নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিলাসিতা

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০২



মিজান সকাল নয়টায় চোখ মেলে তাকালো।
সে কি আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবে না এখনই উঠে পড়বে বুঝতে পারছে না। তার কোনো কিছুতেই কোনো তাড়াহুড়া নেই। মিজান ভাবছে সে কি কাল রাতে ঘুমিয়েছিল। নাকি ঘুমায়নি কিন্তু সে ভাবছে ঘুমিয়েছে। এখন তাকে কে বলে দিবে সে রা্তে ঘুমিয়েছিল কিনা। আজ কি বাইরে রোদ উঠেছে? কাঁচের মতো স্বচ্ছ রোদ। ঘরের ভেতর এত শিশিরের গন্ধ কেন আজ? মিজান ডান পাশ থেকে এবার বাম পাশে ফিরল। তখন সে যেন স্পষ্ট শুনতে পেলো তার হাড়ের মটমট শব্দ। এখন সে মনে করছে বাম পাশে ফেরা ঠিক হয়নি ডান পাশেই ভালো ছিল। অনেক আগে একবার তার জন্ডিস হয়েছিল। তখন তার চোখ এবং শরীরের রং হয়ে গিয়েছিল হলুদ। দেখতে কি বিচ্ছিরি লাগত। মিজান ভাবলো এখন তার এক কাপ চা খেতে হবে। তার বিলাসিতা বলতে চা আর সিগারেট। হঠাৎ তার সারা শরীর ঝিমঝিম করে উঠলো। মনে হচ্ছে কাল সারারাত সে 'ব্ল্যাক ডগ' নামে বোতলটা খালি করে ফেলেছে। হয়তো সে রাতে খুব ভালো ঘুম দিয়েছে।

কতদিন ধরে মিজানের কি হয়েছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
তার কোল বালিশ টাকে জড়িয়ে ধরলে তার মনে হয় সে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছে। এজন্য সে কাল রাতে কোলবালিশ টা ছুড়ে মেঝেতে ফেলে দিয়েছে। মিজান ছটফট করতে লাগল। মনে হয় তার সারারাত ঘুম হয়নি। ছাই-পাশ ভাবতে ভাবতে দুপুর হয়ে গেলো। তবু মিজান বিছানা থেকে নামল না। খবরের কাগজ পড়ল না। চা খেলো না, সিগারেট খেলো না। ঢক ঢক শব্দ করে কাচের গ্লাসে পানিও খেলো না। একবার আকাশের দিকে তাকালো না। তার মাথার মধ্যে একটা গান বাজছে- 'বউ আমার বাপের বাড়ি গেছে রে/ আমার উপর ভীষন রাগ করে/ জামার বোতাম খোলা রে/ এখন আমি অফিস যাবো কি করে'। মিজান আজ কাজে বের হলো না। মনে হচ্ছে তার অনেক জ্বর। কেন জানি মেঝে থেকে কোল বালিশ টা উঠিয়ে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে কিছুক্ষণ। ইদানিং মিজান ভাবছে তার মাথার সব চুল গুলো আইনষ্টাইনের মত সাদা করে ফেলবে। তখন হয়তো তার মধ্যে একটা জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব আসবে। তার মাথা ভর্তি চুল। কিন্তু তার দুঃখ হয় চুল গুলো সাদা নয় বলে।

