নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

একমাত্র আকাশের\'ই আছে নির্ভুল ঠিকানা

০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০১



গুল্লু নামের একটি ছেলেকে বাসা থেকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। গুল্লু তার বন্ধু রিয়া'র সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল। সে আজ সুন্দর একটা সাদা গেঞ্জি আর মিডনাইট কালার জিন্স প্যান্ট পরেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনী হাতে নিয়েছে- এমন সময় ঘরে ঢুকে আট জন ডিবি পুলিশ এসে গুল্লুকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারল না তার অপরাধ কি! পুলিশ গুল্লুকে হাত কড়া পরাতে গেলে গুল্লু বলে- আমি কি এমন কোনো আসামী, যে আমাকে হাত কড়া পরাতে হবে? খুন করেছি? ধর্ষণ করেছি? দুর্নীতি করেছি? আর দয়া করে টানা হেঁচড়া বন্ধ করুন। আমি নিশ্চয় পালিয়ে যাব না! ডিবি পুলিশ একটা সাদা রঙের মাইক্রোবাসে করে তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে গেল। গুল্লুকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাবার সময় অনেক গুলো টিভি চ্যানেল আর ক্যামেরা অনেক আগ্রহ নিয়ে গুল্লুকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ ক্যামেরা বন্ধী করছে। গুল্লু আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক! সে মনে মনে বলল- আজকের আকাশটা এত সুন্দর কেন !! স্বচ্ছ রোদ!

গুল্লুকে ডিবি অফিসের ছোট্র একটা ঘরে বন্ধী করে রাখা হয়েছে। সে মনে মনে ভাবছে রিয়াকে একটা ফোন করার দরকার ছিল- মেয়েটা এলিফ্যান্ট রোড, বাটা'র দোকানের সামনে এসে অপেক্ষা করবে। তারপর মন খারাপ করে ফিরে যাবে। তখন কি চোখ থেকে দু'ফোটা পানি গড়িয়ে পরবে না! ডিবি পুলিশ গুল্লুর মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে। খুবই নোংরা একটি ঘর। সবচেয়ে দুঃখের কথা আকাশ দেখা যায় না! সে জানে, আগামীকাল তাকে ডিবি অফিস থেকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে। কোর্ট থেকে কারাগারে। থানা থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বের হতে না পারলে জারাগারে যেতে হয়। এরপর প্রথমবার পাঁচ দিন এবং দ্বিতীয় বার তিন দিন রিমান্ডে নেওয়া হবে। সব কিছু হয়তো আগে থেকেই ঠিক করা থাকে উপরের নির্দেশে। গুল্লু ভয় পাচ্ছে না, ঘাবড়ে যাচ্ছে না। নির্বোধ সরকারের কাছে ভালো কিছু আশা করা ভুল। গুল্লুর অপরাধ হচ্ছে- সে দেশ এবং দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে ব্লগ এবং ফেসবুকে তার চিন্তা তুলে ধরেছে। তার চিন্তা সরকারের এবং কিছু সুশীল ব্যাক্তির ভালো লাগে নি। এই জন্য গুল্লুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বাধীন দেশে কি স্বাধীনভাবে মতামত দেয়াটা অন্যায়?

আধুনিক যুগে বা সরকারী ভাষায় ডিজিটাল যুগে- নেট অথবা টিভি খুলে বসলেই মুহূর্তের মধ্যে সব জানা যায়। এই জানার মধ্যেও নানান রহস্য এবং জটিলতা মিশে থাকে। পুরোপুরি সত্য কেউ জানাতে পারে না। সত্যের মধ্যে মিথ্যা আর মিথ্যার মধ্যে সত্য লুকানো হয়। গুল্লুর বাসার পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের- গুল্লুর বাবা চিৎকার চেচামেচি করছেন। কার সাথে চিৎকার চেচামেচি করছেন- স্পষ্ট না। গুল্লুর মা কাঁদছে আর তার ভাইরা মন খারাপ করে বসে আছে। এদিকে রিয়া মেয়েটি বাসায় এসে গুল্লুর ঘটনা জানার পর থেকেই প্রচন্ড অস্থিরবোধ করছে। তার ইচ্ছা করছে- এক্ষন গুল্লুকে ছাড়িয়ে আনে। হিমি নামের মেয়েটির বুকের ভেতর আনচান করছে- গুল্লুকে দেখার জন্য তার সাথে একটু কথা বলার জন্য। অনলাইন পত্রিকা গুলো রসালো প্রতিবেদন করেছে। ফেসবুকে তোলপাড় হচ্ছে। দু'টো দল হয়ে গেছে। একদল বলছে- গুল্লুকে গ্রেফতার করে সরকার উচিত কাজ করেছে। গুল্লু হচ্ছে ক্যান্সার। ক্যান্সারকে চিরতরে মুছে ফেলতে হবে। আরেক দল বলছে- গুল্লু হচ্ছে- মুক্তমনা একজন মানুষ। সরকার গুল্লুকে গ্রেফতার করে ভুল করেছে। অবিলম্বে তার মুক্তি চাই।

