নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের জরিনা

১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩১


ছবিঃ ইন্টারনেট।

বালাসুর বাজারের পেছনে একটা মসজিদ আছে।
আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহলে মসজিদের নাম- 'আল মুকাদ্দেস'। এই মসজিদটি তৈরি করে দিয়েছেন আমার দাদার চাচাতো ভাই। মসজিদ তৈরি করার কারন হলো- আল্লাহ বলেছেন, 'দুনিয়াতে যে মসজিদ বানাবে বেহেশতে আমি তার জন্য ঘর বানাবো'। আমার দাদার চাচা এই জন্য অনেক টাকা খরচ করে মসজিদ বানিয়েছেন। আমি জানি না, আমার দাদার চাচা এখন কোথায় আছেন। বেহেশতে আছেন না দোজকে আছেন। হিসাব অনুযায়ী আমার দাদার চাচা এখন বেহেশত বা দোজকে নাই। কারন, কেয়ামত হবে। হাশরের ময়দানে বিচার হবে। তারপর বেহোশত বা দোজক নির্ধারন হবে।
যাই হোক, এটা ধর্মীয় পোষ্ট নয়। তবে আমার দাদার চাচা যদি মসজিদ না বানিয়ে অসহায় মানুষদের জন্য একটা বাড়ি বানাতেন তাহলে খুব ভালো হতো। কারন, আমাদের এলাকা হলো নদী ভাঙ্গন এলাকা। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি পদ্মা নদী খেয়ে ফেলে। তখন তাঁরা খোলা আকাশের নীচে ঘুমায়।

আল মুকাদ্দেস মসজিদের সামনে একটা বাচ্চা মেয়ে বসে আছে।
সে কাঁদছে। দেখেই বুঝা যায়- অসহায় ও দরিদ্র একটি মেয়ে। আমার দাদা আছরের নামজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন কাদছো কেন গো মা? মেয়েটি কিছু বলে না। শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। মেয়েটির হাতে একটা পোটলা। মেয়েটির বয়স ৬/৭ বছর হবে। দাদা মেয়েটিকে বাড়ি নিয়ে আসেন। সময় তখন ১৯৮৫ সাল। তখনও আমি পৃথিবীতে আসি নি। তবে আসি আসি করছি। যাই হোক, দাদী বললেন, আমার পাঁচ মেয়ে আল্লাহ দিয়েছেন। এখন মেয়ের সংখ্যা হলো ছয়। দাদী বললেন, তোমার কি নাম আমি জানি না। জানতে চাইও না। কোথা থেকে এসেছো তাও জানতে চাই না। আজ থেকে তোমার নাম জরিনা। তুমি আমাদের সাথে থাকবে। কোনো কিছু নিয়েই তোমাকে আর চিন্তা করতে হবে না।

জরিনাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হলো।
জরিনা স্পষ্ট করে বলল, লেখাপড়া ভালো লাগে না। করবো না। আমি ঘরের কাজ করবো। এরপর জরিনা সারাক্ষণ দাদীর সাথে রান্না ঘরে থাকে। দাদীকে রান্নার কাছে সহযোগিতা করে। উঠান ঝাড়ূ দেয়। কল থেকে পানি তুলে দেয়। দেখা গেল জরিনা খুব কর্মঠ মেয়ে। মেয়েটা কোথা থেকে এসেছে, এবং বাবা মায়ের নাম কিছুই বলতে পারেনি। মেয়েটা আমাদের গ্রামের বাড়িতে পাঁচ বছর পার করে ফেলেছে। কেউ তাকে নিতে আসেনি। এমন কি কেউ তার খোজও করেনি। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আমি আব্বার সাথে গ্রামের বাড়িতে যাই। তখন প্রথম জরিনাকে দেখি। জরিনা আমাকে পুকুরে কিভাবে মাছ ধরতে হয় শিখিয়েছে। আর কিছুদিন থাকলে সাঁতারটাও শিখিয়ে দিতো। আমার চোখে বাসে কালো করে একটা মেয়ে। ফ্লক পরা। মাথায় দুটা বেনী। স্বাস্থ্য ভালো।

