নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুপারম্যান

২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:৩৬



সুকন্যা এবং সুপারম্যান একটা ইংলীশ মিডিয়াম স্কুলে নার্সারী ভর্তি হয়েছে।
স্কুলটি ছোট। ক্লাশ রুমের সংখ্যা সব মিলিয়ে সাতটা। তবে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মন্দ নয়। ক্লাশ শুরু হয় সকাল আট টায়। স্কুলের ড্রেস হচ্ছে- ছেলেদের খাকী হাফ প্যান্ট আর সাদা শার্ট। সাথে টাই। মাথার ক্যাপ আছে। মেয়েদের খাকী স্কার্ট আর সাদা শার্ট সাথে টাই। কালো জুতো।

প্রথম দিন সুপারম্যান স্কুলে গিয়ে সুকন্যার পাশে গিয়ে বসে।
কিন্তু নিয়ম হচ্ছে ছেলেরা ডান পাশে আর মেয়েরা বসবে বাম পাশে। কিন্তু সুপারম্যান কোনো নিয়মের ধারধারে না। ক্লাশে প্রবেশ করেই সুপারম্যানের সুকন্যাকে ভালো লেগে যায়। সুকন্যা দেখতে অনেক সুন্দর। সুপারম্যানও কম না। সুপারম্যানের ভালো নাম- শাহেদ জামাল। শাহেদ এর প্রিয় কার্টুন সুপারম্যান। তার স্কুল ব্যাগে সুপারম্যান আঁকা। শাহেদ নিজেকে সুপারম্যান মনে করে। কেউ তার নাম জিজ্ঞেস করলে- সে খুব ভাব নিয়ে বলে আমার নাম, সুপারম্যান। সে স্কুলের ভর্তি হবার এক বছর পর একটা কবিতা লিখেছে- কবিতা টা এই রকমঃ

আমি সুপারম্যান হবো, আকাশে উড়বো
সু্কন্যার ছাদে যাবো-সু্কন্যার সাথে খেলবো
সুকন্যার বাবা-মা এলে আমি লাফিয়ে পালিয়ে যাবো,
আমি সুপারম্যান হবো-
রোজি মিসের মাথায় উপর থেকে পানি ঢেলে দিবো-
আমি সুপারম্যান হবো
আকাশের সব ঘুড়ি দাঁত দিয়ে কেটে দিবো-
আমি সুপারম্যান হবো
রফিক চাচার বাড়িতে উপর থেকে মুতে দিবো
আমি সুপারম্যান হবো
সন্ধ্যায় মিলি ম্যাডামের কাছে পড়তে যাবো না-
সুপারম্যান হয়ে আকাশে ভেসে থাকব
আমি সুপারম্যান হবো
রাতে ঘুম না পেলে তারাদের সাথে খেলব
আমার ডায়েরীতে আমার কবিতা
আমি আমার ইচ্ছা মতো লিখব-
আমি সুপারম্যান হবো।


প্রথম ক্লাশ শুরু হলো।
টিচার সুপারম্যানের দিকে তাকিয়ে বললেন- তুমি এই মেয়ের পাশে বসেছো কেন? ছেলেরা এবং মেয়েরা আলাদা বসবে- এটাই এই স্কুলের নিয়ম। সুপারম্যান বলল, টিচার আমি কোনো নিয়মের ধারধারি না, আমার নাম সুপারম্যান। টিচার প্রচন্ড অবাক হয়ে সুপারম্যানের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

অংক ক্লাশে রোজী মিস সুপারম্যানকে বলল, বলতো পৃথিবীর আকার কী রকম? সুপারম্যান বলল, গোলাকার। রোজী মিস আবার প্রশ্ন করলেন, বেশ বেশ। এবার প্রমাণ দাও কী করে বুঝলে যে পৃথিবী গোল। সুপারম্যান এবার উত্তর দিতে পারল না। উত্তর দিয়ে দিল পাশে বসা সুকন্যা। সুপারম্যান খুবই লজ্জা পেল। ছুটির ঘন্টা বাজল। সুকন্যা চলে যাওয়ার সময়, সুপারম্যান ছোট্র একটা চিরকুট তার হাতে দিয়ে দেয়। সুকন্যা চিরকুটটি নিতে খুব লজ্জাবোধ করেছিল। সুপারম্যান বলল- বাসায় গিয়ে পড়বে। সেই চিরকুটে কি লেখা ছিল- আমি এখনও জানতে পারিনি। জানতে পারলে আপনাদের জানাব।

স্কুল ছুটির পর সুকন্যা এবং সুপারম্যান যে যার বাসায় চলে গেল।
সুপারম্যানের মনটা খারাপ হয়ে গেল। এতক্ষন সুকন্যার পাশে বসে থেকে নিজেকে নায়ক নায়ক মনে হচ্ছিল। নায়িকা সুকন্যা। সুপারম্যান অস্থিরবোধ করলো- সুকন্যার জন্য। পরের দিন সুপারম্যান সকাল সাত টায় স্কুলে এসে হাজির। সকালে নাস্তাও করে আসেনি। টিফিন নিয়ে আসতেও ভুলে গেছে। টাই পরেতেও ভুলে গেছে। ক্লাশ শুরু হলো। আজ প্রথম ক্লাশ হচ্ছে রিফাত ম্যাডামের। রিফাত ম্যাডাম ইংরেজী ক্লাশ নেন। ম্যাডাম সুপারম্যানকে বলল- একটা ছড়া শোনাও। সুপারম্যান বলল- আমার নিজের লেখাটা একটা ছড়া বলি। ম্যাডাম অবাক হয়ে বললেন, তুমি নিজে ছাড়া লিখেছো!! বাহ! আচ্ছা, বলো। ছড়া শুনে রিফাত ম্যাডাম 'হা' করে তাকিয়ে থাকলেন। সুপারম্যানের লেখা ছড়াটা এই রকমঃ

I am only Superman
As you can see,
I can laugh ha! ha! ha!
I know so did you.
Life is but a dream.
How I wonder what you are!
Come again another day.
Never show your face again?
Are you Sleeping?
Morning bells are ringing,
Can you tell?


