গেলেন সেই পাঠাগার উদ্বোধন করতে।
অনিন্দ্যর স্বত্বাধিকারী নাজমুল হক একদিন একটা মিষ্টির প্যাকেট আর একটা নতুন সাদা ডাইহাটসু গাড়ি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বাড়িতে এসে বললেন, গাড়িটা আপনার জন্য। রয়ালটি থেকে অ্যাডজাস্ট হবে। ভাবা যায়? যাই হোক, হুমায়ূন আহমেদের 'জনম জনম' উপন্যাসটি সর্বপ্রথম দৈনিক বাংলা'র সাহিত্য পাতায় 'মৌনব্রত' নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হয়েছিল। আমার ধারনা 'জনম জনম' অসাধারন একটা উপন্যাস। 'চোখ' গল্পটি পড়ে 'সংবাদ'- পত্রিকায় দুর্দান্ত একটি লেখা লিখলেন সৈয়দ শামসুল হক। 'চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক' উপন্যাসটি পড়ে আহমদ ছফা বলেছিলেন, অসাধারণ লেখা!
বাংলা ভাষায় হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্থ বলে যেতে পারেন তিনি। বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, মানিক, সতীনাথ ভাদুড়ীর উপন্যাস-গল্প তাঁর প্রিয়। হুমায়ূন আহমেদ কখনও একা চলাফেরা করতেন না। তাই কাছের মানুষেরা সব সময় তাকে ঘিরে থাকতেন। বন্ধু-বান্ধবদের সব সময় হুমায়ূন আহমেদ ভূতের গল্প বলে আড্ডা জমিয়ে রাখতেন। গভীর রাতে বন্ধুদের দেখাতেন যাদু। হুমায়ূন আহমেদ সবচেয়ে বেশি লিখেছেন কালের কন্ঠ পত্রিকায়। দেড়-দুই মাসে অনেক লিখেছেন। এত কম সময়ে অন্য কোনো পত্রিকায় এত লেখা আর লিখেন নি। জোর করে ইমদাদুল হক মিলন হুমায়ূন আহমেদকে দিয়ে লিখিয়েছেন।
বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বিষপানে আত্মহত্যা করে। দুঃসহ দুঃখের শেষ সময়ে তাঁর আশ্রয় ছিল হুমায়ূন আহমেদের বই। মৃত্যুর পর ছাত্রটির বুকের উপর পাওয়া যায় হিমুর একটি বই। আজ থেকে ২০ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় লেখক রমাপদ চৌধুরী বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের বেশ কিছু গল্প, উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের নয়- বিশ্ব সাহিত্যের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে অবাক করা ব্যাপার হলো, লেখক রমাপদ চৌধুরীর এই চিঠি হুমায়ূন আহমেদ আজ পর্যন্ত কোথাও প্রকাশ করেন নি।
আরেকটি ঘটনা বলে আজকের পর্বটি এখানেই শেষ করবো। ইউনিসেফ বাংলাদেশে কিছু প্রচারমূলক প্রামান্য চিত্র বানানোর জন্য এক প্রশিক্ষনের আয়োজন করে। উদ্দেশ্য প্রামান্যচিত্র যারা বানাবেন তাদেরকে আগে গড়েপিঠে নেয়া। প্রশিক্ষন দিতে আসেন আমেরিকার এক অভিজ্ঞ লোক। প্রথমেই তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে নিজের লেখা মোটা একটি বই ধরিয়ে দেন। তারপর বক্তৃতা শুরু করেন। প্রশিক্ষণার্থীদের একজন হুমায়ুন আহমেদ মন দিতে পারছিলেন না মার্কিন প্রশিক্ষকের লেকচারে। তাই প্রশিক্ষকের লেখা বইতে চোখ বুলাচ্ছিলেন। হঠাৎ বইয়ের একটা পাতায় তাঁর চোখ আটকে যায়। বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হুমায়ূন আহমেদের উপর খুব বিরক্ত হোন তাঁর বক্তৃতায় মনোযোগ না দেয়ার জন্য।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি পড়ছো তুমি আমার কথা না শুনে?
হুমায়ূন আহমেদ উত্তর দিলেন, আপনার লেখা বইতে আমার নাম। তাই মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম।
মার্কিন প্রশিক্ষক বইটি হাতে নিয়ে দেখেন আদর্শ টেলিভিশন নাটক হিসেবে তিনি বাংলাদেশের যে কয়টি টিভি নাটকের উল্লেখ করেছেন তাঁর লেখক আমাদের হুমায়ূন আহমেদ। প্রশিক্ষক এক আকাশে বিস্ময়ে প্রচন্ড অবাক হয়ে যান।
তিনি বিনীতভাবে বললেন, মিস্টার হুমায়ূন, তোমাকে আর এ প্রশিক্ষনে অংশ নিতে হবে না।
াআপনারা যদি চান- হুমায়ূন আহমেদের অজানা বিষয় নিয়ে আমিও আর লিখতে রাজী আছি।
হুমায়ূন আহমেদ, আপনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০১
রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী। অবশ্যই।
২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:১৯
প্রেতরাজ বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ যে রকম ই লিখুক না কেন বাংলার হাজার হাজার ছেলে মেয়ের সাহিত্যের জগতে পদার্পণ তার লেখনীর মাধ্যমেই।
ধন্যবাদ আপনাকে তথ্য গুলো শেয়ার করারা জন্য।
৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:২৪
শাহ আজিজ বলেছেন: লিখে যাও রাজিব , ভালো লাগছে।
৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: হুমায়ূন স্যার সত্যিই অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব।
ভালো লাগছে। চলুক।
৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭
গরু গুরু বলেছেন: অবশ্যই লিখবেন।
৬| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: লিখুন আরো -- প্রিয় লেখকের অজানা বিষয় নিয়ে
আমি যতই তার সম্পর্কে জানছি ততই তার প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে যাচ্ছে
৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৩০
অবিবাহিত ছেলে বলেছেন: 'তোমার বই এ আমার নাম' এই হচ্ছে হুমায়ুন আহম্মেদ । খুব মিছ করছি এবারের বই মেলায় তাকে ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫৪
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: শেখার কোন শেষ নেই। হুমায়ূন আহমেদ প্রশিক্ষণশালায় অংশ নিয়ে প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন। ধারাবাহিকটা চালিয়ে যান রাজীব।