দেখতে দেখতে জরিনার ২৫ বছর হয়েও গেলো।
একদিন দাদী বললেন, জরিনা আমার শরীরের অবস্থা ভালো না। আমি বেঁচে থাকতেই তোমার বিয়ে দিয়ে যেতে চাই। আব্বা জরিনার জন্য একটা ভালো ছেলে খুঁজে বের করলো। বিয়ের সমস্ত খরচ আব্বা দিলো। গ্রামে ধূমধাম করে বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের পর জরিনা তার স্বামীর সাথে ঢাকা চলে এলো। তার নতুন সংসার জীবন শুরু হলো। জরিনা সব সময় দাদা দাদী থেকে শুরু করে আমাদের পরিবারের সবার খোঁজ খবর রাখতো। একদিন দাদা দাদী মারা গেলেন। জরিনা খবর পেয়ে ছুটে এলো। মাটিতে গড়াগড়ি করে খুব কান্না করলো। এই কিছুদিন আগে আব্বা মারা গেলো জরিনা এসে খুব কান্না করলো। জরিনার স্বামী একটা অফিসের পিয়ন ছিলো। হঠাত তার চাকরী চলে যায়। তখন আব্বা জরিনার স্বামীকে একটা চায়ের দোকান দিয়ে দেয়। পিয়নের চাকরিটাও আব্বাই দিয়েছিলো। পল্টন তার চায়ের দোকান। আমি মাঝে মাঝে সেই চায়ের দোকানে যাই।

জরিনার বর্তমান অবস্থা এই রকমঃ
জরিনা ঢাকা শান্তিনগর থাকে। তার স্বামী চায়ের দোকান থেকে বেশ ভালৈ ইনকাম করছে। তাদের তিন কন্যা। তিনজনই স্কুলে পড়ছে। জরিনার বড় মেয়ে ক্লাশ নাইনে পড়ছে। জরিনা আর্থিক সমস্যায় পড়লে আমাদের বাসা আছে। আমার মা যা পারে দিয়ে দেয়। করোনার সময় মা জরিনাকে ডেকে কিছু সাহায্য করেছিলো। আমাদের বাসায় যখন কোনো অনুষ্ঠান হয়, জরিনা চলে আসে। রান্না বান্নায় সে সাহায্য করে। জরিনার সাথে আমার পারিবারিক অনুষ্ঠানে প্রায়ই দেখা হয়। কিন্তু কথা হয় না। কয়েকদিন আগে পরীর জন্মদিনে জরিনা এসেছিলো। আমি বললাম, কেমন আছো? কি খবর? জরিনা বলল, আপনাদের দোয়ায় স্বামী সন্তান দিয়ে খুব ভালো আছি। দোয়া করবেন ভাই। প্রতি ঈদে আমি জরিনাকে একটা শাড়ি দেই। গত দুই বছর জরিনাকে কিছুই দেওয়া হয়নি।

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার দাদা, দাদী এবং আপনারা অনেক ভালো কাজ করেছেন।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ভালো থাকুন।

২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



জরিনার কষ্টকর শিশুকাল হয়তো তার পড়ালেখার মনকে নষ্ট করে দিয়েছিলো।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১০

রাজীব নুর বলেছেন: আমারও তাই ধারনা।

৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১০

ঈশান মাহমুদ বলেছেন: জরিনাদের জীবন সাধারনত খুব দুঃখ কষ্টের এবং বিয়োগান্তক হয়। এই জরিনা ভালো আছে জেনে ভালো লাগলো। তার জন্য শুভ কামনা। :)

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

৪| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৫

ইমরোজ৭৫ বলেছেন: এই পৃথিবীতে ধর্রীয় প্রতিষ্ঠান থাকা জরুরী। তা নাহলে যাও অল্প সল্প মানবতা আছে সেটাও ওঠে যাবে।
আর জরিনা কে দত্তক নিয়ে তাকে মানুষের মত মানুষ করেছেন। সেটাও কম কথা না। কারণ ইসলামে আছে মানুষ মরার পর তার আমলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের দরজা খুলা থাকে। যতাঃ
০১। নেক সন্তান রাখলে যে কিনা তার জন্য দোয়া করবে।
০২। মসজিদ, মাদ্রাসা বানিয়ে দিয়ে গেলে।
০৩। যাতায়াতের জন্য রাস্তা দিলে।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী হুজুর আসসালামু আলাইকুম।

