নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সাহিত্যে যে ১০০ টি বই আপনাকে পড়তেই হবে (৩য়)

২১ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭

২১। 'কেরী সাহেবের মুন্সী' লেখক- প্রমথনাথ বিশী। ঐতিহাসিক কাঠামোতে গঠিত অসাধারণ এক উপন্যাস। ১৯৬০ সালে "কেরী সাহেবের মুন্সী" গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র' পুরস্কার পান লেখক। বই থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দিলাম- “ এমন সময় একটা হাতী দেখে কেরী ভাবল, যাক হাতীতে আজ রক্ষা করল বাঘের হাত থেকে।
কেরী বলল, ঐ দেখ।
সকলে দেখতে পেল গজেন্দ্রগমনে প্রকান্ড এক হাতী চলেছে, কাঁধের উপরে তার মাহুত, আর পিছনে জন দুই-তিন বর্শাধারী পাইক।
কিন্তু কেরী আজ এত সহজে রক্ষা পাবে না.
মিসেস কেরী উদ্বিগ্নভাবে বলল, বাঘ শিকারে চলেছে বুঝি?
টমাস ব্যাপারটা অনুমান করতে পেরেছিল, তাই বলল , না না, এদিকে বাঘ কোথায়! আর দু-চারটে থাকলেও তারা মানুষ খায় না।
কেন, সবাই বাইবেল পড়েছে বুঝি?—পত্নীর এবম্বিধ অখ্রিস্তানোচিত উক্তিতে মর্মাহত কেরী প্রমাদ গনল।
রামরাম বসু মনে মনে বলল —বাঘগুলো এখনও বাইবেল পড়েনি, তাই রক্ষা। ”

২২। 'খেলারাম খেলে যা' ও 'নিষিদ্ধ লোবান' লেখক- সৈয়দ শামসুল হক। বাবর আলী। সুন্দর নিপাট গোছানো মানুষ। কথার মায়াজাল বুনায় তার জুড়ি মেলা ভার। জীবন নিয়েও আপাত অর্থে তার কোনো টানাপোড়েন নেই। ব্যাবসার টাকায় বেশ আয়েশে, নিশ্চিন্তিতে দিন কাটে তার। নিজের বাড়ি, গাড়ি, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার সুবাদে সমাজের কাছে পরিচিতি— সবই আছে তার। ফলে, বলা যায় নির্ভার আনন্দময় জীবন বাবরের। শিক্ষিত, সুদর্শন, অবিবাহিত, সুকথক, সমাজের অন্য দশজনের থেকে বিত্তবান, মাঝবয়সী এই বাবরের যেন কোনো দুঃখ নেই। পিছু টান নেই। মনে হয়, যেন নিজের শরীরের সুখের জন্যই, শিশ্নের ইচ্ছেকে চরিতার্থ করবার জন্যেই সে কেবল উদগ্রীব।
তার লেখা অসংখ্য বইয়ের মধ্যে নিষিদ্ধ লোবান বইটি অন্যতম। ভেতরের আবেগী মনটাকে শক্তকরে নাড়া দেবার মতো উপাদানে সমৃদ্ধ ছোট পরিসরের এ উপন্যাসটির পরিশীলিত ভাষা ও সুলীখন সত্যই আবিষ্ট করে রাখবে পাঠককে।

২৩। 'রাইফেল রোটি আওরাত' লেখক- আনোয়ার পাশা। শহীদ বুদ্ধিবীবি আনোয়ার পাশার এই একটি বইই যুক্তিশীল যে কোন মানুষকে ৭১ এর বাংলাদেশের যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারে। শ্রদ্ধা জানাই এই বীরকে।

২৪। 'প্রথম আলো' 'সেই সময়' এবং 'পূর্ব-পশ্চিম' লেখক- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ওপর আমার একটা দূর্বলতা আছে। তিনখানা টাইম ট্রিলজি নিয়ে আমার বিস্ময়ের শেষ নেই। আমার প্রথম পড়া হয়েছিল পূর্ব পশ্চিম। সেসময় বলতে গেলে সমাজতন্ত্রে দীক্ষা পেয়েছিলাম এখান থেকেই। এই তিনটি উপন্যাস শেষ করে ওঠা মাত্রই একধরণের বিষণ্ণতা জেগে ওঠে। কারন উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র পাঠকের মনের ভেতর একটা জায়গা তৈরি করে নেয় এর মধ্যেই। সুনীল একবার বলেছিলেন ‘প্রথম আলো’ লিখতে তাকে সারা জীবনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় স্টাডি করতে হয়েছিল।

