নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় কন্যা আমার- ২০

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৮



প্রিয় কন্যা আমার-
আজ তোমাকে তোমার জন্মের আগের কথা গুলো বলব। সে সবও তোমার জানা দরকার। হঠাত একদিন সুরভি আমাকে তোমার কথা বলল। শুনে আমি খুবই খুশি হলাম। কিন্তু আমার খুশি সুরভিকে বুঝতে দিলাম না। যাই হোক, আমি এতই খুশি হলাম যে আমার ইচ্ছা করলো হেটে হেঁটে সারা ঢাকা শহরটা ঘুরে বেড়াই। কিন্তু সময়টা ভালো ছিলো না। চারিদিকে করোনা। এমনকি লকডাউন। সামনের দিন গুলোতে কি হয় বা হবে আমরা জানি না। দারুন টেনশন। এঁর মধ্যে হঠাত আমার চাকরী চলে গেলো। সত্য কথা বলি- চাকরী চলে যাওয়াতে বরং আমি খুশিই হয়েছি। টানা সাত বছর একই অফিসে চাকরী করে আমি বেশ ক্লান্ত। বিরক্ত। ঢাকা শহরে নিজেদের একটা ছয় তোলা বাড়ি আছে। আমার চিন্তা কি!

প্রিয় কন্যা ফারাজা,
প্রথম মাসেই তোমার মা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লো। জ্বর, সাথে কাশি। মাথা ঘুরায়। নানান সমস্যা। তখন আমি নিজে রান্না শুরু করলাম। যদিও আমি রান্না করতে জানি না। তোমার মা যেভাবে বলে দিয়েছে আমি শুধু তা করে গিয়েছি। প্রথম দিন রান্না করেছিলাম গরুর মাংস। খেতে মন্দ হয়নি। পরের দিন রান্না করেছিলাম কলরা ভাজি। সাথে কিছু আলুও দিয়েছিলাম। মিথ্যা বলব না ভাজিটা দারুন হয়েছিলো। যাই হোক, আমাকে বেশি দিন রান্না করতে হয়নি। তোমার মা সুস্থ হয়ে একদিন উঠে বসলো। এদিকে ভাবী (তোমার বড় মা) সুরভির প্রচন্ড সেবা যত্ন করেছেন। এই দশ মাস সে তোমার মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সব রকম দেখভাল করেছেন। ভাবীর সাথে আমি যতই রাগারাগি করি না কেন- তিনি তোমার জন্য অনেক করেছেন। করছেন।

প্রিয় ফারাজা তাবাসসুম,
আমি নিয়মিত ফল কিনতাম। প্রচুর ফল কিনতাম। সেই ফল নিজের হাতে ধুয়ে কেটে তোমার মাকে খেতে দিতাম। এমন কি প্রতিদিন একটা করে ডাব। সেই সময় ডাবের দাম খুব বেশি ছিলো। প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস করে দুধ আমি নিজে গরম করে দিতাম। নিজে ডিম সিদ্ধ করতাম দুটা। একটা তোমার মায়ের জন্য একটা আমার জন্য। আমি সাধারনত মিল্ক ভিটা দুধ কিনতাম। পরে ভাবী কোথা থেকে যেন খাটি দুধ আনাতেন। একসাথে পনের, বিশ কেজি করে। ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় ডাক্তার দেখাতাম তোমার মাকে। লকডাউন এঁর মধ্যে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে। প্রতিমাসে দুইবার করে। তবে সুরভি খুব সাবধান ছিলো। সে সব নিয়ম কানুন মেনে চলেছে। বিধায় বড় রকমের কোনো সমস্যা হয়নি। তোমাকে পেটে নিয়েই তোমার মা নামাজ পড়েছে নিয়মিত।

