নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
দৃশ্যটা আমি কখনও ভুলতে পারবো না!
নীলা বৃষ্টির মধ্যেই হেটে চলেছে। কফি হাউজের জানালা দিয়ে দেখলাম- বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে। পুরো পান্থপথে পানি জমে গেছে। আমি আর নীলা যখন কফি হাউজে বসলাম তখন ঝলমলে রোদ ছিলো! আমি সুযোগ খুজছি লোকোজনের আড়ালে কখন নীলার হাত ধরবো। সুযোগ পেলে একটা চুমু খাবো। কিন্তু হঠাত আকাশ কালো হতে শুরু করলো। ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো। দেখতে দেখতে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টিতে পড়তে শুরু করলো। এরকম পরিবেশে একটা সহজ সরল সুন্দর মেয়ে আমার পাশে। তার হাত ধরতে ইচ্ছা করবে না? তাকে চুমু খেতে ইচ্ছা করবে না? আরেহ ভাই আমি তো মানুষ। রক্ত মাংসের মানুষ। কিন্তু নীলা এই বৃষ্টির মধ্যে রাগ করে চলে গেলো কেন? আমার জায়গায় রবীন্দ্রনাথ থাকলেও চুমু খেতে চাইতো নিশ্চয়ই।
সুন্দর দুজন মিলে গল্প করছিলাম।
নীলা সাধারণত শাড়ি পড়ে না। কিন্তু যেদিন আমার সাথে দেখা করার কথা থাকে সেদিন সে শাড়ি পড়ে। নীলা জানে আমি নীলাকে শাড়িতে দেখতেই বেশি পছন্দ করি। শাড়িতে নীলাকে অপূর্ব দেখায়। একদম দেবী সরস্বতীর মতো। আমার ইচ্ছা করে সরস্বতী পূজোর সময় মাটির সরস্বতীকে সরিয়ে জীবন্ত নীলাকে বসিয়ে দেই। নীলাকে বললাম, দেখো সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে! তোমাকে কি একটা চুমু খেতে পারি? নীলা বলল, না। এখনও সময় হয়নি। অর্থ্যাত নীলা হয়তো সুন্দর কোনো সময়ের অপেক্ষায় থাকতে বলল। সেই সময়টা কবে? নীলা বলল, চলো আমরা সমুদ্র থেকে ঘুরে আসি। নীলা কি চাচ্ছে সমুদ্রের পাড়ে বসে তাকে চুমু দেই। আমার আর তর সইছে না। পারলে রাতের ট্রেনে করে চলে যাই সমুদ্রে। তারপর জমবে মজা!
অথচ নীলা হুট করে উঠে চলে গেলো।
বাইরে বৃষ্টি! কেনে নীলা রেগে গেলো হঠাত? এখন সে সিনএনজি বা বাস পাবে না। বৃষ্টি হলে ঢাকা শহরে গজব অবস্থা হয়। বাড়ি ফিরবে কি করে নীলা? কথা ছিলো আমি নীলাকে বাড়ি পৌঁছে দিবো। সব সময়ই দেই। আমি জানালা দিয়ে দেখলাম- নীলা শাড়ি হাটু পর্যন্ত উঠিয়ে হেটে হেঁটে চলে যাচ্ছে। হাঁটার ভঙ্গি এক আকাশ বিষন্নতায় ভরা! বৃষ্টিতে সে অনেকখানি ভিজে গেছে। শাড়ি লেপটে আছে শরীরের সাথে। সাদা ব্লাউজ ভেদ করে ব্রা দেখা যাচ্ছে! এই দৃশ্যটা আমি কোনোদিন ভুলবো না। আমি বোকার মতো হা করে তাকিয়ে থাকলাম। নীলা পান্থপথের মোড়ে যেতেই একটা সাদা গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে কেউ একজন নীলাকে তুলে নিলো। এই গাড়িটা কার? নিশ্চয়ই সুমন চৌধুরীর? সুমন ক্যাম্পাসে এই গাড়িটা নিয়েই মাঝে মাঝে আসতো।
তিন দিন পর ক্যাম্পাসে নীলার সাথে দেখা।
নীলা খুব সহজ ভাবে বলল, তোমার দুটা বই আছে আমার কাছে। আমি তোমার কাছে পাঠিয়ে দিবো। বলেই নীলা চলে গেলো। অর্থ্যাত সে আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না। আমার খুব রাগ হলো। মনে মনে দুটা কুৎসিত গালি দিলাম নীলাকে। এরপর নীলার সাথে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। দেখা হয়নি। পেরিয়ে গেলো দীর্ঘ বারো বছর। আমি জেনেছি নীলার বিয়ে হয়ে গেছে। সে তার স্বামীর সাথে লন্ডনে থাকে। এবং সেই বিয়ে টিকেনি। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে চার বছর পর। নীলা এখন ঢাকাতেই থাকে। কাটাবন এজি অফিসে চাকরী করছে। আমিও বসে থাকিনি। বিয়ে করে ফেলেছি। আমার বউ খুবই ভাল মেয়ে। সে রবীন্দ্র সংগীর ভাল গায়। আমাদের দুটা ছেলেমেয়ে। বেশ সুখের সংসার আমার।