২৫। 'নন্দিত নরকে' 'শঙ্খনীল কারাগার' এবং 'জোৎস্না ও জননীর গল্প' লেখক- হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত নরকে বাংলা কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের প্রথম উপন্যাস। নন্দিত নরকে পড়ে চোখ ছলছল করেনি এমন পাঠক কি আছে?
বাকৃবিতে শিক্ষকতা করার সময়ে তিনি শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাসটি লিখেছিলেন। কোনো কোনো রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরে উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ।
গ্রেট হুমায়ন, গ্রেট জোছনা ও জননীর গল্প। "জোছনা ও জননীর গল্প" মূলত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে উপন্যাস হলেও এতে প্রেম,ভালোবাসা সবই আছে। হুমায়ুন তার স্বভাবসুলভ গল্প বলার ভঙ্গিতে ৭১'এর সেই ভয়াল ৯ মাসের কথা বলেছেন পাঠকদের।উপন্যাসের শুরু হয়েছে নীলগঞ্জ স্কুলের আরবী শিক্ষক মাওলানা ইরতাজুদ্দীন কাশেমপূরীকে দিয়ে যিনি ঢাকায় তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসেন।... তারপর শাহেদ আর আসমানীর মমতায় পরিপূর্ণ সংসারজীবনের গভীরে যেতে যেতে পাঠকের পরিচয় ঘটবে নিজের চেনা জগতের সঙ্গে। শাহেদের বড় ভাই ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরির ঢাকায় আসা, রাস্তা হারিয়ে ফেলা, ভুল ঠিকানা, পরিশ্রম আর ক্লান্তিতে বিপর্যস্ত জীবন অস্থির উত্তাল মিছিল স্লোগানমুখর ঢাকায় তার বিপন্ন জীবনবোধ শুরু করিয়ে দেয় এক মহাযাত্রার।

২৬। 'নারী' ও 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' লেখক- হুমায়ূন আজাদ। শুরুতে কখনও নারীবাদ নিয়ে কাজ করেননি হূমায়ন আজাদ। কিন্তু যখন শুরু করলেন তখন যেন বাংলা সাহিত্যের নারীবাদী ধারায় গোলাভরে গেল নতুন ফসলে। তবে তার এই প্রচেষ্টাকে তির্যক দৃষ্টিতে দেখতে ছাড়েননি অনেকেই। ‘নারী’ গ্রন্থটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে হুমায়ন আজাদ প্রথাবিরোধী লেখক হিসাবে পরিচিতি পান। পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীকে কি কি রূপে দেখা হয় বইটির প্রতিটি পৃষ্টায় তা ছড়িয়ে আছে।
হুমায়ুন আজাদ মানুষকে সচেতন করার প্রয়াসী ছিলেন। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মানুষ তার কবিতায় উঠে এসেছে। মানুষের মনোভঙ্গি, স্মৃতি, দুঃখ-কষ্ট, যাপিত জীবন ঘিরে কবির আগ্রহ। তিনি মানুষের মধ্যে খুঁজে পেতে চেয়েছেন শুভ্রতা। হুমায়ুন আজাদ বাংলাদেশের সবুজ বনভূমি, উদার মানুষ ও নিসর্গের কাছে সমর্পিত। বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামগ্রিক অবস্থা কবিচিত্তে আলোড়ন তোলে।তার কবিতা পাঠককে সমৃদ্ধ করে।

২৭। 'মেমসাহেব' লেখক- নিমাই ভট্টাচার্য। নিমাই ভট্টাচার্য এখানে যেন তার নিজের জীবনেরই কাহিনী লিখছেন খানিকটা কল্পনা আর অনেকটা বাস্তবের মিশেলে। মনে দাগ কেটেছে যে কয়েকটা বই, মেমসাহেব এর একটি, সম্ভবত এই বইটা পড়ে চোখে পানি এসে গিয়েছিল। নিমাই ভট্টাচার্যের মূল জীবিকা সাংবাদিকতা।

