নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজু আহমেদ ।
ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসা।
আজ আমার বারবার মনে পড়ছে ইতিহাসবিদ জর্জ বানার্ডশ এর বিখ্যাত উক্তি “ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল ইতিহাস থেকে মানুষ শিক্ষা গ্রহন করে না”।আজ আমি খুবই হতাশ ।আমি আমাদের আচরণ নিয়ে শঙ্কিত।।আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ একটি আদর্শিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল দেশ। এ মতের সাথে যারা বিরুদ্ধাচারন করবে তারা জ্ঞানান্ধ।কিন্তু এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আমেজ রক্ষা করতে গিয়ে আমরা যারা আমাদের ইসলাম ধর্মের তাহযীব-তামুদ্দুন বিকিয়ে দিচ্ছি তারা মুসলিম জাতীর মধ্য থেকে কুলাঙ্গার।এদের দ্বারা ধর্মের যদি কোন উপকার হয় তার চেয়ে ক্ষতি হয় হাজার গুন বেশি।এরা মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত ঘৃনিত হারাম পানীয় মদের মত,যাহা সেবনে উপকার কিছু হয় ঠিক কিন্তু ক্ষতির তুলনায় উপকার অতিশয় সামান্য। আমরা সেই জাতির সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য পাগল হয়ে গেছি যারা মুসলমানদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য,প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সর্ববস্থায়ই শত্রু।যারা মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরীফ নিষিদ্ধ করার দাবিতে আপিল করে,পদদলিত করে,ছিঁড়ে এবং পোড়ায়।তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য আজ আমরা পাগলপারা,যে জনগোষ্ঠী মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবের অংশ পশু কোরবানী দেয়া নিষিদ্ধ করে।আমরা সেই তাদের অনুষ্ঠানে চাঁদা দিতে মোটেও কার্পন্য করি না।কি নির্লজ্জ আমরা!অনেক (নামদারী )মুসলমানে আবার একথা বলে গর্ববোধ করে,দেখছ আমাদের উদারনীতি!আমরা কত মহৎ!আমি এ শ্রেনীর লোকেরা সাথে কোন কালেই একমত নই যারা নিজেকে,নিজের ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করে অপরের উপকার করিতে সিদ্ধহস্ত।আর যারা এ পথ অনুসরন করে তারা ধর্মান্ধ।আমাদের সাথে হিন্দুদের সাথে ঠিক ততোটা সম্পর্ক রাখতে হবে যেমনভাবে আমরা আমাদের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য সম্পর্ক রাখি বাথরুমের সাথে।আমি তখন ভাষা হারিয়ে ফেলি যখন দেখি আমাদের ভোটে নিবার্চিত সরকার,আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব বিলিয়ে দিয়ে হিন্দুদের মন খুশি রাখতে চেষ্টা করে।আবার মূখে বলে,এটা করি আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য।ও মানুষ!ধিক্কার তোমাদের উপর,তোমাদের নীতি বিবর্জিত চিন্তা চেতনার উপর।তোমরা কি মুসলমানদের সোনালী দিনের ইতিহাস ভূলে গেছ?স্পেন বিজয়ীবীর তারেক বিন যিয়াদের জীবনী,স্পেন বিজয়ের কাহীনি আরেকবার পড়!তারা কি অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক রাখতে গিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিয়েছিল?কিন্তু আজ আমরা কোন অবস্থায় এসে পৌছলাম,যে তাদের খুশিতে নিজেদের কোরবান করে দিতে প্রস্তুত।এ থেকে উত্তোলনের পথ আমরা কেন খুঁজি না।অথচ একটু সচেতনতাই সকল প্রকার সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দিয়ে সহজ সরল ও সাবলীল জীবন যাপনে সাহায্য করতে পারে।
মুসলমানদের পেশার ধরণ : যে সকল মুসলমানরা জীবিকার তাগিদে দিনমজুরের কাজ করেন তাদের বেশির ভাগের ক্ষেত্রে দেখা যায়,তারা সমাজের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়।এরকম কিছু কঠিন কাজ হল মাটি কাটা,রিকশা চালানো অথবা কুলির কাজ করা।এ সকল কাজে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম কিন্তু মজুরি অনেক কম।অথচ হিন্দুরা তাদের পেশা হিসেবে বেছে নেয় ধোঁপা,নাপিত অথবা মুচির মত সহজসাধ্য কাজ গুলোকে ।যে কাজ গুলো অত্যন্ত আরাম দায়ক ভাবে সম্পন্ন করা যায় এবং সন্তোসজনক মজুরী পাওয়া যায়।পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,একজন কঠোর পরিশ্রমী মুসলমান হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দৈনিক যেখানে মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় করে সেখানে সল্প পরিশ্রমে একজন ধোঁপা অথবা নাপিত দৈনিক ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা রোজগার করে।
