নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক দুঁদে উকিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় তার বায়োডাটা পূরণ করতে গিয়ে 'শিক্ষাগত যোগ্যতা' কলামে এসে থমকে গেলেন। এমনিতেই তার কপাল জুড়ে কুঞ্চিত বলিরেখা, তার উপর হঠাৎ কলমের হোঁচট খেয়ে বলিরেখার ভাঁজ গুলি আরো প্রকট হয়ে উঠতে লাগল। জীবনের অনেক কথা মনে পড়ে গেল তার।
সারা জীবনে এক বছর সময় কালও বিদ্যালয়ে যাবার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। হবে কি করে? তার বাবা_ টমাস ছিলেন এক দরিদ্র ছুতোর মিস্ত্রি। তার ওপর দেশজুড়ে রেড ইন্ডিয়ানদের তাণ্ডবে বারবার বাসস্থান বদলাতে হচ্ছিল তাদের। তবুও রেহাই পায়নি তার বাপ দাদারা। একদিন জঙ্গল সাফ করে সেই জমিতে বীজ বুনছিলেন। এমন সময় রেড ইন্ডিয়ানদের আক্রমণে নিহত হলেন তার দাদা। প্রাণ বাঁচানোর দায়ে সবাই পালিয়ে এলেন কেন্টাকি প্রদেশে। প্রাণে বাঁচল বটে কিন্তু জীবিকার পথ এতই দুর্গম যে ঠিকমতো সবার খাদ্য জুটলো না। প্রায়ই উপোস করে দিন কাটাতে হতো সবাইকে।
এমন দুর্দশায় লেখপড়ার কথা কারো মাথাতেই আসল না। মাত্র সাত বছর বয়সে মাকে হারালেন। বাবা আবার বিয়ে করলেন এক বিধবা রমণীকে। কিন্তু মানুষটা ছিলেন ভীষণ ভাল। বুঝতেই দিলেন না তিনি যে সৎ মা। তাকে কোলে নিয়ে ছড়া শোনাতেন, ঈশপের গল্প বলতেন, বাইবেলের কাহিনি মুখস্থ করাতেন। কয়লা দিয়ে কাঠের উপর লিখে লিখে অক্ষর জ্ঞান করালেন। এই ভাবেই ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রতি এমন প্রবল আকর্ষণ হল যে মানসিক অস্থিরতা কাটানোর জন্য এমনকি ক্ষিধের যন্ত্রণা ভুলে থাকবার জন্য ইউক্লিডের জ্যামিতি চর্চা কিংবা শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ পড়ে তবেই চাঙ্গা হয়ে উঠতেন।
একবার মামাতো ভাই জনের সাথে নৌকা চালানোর কাজে গিয়েছিলেন। প্রতিদিন নৌকা নিয়ে অনেক দূরে স্প্রিং ফিল্ড শহরে যেতেন আর নৌকার মধ্যে বসে বসে উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করতেন। যাত্রীরা মুগ্ধ হয়ে যেতেন সকলে। এইভাবে এক উকিল তাকে খুব ভালবেসে ফেলেছিলেন। তার হাতে মোটা মোটা বই দেখে ভীষণ লোভ হতো। তার কাছ থেকে আইনের বই চেয়ে নিয়ে পড়তেন। তার বাড়ি যেতে হলে দশ মাইল হাঁটতে হতো তাঁকে। বই পড়ার আনন্দে পথে হাঁটার ক্লেশ অনুমানই করতে পারতেন না। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই অর্ধেক বই পড়া হয়ে যেত। আর পথ চলতি মানুষ তার জোরে জোরে পড়া দেখে হাসি ঠাট্টা করতেন। সেদিকে তাঁর ভ্রুক্ষেপ ছিল না। পড়ার আনন্দে ডুবে থাকতেন। মাঝে মাঝে কোনো জটিল সমস্যা মাথায় এলে কাগজে লিখে টুপির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন।
এইসব হাজার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেন স্মৃতির রাজ্যে পা দিয়ে ছিলেন ভুলে গেছিলেন। হঠাৎ ই স্ত্রীর ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলেন। তড়িঘড়ি বায়োডাটা পূরণ করবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আর 'শিক্ষাগত যোগ্যতার' স্থানে লিখে দিলেন অসম্পূর্ণ। দপ্তর থেকে ফিরে বাড়ি বসে রইলেন। প্রচারেও বের হলেন না। অন্যেরা বহু চেষ্টা করেও তাঁকে পরাজিত করতে পারলেন না। তিনিই হলেন দেশের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন।
খবরটা যখন তাঁর কানে এসে পৌছাল তখন তিনি নিজের হাতে ঘোড়া আর গরুর খাবার যোগাড় করছিলেন। যদিও সেই সময় তার রোজগার হতো মাসে পাঁচ হাজার ডলার। তবুও নিজের হাতেই প্রতিদিন তাদের পরিচর্যা করতেন। শুধু পশু প্রেম কেন, মানুষের প্রতিও ছিল অসীম দয়া। তাঁর যে দেহরক্ষী উইলিয়ম স্কট; একদিন পাহারা দেবার সময় ঘুমিয়ে পড়েছিল। এই অপরাধে তার মৃত্যুদন্ড হয়। কিন্তু লিঙ্কনই তার প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে যুদ্ধে পলাতক বন্দির আত্মীয়দের প্রাণ ভিক্ষার আবেদন কোনোদিন ফেরাতে পারেননি।
প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর তাঁর বন্ধুরা প্রায়শই তাঁকে শত্রুদের সম্পর্কে সাবধান করে দিতেন। কিন্তু তিনি সেদিকে খেয়াল করতেন না। বরং তাদেরকেই ডেকে এনে মন্ত্রীত্ব দিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম সিওয়ার্ড ছিলেন রাষ্ট্রপতি পদের প্রধান বিরোধী প্রার্থী, তাকে করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। চেজ ছিলেন বিরোধী দলের প্রধান, তাকে করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
