নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজকের ডায়েরী- ৭৭

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০০



একসময় আমার ইচ্ছা ছিলো- আমি লেখক হবো।
আমি চাকরি করবো না, আমি ব্যবসা করবো না। আমি শুধু লিখব। এর চেয়ে শান্তি দুনিয়াতে আর কি আছে? লেখক হবার ইচ্ছা আমি আমার কাজিন আবুল কালামকে জানালাম। আমার কাজিন আবুল কালাম বর্তমানে দিনাজপুর জেলা স্কুলের শিক্ষক। খুব জনপ্রিয় শিক্ষক। আবুল কালাম ভাই বললেন, লেখক হতে হলে- অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। সেই সময়গুলোতে তিনি আমাকে সব বিষয়ে জ্ঞান দিতেন। আবুল কালাম ভাই অবশ্যই একজন জ্ঞানী মানুষ। প্রচুর পড়াশোনা করতেন তিনি। উনার হাতে সব সময় বই থাকতো। খাওয়ার সময়ও তার হাতে বই থাকতো। এমনকি তিনি বাথরুমে গেলেও সাথে করে বই নিয়ে যেতেন। তার কাছ থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস হয়েছে। আবুল কালাম ভাই একজন নাস্তিক।

আবুল কালাম ভাই আমার চেয়ে তেরো বছরের বড়।
তার কথা মতো আমি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে লেগে গেলাম। আমি একটা ইলেকট্রনিক্স দোকানে কাজ শুরু করলাম। তাদের সাথে বড় বড় বিল্ডিং এ কাজ করতাম। ইলেকট্রিক কাজ। অনেক কষ্টের কাজ। টানা তিনমাস কাজ করলাম। কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। এরপর কাজ করলাম একটা গ্যারেজে (ওয়ার্ক শপ)। খুব কষ্টের কাজ। গাড়ির নিচে শুয়ে নষ্ট গাড়ি মেরামতের কাজ। সারা শরীর কালি দিয়ে মেখে যেত। গারীর ডেন্টিং পেন্টিং এর কাজও করলাম। এখানেও তিন মাস করলাম। কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন হলো। কি কি অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম সেগুলো আবার কাজিন আবুল কালাম ভাইয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করতাম। তিনি আমাকে বেশ উৎসাহ দিতেন। আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দিতেন। আমার এক চাচা ব্যবসা করেন। নবাবপুর তার দোকান। সেই দোকানে কিছুদিন বসলাম। ব্যবসায়ীরা কিভাবে মানুষকে ঠকায় তা শিখলাম, জানলাম।

আবুল কালাম বললেন, চায়ের দোকানে নিয়মিত যেতে।
আমি ঢাকা শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকানে গিয়ে এক ঘন্টা করে বসে থাকতাম। লোকজনের কথা শুনতাম খুব মন দিয়ে। টানা ছয় মাস শুধু চায়ের দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়ালাম। মাঝে মাঝে আবুল কালাম ভাই আমার সাথে চায়ের দোকানে দেখা করতে আসতেন। তিনি দেখতেন, আমি জ্ঞান অর্জন করছি না ফাঁকি দিচ্ছি। প্রতিদিন প্রচুর বই পড়তাম। বই বেছে বেছে দিতেন আবুল কালাম ভাই। একটা বই শেষ করে ভাইয়ের সাথে সেই বই নিয়ে আলোচনা করতাম। একের পর এক রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন, ইতিহাসের বই পড়ে যেতে লাগলাম। তখন আমি ছোট ছিলাম, পড়ে অনেক কিছুই বুঝতাম না। ভাই আমাকে বুজিয়ে দিতেন। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বখাটেদের মতো কিছুদিন আড্ডা দিলাম। টাইট জিন্স প্যান্ট, টিশার্ট আর কেডস পড়তাম তখন। অনেকটা রংবাজদের মতোন। মাথার লম্বা চুল গুলো উলটো করে আচড়াতাম।

একদিন ভাই বললেন, ভিক্ষা করতে হবে।
ভিক্ষা করলে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হবে। সত্যি সত্যি একদিন ভিক্ষা করলাম। ভিক্ষা আমি একা করি নি, আমার সাথে আবুল কালাম ভাইও ছিলেন। আমার মনে আছে, ধানমন্ডি এলাকায় আমরা ভিক্ষা করেছিলাম। আবুল কালাম ভাই ল্যাংড়া সেজেছিলেন। তাকে একটা কাঠের চাক্কাওয়ালা গাড়িতে বসিয়ে ভিক্ষা করেছিলাম। ভাই ছেড়া লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরেছিলেন। আমি পড়েছিলাম হাফপ্যান্ট। আর ছেড়া গেঞ্জি। বেশ কিছু টাকা ভিক্ষা পেয়েছিলাম। তবে শেষের দিকে পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছিলাম। শেষে আব্বা থানায় গিয়ে আমাদের ছাড়িয়ে এনেছিলেন। এরকম নানান কর্মকান্ড করে আমি দিন দিন বেশ অভিজ্ঞ মানুষ হয়ে উঠেছিলাম। একদিন ভাই বললেন, ব্রোথেল হাউজে যেতে হবে। বেশ্যাদেরও জানতে হবে। ওদের না জানলে জীবন ষোল আনাই বৃথা। আমি গেলাম মগবাজারের এক হোটেলে। একজন পতিতার সাথে অনেকক্ষন গল্প করলাম। তাদের দুঃখ কষ্ট জানলাম। ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতা হলো আমার।

