নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ফটোগ্রাফি একটি শিল্প। যে কোন শিল্পকে আবেদনশীল করে তুলতে হলে, সেই শিল্পের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। তার জন্য করতে হবে সুস্থ ও মহত্ চিন্তা। এই চিন্তার গুণে গুণবান ও মহীয়ান হয়ে শিল্প যেন দর্শকের মনে প্রেম সৃষ্টি করতে পারে।
১৫ বছর বয়সে হাতে তুলে নিলেন ক্যামেরা। সাইদা খানম। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও লাইব্রেরি সায়েন্সে মাস্টার্স করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। সাইদা খানম ছবি তোলা শুরু করেন ১৯৪৯ সাল থেকে। সাইদা খানম তাই করেছেন। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই প্রদর্শনী দেখেছেন। দেশ-বিদেশ সব জায়গার আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখেছেন, দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
বেগম’ পত্রিকার মাধ্যমে সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর ছবি ছাপা হয় ‘অবজারভার’, ‘মর্নিং নিউজ’, ‘ইত্তেফাক’, ‘সংবাদ’সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। আলোকচিত্রী হিসেবে দেশেও দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেন তিনি। এ দেশে এমন একটা সময় ছিল যখন বাংলার মুসলিম নারীরা সামাজিক বাধার কারণে ছবি তুলতে পারতেন না। সেই সময়ে সাইদা সব বাধা অতিক্রম করে নিজের ক্যামেরায় ছবি তুলতে শুরু করেন।
সত্যজিত রায়ের তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেন তিনি। সাইদা খানমের বয়স এখন ৭৭। এ বয়সে এসেও ক্যামেরা ছাড়া তাঁর এক মুহূর্তও চলে না। যেখানেই যান, সঙ্গে নিয়ে যান ক্যামেরা। তিনি বিয়ে করেন নি। ঢাকার বনানীতে তিনি থাকেন। অবসর সময়ে তিনি রবীন্দ্র সংগীত শুনেন, পড়া শোনা করেন। লেখালেখি করেন। তার লেখা কিছু বই হলো- ‘ধূলোমাটি’, ‘স্মৃতির পথ বেয়ে’, ‘আমার চোখে সত্যজিৎ রায়’, ‘আলোকচিত্রী সাইদা খানম-এর উপন্যাসত্রয়ী’।
নানা প্রযুক্তির ক্যামেরা এলেও এখনো সাইদা খানম ফিল্মের ক্যামেরাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ডিজিটাল ক্যামেরা তাঁর কাছে মনে হয় ‘ফাঁকি দেওয়া’। তার ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয়েছেন রানি এলিজাবেথ, মাদার তোরেসা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নিল আর্মস্ট্রংয়ের মতো ব্যক্তিত্বরা। সাঈদা খানম ১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাড়ি ফরিদপুরে। তাঁর বাবা মৌলবি আব্দুস সামাদ খান শিক্ষা বিভাগে কাজ করতেন। বাবা আব্দুস সামাদ খান ছবি তোলার ক্ষেত্রে মাত্র দু'টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। বিবাহ আসরে ও স্টেডিয়ামে গিয়ে ছবি তোলা সমর্থন করেননি।
ফটো সাংবাদিক হিসাবে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাইদা খানমের তোলা প্রায় ৩ হাজার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্যা সাইদা খানম বাংলা একাডেমিরও আজীবন সদস্য। সাইদা খানম যখন আলোকচিত্রীর পেশা গ্রহণ করেন তখন এদেশে ফটোগ্রাফির স্টুডিও ছিল মাত্র দুটি। একটির নাম ছিল 'জায়েদী স্টুডিও'। এই স্টুডিওর মালিক জায়েদী সাহেব তাঁকে ফটো কম্পোজিশন সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা দিয়েছেন এবং ছবি তোলা বিষয়ে প্রচুর বই পড়তে দিয়েছেন।
সাইদা খানম-এর শৈশব কেটেছে ইছামতির তীরে পাবনার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। পাবনার বাড়িতে জানালার পাশে শুয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ভাবতেন যে, সব দৃশ্য কী চিরকালের জন্য ধরে রাখা যায় না? এ রকম ভাবনা তাঁকে ক্যামেরায় ছবি তোলার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে।
বাংলাদেশ আলোকচিত্রী নারীর সংখ্যা খুবই কম। আলোকচিত্র ক্ষেত্রে মেয়েদের কম উপস্থিতির তিনটি কারণ উল্লেখ করে সাইদা খানম বলেন- প্রথমত, ছবি তোলার পারদর্শিতার জন্য দরকার প্রচুর অর্থ। ব্যয়বহুল বলে এই ক্ষেত্রে কম মেয়ে এগিয়ে আসেন। দ্বিতীয়ত, ছবি তোলার কাজে সময়-অসময় নেই, দরকার অসীম ধৈর্য। এর জন্য দরকার পারিবারিক সহযোগিতা। মেয়েদের সৃজনশীল কাজে এখনো পারিবারিক সহযোগিতা খুব বেশি দেখা যায় না। তাই মেয়েরা কম উত্সাহিত এই কাজে এবং তৃতীয়ত, এই কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের সমাজ ও পরিবার মেয়েদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে খুব সহায়ক নয়। প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করার প্রচন্ড মানসিক জোর প্রয়োজন হয়। এসব কারণে কমসংখ্যক মেয়ে আলোকচিত্র পেশায় এগিয়ে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর হাসপাতালে নার্স সংকট দেখা দিলে তিনি হলিফ্যামিলি হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী নার্সিং-এর কাজ করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় তিনি সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। নিজেও তিনি পাকিস্তান শাসনামলে ছাত্র গণআন্দোলনে পরোক্ষভাবে কাজ করেছেন।
২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:১৪
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: হ্যাটস্ আপ টু সাইদা খানম!
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
ইলুসন বলেছেন: চমৎকার একটা লেখা। সাইদা খানম সম্পর্কে এই প্রথম জানতে পারলাম, এই জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।