টিফিন টাইমে কেউ কেউ ক্লাশে বসে টিফিন খায় আবার কেউ কেউ দোতলার ছাদে চলে যায়।
সুকন্যা টিফিন হাতে নিয়ে ছাদে যাওয়ার সময় দেখল সুপারম্যান মন খারাপ করে বসে আছে। সুকন্যা এগিয়ে গিয়ে বলল- টিফিন আনোনি? আচ্ছা, এসো আজ আমার টিফিন দু'জন মিলে খেয়ে ফেলি। চলো, ছাদে যাই। সুকন্যা দাঁড়িয়ে টপ টপ করে সিড়ি দিয়ে ছাদে উঠে গেল। কিন্তু সুপারম্যান পারল না। সে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারে না। এই কাজটা করতে সে অনেক ভয় পায়, তাই বসে বসে পা লেছড়ে লেছড়ে ছাদে গেল। সুকন্যা উঠে গেল, সুপারম্যান অনেক সময় নিল। দুইজন মিলে মজা করে টিফিন খেল। আবার নামার সময় সুপারম্যান বসে বসে পা লেছড়ে নামল। সুকন্যা সুন্দরভাবে নামল। টিফিনের পরে দু'টা ক্লাস হয়, তারপর ছুটি। ছুটির সময় সুকন্যা সুপারম্যানকে বলল- তুমি যখন ছাদে যাওয়ার জন্য পা লেছড়ে লেছড়ে উঠছিল- তখন আমি তোমার নুনু দেখে ফেলেছি। এই কথা শুনে সুপারম্যানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

বিকেল চারটায় খুব মন দিয়ে গুল্লু টিভিতে সুপারম্যান কার্টুন দেখছে।
আজকের পর্বটা খুব বেশী দারুন। আজকের পর্বের কাহিনীটা এই রকমঃ সুপারম্যান ক্রিপটন গ্রহে জন্মগ্রহন করে। সে সময় তার নাম ছিল কাল এল। ক্রিপটন ধ্বংস হবার আগ মুহুর্তে তার বাবা তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়। আমেরিকার ক্যানসাস শহরের এক কৃষক ও তার স্ত্রী তাকে খুঁজে পায়। সেখানে সে ক্লার্ক কেন্ট নামে শৃংখলার সাথে বড় হতে থাকে। ছোটবেল থেকেই তার নানান অতিমানবীয় ক্ষমতা দেখা যায় এবং বড় হবার সাথে সাথে সে এ ক্ষমতা দিয়ে মানুষের উপকার করতে থাকে। সুপারম্যান তার ব্যাপক সাফল্যের মাধ্যমে সুপারহিরো সিরিজের এক নতুন ধারা চালু করে। চরিত্রের পোশাকটি বিশেষভাবে স্বতন্ত্র্য: লাল, নীল ও হলুদের মিশ্রণে তৈরি পোশাকটি বুকে ‘S’ ফলকটি ধারণ করে আছে।

শুক্র এবং শনিবার স্কুল বন্ধ থাকে।
দু'টা দিন সুকন্যাকে না দেখে থাকতে হয়। যা সুপারম্যানের জন্য অনেক কষ্টকর। তার ইচ্ছা করে সারাক্ষন সুকন্যার সাথে থাকতে। প্রথম দিন দেখেই সে সুকন্যাকে ভালোবেসে ফেলেছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছে সুকন্যাকে নিয়ে। সুপারম্যান বুঝতে পারে সুকন্যাও তাকে অনেক ভালোবাসে। সেদিন মিলি ম্যাডামের ক্লাশে সুপারম্যান হোমওয়াক করেনি। মিলি মিস অনেক রাগী। মিস সুপারম্যানকে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। সুপারম্যানের কষ্ট দেখে সুকন্যা প্রায় কেঁদেই ফেলেছিল তারপর থেকে সুপারম্যান হোমওয়াক করতে আর ভুলেনি। সে কিছুতেই সুকন্যার চোখের পানি সহ্য করতে পারবে না। এই সুকন্যা পনের বছর পর সুপারম্যানের হাতে একটি চিঠি দেয়। চিঠিটা এই রকমঃ

তোমাকে আমার মন্দ লাগে না একদম।
বরং প্রতিদিন খুব খুব করে তোমার নেশায় মত্ত হই! শিক্ষকের চোখ রাঙানি তুচ্ছ করে আর বন্ধুদের ফিসফাস ভুলে খুউব যত্ন করে তোমার নীল শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেই। তোমার চোখে চোখ রাখি হাত বুলিয়ে তোমাকে ছুঁয়ে দেই কতশতবার। আর। তোমাকে নিয়ে আমার এ যেন এক নতুন সংসার, খুনসুটিময় দিন ভাইবোন বন্ধু আরো কত জন! বিষন্নতার আঁধার কেটে এক একটি জোছনা মাখা রাত। কখনোবা ছুটে যাওয়া আপনজনের অসুস্থতার খবর শুনে আর কখনোবা নতুন চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে ওঠা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:২৭

শোভন শামস বলেছেন: গল্প সুন্দর ভাবে এগিয়ে চলছে +++

২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.