নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৪৮

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬



দুজন বাবা মা গ্রাম থেকে শহরে ফিরছেন।
ঢাকা শহরে তাদের একমাত্র ছেলে- স্ত্রী কন্যা নিয়ে থাকে। বুড়ো বাপ-মা গত এক সপ্তাহ ধরে ছেলেকে প্রতিদিন ফোন দিচ্ছেন কিন্তু ছেলে ফোন ধরছে না। ছেলের বউও ফোন ধরছে না। বাবা মা বেশ চিন্তিত। তাদের একমাত্র নাতীকে দেখার জন্য বুড়ো বুড়ির মন অস্থির হয়ে আছে। তাছাড়া ঢাকা শহরে তাদের ব্যক্তিগত কিছু কাজ আছে। নাতীকে দেখবেন, ছেলের সংসার কেমন চলছে তা দেখবেন। গত তিন বছর ধরে তারা এক পীরের মুরিদ হয়েছেন, সেই পীরের সাথে দেখা করবেন। তাদের এক আত্মীয় গাজীপুর থাকেন তাদের সাথেও দেখা করার ইচ্ছা আছে। তাই তারা এক সপ্তাহের জন্য ঢাকা রওনা দিয়েছেন। এই বুড়ো বাবা মা জানেন না, ঢাকায় ছেলের বাসায় যাওয়ার পর তাদের জন্য চরম অপমান অপেক্ষা করছে।

শরীয়তপুর থেকে ঢাকা অনেক দূর।
বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের জন্য। স্প্রীডবোড দিয়ে নদী পার হতে হয়। তারপর বাস। বাস থেকে নেমে রিকশা। অনেক দিকদারি। যাই হোক, বুড়ো বাবা-মা ঢাকা ছেলের বাসায় এলেন। কিন্তু একমাত্র ছেলের স্ত্রী আশা দরজা খুলছে না। বুড়োবুড়ি খুব অনুরোধ করছে- আল্লাহর দোহাই লাগে দরজা খুলো। আমাদের ওয়াশরুমে যাওয়া জরুরী। ঠিক আছে, থাকবো না তোমাদের বাসায়। অনেক দূর থেকে অনেক কষ্ট করে এসেছি। নাতীকে দেখে চলে যাবো। এক গ্লাস পানিও খাবো না। দরজা খোলো। আশা কিছুতেই দরজা খুলছে না। সে বলল, এখন করোনার সময়। আপনারা কোন আক্কেলে ঢাকা আসলেন? নানান জায়গা ঘুরে এসেছেন, সাথে করোনা ভাইরাস থাকতে পারে। মানুষ আপন কিন্তু ভাইরাস আপন না। আপনাদের জন্য আমি আমার স্বামী আর সন্তানের ক্ষতি হতে দিবো না আমি। প্লীজ আপনারা চলে যান। বিরক্ত করবেন নয়া।

এই বুড়ো বুড়ি এসে উপস্থিত হলেন আমার বাসায়।
বললেন, এক সপ্তাহ থাকবেন। তারা নিজেরাই সারা ঘর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নানান গল্প করছেন। ক্ষুধা পেলে নিজেরাই খাবার খুঁজে খেয়ে নিচ্ছেন। টিভি দেখছেন। নামাজ পড়ছেন। পরীর সাথে গল্প করছেন। পরী তাদের দেখে খুব খুশি। বাসায় কেউ এলেই পরী খুশী হয়। দুই মুরুব্বী নিজেরাই ফ্লোরে বিছানা করে ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। চা বানিয়ে খাচ্ছেন। সকালের নাস্তা খেয়ে দুজন মিলে বাইরে যাচ্ছেন। ঠিক দুপুর দুটায় এসে খেয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবার বাইরে যাচ্ছেন। রাত দশটায় ফিরছেন। ফিরেই খাচ্ছেন। এই দুজন মানুষ গ্রাম থেকে আসার পথে দুই পলিথিন ভরতি করে লাল শাক এনেছেন। দুইটা দেশী মূরগী এনেছেন। আর এক ডজন কলা। কলা তারাই খেয়ে শেষ করে ফেলেছেন। এই দুইজনের সবচেয়ে বড় সমস্যা তারা মনে করেন করোনা বলতে দুনিয়ায়তে কিছু নাই। একসময় এই বুড়োবুড়ি ঢাকাতেই থাকতেন। সুন্দর সংসার ছিলো তাদের। তাদের এক ছেলে, এক মেয়ে ছিলো। মেয়েটা আত্মহত্যা করে মরে যায়। মেয়েটা খুব সুন্দরী ছিলো।

