নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসা
নিরব নিস্তব্ধ চারিদিক । আধাঁর আলোকে গিলে ফেলেছে তাও ঘন্টা সাতেক হল । ক্রমান্বয়ে আলো কাছাকাছি হওয়ার পথে । ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসার কোন ছাত্র কিবা শিক্ষক কেউ কোথাও বোধ করি জেগে নেই । দূর থেকে প্রহরীর বাঁশির আওয়াজ আঁধার আর বাতাসে মিলিয়ে মিলিয়ে ভেসে আসছে । শব্দের আওয়াজ খুব ক্ষীণ হলেও রাতের নিস্তব্ধতায় এই শব্দ মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙানেরা জন্য যথেষ্ট । আজ আমিও এমন এক পরিস্থিতির শিকার । কেমন করে জানি আমারও রাতের এই দ্বিপ্রহরে ঘুম ভেঙে গেল । অনেক চেষ্টা করেও নতুন করে আর চোখের দুই পাতাকে এক করতে পারলাম না । ভাবলাম গভীর রাতের বাহিরের পরিবেশ দেখে আসি । যেই ভাবা সেই কাজ । ঘুরতে ঘুরতে এক সময় এসে থামলাম আমাদের ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রসার প্রধান মুফাসসির আলহাজ্ব হযরত মাওলানা লুৎফর রহমান (যশোরী)হুজুরের রুমের সামনে । আমি থামতে চাইনি কিন্তু এত রাত্রেও হুজুরের রুমে বাতি জ্বলতে দেখে আমি আর সামনে এগুতে পারলাম না । আমি অত্যন্ত কৌতূহলী হয়ে উঠলাম হুজুর এখনো কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন সেটা দেখার জন্য । আমি নিস্তব্ধতার মধ্যে দেখতে লাগলাম জ্ঞানপিপাসু এক ব্যক্তি চোখে রাজ্যের সব ঘুমকে জয় করে মৃদু আলোতে বই নিয়ে বসে আছেন । আবার মাঝে মাঝে কম্পিউটারের সামনে বসে ই-লাইব্রেরীর ভিতরে গভীর জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে নিমগ্ন । সময়ের প্রতি যেন কোন খেয়াল নেই । মাথার উপরে লটকানো দেয়াল ঘড়িটা আপন মনে টিক-টিক করে বয়েই চলছে। শুধু খেয়াল আগামী কালের ক্লাশে ছাত্রদের কিভাবে নতুন কোন বিষয়ে জানানো যায় । বিভিন্ন জটিল বিষয়গুলোকে সহজ করে ছাত্রদের সামনে কিভাবে উপস্থাপন করা যায় । সমাজে এমন কিছু মানুষের জন্ম হয় যারা কারো কাছ থেকে কিছু নেয়ার জন্য কখনো হাত পেতে থাকে না । তাদের সারা জীবনের লক্ষ্যই থাকে অন্যকে দেয়ার । যারা কারো কাছে ঋণী থাকে না , অন্যকে ঋণী বানায় । যারা আপন ঔরশজাত সন্তানকে যে চোখে দেখে ছাত্রদেরকেও ঠিক সেই চোখে দেখে । আপন সন্তানের ভাল-মন্দ নিয়ে যেরকম চিন্তা করে তার ছাত্রদেরকে নিয়ে তার ব্যতিক্রম কিছু চিন্তা করে না । এই সব ভাবনার ফাঁকে আমার চিন্তার আকাশে উঁকি দিল একখানি কালো মেঘ । আমাদের এই প্রাণের মানুষটি আগামী ২২ শে জুন আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন ছারছীনা দারুস সুন্নাহ আলিয়া মাদ্রাসায় । আমরা বঞ্চিত হব তার আলোক বর্তিকাময় জ্ঞানগর্ভ,সারগর্ভ আলোচনা থেকে । হুজুর মূলত ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসার প্রধান মুফাসসির হিসেবে থাকলেও আরবী ভাষাজ্ঞান,ব্যাকরণগত জ্ঞান,সাহিত্যগত জ্ঞানের কোনদিক থেকে যে পিছিয়ে ছিলেন তা আমার মত অ-জ্ঞানী ছাত্রের কোন যুগেই উদঘাটন করা সম্ভব হবে না । হুজুর বতর্মান গতিশীল সময়ের মানুষ না হলেও আধুনিক সকল বিষয়ে অগাধ জ্ঞান রাখতেন । আমরা তার বিজ্ঞানপূর্ণ আলোচনা শুনে “থ” হয়ে যেতাম । আমরা এ যুগের ছেলেপুলে হয়েও কম্পিউটারের নানা বিষয়ের সমস্যার সমাধান জানতে তার কাছে যেতাম । হুজুর যেমনিভাবে পরকালীন বিষয়াবলীর জ্ঞান রাখতেন ঠিক তেমনিভাবে দুনিয়াবী বিষয়েরও জ্ঞান রাখতেন । এই যাবতীয় জ্ঞানের সাথে কুরআন হাদীসের গভীর জ্ঞানের ধারক বাহক ছিলেন তিনি । হযরত যখন ছাত্রদের সাথে দূবোর্ধ্য কোন বিষয়ের আলোচনা করতেন তথন ক্লাসের সবচেয়ে দূবর্ল ছাত্রটিও সবল ছাত্রে রূপ নিত । আমি আমার ছোট্ট ছাত্রজীবনের পরিসরে আমার প্রিয় শিক্ষকের আসরে তাকে প্রধাণ করেছি । আমার প্রায়ই মনে হয় আমি তার ছাত্র হওয়ার যোগ্যতা রাখি না । কেননা হযরতের অধিকাংশ ছাত্ররাই বাংলাদেশের নামকরা আলেম,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং উচ্চ শিক্ষায় গবেষণারত । তার মধ্য থেকে আমার মত বোকা কোন সাহসে তার ছাত্রত্ব দাবী করি ? হুজুর ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসায় যতদিন ছিলেন আমাকে খুব স্নেহ করতেন । হুজুরের সাথে বিকাল বেলায় প্রায়ঃশই হাটতে বের হতাম । শিক্ষকের মোড়কে যে মানুষ মানুষকে বন্ধু বানাতে পারে তা হুজুরের সাথে যারা না চলেছে তারা কিরূপে বুঝবে ! ২০১১ ঈসায়ী সালের শেষ দিকে হুজুরের সাথে আল-কুরআন বিভাগের(২০১০-২০১১)শিক্ষাবর্ষের একজন ছাত্র হিসেবে আমারও কুয়াকাটায় শিক্ষা সফরে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল । তখন আমি হুজুরের বন্ধুসুলভ আচরণ এবং তাকে নীতির এক মূর্ত প্রতীকরূপে দেখেছিলাম । ঝালকাঠী এন এস কামিল মাদ্রাসার এমন একজন ছাত্রও খুজে পাওয়া যাবে না যে হুজুরকে ভয় না পেত আবার অন্যান্য সকল শিক্ষকদের চাইতে তাকে বেশি ভাল না বাসত । হুজুর শুধু এ মাদ্রাসার শিক্ষকই ছিলেন না তিনি ছিলেন অধিকাংশের আদর্শ । আল্লাহর কাছে দোয়া করি, হে আল্লাহ ! হুজুরকে দীর্ঘজীবী করুন । যতদিন হায়াতে রাখবেন ইলমের খাদেম হিসেবে একনিষ্ঠ রাখবেন । কিয়ামতের ময়দানে কঠিন মুসিবতের সময় তার সাক্ষাত লাভের সৌভাগ্য কামনা করি ।
©somewhere in net ltd.