৫| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মসজিদের বিনিময়ে আল্লাহ যে ঘর বানিয়ে দিবেন সেটা কি মসজিদের সমান হবে না কি বড় ছোট হবে।মসজিদ বানিয়ে সে যদি খারাপ কাজ করে দোজখে যায় তবে সে ঘরে কে থাকবে।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: চিন্তায় ফেলে দিলেন।

৬| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: তবে আমার দাদার চাচা যদি মসজিদ না বানিয়ে অসহায় মানুষদের জন্য একটা বাড়ি বানাতেন তাহলে খুব ভালো হতো। কারন, আমাদের এলাকা হলো নদী ভাঙ্গন এলাকা। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি পদ্মা নদী খেয়ে ফেলে। তখন তাঁরা খোলা আকাশের নীচে ঘুমায়।
আপনি কেনো এই কাজটি করছেন না।
গুচ্ছগ্রামের মতো করে করে দিতে পারেন। আপনার সেই সাধ্য আছে।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: গুচ্ছগ্রাম সাধারণ মানুষ করতে পারে না। গ্রুচ্ছগ্রাম করার অধিকার শুধু সরকারের আছে।
আমার ব্যাংকে কোনো টাকা নাই। প্রতিটা একাউন্ট শূণ্য।

৭| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩১

ইসিয়াক বলেছেন: অসহায় একটা মেয়ে ভালো আছে জেনে ভালো লাগলো। পৃথিবীতে সকল প্রানী ভালো থাকুক।

কুষ্টিয়া গিয়েছিলাম আজ। লালন শাহর মাজার,রবীন্দ্রনাথের কুঠি বাড়ি, মীর মোশাররফের জন্ম ভিটা,গড়াই নদী, মোহিনী মিল সহ আরও অনেক কিছু দেখলাম সারাদিন ধরে । অনেক অনেক ছবি তুললাম।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভেরি গুড।
এখন একটা ছবি ব্লগ পোষ্ট দেন।

৮| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১২

বিটপি বলেছেন: আপনি ধর্ম মানেন না ভালো কথা, আল্লাহ্‌র নাম দিয়ে আজেবাজে কথা বলেন কেন? আল্লাহ কোন সূরার কত নং আয়াতে বলেছেন যে মসজিদ বানালে বেহেস্তে ঘর নির্মাণ করে দেবে?

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো কথা বলেছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হয়েছিলাম ঝিল মসজিদের দিকে। তখন দেয়ালে এই লেখা দেখেছি।

৯| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৫৬

কানিজ রিনা বলেছেন: আপনাকি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, আপনার দাদার চাচা শুধু মসজিদ বানিয়েছেন। আপনার দাদার চাচা সেই সময় যদি মসজিদ বানাতে পারেন, তাহলে অসহায় বিধবা এতিমদের পাশে দাঁড়ায় নাই, এ কথা কি আপনি হলফ করে বলতে পারেন? আর তখনকার ৯০ পারসেন্ট মানুষই সৎ ছিলেন।
এখন যেমন ৯০ পারসেন্ট মানুষই অসৎ।
এখনকার অসৎ মানুষ গুলা সারা জীবন অসৎ গিরি করে এসে শেষ সময় হয যাকাত দান দিয়েন করে। তখনকার মান

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১২

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই অসৎ। বদ। ভন্ড। মিথ্যাবাদী।

১০| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৫৬

কানিজ রিনা বলেছেন: আপনাকি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, আপনার দাদার চাচা শুধু মসজিদ বানিয়েছেন। আপনার দাদার চাচা সেই সময় যদি মসজিদ বানাতে পারেন, তাহলে অসহায় বিধবা এতিমদের পাশে দাঁড়ায় নাই, এ কথা কি আপনি হলফ করে বলতে পারেন? আর তখনকার ৯০ পারসেন্ট মানুষই সৎ ছিলেন।
এখন যেমন ৯০ পারসেন্ট মানুষই অসৎ।
এখনকার অসৎ মানুষ গুলা সারা জীবন অসৎ গিরি করে এসে শেষ সময় হয যাকাত দান দিয়েন করে। তখনকার মান

১১| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০৩

রানার ব্লগ বলেছেন: জরিনা কে বাসায় স্থান দিয়ে ভালো কাজই করেছেন আপনার দাদা। অসহায় একজন মানুষ কে মাথা গোজার ঠাই ও নিশ্চিত অবলম্বনের ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: সরকারের দায়িত্ব সাধারণ মানুষ পালন করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.