নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
লেখার সাথে সামঞ্জস্য আছে এমন ছবি খুঁজে পেলাম না। তাই আমার বইয়ের প্রচ্ছদটি লেখার সাথে ব্যবহার করলাম।
ইদানিং আমার সব কিছু ফেলে 'চর' এ চলে যেতে ইচ্ছে করছে। যেদিকে চোখ যাবে শুধু ধু ধু বালি আর বালি। ছোট্র একটা টিনের ঘর বানাবো। ছোট্র একটা উঠান থাকবে। জোছনা রাতে উঠানে বসে চাঁদ দেখব। একটা স্কুল করব। চরের ছোট ছোট বাচ্চাদের লেখা পড়া শেখাবো। বিশেষ বিশেষ দিনে চরের সমস্ত মানুষ মিলে একসাথে রান্না করবে। সবাই একসাথে বসে খাবে, গল্প করবে। যার গলা ভালো সে গান করবে। বাংলাদেশের চরগুলিকে পাঁচটি উপ-এলাকায় ভাগ করা হয়েছে, যথা: যমুনা নদী, গঙ্গা নদী, পদ্মা নদী, আপার মেঘনা এবং লোয়ার মেঘনা নদীর চরসমূহ। এ সকল চর ছাড়াও অন্যান্য চর রয়েছে যেমন, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী এবং তিস্তা নদীর চরসমূহ। তবে প্রধান প্রধান নদীর চরগুলির তুলনায় এ সকল চর খুবই সামান্য ভূমি নিয়ে গঠিত। অন্যান্য সকল নদীর তুলনায় যমুনা নদীতে চরের সংখ্যা সর্বাধিক।
আচ্ছা, চর কি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া যায়? যায়। নিজের বিশাল একটা চর থাকলে মন্দ হতো না। সারা চর আমি ঘুরে বেড়াতাম। ছুটি-ছাটায় ভাই বন্ধু, আত্মীয় স্বজন আমার চরে বেড়াতে আসবে, ভালো ব্লগারদের বিশেষভাবে দাওয়াত করব। নদীর ধারে সবাইকে নিয়ে পিকনিক করবো। আমার চরে শান্তিনিকেতনের মতো একটা স্কুল করব। তবে একটা বিশাল লাইব্রেরী করবো। সেই লাইব্রেরীতে অসংখ্য বই থাকবে। আমি বাংলাদেশের অনেক চর ঘুরে বেড়িয়েছি। বিকেলবেলা খালি পায়ে বালির মধ্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত হেঁটেছি। খুব আনন্দ পেয়েছি। চরের বাতাস খুব ঠান্ডা হয়। খুব জোরে বাতাস এলে- বাতসে বালি ওড়ে। চোখে এসে লাগে। সুন্দর বনের দুবলার চরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলাম। আমার ধারনা ৫০/৬০ লাখ লোক চরে বাস করে।
বাংলাদেশের প্রতিটা চরের সুন্দর একটা ইতিহাস আছে। এবং সুন্দর-সুন্দর নাম আছে। যেমন- উড়ির চরের ইতিহাস হলো- ১৯৭০ সালের দিকে সন্দ্বীপের উত্তর পশ্চিম দিকে মেঘনা মহোনায় একটি দ্বীপ জেগে উঠে। দ্বীপের জম্মের কিছু দিন পর সন্দ্বীপের জনগন এই দ্বীপে গিয়ে দেখতে পায় সমস্ত দ্বীপে ঘাস আর ঘাস, এই ঘাস কে সন্দ্বীপের আঞ্চলিক ভাষায় উড়ি বলা হয়। কালাপানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মরহুম আসাদুল হক চৌধুরী সন্দ্বীপের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভূমীহীন মানুষদেরকে ১৯৮০/৮১ সালে উড়ির চরে এনে বসতি করে দেয়। এই চরে হাসিনা, খালেদা এবং এরশাদ সাহেবও গিয়েছেন। ৫ বছর আগে আমি, ভোলা শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে মাঝের চরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। বহু চরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘাস জন্মায়। এ সকল তৃণভূমি গবাদিপশুর জন্য উত্তম চারণভূমি হিসেবে ব্যবহূত হয়ে থাকে। পদ্মার এক চরে আমি এক মেয়েকে নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। সে কাহিনি আর একদিন বলব।