মিথ্যা বলব না, নীলার কথা আমার অসংখ্য বার মনে পড়েছে।
আমি যে মেয়েটাকে বিয়ে করি সেই মেয়েটার নামও নীলা। নীলা যখন রাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে- তখনও আমার নীলার কথা মনে পড়ে। আর মনে পড়ে বিশেষ করে সেই দৃশ্যটা! বৃষ্টির মধ্যে নীলার হেঁটে চলে যাওয়া। একটা সাদা গাড়িতে উঠা। এই জীবনে আর এই দৃশ্যটা থেকে মুক্তি পাবো না। দীর্ঘ বারো বছর পার হয়ে গেছে। নীলা একবারও আমার সাথে দেখা করেনি। আমাকে ফোন দেয়নি। আমিও দেখা করিনি। ফোন দেইনি। অথচ কথা ছিলো আমি নীলাকে বিয়ে করবো। আমাদের দুটা ছেলেমেয়ে হবে। ছেলের নাম রাখবো টাপুর আর মেয়ের নাম রাখবো টুপুর। হলো না। কিচ্ছু হলো না। এজন্য নীলাই দায়ী।
একদিন আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলাম।
কিচ্ছু ভাল লাগছিলো না। কি করবো? কোথায় যাবো জানি না। আমি চলে এলাম নিউমার্কেট এলাকায়। আকাশের অবস্থা ভাল না। মেঘ জমতে শুরু করেছে। অথচ আমি বাসায় ফিরে যাবার তাড়া অনুভব করছি না। ঠিক তখনই আমি নীলাকে দেখলাম। একদম আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আচমকা বুকে একটা পাথরের ধাক্কা লাগলো। সুন্দর একটা ছাপা শাড়ি পরা। চোখে কাজল। মাথা ভরতি চুল। কপালে টিপ। নীলার বয়স বাড়েনি। সেই আগের মতোই আছে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি! নীলাই প্রথম কথা বলল- কেমন আছো শাহেদ? শাহদ জামাল! আমার মনে পড়লো বারো বছর আগের কথা। সমুদ্র দেখতে যাওয়ার কথা বলেছিলো। তারপর নীলা রাগ করে চলে গিয়েছিলো। এরপর সব সাদা। প্রতিটা পৃষ্ঠা সাদা। আর কিচ্ছু নেই।
আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম।
বাইরে সমানে বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে! বললাম, নীলা সেদিন তুমি কেন রাগ করে হঠাত চলে গেলে? নীলা বলল- পুরনো কথা বাদ দাও। আমি বললাম, না। তুমি বলো। আমি শুনতে চাই। নীলা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল- সেদিন আমি বলেছিলাম- চলো আমরা সমুদ্রে বেড়াতে যাই। আর তুমি সাথে সাথে রাজী হয়ে গেলো। একবারও আমায় মানা করলে না। অথচ তোমার বলা উচিৎ ছিলো- না এখন যাবো না। বিয়ের পর যাবো। আমি কি সস্তা মেয়ে? তুমি আমাকে সমুদ্রে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে আমাকে ভোগ করবে? এই জন্যই রাগ করে চলে গিয়েছিলাম। শাহেদ আমি বিশ্বাস করতাম তুমি অন্যদের মতোন না। তুমি আলাদা। অথচ আমি সমুদ্রের কথা বলতেই তোমার চোখে লোভ দেখেছিলাম। এই লোভ আমায় ভীষন কষ্ট দিয়েছে।
সেই বারো বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ।
বাইরে তুমুল বৃষ্টি! রাস্তায় পানি জমে গেছে। নীলা হেটে যাচ্ছে, হাটু পর্যন্ত শাড়ি উঁচু করে। সে অনেকখানি ভিজে গেছে। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি। হ্যাঁ আমি লোভী। কেন আমি নীলাকে বিয়ের আগেই সমুদ্রে নিয়ে যেতে রাজী হয়েছিলাম। বিয়ের পর কি সমুদ্রে যাওয়া যেতো না? বিয়ের পর কি সমুদ্রে গিয়ে নীলার সাথে যা খুশি তা করা যেতো না। নীলা আমাকে ভালোবেসেছিলো, বিশ্বাস করেছিলো। অথচ আমি তাঁরা ভালোবাসার মর্যাদা রাখিনি। তার বিশ্বাসের দাম দেইনি। বরং সুযোগ নিতে চেয়েছিলাম। আমি কি বোকা। এতদিন আমি নীলার উপর রেগে ছিলাম। নীলা না বললে, আমি আমার দোষটা আজও খুঁজে পেতাম না। নীলা ভাল থাকুক। সুস্থ থাকুক। আমি আমৃত্যু নীলাকে ভালোবেসে যাবো গোপনে।
২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: এরকম কিছু দৃশ্য কি আপনার আছে?
