নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহনকারী আলোকচিত্র শিল্পী আনোয়ার হোসেন ১৯৯১ সালে বেলজিয়ামে অনুষ্ঠিত এক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক লাভ করেন। এই পদক নিয়ে ৪৯ বছর বয়স্ক আনোয়ার হোসেনর সর্বমোট আন্তর্জাতিক পুরস্কারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১টি। বাংলাদেশী আলোকচিত্র শিল্পীর জন্য এটি অবশ্যই সাফল্যের রেকর্ড। এই আলোকচিত্রী যে শহর এবং সমাজে জন্মেছিলেন- সেই শহর এবং সমাজে ফোটোগ্রাফী চর্চা খুব সহজ ছিল না।
১৮৪০ সালের মার্চ মাসে উপমহাদেশের বোম্বে শহরে প্রথম ক্যামেরা আনা হয়। ড. এফ জে মৌয়ট জোসিয়াকে উপমহাদেশে আলোকচিত্রের জনক বলা হয়। ফোটোগ্রাফী খুব ব্যয় সাপেক্ষ ও সৌখিন বিধায় সেই সময় শুধু সমাট্র, লর্ড, জমিদার, ধনী এবং শিক্ষিতরাই এর চর্চা করতেন। উপমহাদেশে প্রথম মুসলমান আলোকচিত্রী হলেন- আলী আহমদ খান। তিনি ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। তার তোলা কয়েক 'শ ফোটোগ্রাফীর নমুনা রয়েছে লন্ডনস্থ ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে। ১৮৫৬ সালের জানুয়ারীতে 'ফোটোগ্রাফী সোসাইটি অব বেঙ্গল' স্থাপিত হয়। এই ফোটোগ্রাফী সোসাইটির বেশির ভাগ সদস্য'ই ছিলেন বাঙ্গালী। ড. এফ জে মৌয়ট জোসিয়া ছিলেন এই সংগঠনের প্রথম সভাপতি।
ঢাকার জমিদার ও ব্যবসায়ী খাজা আলীমুল্লাহর পোট্রেটই ঢাকার আদি আলোকচিত্র। আলীমুল্লাহ ১৮৫৪ সালে মারা যান। তার একটি প্রোট্রেট এর প্রতিলিপি তারই বংশধর খাজা লতিফুল্লাহর ময়মনসিংহ বাসভবনে আছে। সেই সময়টাতে শুধু ধনী ও এলিট শ্রেণীর লোকেরাই বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা ব্যবহার করতো। বাংলা ভাষায় ঢাকা থেকে আলোকচিত্র বিষয়ক প্রথমগ্রন্থ রচনা করেন আনন্দ কিশোর ঘোষ। বইটির নাম ছিল ‘প্রভাচিত্র’। প্রকাশিত হয় ১৮৯৫ সালে।
১৯১০ সালে ঢাকায় প্রথম স্থাপিত হয় ফোটোগ্রাফী স্টুডিও। নাম ছিল- আর সি দাস অ্যান্ড সন্স। এই স্টুডিওতে ক্যামেরার সরঞ্জাম পায়া যেত। যেমনঃ ক্যামেরা ফ্লিম, প্লেট ইত্যাদি। ১৯৬০ সালে মঞ্জুর আলম বেগের উদ্যেগে ঢাকায় স্থাপিত হয় আলোকচিত্র শিক্ষা বিষয়ক ‘বেগাট ফোটোগ্রাফী স্টুডিও’।
আলেকজান্ডার ফরবেস সাংবাদিকতার সুত্রে আলোকচিত্র চর্চা করেছিলেন। ফরবেস ছিলেন ঢাকার প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ঢাকা নিউজ’ (১৮৫৬)- এর সম্পাদক। পরে তিনি কলকাতার ‘হরকরা’ পত্রিকার সম্পাদক হন। আলেকজান্ডার ফরবেস তার স্মৃতিকথায় আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, সাংবাদিকতা না করে শুধু ফোটোগ্রাফী চর্চা করেই অনেক বেশি আয় করতে পারতাম।
কলকাতার একজন দর্জি ছিলেন ডবলিউ এ খান। পরে তিনি ফোটোগ্রাফী শিখে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ব্যাক্তিগত ফোটোগ্রাফার নিযুক্ত হন। সেই সময় ডবলিউ এ খান সব ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশের ছবি তুলেছেন।
১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সালে দশ বছর ফোটোগ্রাফী করে কলকাতার অন্নপূর্ণা দত্ত খুব সুনাম অর্জন করেন। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছবি তুলতেন। বিশেষ করে মুসলিম পরিবারের। এই আলোকচিত্রী কবি জসীমউদ্দীন, গায়ক আব্বাস উদ্দীন আহমদ বেগম রোকেয়ার অনেক ছবি তুলেন। অন্নপূর্ণাই প্রথম বাঙ্গালী মহিলা ফোটোগ্রাফার যিনি ফোটোগ্রাফীকে জীবিকা হিসেবে গ্রহন করেন। অন্নপূর্ণার জন্ম ১৮৯৪ সালে এবং মৃত্যু ১৯৭৬ সালে। তার বাবা অম্বিকা চরণ মিত্র ছিলেন অধ্যাপক। আর বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে ফরিদপুরের সাঈদা খানমই প্রথম মহিলা আলোকচিত্রী। ৫০ দশকে তিনি আলোকচিত্র চর্চা শুরু করেন। তিনি ঢাকার সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকায় কাজ করতেন।
( যারা ফোটোগ্রাফী ভালোবাসেন এবং যারা ফোটোগ্রাফীকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন অথবা ফোটোগ্রাফীকে পেশা হিসেবে নিবেন ভাবছেন আমি মনে করি তাদের প্রত্যেককে ফোটোগ্রাফীর খুব তুচ্ছ ইতিহাসও জানা প্রয়োজন। আমি আপনাদের এই রকম নানা তথ্য জানাতে চাই। ইদানিং অফিসে কাজের চাপে 'ফোটোগ্রাফী' নিয়ে লিখতে সময় পাই না। আজ প্রায় আট মাস পরে গোটোগ্রাফী নিয়ে লিখলাম। ফোটোগ্রাফী নিয়ে লিখে আমি নিজেও অনেক শান্তি পাই। তবে এখন থেকে নিয়মিত লিখব।)
©somewhere in net ltd.