নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

“এ রাত আমার বাবা-মা এর জন্য যেন সৌভাগ্য রজনী হয়”

২৪ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৮

রোজ সোমবার (শবেবরাতের রাত্রি)



আজ মুসলামানদের কাছে অতীবগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাতের মধ্যে অন্যতম একটি রাত । আরবীতে এ রাত-কে বলা হয় “লাইলাতুল বারাআত” । যার বাংলা অর্থ সৌভাগ্যের রজনী । কোরআন ও হাদীসের অসংখ্য দলীল দ্বারা এ রাতের মহিমা ও গুরুত্ব প্রমানিত । আর বাঙালি মুসলমানদের বেলায় এ রাতটি অন্যতম আনন্দের রাত । শুধু মাত্র যে পরহেযগার মুসলমানদের জন্য আনন্দের তাই না । এটা সকল শ্রেণীর মুসলমানদের কাছেই অত্যন্ত আকাঙ্খিত রাত । আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার কাছেই এ রাতটি এক পরম পাওয়া । মুসলমানরা এ রাতে যতটা এবাদত করে তার সাথে ততটাই আয়োজন করে খাওয়া দাওয়ার । সারা রাত ব্যাপী আয়োজন চলে ইবাদত বান্দেগীর । তার পরেই শুরু হয় ভোজন রসিক বাঙালী জাতির আসল কাজ । যতক্ষণ না ফজরের আযান হয় ততক্ষণই খাওয়া দাওয়ার আয়োজন চলে । বাঙালীদের মধ্যে যারা সারা বছরে একবারের জন্যও মসজিদ মূখী হয়না তারাও রাতভর জেগে থাকার আশা পোষণ করে । বাঙালী মুসলমান বাবাদের চাইতে যেহেতু মায়েদের ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহ এবং সচেতনতা বেশী তাই তারা এ রাতকে শুধু মাত্র তাদের এবং তাদের রবের মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপনের রাত হিসেবে স্থান দেয় । মায়ের জাতটা সব সময়েই মায়াশীল হওয়ার পরেও এ রাতে তাদের আপনজনের অনেক আব্দার পূরণ করার জন্য সচেষ্ট থাকে না । সারা দিন প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিশ্রম করে সকল কাজ সন্ধ্যার আগেই গুছিয়ে রাখে যাতে মাগরিবের নামাজের পর আর কোন কাজ করতে না হয় । এরপরেই শুরু হয় তাদের একাকীনি-বাস । অনেক ডেকেও তাদের সাথে কথা বলার আবহ তৈরি করা যায় না । এ বছর পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যস্ততার কারণে এরকম একটা মহান রাতেও বাড়িতে যেতে পারি নি । বাবার সাথে জায়নামায নিয়ে গায়ে সুগন্ধি লাগিয়ে মসজিদে গিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মহান রবের হুকুম পালন করতে পু্রোই ব্যর্থ হয়েছি । তবুও আফসোস নেই যেখানেই থাকি যত দূরেই থাকি আমার মা বাবা আমার জন্য প্রার্থনা অবশ্যই করবেন । আমাদের পাঁচ ভাইবোনের জন্য সারা রাত দোয়া করবেন । আর তাতে বড় একটা অংশ জুড়েই থাকবে আমার স্থান । মা তোমাদের দোয়া আমার জীবনে কোন মতেই ব্যর্থ হতে পারে না । আমি বিশ্বাস করি লক্ষ্যভেদী অনেক আগ্নেয়াস্ত্র তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে পারে । কিন্তু আমার মা এবং বাবার দোয়া কোন অবস্থাতেই তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবে না । একথা আমি আরও জোড় গলায় বলার সাহস রাখি কেননা একথা বলার সাহস আমাকে মানবতার মহান মুক্তির দুত হযরত মুহাম্মদ (সঃ)বলতে শিখিয়েছেন । স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা একথার সত্যায়ণ করেছেন । তাহলে একথা বলা থেকে কোন শক্তি আমাকে বিমূখ করতে পারে ? আজ আমার খুব মন খারাপ হচ্ছে কারন গত বছর এমন মহা পবিত্র রাতে আমি আমার মা বাবার সান্নিধ্যে ছিলাম । কতইনা উত্তম ছিল সে মূহুর্তগুলো । সেদিন সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল । আমাদের বাড়ীতে জামে মসজিদ হওয়ার কারনে এসকল দিনে আমাদের একটা বাড়তি কর্তব্য থাকে ।