২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
বৃষ্টির দিনে সাদা ব্লাউজ পড়লে বিব্রতকর পরিস্থিতি ঘটে যদিও। তবে কারো কারো মনে দারুণ স্মৃতি হয়ে মগজে রয়ে যায়।
বেশ কিছু চমৎকার দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে।
ইসিয়াক বলেছেন , যা ভুলবার নয়।
ভেজা ব্লাউজের ভেতর ব্রেসিয়ারের রং এই প্রেমিককে আন্দোলিত করবে আমরণ।
লেখায় ভালো লাগা।
২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: গল্পটা মন দিয়েই পড়েছেন। ধন্যবাদ জানবেন।
ইসিয়াক একসময় দুষ্টদের পাল্লায় পড়ে গিয়েছিলো। সে আমাকে নিয়ে অন্যদের সাথে মিশে কুৎসিত হাসি দিয়েছিলো।
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩০
শেরজা তপন বলেছেন: এইতো আমাদের শাহেদ জামাল ফিরে এসেছে! বেশ
২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
গল্পটা কেমন হয়েছে?
৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৩৬
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
মানুষ তার জীবনের
ভুলগুলো তখন বুঝতে পারে
যখন একটি ভুলের কারণে
জীবন থেকে তার অনেক
কিছু চিরতরে হারিয়ে যায় ।
যাহোক, আসল নীলা হারিয়ে
পদ্মনীলা নিয়ে জীবন বেশ ভাল
কাটছে জেনে খুশী হলাম ।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: প্রেম ভালোবাসা শেষমেশ মানুষের জীবনে একটা দাগ হয়ে থেকে যায় আমৃত্যু।
৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:৪৩
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: গল্পটা ভালো লেগেছে।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
৬| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:০৩
সোনাগাজী বলেছেন:
বাংগালী অনেক মেয়ের বিয়ে ভেংগেছে ইউরোপে ও আমেরিকায়
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: বিয়ে ভাঙছে বাংলাদেশেও। নারী যত স্বাধীন হবে, বিয়ে তত ভাঙ্গবে।
৭| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
পোস্টে ফিরে এলাম জানাতে যে, এই পোষ্টে অনেক মন্তব্য হতে পারতো আপনার এই লেখার মানদন্ডে।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার সাথে একমত।
সহজ সরল সুন্দর একটা গল্প। অথচ পাঠক নেই। আবার যদি ধর্মীয় পোষ্ট দিতাম মন্তব্যের তুফান ছুটতো।
৮| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
লেখক বলেছেন:
আবার যদি ধর্মীয় পোষ্ট দিতাম মন্তব্যের তুফান ছুটতো।
দেখুন আপনি কোন রাজীব নূর হতে চান।
একটি প্রেম অথবা বিচ্ছেদের গল্প এর মত রাজীব নূর আমার কাম্য।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা--
অনেক প্রতিভা নিয়েই জন্মেছিলাম। কিন্তু কিচ্ছু হলো না।
৯| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৩৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
লিখতে থাকুন ভাই লিখতে থাকুন।
পৃথিবীতে প্রতিভা বলে কিছুই নেই , সবই সফলতার অন্তরালে .....
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ ঠিক আছে।
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:২৭
ইসিয়াক বলেছেন:
কিছু দৃশ্য চিরকালের জন্য মনে গেঁথে যায়। যা ভুলবার নয়।