নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে... (পর্ব - পাঁচ)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৫

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে সব কথাই বলা হয়ে গেছে,সব বিশেষণই দেওয়া হয়ে গেছে। তিনি আমাদের কালের সবচেয়ে বড় নায়ক, আমাদের সময়ের সবচেয়ে ধারালো চোখের অধিকারী, সবচেয়ে বড় ম্যাজিশিয়ান। কিন্তু সময় এসেছে হুমায়ূন আহমেদ মানুষটাকে নির্মোহভাবে বোঝার। যে যার মতো করে বুঝুক। গল্পের চরিত্রকে যেমন একেকজন পাঠক একেকভাবে বোঝেন, একেকভাবে পাঠ করেন, সেই রকম করে তাঁকে বোঝাবুঝি হোক।

গুলতেকিন। হুমায়ূনে আহমেদের চার সন্তানের মা। গুলতেকিন ছিলেন হুমায়ূনের উত্থানের কারিগর। গুলতেকিন ছিলেন হুমায়ূনের সেই বিজয় লক্ষ্মী নারী। অসাধারণ সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। দাদা প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নাম সারা উপমহাদেশে। সচ্ছলতা তার পায়ে পায়ে। সেই অবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্বে, পাগলের মতো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন প্রায় কপর্দকশূন্য, নামযশহীন ৮০০ টাকা বেতনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষককে। এই অবস্থা থেকে তিনি ৩০ বছর ধরে একটু একটু উপরে তুলে ধরেছেন হুমায়ূন আহমেদকে। গুলতেকিন সব সময় চেয়েছেন হুমায়ূন বড় হোক। আমার আমিতে হুমায়ূন লেখেন, গুলতেকিনই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ নারী। গুলকেতিন কে ছেড়ে হুমায়ূন আহমেদ চার বছর একা জীবন যাপন করেছেন। দুঃখজনক ব্যাপার হলো- তখন তার মা ভাই বোন পুত্র কন্যা কেউই তার সাথে যোগাযোগ রাখেন নি। সে-সময় কি কষ্টটাই না তার হয়েছে। যে মানূষ সব সময় চেয়েছিলেন সবাইকে কাছে নিয়ে থাকতে।

এই মহান মানুষটিকে নিয়ে অনেকেই কুৎসিত কথা বলেন। হুমায়ূন আহমেদ বার বার বলেছেন, দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় আমাকে নিয়ে কী ভাবছেন তা জানার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। আমি জানতে চাই একজন সাধারণ মানুষ, যে আমার বই পড়েছে, নাটক দেখছে—সে আমাকে নিয়ে কী ভাবছে। ওদের ভাবনা আমি জানি। আর জানি বলেই বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ভাবনা-চিন্তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।

শেষ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুমায়ূন আহমেদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি হুমায়ূন আহমেদকে দেখার জন্য নিউইয়র্কে তার বাসায় গিয়েছেন। তাকে দশ হাজার ডলার সাহায্য দিয়েছেন অনেকটা জোর করেই। যদিও হুমায়ূন তা পরে ফেরত দিয়েছেন বিনয়ের সঙ্গে। বলেছেন, এই টাকা যেন কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বেগম জিয়া ছিলেন হুমায়ূনের একজন গুণগ্রাহী। হুমায়ূন আহমেদ এটা জানতেন। এ বিষয়ের ওপর কয়েকটি তথ্য দিতে চাই। ১৯৯৩ সালে আবদুল হাই শিকদার খালেদা জিয়ার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের উপর একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করে বিটিতে প্রচার করেন। যা বানানো হয়েছিল শুধু মাত্র হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই অনুষ্ঠান দেখে খালেদা জিয়া মুগ্ধ হয়ে যান। তখন হুমায়ূন আহমেদ তখন ‘আগুনের পরশমণি’ নির্মাণ নিয়ে মেতে উঠেছেন। কিন্তু হার হাতে টাকা ছিল না। সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছবি। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিষয়টা জেনে তত্কালীন তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বলে দিলেন, যদি একটা ছবিকেও অনুদান দিতে হয় তাহলেও সেটা যেন হুমায়ূন আহমেদের ছবিকে দেয়া হয়। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সানন্দে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করলেন। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, ছবি রিলিজ হয়েছে কিন্তু এফডিসিতে বকেয়া পড়ে গেছে ২০ লাখের ওপর টাকা। আবারও এগিয়ে এলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বললেন, ছবি বানাচ্ছেন হুমায়ূনের মতো নন্দিত কথাশিল্পী। ছবিটার উপজীব্য মুক্তিযুদ্ধ। এ ছবি তো পুরোটাই রাষ্ট্রের টাকায় হওয়ার কথা। তারপর এফডিসির পুরো পাওনা মওকুফ হয়ে গেল। ছবিটা আরও অনেকের সাথে হুমায়ূন আহমেদ এবং খালেদা জিয়া দেখেন। ছবি শেষে খালেদা জিয়াকে দেখা যায় চোখ মুছতে।