গুল্লু যা ভেবেছিল- তাই হলো। কোর্ট থেকে তাকে রিমান্ড অতঃপর কারাগারে প্রেরন। রিমান্ডে গুল্লুকে চারটা থাপ্পড় আর ভয়াবহ সব নোংরা কথা বলা হলো। এমন সব নোংরা কথা যা একজন সুস্থ মানুষ শুনলে- সাথে সাথে মস্তিস্কে রক্তক্ষরন হয়ে যাবার কথা অথবা স্ট্রক করে মরেও যেতে পারে। রিমান্ডের অত্যাচার শেষে গুল্লুকে কারাগারে পাঠানো হলো। তাকে যে 'সেল'-এ রাখা হলো- তার নাম ছাব্বিশ 'সেল'। ছাব্বিশ 'সেল' খুবিই ভালো। নিজের একা একটা রুম আর সবচেয়ে বড় কথা বিশাল একটা বারান্দা আছে। খবরের কাগজ পড়তে দেওয়া হয়। কোনো মশা নেই এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। এই ছাব্বিশ সেল এ বড় বড় নেতারা থেকে গেছেন। গুল্লুর পাশের সেল-এ একজন দুর্নীতিবাজ আছে। গুল্লুর সাথে তার এখনও দেখা হয়নি। গুল্লু যখন ঘুমায়, তখন দুর্নীতিবাজ বারান্দায় আসে, আবার দুর্নীতিবাজ যখন ঘুমায় গুল্লু তখন বারান্দায় আসে। কিছুক্ষন আগে দুর্নীতিবাজের সাথে গুল্লুর অনেক দেখা হয়, কথা হয়। অনেক কথার মধ্যে একটা কথা এই রকম- " লালু, কালু, মালু আমার চেয়ে বেশী দুর্নীতি করে ছাড়া পেয়ে গেল, আর আমি তাদের চেয়ে অনেক কম দুর্নীতি করে ছাড়া পেলাম না। আজিব। আজিব বলে সে একটা সিগারেট ধরালো। তারপর আকাশের দিকে ধোয়া ছাড়ল। অনেকেই গুল্লুর সাথে দেখা করতে এসেছে। গুল্লু এখন অনেক নিশ্চিন্ত। আগামী এক মাসের বই গুল্লুর মজুদ আছে। দুর্নীতিবাজ বলেছে- বই যা লাগে আমাকে বলবে- ব্যবস্থা করে দিব। গুল্লু প্রতিদিন নিয়ম করে, সকালে এবং গভীর রাতে অনেকক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