পেশার মর্যদাগত দিক : অনেকে মনে করেন ধোঁপা,নাপিত অথবা মুচির পেশা সমাজের সবচেয়ে জগন্যতম পেশা ।ইতিহাস জানা থাকা সত্যিকারাথের কোন মুসলমান এটা মনে করতে পারে না।এসকল পেশার মানুষকে নিম্ন শ্রেনীর মানুষ এবং তাদের পেশাকে নিম্নমানের পেশা তো কেবল হিন্দুরাই মনে করতে পারে।তবে কি আমরাও হিন্দুদের অনুসারী হওয়ার পথে?পেশাগত বৈষম্য হিন্দুদের ছড়ানো একটা কুসংস্কার মাত্র ।এই কুসংস্কারকে কোন রকম বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া আমরা এত সহজেই মেনে নিলাম?অথচ আমাদের নবীগন কোন পেশাকে তাদের জীবিকা নির্বাহের পাথেয় হিসেবে গ্রহন করেছিলেন তা একটি বারের জন্যও কি আমরা স্মরণ করব না।যুগশ্রেষ্ঠ দার্শনিক হযরত কায়েদ ছাহেব (রহঃ) বলেছিলেন “ওরে মুসলমানের ছেলে কাজ করিলে মান যাবে তোর কোন হাদিসে পেলে”।
হিন্দুদের দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করানোর অপকারিতা : আমরা সকলেই নামাজী মুসলমান ।আমরা আমাদের উত্তম জামা-কাপড় পরিধান করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি।কিন্তু সে কাপড়গুলোকে আমরা যখন হিন্দুদের দিয়ে ইস্ত্রি করাই তখন সেটা কতটা পরিশুদ্ধ থাকে সেটা নতুন করে ভেবে দেখার বিষয়।কারন ধোঁপার শরীরের ঘাম ঐ কাপড়ের উপর অনবরত পরতে থাকে।যে হিন্দু ধোঁপা সৃষ্টিগত ভাবেই মলমূত্র ত্যাগের পর উত্তমভাবে তার হাত পরিস্কার না করেই সে হাত দিয়ে আমাদের জামা-কাপড়গুলি ইস্ত্রি করার জন্য ধরা-ধরি করে,সে কাপড়টা অপবিত্র না হলেও অন্তত একজন রুচিশীল মানুষ হিসেবে কতটা রুচি হওয়া উচিত এবং সেই কাপড় পরিধান করে নামাজের মত মহাপবিত্র ইবাদত করা কতটা যুক্তিপূর্ন,সেটা আবার নতুন করে ভেবে দেখি ?
আমার অভিজ্ঞতামূলক দৃষ্টান্ত : আমি এমন একজন ধোঁপাকে চিনি,যিনি আমাদের এখানে অনেক দিন আগ থেকে আমাদের জামা কাপড় ইস্ত্রি করে আসছে।এতদিন তার কাছ থেকে আমি আমার জামা কাপড়গুলো ইস্ত্রি করাতাম।তার বিরুদ্ধে সব সময়েই কোন না কোন বিষয়ে অভিযোগ থাকত।আমি কখনো এগুলো কানে তুলতাম না।ধোঁপা সকালে এসে কাপড় নিয়ে গিয়ে ইস্ত্রি করে রাখত ।আমি পরববর্তীতে আমার প্রয়োজন মত গিয়ে নিয়ে আসতাম।কখনো ইস্ত্রি করার সময় ধোঁপার রুমে থাকার প্রয়োজন হয়নি।সেদিন বিশেষ প্রয়োজনে আমি তিনটা জামা নিয়ে তার কাছে গেলাম।কিন্ত হয়!হায়!একি! সময়টা দুপুরের দিকে হওয়ার কারনে সে পর্যাপ্ত ঘর্মাক্ত ছিল।যেইনা আমার জামাগুলো ইস্ত্রি করা শুরু করল, তার শরীরের ঘামগুলো আমার সদ্য পরিস্কার করা জামাগুলো অপরিস্কার করে দিল।আমি তার ঘামকে পবিত্র কিংবা অপবিত্র বলব না তবে আমার রুচি তার কাছে আর দ্বিতীয় বার আমাকে নিতে পারবে না।সেটা হতে পারে অনেক প্রয়োজন,তারপরেও না।
আমাদের করণীয় :একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ব্রত হওয়া উচিত আরেকজন মুসলমানের উপকার করা।সেটা যে মাধ্যমে হোক।আমরা আমাদের কাপড় ইস্ত্রি,চুল কাটানো,জুতা সেলাই করানো সহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো কোন মুসলমান ভাইয়ের দ্বারা করানোর চেষ্টা করব।আমর একটা পয়সা দিয়ে আল্লাহ কোন মুসলমান ভাইয়ের সামান্যতম উপকার করান,সেটা আমার জন্য সৌভাগ্য ।অতএব আমাদের একটু প্রচেষ্টা এবং সচেতনতা একটা বিশেষ খেদমতের আঞ্জাম দিতে পারে।তাই আমাদের জামা কাপড়গুলো অন্তত সপ্তাহের শেষের দিন কোন মুসলমান ভাইয়ের পবিত্র হাত দিয়ে ইস্ত্রি করানোর সৌভাগ্য অর্জণ এবং নামাজের মত মহৎ এবাদত অত্যন্ত তৃপ্তির সাথে পবিত্র জামা-কাপড় পরিধান করে আদায় করার জন্য সচেষ্ট হই।
©somewhere in net ltd.