হুমায়ুন আহমেদ চর নিয়ে সুন্দর একটা বই লিখেছেন। বইটির নাম- 'শুভ্র গেছে বনে'। অনেক বাংলা সিনেমায় উঠে আসছে- চর। যেমন- মনপুরা এবং বাপজানের বায়েস্কোপ। যাই হোক, - অনেক বছর আগে আমার নানী বাড়ি পদ্মায় ভেঙ্গে যায়। পুরা গ্রাম তলিয়ে যায় পানিতে। একেবারে বিলীন। আমার মা মাঝে মাঝে আফসোস করেন- তোরা আর নানী বাড়ি বেড়াতে যেতে পারবি না। মায়ের কাছে শুনেছি- একরাতের মধ্যে তিনটা গ্রাম পদ্মায় খেয়ে নিল। কিছুদিন আগে শুনলাম- চর জেগেছে। আমার মা আর গ্রামবাসী সবাই মিলে চরে পিকনিক করেছে। সবাই ইলে টাকা দিয়ে পিলার গেঁথে দিয়েছে। ব্যস্ততার কারনে আমি যেতে পারিনি।
উইকিপিডিয়া তে বলা হয়েছে- সাধারণত নদীর আপন গতিশীলতায় অথবা মোহনায় পলি জমাট বাঁধতে বাঁধতে যে স্থলভাগ গড়ে উঠে, তাকে চর বলে আখ্যায়িত করা হয়। আমরা খবরের কাগজে প্রায়ই পড়ে থাকি- জেগে উঠছে বিশাল চর। চর দখল কেন্দ্র করে মারা গেছে তিনজন। এখনও পানির নিচে থাকা বিশাল এলাকা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই জেগে উঠবে। সেখানে মানুষ আবার বসতি গড়ে তুলবে। এসব জেগে ওঠা চরকে সরকার নানাভাবে কাজে লাগাতে পারে। শত বছর ধরে পদ্মা-মেঘনা আর সাগরে ভেঙ্গেছে লোকালয় জনপদ। আবার প্রকৃতির অপার মহিমায় সাগর থেকে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর নতুন ভূমি। চলছে দখল পাল্টা দখলের লড়াই। জেগে উঠা এসব চর গুলো কৃষির জন্য খুবই উর্ব্বর। উপকূলের মানুষ রক্তঘাম ঝরিয়ে এখানে উৎপাদন করছেন নানান ফসল। সরকারের কোনোরুপ সাহায্য সহযোগীতা ছাড়া এরা উৎপাদন করছেন নানান ফসল। এগুলো সরকারী খাস জমি। এই খাস জমি পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে ভূমিহীনদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য যে এসব খাসজমির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে উপরতলার প্রভাবশালী মহলের। নানান কায়দায় এরা গোগ্রাসে গিলে খাচেছ এসব খাস জমি।
যেখানেই চর জাগে সেখানেই থাবা দেয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা। বর্ষা এলে পানি উঠে ঘরবাড়িতে। বর্ষা গেলে শহরে যেতে শুকনো নদী হেঁটে পার হতে হয়। কিছু দূরে এসে দু-দুবার নৌকা পার হতে হয়। অসুখ-বিসুখ হলে সেই কষ্ট বেড়ে যায় আরো কয়েক গুণ। চরে কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই। আমি অবশ্যই একটা ক্লিনিক বানাবো। ঢাকা থেকে বড় বড় ডাক্তার নিয়ে যাব। চরের ছেলে মেয়েরা লেখা পড়ার ভালো সুযোগ পায় না। অভাবের কারণে ছেলেরা অল্প বয়সেই লাঙ্গল কাঁধে নেয় আর মেয়েদের বিয়ে হয় অল্প বয়সে। অল্প বয়সে বিয়ে হবার প্রধান কারণ হচ্ছে- অভাব। সেই বিয়েতে আবার যৌতুক বাধ্যতামূলক। আমি চরের যৌতুক প্রথা বিলুপ্ত করবো। চরের লাখে মানুষের ভাসমান জীবনতরীর সুখ-দুঃখের শেষ নেই। কেননা চরের জীবন মূল ভূ-খ- থেকে অনেকটাই আলাদা। স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা, জীবন-জীবিকা, অন্যান্য সেবা ও সুযোগ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন চরের লাখো মানুষ। জেগে ওঠা চর গুলোতে প্রথম প্রথম চাষ করা যায় না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৭ বছর।
কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের পদ্মা নদীর চরের মানুষজনের জীবনযুদ্ধ নিয়েই লিখেছেন ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’। চরের জীবন রৌদ্র-কঠোর, প্লাবন চিহ্নিত এক অনিঃশেষ সংগ্রামী জীবন। চর দখলের লড়াই এই জীবনের অন্যতম প্রধান একটি বিষয়। হিংস্রতার নেশা নয়, এর পেছনে আছে বেঁচে থাকার অনিবার্য তাগিদ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের যে হর্ষ-বিষাদ এঁকে তুলেছেন, এক কথায় তা অনবদ্য। এই উপন্যাস কি তাই বলে শুধুই চর দখলের লড়াইয়ের গল্প তুলে ধরেছে? না, জমি-জমার ব্যাপার– স্যাপার ছাড়াও এখানে আছে নর-নারীর হৃদয়ের গভীর কথা।
বস্তুত, ‘চর'-এর প্রথাসিদ্ধ কোনো গল্প নেই৷ আবার আছেও গল্প। এক বহতা নদীর গল্প, সেই নদীর খেয়ালখুশির সঙ্গে জুড়ে থাকা কিছু মানুষের বেঁচে থাকার গল্প, নদীর চরের হঠাৎ জেগে ওঠা এবং একদিন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার মতোই ওই মানুষগুলোর স্বপ্নের ভাঙা-গড়ার গল্প। চরের মানুষ গুলো, যারা ওই বেওয়ারিস নদী-চরের মতোই বেওয়ারিস, বাতিল কিছু মানুষ অথচ যারা হার মানতে চায় না। বুভুক্ষু নদী যতই ওদের পায়ের তলার মাটি কেড়ে নেয়, ততই মরীয়া হয়ে ওরা খুঁজে নেয় বেঁচে থাকার নতুন ঠিকানা, নতুন চর! কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই।
নদীগুলোর পাড় আর নদীর চরে বাস করে এক কোটিরও বেশি মানুষ। এই এক কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত নদীর সাথে লড়াই করছে। লড়াই করছে নদীর নিষ্ঠুর ভাঙনের সাথে। লড়াই করছে অভাবের সাথে। বিশাল পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ধরলা ব্রহ্মপুত্রের চরসহ নদী পাড়ে বসত করা এসব মানুষ নদীর গতি প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। চরবাসীদের মনে বদ্ধমূল ধারণা, ভাঙা গড়াই নদীর খেলা। তাদের একটিই কথা, নদীর টানেই তারা পড়ে থাকে চর থেকে চরে। নদী যেমন দুঃখ দেয়, কেড়ে নেয় ঘর-বাড়ি, জোতজমি। তেমনি নদীই তাদের সৌভাগ্য বয়ে আনে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে তারা পেশা বদল করে। এক সময় জেলে। কোন সময় নৌকার মাঝি। আবার এক সময় কৃষক। সময়ে ঘাটের ঘাটে কুলি-মজুরের কাজ করে। চরবাসির দাবি চরের জেগে ওঠা জমির সুষ্ঠু বণ্টন বা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা অপরিহার্য। চরগ্রাসীদের কবল মুক্ত করা হলে চরের মানুষের দুঃখ থাকবে না। মৌসুমে একটা সময় আসে যখন হাতে কাজ থাকে না।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩২
ক্লে ডল বলেছেন: ভালো ব্লগারদের বিশেষভাবে দাওয়াত করব
আমি হয়ত ভাল ব্লগারদের তালিকায় নেই, তবু প্লিজ লাগে আমাকেও আপনার স্বপ্নের চরে দাওয়াত কইরেন!
সোনাদিয়া চরের একটি ছবি রেখে গেলাম।
লেখা ভাল লেগেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: ঠিক আছে আপনাকেও দাওয়াত করা হবে।
৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:০১
সামিয়া বলেছেন: ভালো লিখেছেন
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ বোন সামিয়া।
৪| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২১
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনার সপ্ন পূরন হোক।
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: জয় বাংলা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১৭
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: অসাধারণ লিখনি। গভীর অনুধাবন ক্ষমতা।
চর নিয়ে আমার একটি লেখা পড়তে পারেন: ক্লিক-
http://www.somewhereinblog.net/blog/shadathosain/30139771