আমেরিকায় ক্রীতদাস প্রথা ছিল ভয়ংকর অমানবিক। স্বার্থান্বেষী মুষ্টিমেয় কতগুলো সাদা চামড়ার মানুষ পশুর মতো পায়ে শিকল বেঁধে কালো মানুষেদের কেনা বেঁচা করত। তাদের মুক্তির প্রশ্নে আমেরিকা জুড়ে দেখা দিল গৃহযুদ্ধ। প্রদেশে গুলোও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার জন্য লড়াইয়ে নেমে পড়ল। কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না সেই দুর্যোগ। তারই মধ্যে মারা গেল তাঁর জ্যোষ্ঠ পুত্র। শোকে কাতর পিতা রাতের অন্ধকারে কবর থেকে তুলে দেখত তার আদরের মানিককে।
১৮৬১ সাল। দ্বিতীয় বারের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বচিত হলেন। হোয়াইট হাউসের গদিতে বসে নিজেই আইন করলেন যার দ্বারা কালো মানুষদের বন্দি করে রাখা বন্ধ হল চিরতরে। বন্ধ হল ক্রীতদাস প্রথা। তবে কথায় বলে, 'যাদের জন্য করলে চুরি সেইই বলে চোর'। ১৮৬৫ সালের ১৪ই এপ্রিল। স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসির নাটক দেখতে। হঠাৎই বক্স আসনের দরজা খুলে গেল। গর্জে উঠল আততায়ীর বন্দুক। লুটিয়ে পড়লেন আব্রাহাম লিঙ্কন।
ধরা পড়ল আততায়ী। জন উইলকিস বুথ। ছিলেন একজন সাদা চামড়ার মানুষ। পেশায় ছিলেন থিয়েটারের অভিনেতা। জন ব্রাউনের ফাঁসির সময় ঐ শয়তানটাই তার গলায় পড়িয়ে দিয়েছিল ফাঁসির দড়ি। জানোয়ারটা অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিল। একবার ধরাও হয়েছিল সন্দেহ করে। কিন্তু সেদিন লিঙ্কন কাছাকাছি উপস্থিত ছিলেন না। পরে এই ঘটনা শুনে লিঙ্কন বলেছিলেন, পাগল বাবার খ্যাপাটে ছেলে!
সত্যিই যদি সেদিনকে লিঙ্কন 'ক্ষমা' নামক ধর্মটার অপব্যবহার না করতেন তাহলে আততায়ী কেঁড়ে নিতে পারত না এই মহান মানুষটিকে। আসলে তার শিক্ষা যে 'অসম্পূর্ণ'! একথা তো তিনি আগেই বলে গেছেন এবং জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন!
কি বলেন, তাইনা?
২১ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০০
রাজীব নুর বলেছেন: মধ্য প্রাচ্যের দাসপ্রথা কি বন্ধ হয়েছে?
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪৮
এমেরিকা বলেছেন: ক্ষমার অপব্যবহার। দারুণ বলেছেন। বিশ্বকবির ভাষায়ঃ
"ক্ষমা যেথা হীন দূর্বলতা, রুদ্র নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা"
এত দরদ দেখাতে গিয়েই আব্রাহাম লিঙ্কন নিজের মৃত্যু ডেকে আনলেন। যে দোষী, শাস্তি তার অবশ্য প্রাপ্য। ক্ষমা করে মহত্ব দেখাতে গেলে লিঙ্কনের মতই পরিণতি হবে।
বাই দ্যা ওয়ে, লিঙ্কন ছাড়া আমেরিকায় আর কোন দাড়িওয়ালা প্রেসিডেন্ট কি ছিল?
২১ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০০
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
দাড়িওয়ালা প্রেসিডেন্ট আর ছিলো না।
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৬
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: খুব ভাল লেখেছেন রাজীব দা
২১ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০১
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪০
ইসিয়াক বলেছেন: ভালো। লেখা চলুক।
২১ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে। চলবে। আপনার অনুমতি যেহেতু পেয়েছি।
৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমেরিকার কয়েকজন আলোচিত রাষ্ট্রপতিদের
সম্পর্কে একটা পোস্ট দিবার কথা ভাবছি। আব্রাহাম
লিংকনও আছেন তাদের মাঝে। খুবই ভালো একজন
রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি ।
অঃটঃ লেখাটি আপনাকে উৎসর্গ করতে চাই,
অনুমতি পাওয়া যাবেতো !
২১ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: হায় হায়---
এটা তো আমার সৌভাগ্য।
৬| ২২ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:০১
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: দাস প্রথা অবশ্যই বন্ধ হয়েছে কিন্তু সোশন অত্যাচার বন্ধ হয় নাই।
২২ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: বিশেষ করে মধ্যে প্রাচ্যের দেশ গুলোতে এবন্নগ দরিদ্র দেশ গুলোতে।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৩৩
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: দাস প্রথা বিলোপ একটা যুগান্তকারী সিঁদ্ধান্ত।