সাত বছর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরলেন হুমায়ূন আহমেদ তখন পকেটে মাত্র ৫০ ডলার। এই মানূষটা টাকা জমাতে জানতেন না। যা আয় করতেন সব বন্ধু বান্ধব নিয়ে খরচ করতেন। কাছের মানূষদের নিয়মিত উপহার দিতেন। কুমির মার্কা প্রতীকের প্রার্থী কবি নির্মেলেন্দু গুনের পক্ষে নির্বাচনের জন্য চলে গেছেন বারহাট্রা মোহনগঞ্জে। ছাত্র অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, নন্দিত নরকে, তোমাদের জন্য ভালোবাসা, শঙ্খনীল কারাগার ইত্যাদি। এক অধ্যাপক আমাকে বললেন, হুমায়ূন সাহিত্য আগামী দশ বছর পরে আর পাওয়া যাবে না। আমি তাকে বললাম, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন হুমায়ূন আহমেদ থাকবে। পৃথিবীর যে প্রান্তে যেখানেই যতদিন বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের অস্তিত্ব থাকবে সেখানেই তিনি স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে বেঁচে থাকবেন। সবার উচিত হুমায়ুন স্যারকে নিয়ে কোন ধরনের আলোচনার পূর্বে অন্ততপক্ষে তার 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসটি পড়ে দেখা উচিত।

হুমায়ূন আহমেদ পৃথিবীর যে দেশেই বেড়াতে গেছেন যাদু দেখানোর জিনিসপত্র কিনেছেন। দেশে ফিরে নিয়মিত যাদু চর্চা করে, তারপর বন্ধুদের যাদু দেখিয়ে অবাক করে দিতেন। এইসব দিনরাত্রি নাটকে একজন তরুণ ম্যাজিশিয়ানের চরিত্র ছিল। মিষ্টি স্বভাবের এই তরুণ খুব গরিব। এক বড়লোকের বাড়ির চিলেকোঠায় থেকে লেখাপড়া করে। তার প্রেমে পড়ে গেল বাড়ির আদুরে মেয়েটি। 'এইসব দিনরাত্রি' নাটকে জুয়েল আইচ অভিনয় করেছিলেন, এটাই তার জীবনে প্রথম এবং শেষ অভিনয়। যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ এর বাসায় হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লীতে ফলানো টাটকা শাক সবজি দিয়ে পাঠাতেন। ঈদের সময় পাঠাতেন পাঞ্জাবী বা শার্ট। অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা করে সবাইকে অবাক করে দিতে খুব পছন্দ করতেন হুমায়ূন আহমেদ।

হুমায়ূন আহমেদ বলেন, 'কোনো লেখা ছাপা হয়ে বের হওয়ার পর লেখার বিষয়ে আমার কোনো উৎসাহ থাকে না। বইয়ের কাহিনী, পাত্র-পাত্রীদের নাম এবং অনেক সময় বইয়ের নাম পর্যন্ত ভুলে যাই।' সাহ্যিতিকদের জন্য এই ভুলে যাওয়া খব দরকার। তা না হলে নতুন কিছু লেখা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত স্মৃতি নেই, প্রিয় লেখক পাঠক সম্পর্ক ছাড়া। রোগশয্যায় থেকেও নিউ ইয়র্কের ভাড়া বাড়িতে রোপন করেছিলেন বেশ কয়েকটা চারা গাছ।

সাহিত্যসভায় কালজয়ী সাহিত্যিক হওয়া সম্ভব, কবি সম্মেলনে নিভৃতিচারী কবি হওয়া সম্ভব, সাহিত্যপত্রিকার জীবনঘনিষ্ট লেখক হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু পাঠকের হুমায়ূন আহমেদ, বইমেলার হুমায়ূন আহমেদ হওয়া সম্ভব নয়। এটিই তিতকুটে সত্য, নির্জলা বাস্তবতা।


এ রকম প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরা সৃষ্টিশীল একজন মানুষকে আরও কিছুদিন বাঁচতে দিলে সৃষ্টিকর্তার এমন কী ক্ষতি হতো!

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খালেদা জিয়া তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের! যাই হোক, আপনার লেখার সাবলীলতায় ভাল লাগা

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চমৎকার লেখা।

৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৭

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ভালে লাগল।

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫০

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে এমন আরও লেখা চাই ।

৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১৪

নব ভাস্কর বলেছেন: যে সময়ে মানুষের বই পড়ার কোন সময় নাই, আগ্রহ নাই সেরকম একটা সময়ে এত বিশাল একটা পাঠকশ্রেণী তৈরি আর কারো দ্বারা সম্ভব হবে বলে এই মুহূর্তে আমার মনে হয় না।

লেখার জন্য ধন্যবাদ।

৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:৩৭

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: এই পর্বেও অনেক কিছু জানা হল। শেখ হাসিনার ব্যাপারটা জানা থাকলেও, খালেদা জিয়ার ব্যাপারটা জানা ছিল। গুলতেকিনের ব্যাপারটাও অনেক লেখালেখিতে উঠে এসেছে। শুভ কামনা রইলো রাজীব।

৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৩৭

অবিবাহিত ছেলে বলেছেন: 'এ রকম প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরা সৃষ্টিশীল একজন মানুষকে আরও কিছুদিন বাঁচতে দিলে সৃষ্টিকর্তার এমন কী ক্ষতি হতো! ' হুমম... তবে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে তিনি হুমায়ুনকে আমাদের মাঝে পাঠিয়েছিলেন ।

৮| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫২

সোহানী বলেছেন: অসাধারন ও কালজয়ী লেখককে নিয়ে সিরিজ অবশ্যই ভালো লেগেছে।

তবে একান্তই আমার ব্যাক্তিগত মত যে একজন লেখক যখন জনপ্রিয় হয় তখন তিনি সবার হয়ে যান। তাই তাঁর ব্যাক্তি জীবন ও আমাদের ভালে্বাসার উর্দ্ধে নয়। সে কারনে জীবনের শেষ দিকের বিতর্ক থেকেই যায়।

আকাশের যে তারা হয়েই থাকুক ভালো থাকুক.....+++++++

৯| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০

মহান অতন্দ্র বলেছেন: +++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.