আমি বুড়োবুড়ির ছেলেকে ফোন দিলাম।
ছেলে বলল, ভাইয়া এ বিষয়ে আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলব না। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। প্লীজ। আপনি আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলুন। আশা বলল, ভাইয়া একসময় যখন তাদের কাছে থাকতাম- এরা দুজন আমাকে চরম অপমান করেছে। বিশ্রী গালাগালি করেছে। অনেক কাঁদিয়েছে। অপমান করেছে। বাসা থেকে বের হয়ে যাবার কথাও বলেছে। তখন আমার স্বামীর চাকরিও ছিলো না। উনাদের কারনে ভয়াবহ দিন গেছে আমাদের। উনাদের আমি কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবো না। তাছাড়া এখন করোনার সময়। উনারা কোনো নিয়ম কানুন মানে না। বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত পর্যন্ত ধোয় না। আমি চুপ করে শুধু আশার কথা শুনে গেলাম। তাদের একমাত্র মেয়ে তাইয়্যেবাও কি বড় হয়ে এরকম করবে নিজের বাপ মায়ের সাথে? আমার ছোট বাসায় আজ তারা তিন দিন ধরে আছেন। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

এই দুজন বয়স্ক মা বাবাকে আমি বহু বছর ধরে চিনি।
ভদ্র মহিলা একসময় রাজনীতি করতেন। নিজের জমি বিক্রি করে রাজনীতি করতেন। শরীয়তপুরের আবদুর রাজ্জাক তার রাজনীতির গুরু ছিলেন। আওয়ামীলীগের খুব ভক্ত ছিলেন ভদ্রমহিলা। বহুবার জেলে গেছেন। অনেক মাইর খেয়েছেন পুলিশের হাতে। বহুবার পত্রিকাতে তার ছবি এসেছে। যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলো- ভদ্রমহিলাকে ছুড়ে ফেলা দেওয়া হলো। প্রচন্ড মানসিক আঘাত পেয়ে তিনি অসহায় হয়ে গেলেন। তার স্বামী ব্যবসা করতেন। এবং তিনি যত ব্যবসাই করেছেন, বারবার লস খেয়েছেন। এই দুজনের সবচেয়ে ভালো দিক- সারা জীবন তারা দুইজন একসাথে ছিলেন। এক মুহুর্ত তারা আলাদা হননি সুখে দুঃখে। এমনকি ভদ্রলোক নিজে রান্না করে স্ত্রীকে খাইয়ে দেন। আজ তারা এই বয়সে এসে খুব অসহায় হয়ে পড়েছেন। আমার মা বেশ ভালো আছেন। আমার বাবা অসুস্থ কিন্তু সেবা যত্নের কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। আমার শেষ জীবনটা কেমন হবে?

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫০

মোগল সম্রাট বলেছেন: সময় তার শোধ নেয় দেরিতে হলেও। এই মা-বাবার বেলায়ও মনে হয় সেরকম কিছু হয়েছে।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: তারপরও এই বাবা মায়ের জন্য আমার মায়া হয়।
আশার প্রতি আমার বিস্তর রাগ জমেছে।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৯

রামিসা রোজা বলেছেন:

বুঝিনা কিছু সন্তানেরা কেন এতো স্বার্থপর বেইমান হয় ,
তবে মেয়েদের বিষয়টা কিছুটা ভিন্ন হলেও ছেলেরা কেন এতো অবিচার করে বাবা মার উপর ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: এই আধুনিক যুগে এসে মানুষ কেন যে এরকম হয়!!

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



এদের সন্তানটা লতার মতো বেড়েছে, মানুষ হয়নি

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: কি বলছেন মানুষ হয় নি?
ছেলে ভালো চাকরি করছে। যে ফ্লাটে ভাড়া থাকে সেই ফ্লাট কিনে ফেলার চিন্তা করছে।

৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মানুষের কিছু মানবিক গুন থাকতে হয়,তবেইত সে মানুষ নয়তো অমানুষ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: হয়তো মা বাবা ছাড়া অন্য কোথাও মানবিক গুন আছে। আমরা জানি না।

৫| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
খারাপ লাগলো।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: কিন্তু বাস্তব এরকমই।

৬| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৭

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মানবিক গুন এমন বিষয় না এখানে ওখানে আছে।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: আমি কি মানবিক?

৭| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৪

আমি সাজিদ বলেছেন: বেশ ধাঁধার মতো।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: জীবনটাই তো ধাঁধা।

৮| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আজও একটা নিউজ আছে আমাদের সময়তে মাকে মারধর । আমি বলি গজব পড়বে এমন সন্তানের উপর

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: দুঃখজনক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.