প্রিয় কন্যা ফাইহা,
প্রথম তিন মাস পার হয়ে যাবার পর তোমার মা বেশ কয়েকটা বিয়েসাদির অনুষ্ঠানে গিয়েছে। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতেও গিয়েছে। আমি বাঁধা দেই নি। এখনও তোমার মা কোথাও যেতে চাইলে আমি মানা করি না। যাক ঘুরে আসুক। তোমার জন্মের দেড় মাস আগেও সাথী আপার বিয়েতে গেলো। সেই বিয়েতে আমিও গিয়েছিলাম। সমস্যা হলো সাথী আপারা সাত তলায় থাকেন। তাদের বাসায় আবার লিফট নেই। মাঝে মাঝে তুমি তোমার মায়ের পেটে নড়াচড়া একেবারে বন্ধ করে দিতে। তখন সুরভি খুব টেনশন করতো। ঘাবড়ে যেতো। আমি বলতাম, চিন্তার কিছু নেই। কন্যা ঘুমাচ্ছে। ঠিকই তুমি কয়েক ঘন্টা পর লাফালাফি শুরু করে দিতে। তখন তোমার মা নিশ্চিত হতো। মজার ব্যাপার হলো- তোমার মা ভালো খাবার খাওয়া শুরু করলেই তুমি নড়াচড়া বেশি করতে।

প্রিয় ফারাজা তাবাসসুম খান,
এইভাবে একদিন দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলো। একদিন রাত বারোটায় তোমার মা বলল, ব্যথা করছে। আমি বললাম ওটা কিছু না। তুমি ঘুমাও। ঠিক হয়ে যাবে। বলেই আমি ব্লগিং শুরু করলাম। কিছুক্ষন পর তোমার মা আবার বলল, মনে হয় হাসপাতালে যেতে হবে। আমি ভাবীকে ফোন করে ডাকলাম। ভাবী সাথে সাথেই এলেন। সুরভিকে দেখে আমাকে বললেন, হ্যাঁ হাসপাতালে যেতে হবে। তবে আমরা এখনই যাবো না। আমরা সকালে যাবো। এখন হাসপাতালে গেলে শুইয়েই রাখবে। একসময় আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ভাবী সকাল সাতটায় ঘুম থেকে আমাকে ডেকে তুললেন। দেখি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য সুরভি প্রস্তুত।

ড্রাইভার হাশেদুল ভোরেই চলে এসেছে।
আমি দাঁত ব্রাশ করলাম। এবং পকেট ভর্তি করে টাকা নিয়ে নিলাম। মুহুর্তের মধ্যে হাসপাতালে চলে এলাম। ডাক্তারের সহকারীরা সুরভিকে দেখেই বললেন এখনই ওটিতে নিতে হবে। নরমাল ডেলিভারী হবে। মুহুর্তের মধ্যে তোমার মাকে ওটিতে নেওয়া হলো। ভাবীও ওটিতে গেলো। কারন এই হাসপাতালের ডাক্তার আমাদের খুব পরিচিত। আমি বাইরে চুপ করে অপেক্ষা করছি। একবার বসছি। একবার হাঁটছি। মনে মনে ভাবছি এক কাপ চা পেলে ভালো হতো। কত সময় পার হয়েছে জানি না। এঁর মধ্যে কে বা কারা ফোন দিয়েছে আমি বলতে পারবো না। আমি এক ধরনের ঘোরের মধ্যে ছিলাম। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পর একজন নার্স দৌড়ে এসে আমাকে বললেন, মেয়ে হয়েছে। মেয়ে এবং মেয়ের মা সুস্থ আছে।

