নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৪৯

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৩৩




ভদ্রমহিলার বয়স আনুমানিক ৭০/৭২ বছর হবে।
তার নাম কোহিনূর। আমি তাকে কোহিনূর ফুপু বলে ডাকি। আমাদের এলাকাতেই থাকেন। ছোটবেলা থেকেই কোহিনূর ফুপুকে দেখে আসছি। তার স্বামী কৃষি ব্যাংকে চাকরি করেন মতিঝিল শাখায়। তাদের তিন ছেলে, দুই মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ের পর তারা স্বামীর সাথে বিদেশ চলে যায়। একজন ডেনমার্ক, একজন লন্ডন। আর তিন ছেলেই চাকরি করছে। একজন স্ত্রী কন্যা নিয়ে থাকে রাজশাহী, একজন চিটাগাং। ছোট ছেলে নিয়ে তিনি ঢাকা থাকেন। খুব সুখের সংসার তার। ছেলে মেয়েরা ছুটি পেলে ঢাকা বাবা মায়ের কাছে চলে আসে। কোহিনূর ফুপু একদম মাটির মানুষ। কোনো দিন কাউকে ধমক দেন নি। তার বাসায় কোনো ভিক্ষুক এলে, বসিয়ে নিজের হাতে খাওয়াতেন। ভিক্ষুকের হাতে কিছু টাকাও গুজে দিতেন। ফুপুর হাতের রান্না আমি সংখ্যবার খেয়েছি।

কোহিনূর ফুপু লেখাপড়া জানেন না।
তার বাবা মা তাকে লেখাপড়া শেখান নি। তবে তারা তাকে আরবী পড়তে শিখিয়েছেন। কোহিনূর ফুপুর পুরো কোরআন মুখস্ত। বিয়ের পর তার স্বামী তাকে বাংলা পড়তে শিখিয়েছেন। বাংলা পড়তে শিখে কোহিনূর ফুপু শুধু হাদীস এবং ধর্মীয় বই পড়তেন। ইসলামের সমস্ত নিয়ম কানুন তার জানা। আশে পাশের বাসা থেকে মহিলারা তার কাছে আসতেন কোরআন হাদীসের কথা শুনতে। ধর্মের গল্প শুনতে। ফুপু খুব সুন্দর করে নবীদের গল্প বলতেন। তার কাছ থেকে আমি অনেক নবীর ইতিহাস জেনেছি। কোরআনের সব সূরার বাংলা অর্থ তিনি জানেন। তিনি দিনের মধ্যে হাজার বার, লক্ষ বার আল্লাহ রাসূলের নাম নিতেন। ছেলে মেয়েদের বলতেন সব সময় আল্লাহকে স্মরণ রাখবে। তিনিই তোমাদের ভালো রাখবেন।

ফুপু সাত বছর বয়স থেকে নামাজ পড়তেন।
রোজা রাখতেন। ইসলামের সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে চলতেন। সময় মতো নামাজ পড়তে না পারলে ফুপুর মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। ফুপুকে আমি যতবার দেখেছি, তার হাতে তজবি দেখেছি। তার মতো ধার্মিক মহিলা আমি আর দেখি নি। সারা জীবন নামাজ রোজা করেছেন। কিন্তু ফুপুর এখন ৭০ বছর বয়স। তিনি এখন আল্লাহকে বিশ্বাস করেন না। নামাজ রোজা করেন না। ধর্মের কোনো নিয়ম কানুন মানেন না। একদিন ফুপু আমায় বললেন, এতদিন নামাজ রোজা আর আল্লাহকে ভয় করে ভুল করেছি। আল্লাহর ভয়ে মিথ্যা বলতাম না। পাপ করতাম না। অক্ষরে অক্ষরে আল্লাহর কথা মেনে চলেছি। নবীজির কথা মেনে চলেছি। কিন্তু আজ আমি আল্লাহ খোদার নাম নেই না। যে ক'টা দিন বাঁচি নামাজ রোজাও আর করবো না।