গুল্লু তার ডায়েরী'তে লিখেছে- "বিনা অপরাধে সাজা ভোগ করছি। সত্যিকার অর্থে কারাগারে থাকার মত অপরাধ করিনি। ক্ষমতাবানদের কাজ কারবার অন্যরকম। তাদের মতিগতি বোঝা যায় না। জেলখানাতে বেশ ভালোই আছি । কোনো কাজ নেই । অনেক অবসর। প্রচুর বই পড়ে যাচ্ছি। কারাগারের নেকের সাথে অল্প দিনেই খুব খাতির হয়ে গেছে। চোর ছিনতাইকারী যেমন আছে- আবার আছে কিছু জ্ঞানী সহজ সরল মানুষ। বিকেলবেলা সবার সাথে দেখা হয়। রাস্তার পাশের চায়ের দোকানের মতই আড্ডা দেই। গল্প করি। অনেক কয়েদী নিয়মিত নামাজ পড়ে। জেলখানায় সব পাওয়া যায়। শুধু টাকা থাকতে হবে। গাঁজা ফেনসিডিল কোনো ব্যাপার না। টাকা দিলে সব ব্যবস্থা হয়ে যায়।
আমার ছাব্বিশ সেল এ প্রতিদিন সকালে দুইটা কাক আসে। কা-কা করে কি যেন বলে। কাকদের ভাষা জানা থাকলে ভালো হতো। ওদের সাথে গল্প করা যেত। দুর্নীতিবাজটার জন্য প্রতিবেলায়ই বাইরে থেকে খাবার আসে। সে প্রতিবার খাওয়ার আগে- আমাকে ডেকে নেয়। তার সাথে খেতে বলে। লোকটা নানান গল্প বলে, সব গল্পই দুর্নীতি নিয়ে। দিন তারিখের হিসাব রাখি না। আজ কি বার তাও জানার আগ্রহ বোধ করি না। এখন পর্যন্ত রিয়া বা হিমি কেউ দেখা করতে আসিনি। এই দুই জনকে দেখার জন্য মনে মনে তীব্রভাবে অস্থির বোধ করছি। একজন প্রেমিকা আর একজন বন্ধু। দুইজনই জীবনের অংশ। রিয়া এবং হিমি আকাশ খুব পছন্দ করে। তারা বলেছে- গুল্লু মন খারাপ হলে- আকাশ দেখো। আকাশ মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারে।

সাজানো বা বানোয়াট অথবা কোনো নাটক বা সিনেমার দৃশ নয়।
গুল্লুর সাথে দেখা করতে আসছে- রিয়া এবং হিমি। ছোট একটা ঘরে গুল্লু বন্ধী। ছোট ছোট কাঁটা তারের ভেতর দিয়ে গুল্লু তার দুইজন প্রিয় মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে। কাকতালীয় ভাবে রিয়া এবং হিমি একই সাথে দেখা করতে আসছে। এবং তারা দুই জনই আকাশি রঙের শাড়ি পড়েছে। তবে রিয়া'র শাড়িতে বড় বড় ফুল আঁকা। হিমির শাড়িতে ছোট ছোট ফুল। রিয়া কাঁদছে। রিয়ার চোখের পানি তার চশমা'তে পড়ছে। সে চশমা থেকে চোখের পানি পরিস্কার করছে না। হিমি জেলখানায় আসার আগেই অনেক কেঁদেছে। তার চোখ মুখ ফুলে আছে। গুল্লুর ইচ্ছা করল- তাদের দুইজনকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু এমন ভাবে কাঁটা তার দিয়ে আটকানো- যে একটা আঙ্গুল পর্যন্ত ধরা যাবে না। তিনজন মানুষ কিন্তু তারা সবাই চুপ করে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। কথা না বলেও অনেক কিছু বলা যায়। নিরবতারও একটা ভাষা আছে।

কারাগারের লোকদের উচিত- বিশেষ করে শরত কালে কয়েদীদের আকাশ দেখার ব্যবস্থা করা। ছোট্র একটা খুপরী ঘর থেকে আকাশ দেখে আনন্দ পাওয়া যায় না। আকাশ দেখতে হয় প্রিয় মানুষের হাতে হাত রেখে। একমাত্র আকাশেরই আছে নির্ভুল ঠিকানা। গুল্লুর সাত বছরের জেল হয়েছে। এই সাত বছরে কত কিছুই না বদলে যাবে। কিন্তু এই তিনজন মানুষ কখনও বদলে যাবে না। আর বদলে যাবে না- আকাশ। আকাশ কি বিশাল ! কি সুন্দর ! কি সুন্দর ! আকাশ সবার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। থাকবে। ঠিক যেভাবে প্রেমিক প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে। মা সন্তানের জন্য। রিয়া গুল্লুর জন্য। গুল্লু হিমির জন্য।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১৫

আরিফ রুবেল বলেছেন: চমৎকার গল্প ভায়া !

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:

খুবই সমসাময়িক

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪০

তারেক ফাহিম বলেছেন: গল্প হয়েই থাকুক।

৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বেশ সুন্দর লেখা ; মন ছোঁয়া !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.