যাক, নিশ্চিত হওয়া গেলো।
কে বা কারা সমানে আমাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে আমি বলতে পারবো না। কিছুক্ষন পর একজন নার্স তোমাকে কোলে করে দৌড়ে এলো। বাচ্চার বাবা কে? বাচ্চার বাবা কে? আমি হাত তুললাম। আমি তোমাকে প্রথম দেখলাম। নার্স বললেন কোলে নিন। আমি বললাম এখন কোলে নিবো না। আমার হাত ধুতে হবে। আমি কোনো আবেগ উচ্ছ্বাস দেখাই নি। নার্স বেশ আহত হলো আমাকে দেখে। যদিও ভিতরে ভিতরে খুশিতে আমি যেন অজ্ঞান হয়ে যাবো। আমি নার্সকে ইশারা দিলাম, বললাম আপনি পাবেন। আপনাকে খুশি করে দিবো। এরপর হাসপাতালে অনেকেই তোমাকে দেখতে এলেন। সুরভিকে ওটি থেকে বের করা হলো। কেবিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে আমাকে দেখেই হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে সুরভির হাত ধরলাম।

নার্স, আয়া সবাইকেই এক হাজার করে টাকা দিলাম।
টাকা পেয়ে তাঁরা ভীষন খুশি। তোমার নানাও তোমার মামা মামীর হাতে টাকা পাঠিয়েছেন। আমার বড় ভাইও তার ক্রেডিট কার্ড সাথে দিয়ে দিয়েছেন। এক ঘন্টা পর ডাক্তার বললেন, আপনারা বাসায় চলে যান। মা মেয়ে দুজনই সুস্থ। এবং তাদের কোনো সমস্যা নেই। কি দরকার হাসপাতালে থাকার। সত্যি সত্যি বিকেলের মধ্যে তোমাকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।


মন্তব্য ২০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: দেখতে দেখতে মেয়ে বড় হয়ে উঠছে, আলহামদুলিল্লাহ।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: দোয়া করবেন।

২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ২:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


মেয়ে কিছু ধরে দাঁড়াতে পারে?

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ কিছু ধরে দাড়াতে পারে। ইদানিং সে একা একা খাট বা সোফা থেকে নেমে যেতেও চেষ্টা করে।

৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ২:৫৮

কামাল১৮ বলেছেন: মা বাবার হাত ধরে হাটবে প্রথম,তার পর হাত ছেড়ে।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন হাত ছাড়বো না।

৪| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:৩৯

মাস্টারদা বলেছেন: এ তো দেখি, 'এক মুঠো জুঁই'
অধর পদ্মে মুখর কাকলী ফুটাইতেছে খই।
বাড়ি ছাড়ি ইন্দু আসি চুমে গেল চোখে
কূজনে সুজন করে টিপ ভালে আঁকে।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ সুন্দর।

৫| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৭:২১

নজসু বলেছেন:


অনেক দোয়া আদর আর ভালোবাসা রইলো।
দ্বিতীয় ছবিটার হাসি কি অমায়িক, মিষ্টি আর পবিত্র।
বেঁচে থাকো মা।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১১

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০১

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: মেয়ের জন্য অনেক দোয়া ও ভালবাসা রইল রাজীব দা

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কবি।

৭| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৯

ইসিয়াক বলেছেন:








বাহ! দাঁড়াতে শিখে গেছে তো। খুব ভালো লাগছে দেখে।

অনেক অনেক আদর রইলো আপনার দুই কন্যার জন্য। মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠুক ওরা।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমি চেষ্টা করবো কন্যাদের মধ্যে যেন কোনো কুসংস্কার বাসা না বাধে।

৮| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৯

জুল ভার্ন বলেছেন: শুভ কামনা।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৯| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫১

সাগর শরীফ বলেছেন: মাশাল্লাহ্! অনেক দোয়া থাকল ওর জন্য।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

১০| ০২ রা অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: এখন কিছু একটা ধরে দাঁড়াতে শিখেছে। কয়েকদিন ধপাস ধপাস করে পড়বে, উঠবে, আবার পড়বে, আবার উঠবে। এভাবেই একদিন আর কারো সাহায্য ছাড়াই এক পা দু'পা করে হাঁটা শিখে যাবে। তারপরে আর তাকে পায় কে?

"দিনে দিনে বাড়ে শিশু চন্দ্রকলা সম"!

০২ রা অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.