মিজান ভাবছে- তার গায়ের রং বিচ্ছিরি সাদা।
তার হাতের শিরা গুলো সব সময় ফুলে ফুলে থাকে। তার একেবারেই সাহস নেই। সেদিন একটা রিকশাওয়ালা মিজানকে বলল রিকশায় যেতে হবে না হেঁটেই যান। তারপর বিচ্ছিরি হলুদ দাঁত বের করে হাসল। মিজান তাকে একটা চড় বসিয়ে দিতে পারলে আরাম পেতো। কিন্তু সাহসের অভাবে পারল না। সাহস নেই বলে তখন তার নিজের উপরই খুব রাগ লাগল। মিজান ইদানিং কবিতা লিখে। এবং সে ভাবে ভালোই লিখছে। তার কবিতাতে নারী-পুরুষের ভালোবাসার কথা থাকে। পাওয়া-না পাওয়ার কথা থাকে। অন্য এক ধরেন আনন্দময় বেদনা থাকে। মিজান ভাবে সে এক নিঃসঙ্গ যুবক। এটাই তার সবচেয়ে বড় সমস্যা। আবার ভাবে খারাপ মানুষের সঙ্গের চেয়ে একা থাকাই অনেক ভালো। দুনিয়া ভরে গেছে খারাপ মানুষে। সারা সকাল-দুপুর মিজান শুয়ে কাটাল। বিচিত্র সব গন্ধ নাকের কাছে ঘুরপাক খেলো। তার খুব অস্থির লাগার কারণে বিকেলে সে বাসা থেকে বের হলো কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করবে বলে।

এই যে রাস্তায় এতো মানূষ হাঁটছে-
মিজান এদের কাউকে চিনে না। মিজানকেও এরা কেউ চিনে না। চারিদিকে ময়লা। মানুষের ভীড়। বেশীর ভাগ মানূষের মুখই মিজানের কাছে এক রকম মনে হয়। দশ বার করে দেখলেও এইসব মুখ মনে থাকে না। নিজেকে মাঝে মাঝে রাস্তার কুকুর বলে মনে হয়। নিজের বলতে কিছু নেই তার শুধু দুঃখ ছাড়া। মিজান ভাবে দেশের ষোল কোটি মানূষ আমাকে চিনে না, তাতে আমার কি এই ভাবতে ভাবতে মিজান রাস্তার পাশের দোকান থেকে দু'কাপ চা খেল। দু'টা সিগারেট শেষ করলো। রাস্তা ভর্তি মানূষ-জন। একটা লোক অবাক চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মিজান রাস্তায় বের হলেই আশে-পাশের চারদিক খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে। রাস্তা-ঘাট, আশে-পাশের মানূষ-জন, দোকান-পাট দেখে সে খুব আনন্দ পায়। আজ রাস্তায় এত মানূষ কেন? আজ কি কোনো বিশেষ দিন! নিজেকে যখন তার রাস্তার কুকুর বলে মনে হয়- তখন তার মরে যেতে ইচ্ছা করে। মিজান আর একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবলো- আমি মিজান। কোনো কিছুর উপরই আমি প্রতিফলন ঘটাতে পারি না। মিজান আজ অনেকক্ষণ রাস্তায় হাঁটবে। রাস্তায় সে একটা মেয়েকে দেখতে পেলো। মেয়েটাকে তার চেনা মনে হচ্ছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে কিছুতেই মনে করতে পারছে না।

মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর।
হাটছেও খুব সুন্দর করে। লাল সবুজ নীল শাড়িতে মেয়েটিকে দারুন লাগছে। মাথার চুল খোলা। মেয়েটির হাত ধরে মিজানের হাঁটতে ইচ্ছা করছে। মেয়েটিকে কোল বালিশের মতো জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে। মেয়েটি রাস্তায় হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। রাস্তার নিয়ন বাতির আলো মেয়েটির চোখ মুখের উপর পড়ল। মিজান মেয়েটির পাশে গিয়ে দাড়ালো।
মেয়েটি মিজানকে বলল- কিছু বলবেন?
মিজান বলল- আমি কি আছি? আপনি কি আমাকে দেখতে পারছেন? আপনি কি আমার হাতটা একটু ছুঁয়ে দেখবেন সত্যিই আমি আছি কি না!
মেয়েটি কথা বলল না, চুপ করে আছে। এবং মুখ ফিরিয়ে নিল।
মিজান বলল- এই রাস্তায় রিকশা পাওয়া যায় না।
মেয়েটি এখন কোথায় চলে যাবে মিজান জানে না। মিজান চায় মেয়েটি কিছুক্ষণ তার হাত ধরে হাটুক। মেয়েটি খুব চালাক মিজানের এরকমটাই মনে হচ্ছে।
মিজান হাসি মুখে বলল- আমি কি তোমাকে একটা চুমু দিতে পারি? চুমুর জন্য যদি তুমি টাকা চাও পাবে। আর যদি তুমি টাকা নাও তাহলে তোমাকে আমার অনেক জমানো কথা বলব, কারণ তোমাকে বিশ্বাস করা যায়।
মেয়েটি চলে গেলো। মিজান একা দাঁড়িয়ে রইল। মিজান ভাবছে সত্যিই কি মেয়েটি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল? যদি মেয়েটি না যেত তাহলে ঘটনা এই রকম হতোঃ