কোহিনূর ফুপু তার স্বামী আর বড় ছেলেকে নিয়ে হজ্ব করেছেন।
হজ্ব থেকে আসার পর আমি ফুপুকে বলেছি, আল্লাহর কাছে আপনি কি চাইলেন? ফুপু বললেন, আমি চেয়েছি আমার মৃত্যু। আমার স্বামী সন্তানদের আগে আমি মরতে চাই। কারন আমি স্বামী সন্তানের মৃত্যু সহ্য করতে পারবো না। একদিন তার স্বামী মরে গেলেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ আমি আপনাকে বলেছি- সবার আগে আমার মৃত্যু দিও। কিন্তু আল্লাহ তুমি আমার স্বামীকে আগে নিয়ে গেলো। এরপর ফুপুর বড় ছেলে মারা গেলো। বড় ছেলের মৃত্যুতে ফুপু প্রায় পাগল হয়ে গেলেন। নামাজ রোজা সব বন্ধ করে দিলেন। ডেনমার্কে তার মেয়ের মৃত্যু হলো। তিনি কোরআন পড়া বাদ দিয়ে দিলেন। নামাজ পড়া একেবারেই বন্ধ করে দিলেন। বারবার বলেন, আল্লাহকে এত করে বললাম, আমাকে স্বামী সন্তানের মৃত্যু দেখিও না। সবার আগে আমাকে তুলে নাও। সারা জীবন তো আমি তোমার'ই পথে অবিচল থেকেছি।

স্বামী সন্তানের মৃত্যুর পর ফুপু পুরো বদলে গেলেন।
ফুপু বলেন, সারা জীবন নামাজ রোজা করেছি। আল্লাহর কাছে কোনো দিন কিছু চাই নি। চেয়ে ছিলাম স্বামী সন্তানের আগে মরতে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে স্বামী সন্তানের মৃত্যু দেখালেন। নিজের স্বামী, নিজের সন্তানের মৃত্যু দেখা। এই কষ্টের শেষ নেই। আল্লাহ আমাকে এই কষ্ট দিলেন। অথচ সারা জীবন নামাজ রোজা করেছি। কারো ক্ষতি করিনি। কাউকে দুঃখ কষ্ট দেই নি। অথচ যাকে এতে ডেকেছি, সেই আল্লাহ আমাকে ভীষন কষ্ট দিলেন। তাই এখন আর নামাজ রোজা করি না। কোরআন পড়ি না। বাকি জীবনে আল্লাহকে আর ডাকবো না। আল্লাহ আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। ফুপুর বাসায় গেলে ফুপু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন। আমি তাকে কোনো শ্বান্ত্বনা দিতে পারি না। বেঁচে থেকেও ফুপু যেন মৃত। তার মুখে হাসি নেই। কোনো কথা নেই।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:০৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আল্লাহ কারো ভালোও করে না খারাপও করে না,কাউকে বলে না আমাকে ডাক।মানুষ তার প্রয়োজনে এতোসব করে।
এখন তার প্রয়োজন নাতি নাতনি নিয়ে আনন্দে থাকা নয়তো মানসিক কষ্টে থাকবে।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: মহিলা কঠিন আঘাত পেয়েছে।

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:০৬

ডাব্বা বলেছেন: কোহিনূর ফুপু নিজেকে ফিরে পাবেন, এই আশা করি।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: না পাবেন না। তার শরীরের অবস্থা ভালো না।

৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:০১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ওনার মৃত্যু হয়তো ওনার স্বামী বা সন্তান সহ্য করতে পারতেন না তাই ওনাদের আগে নিয়ে গেছেন। উনি শুধু ওনার নিজের কষ্টের কথা চিন্তা করে আগে যেতে চেয়েছেন।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা ঠিক।

৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৬

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: এক ধম বাস্তবমুখি মনে হলো রাজীব দা

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই।

৫| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: জগতের সব কিছু তো মনের মতো হয়না তবে আপনার ফুফুর জন্যে খারাপ লাগছে।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমার আপন ফুপু না। আমাদের প্রতিবেশী। আমি তাকে ফুপু ডাকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.