একদিন ভাই বললেন, এবার লেখা শুরু কর।
লিখতে গিয়ে দেখি এক লাইনও লিখতে পারছি না। ভাইকে বললাম, ভাই আমি তো এক লাইনও লিখতে পারছি না। লেখা আসে না। ভাই বললেন, তাহলে তোর অভিজ্ঞতা হয় নি। আরো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে রে। আমার বেশ মন খারাপ হলো। এত পরিশ্রম করলাম- কিছু অভিজ্ঞতা হলো কিন্তু কিছু লিখতে পারছি না! তবে আমার ধৈর্য্য রবার্ট ব্রুস এর চেয়ে বেশি। মনে মনে ঠিক করলাম, আমার আরো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। প্রেমের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে শুরু করলাম। আমাদের এলাকায় একটা খুব সুন্দর মেয়ে ছিলো। মেয়েটার নাম ছিলো সুমি। সুমি'র সাথে মিশতে শুরু করলাম। প্রতিদিন সুমিদের বাসায় যেতে শুরু করলাম। সুমির সাথে নানান বিষয়ে গল্প করতে শুরু করলাম। একদিন সুমিকে বললাম, সুমি আমি তোমাকে দেখতে চাই। সুমি এক আকাশ অবাক হয়ে বলল, মানে! তুমি তো আমাকে প্রতিদিনই দেখছো। আমি বললাম, না মানে তোমার গায়ে কোনো জামা থাকবে না। সুমি প্রচন্ড রাগ করলো। সুমির সাথে সম্পর্ক নষ্ট হিয়ে গেলো।

লেখক হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
সবাই সব কিছু পারে না। অতীতের কর্মকান্ড গুলো- আমি যে নির্বোধ তারই প্রমান। লেখক হওয়ার ইচ্ছা আমার হারিয়ে গেছে। আমি একজন অযোগ্য এবং ব্যর্থ মানুষ। এটা আমি মেনে নিয়েছি। মেনে নেওয়ার পর বেশ শান্তি শান্তি ভাব এসেছে মনে। আজকের ডায়েরীতে আজকের কথা কিছুই লিখলাম না। অতীতের কথা লিখলাম। আজিব! আব্বা'র শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। আইসিইউ থেকে আব্বাকে বেডে দেওয়া হয়েছে। এই করোনায় ঢাকা শহরে ফুটপাতে দোকানের সংখ্যা আগের চেয়ে তিন গুন বেড়েছে। ভ্যানগাড়িতে করে তারা সুন্দর ব্যবসা করছেন। সবজি, ফলমুল আর মাছ বেশ বিক্রি হচ্ছে। পুলিশ এলে ভ্যানগাড়ি নিয়ে গলির ভিতরে চলে যাচ্ছে। কমলা বিক্রি হচ্ছে খুব। এক কেজি একশ' টাকা। আমি দুই কেজি কিনে নিলাম। সবজির দাম কিছুটা কমেছে। দুইটা ফুল কপি ৫০/৬০ টাকা দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে। সবচেয়ে সস্তা হলো মুলা। মাত্র পনের টাকা কেজি।

ছবিঃ আমার তোলা। হাতটা কার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন?

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৫৯

অনল চৌধুরী বলেছেন: আপনি ব্যার্থ না।
যা করছেন, করতে থাকেন।
সফলতা আসবেই।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ!
এরকম কথা শুনতে ভালো লাগে।

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১৭

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সবমিলিয়ে দারুন একটা গল্প।গল্পে সত্য মিথ্যা থাকেই।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: মিথ্যা লিখতে পারি না।

৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৫৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



ভিক্ষা করে কত টাকা পেয়েছিলেন?

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: তা আর সঠিক মনে নেই। তবে দেড় শ' টাকার মতো হয়েছিলো হয়তো।

৪| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৪৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: খুবই চমৎকার।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ বড় ভাই।

৫| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৫৯

কলাবাগান১ বলেছেন: একেবারে নাম ঠিকানা সহ কাজিন এর পরিচয় দিয়ে আবার নাস্তিক ট্যাগ ও দিয়েছেন নোয়াখালীর জংগী দের চিনতে খুবই সুবিধা হবে....

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: মনে হয় ভুল করেছি।
আসলে আমি মিথ্যা লিখতে পারি না। কি প্রমান পেলেন তো!?

৬| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪২

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: চমৎকার একধম মনে হয় বাস্তব কাহিনী দাদা ------------

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই বাস্তব।

৭| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: দারুণ উপস্থাপন । মঙ্গল হোক আপনার ।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো থাকুন।

৮| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৩৭

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: শিক্ষার শেষ নাই।
আরে .. কে জানি বল্লো - অভিজ্ঞতার শেষ ....

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.