নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
কুমিল্লার চান্দিনা, মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে সহস্রাধিক তাঁতশিল্প রয়েছে।
১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় খাদি কাপড়ের উৎপত্তি হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তৎকালীন কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ড.আখতার হামিদ খান ও তৎকালীন গভর্নর ফিরোজ খান নুনের সহযোগীতায় 'দ্য খাদি এন্ড কটেজ ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন' প্রতিষ্ঠা করেন। কুমিল্লার অভয়াশ্রমে, চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘ, আর নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রমে খাদি বা খদ্দর কাপড় বোনা হতো।
সুতা তৈরি থেকে তাঁতে কাপড় বোনা-
পুরো প্রক্রিয়া হাতে হাতে। খাদি কাপড়ের মূল বৈশিষ্ট্য এটিই। কুমিল্লার খাদি শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও এই শিল্প মূলত কুটির শিল্প। গ্রাম্য বধূরা গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে ফাঁকে চরকায় সুতা কেটে তাঁতীদের কাছে বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পেত। যে বৃদ্ধ লোকটি খেতে খামারে পরিশ্রম করতে পারত না, যে কিশোর- কিশোরী বাইরে শ্রম বিক্রির সুযোগ পেত না তারাও চরকায় সুতা কেটে সংসারে বাড়তি আয়ের সুযোগ পেত। এখন এই শিল্প ধ্বংসের মুখে। খাদি বা খদ্দরের কাপড়ের দাম বেশি। সেই তুলনায় মেশিনের কাপড়ের দাম অনেক কম।
মেশিনের বানানো কাপড়কে অনেক দুষ্ট দোকানদার খাদি বলে চালিয়ে দেয়।
বর্তমানে কুমিল্লার খাদি পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, বিছানার চাদর, গায়ের চাদরসহ ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীতে নজরকাড়া ডিজাইন আনা হয়েছে। এ কাপড় খাদে (গর্তে) বসে তৈরি করা হয় বলে এর নাম দেওয়া হয় ‘খাদি’। খাদি কাপড়ের সঙ্গে এখন কয়েকটি দিক জড়িত রয়েছে। তা হচ্ছে তাঁতি, সুতা কাটুনি, ব্লক কাটার ও রঙের কারিগর। আমাদের দেশে যে খাদি কাপড় তৈরি করা হয় তা তূলনামূলক মোটা সুতা থেকে। এতে ২০-৪০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পাতলা খাদি কাপড় তৈরি করতে হলে বেশি কাউন্টের সুতার প্রয়োজন।
বর্তমানে দেশের প্রায় সব ফ্যাশন হাউজেই কম-বেশি খাদি কাপড়ের পোশাক দেখা যায়।
খ্যাতিমান ডিজাইনার'রা অনেকেই খাদি নিয়ে কাজ করছেন নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে। খাদি কাপড় পরিধানে এটি গরমে কোমল শীতল এবং শীতে গরমের অনুভূতি দেয় তাই এটি শীত এবং গরমে ব্যবহারের জন্য সমান উপযোগী। খাদি কাপড় তৈরি চরকার মাধ্যমে বর্তমানে তেমন দেখা যায় না। বর্তমানে তৈরি করা হয় মেশিনের মাধ্যমে। ফলে খাদি আর আগের মতো মোটা কাপড় না । মেশিনে তৈরি হয় বলে সুতা গুলো আগের চেয়ে চিকন হয় ফলে খাদি কাপড় এখন অনেক পাতলা হয়।
ঢাকাই মসলিনের মতো বিখ্যাত ছিল কুমিল্লার খাদি।
একজন তাঁতি দৈনিক ৬০ গজের মতো কাপড় উৎপাদন করতে পারেন। কুমিল্লা মহানগরীতে বর্তমানে চার শতাধিক খাদি কাপড়ের দোকান রয়েছে। লোকবল আছে ৩ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচটি দোকান ব্যতীত বেশিরভাগ দোকানই মেশিনে তৈরি কাপড় কিনে খাদি বলে বিক্রি করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় খাদি শিল্পের ছিল স্বর্ণযুগ। এর পরপরই আসে সংকটকাল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বস্ত্র কলগুলো তখন বন্ধ। ধনী ব্যবসায়ীরা খাদি না খদ্দর ব্যবসায় নামলে দেশের জন্য ভালো।
কার্পাস তুলা থেকে তৈরি হতো সুতা এবং সেই সুতা ব্যবহার করে চরকায় তৈরি হতো খাদি কাপড়।
উপমহাদেশে খাদি কাপড়ের প্রচলন অনেক আগে থেকেই ছিল। আমাদের সবার উচিত খাদি কাপড় বেশি বেশি ব্যবহার করা। নিজের দেশের সংস্কৃতিকে লালন করা। খাদি আমাদের দেশীয় শিল্প। এর সাথে জড়িয়ে আছে আছে বাঙালীর শত বছরের আবেগ। বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের নিজ দেশীয় এই শিল্প ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত এই শিল্পের প্রতি সুনজর দেয়া।
তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া।
©somewhere in net ltd.