মিজান আর মেয়েটি একটি শিমুল গাছের নিচে বসত।
মিজান মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতো। তারপর জানতে চাইত- তুমি কোথায় যাচ্ছিলে? আমি রাস্তায় হাঁটতে বের হয়েছিলাম। তুমি কোথায় থাকো? আমি পুরান ঢাকায় থাকি। সেখানে তোমার কে কে থাকে? মা-বাবা আর ছোট ভাই। মেয়েটি মিজানকে বলত তুমি কই থাকো? আমি জানি না আমি কই থাকি! তোমার বাবা-মা? জানি না তারা কোথায়। মেয়েটি বলল- ধুৎ তারপর হেসে মিজানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মিজান বলল- আমি সবার কথা ভাবি। মেয়েটি হেসে মিজানের পিঠে হাত রাখল। তারা দুইজন হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো। অনেকক্ষন হেঁটে একটা লেকের সামনে বসল দুজন পাশাপাশি। মিজান মেয়েটিকে ঠোঁটে চুমু দিলো। কোথাও কেউ নেই। মেয়েটি মিজানকে জড়িয়ে ধরল অন্ধকারে। মেয়েটি মিজানকে চুমু দিলো গলায়। দুইজন দুইজনকে মোট ৮২ টা চুমু দিলো। তাও কম মনেও হচ্ছে। কারো'ই মন ভরে নি। মেয়েটি দুই হাত দিয়ে মিজানের মুখ ধরল, খুব আবেগ নিয়ে বলল- দুঃখ পেও না। মিজান বলল আমি তো তোমাকে কোনো দুঃখের কথা বলিনি। মেয়েটি বলল- আমি টের পাই তোমার এক আকাশ দুঃখ। মিজান চুপ করে অন্ধকারের মধ্যে মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটি বলল- আমার সময় শেষ, আমাকে বাসায় নামিয়ে দাও। মিজান বলল আবার কখন দেখা হবে? মেয়েটি বলল- আর দেখা হবে না। তোমার মন খারাপ ছিল তাই কিছুক্ষন তোমাকে সময় দিলাম।

সেই নিয়ন বাতির কাছেই মিজানের ঘোর কাটল।
মেয়েটির উপর মিজানের খুব মায়া লাগছে। মেয়েটি হয়তো সবার বুকে মাথা রাখার মেয়ে নয়। মিজান ভাবে সে কি বেঁচে আছে? মেয়েটি তা প্রমাণ না করে বিদায় নিলো। মিজান বাসায় ফিরল রাত ১২ টায়। সারা ঘর অন্ধকার করে বসে থাকল। হয়তো বসে নয় দাড়িয়েই থাকল। তাতে কার কি! আজ সারারাত মিজান কাঁদবে। তাতে কার কি? কেউ এসে তো আর তাকে জড়িয়ে ধরে দু'টো ভালোবাসার কথা বলবে না। অন্ধকারের মধ্যে মিজান কাকে যেন কুৎসিত দু'টা গালি দিলো। তারপর লাথি দিলো অদৃশ্য কাউকে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৩৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আমাদের নূরু ভাই চলে আসছে ,এখন একটু সাবধানে লিখবেন।রাস্তা ঘাটে যার তার সাথে অন্য মতলবে আলাপ জুড়ে দিবেন না।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: নুরু ভাইয়ের সাথে আমার সু সম্পর্ক বিরাজ করছে। সমস্যা নাই।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৬

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে সাথে আপনার ছবিও।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১০

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.