২৮। 'সূর্য দীঘল বাড়ি' লেখক- আবু ইসহাক। ‘জোঁক’ গল্পের সার্থক গল্পকার আবু ইসহাক উল্লেখযোগ্য কিছু সাহিত্যকর্ম রেখে গেছেন বাংলা সাহিত্যে বলার অপেক্ষা রাখে না। তার প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ একটি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি জীবনাখ্য। পূর্ব বাংলার বিস্তীর্ণ নদ-নদী জলাভূমি-কৃষি ক্ষেতের পটভূমিকায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, তার মধ্যে রক্তচক্ষু বের করা কতিপয় মানুষ নামের চারপায়া জানোয়ার, কিভাবে দিনের পর দিন বছর শতাব্দী যাবৎ ধর্মীয় ভণ্ডামিতে আবদ্ধ করে রেখেছে আমাদের, তার প্রতিছবি তার সাহিত্যকর্মে তার মেধা মননে আমরা প্রত্যক্ষ করি। উপন্যাসের গতিপ্রকৃতি দেখে বিশ্বাস হবে, আবু ইসহাক খুব কাছ থেকে সমাজের এই পিছিয়ে পড়া অন্ত্যজ এবং অনগ্রসর নিুবৃত্তকে বড় বেশি মমতা মাখিয়ে তার উপন্যাসে স্থান করে দিয়েছেন।

২৯। 'আগুনপাখি' লেখক- হাসান আজিজুল হক। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তাঁর গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। আগুনপাখি কেবল প্রথাগত চরিত্র নির্মাণ ও সংলাপ ধারণার বাইরের কোনো উপন্যাস নয় বলেই বলছি না, এর কাহিনীতে সেই অর্থে কোনো গল্প ফাঁদা নেই, বলবার মতো কোনো প্রণয় নেই, আকৃষ্ট করবার মতো ন্যূনতম কোনো যৌনতা নেই; এমন কি যে ভাষায় কাহিনীটি কথিত হয়েছে, সেই ভাষাটির সাথেও এদেশের অধিকাংশ পাঠকের বিশেষ কোনো যোগাযোগ নেই।

৩০। 'পদ্মা নদীর মাঝি' ও 'পুতুল নাচের ইতিকথা' লেখক- মানিক বন্দোপাধ্যায়। 'পদ্মা নদীর মাঝি' উপন্যাসের লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে লিখেছিলেন জীবনের প্রথম গল্প 'অতসী মামী'। তার লেখাটি 'বিচিত্রা' নামক পত্রিকাতে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ছাপা হয়েছিল। উপন্যাসের শেষে জেলে পাড়ায় থাকতে না পেরে কপিলাকে নিয়ে ময়নাদ্বীপেরর অজানা রহস্যময় দ্বীপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় কুবের। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে আবহমান বাংলার সামজিক জীবনের টানপোড়নের ছবি একেছেন, একটা মেসেজ দিয়েছন, বার বার পড়েন, অনেক বার পড়েন, অবশ্যই একদিন মেসেজটা বুঝতে পারবেন!
মানুষ যত উপরের দিকে উঠতে থাকে ততই বুঝি সে একা হতে থাকে?! কর্তব্যের চাপে, ব্যস্ততার কোলাহলে বুঝি বা একে একে হারিয়ে যেতে থাএক সব চেনা চেনা মুখ! শ্বাশত এই কথাই যেন "পুতুল নাচের ইতিকথা"য় বলে দিয়েছেন অমর কথাশিল্পী মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়। এই উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র পরাণের স্ত্রী তেইশ বছরের বাঁজা মেয়ে কুসুম । প্রকৃ্তপক্ষে কুসুম এক অস্থির, বেপরোয়া,ও দূর্বোধ্য গ্রাম্য রমণী ।

( চতুর্থ পর্ব আসছে।)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৯

ট্যামটেমি বলেছেন: অসাধারণ গাইডলাইন....ধন্যবাদ.....যারা বাংলা উপন্যাস থেকে মুখ ফিরিয়ে, তাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে।

২| ২১ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ট্যামটেমির সাথে একমত

৩| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩৪

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
লেখকের প্রতি সুভেচ্ছা রহিল ।

৪| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫৩

বেসিক আলী বলেছেন: এখান থেকেও ৩টা পড়ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.