প্রতিবছরের ন্যায় শবেবরাতের রাতের মেহমানদের সামান্য ডাল ভাত খাওয়ানো আমরা কর্তব্য মনে করি । এগুলো পাক করতে হবে কিন্তু মা অসুস্থ থাকায় সিদ্ধান্ত হল এ বছর ভাত খাওয়ানো হবে না শুধু মাত্র বাজার থেকে মিষ্টি এনে বিতরণ করা হবে । সিদ্ধান্ত চুরান্ত হয়ে গেল । আমিও একটু ভাবে আছি, কেননা খাওয়া দাওয়া করাতে হলে বাজারের দায়িত্বসহ আরও কিছু কঠিন কাজ আমাকে সামলাতে হবে । এর ধকল থেকে রক্ষা পেয়ে আমি যেন মুক্ত বিহঙ্গ । আমাকে আর পায় কে ? এই খুশির মধ্যেই বাবার ফোন আসল, একটু বাজারে আয় তো। প্রথমে আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম । কারন আমরা তিন ভাই এবং দুই বোন বাবাকে খুব ভয় পেতাম । বাবা তো খুব দরকারী না হলে ফোন করে না । মনে সামান্য চিন্তা নিয়ে বাবার সম্মূখে হাজির হলাম । সেখানে গিয়ে দেখি আমাদের এলাকার এক বড় ভাই কাম বন্ধু বসে আছে । আমি কারনটা বুঝতে পারলাম । জামাল মানে বন্ধুটি চায় যে কোন ভাবেই হোক ভাত খাওয়ার আয়োজন করতে হবে । আমার কাছে এ প্রস্তাব দিয়ে সুবিধা করতে না পেরে বাবাকে গিয়ে ধরেছে । আমি যাওয়ার সাথে বাবা প্রসংঙ্গ না তুলে বলল দেখতো ও কি যেন বলতে চায় ? আমি তো বিষয় জানি । তবুও না জানার ভাব ধরে বাবার সামনে বসে খূব মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনে বাবার মুখের দিকে তাকালাম । বাবা হাসতে হাসতে বলল তোর মায়ের তো শরীর ভালোনা । তোরা দুজনে ঘুছাতে পারবি না ? না পারলে আমি তো আছিই । আমি আর না করতে পারলাম না । আমি আর জামাল কোমড়ে গামছা বেধে নেমে পড়লাম, কোথা থেকে কোন প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে পারি । সবগুলোই ঠিক ঠাক জোগাড় করেও ফেললাম । কিন্তু মুসিবত বাধলো গোশতো নিয়ে । কোথাও গোশতো পাইনা । এদিনে গোশতের চাহিদা এমনিতেই আকাশচুম্বী তার উপর গ্রামের বাড়িতে । অবশেষে অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে গোশতোও জোগাড় হল । দু’জনে লেগে গেলাম রান্নার জোগাড়ের কাজে । মা কয়েকবার তদারকি করতে এসেছে কিন্তু তার অসুস্থতার কথা ভেবে এক মূহুর্তের জন্যও তাকে উনুনের পারে বসতে দেই নি । আমি যদি আমার মাকে বিশ্রাম নেয়ার জন্য একবার বলেছি তো আমার বন্ধু বলেছে পাঁচবার । তবুও মা বার বার আসেন । সবকিছু গুছিয়ে এনেছি কিন্তু সমস্যা বাধল আবারও সেই গোশত পাক করা নিয়ে । গোশত কি ভাজি করব না ঝোল রাধব এ নিয়ে তো মহাসংকটে ! অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে আবার মায়ের শরনাপন্ন । মূহুর্তেই সমাধান । এই হল মা ! সন্তানের শত বিপদেও যিনি অবিচল থেকে সকল সমস্যার সমাধান করে দেন । হে আল্লাহ! আজ এই মহিমান্বিত রাতে তোমার কাছে, আমার মা বাবার জন্য অনুগ্রহ প্রার্থণা করছি । আমার মা বাবাকে তুমি হায়াতবর সুস্থ রেখ । আমার মা বাবা আমার উপর যেন খুশি থাকে সে ব্যবস্থা করে দিও । মৃত্যুর পর জান্নাতুল ফেরদাউসের সম্মানিত মেহমান বানিয়ে দিও । আমার ছোট বেলায় আমাকে যেমন লালন পালন করেছে ঠিক সেই রকম যত্ন তুমি তাদের নিও । আলোকিত মানুষ হওয়ার তৌফিক দিয়া দিও । এ রাতে সবাই যেন মঙ্গল লাভ করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিও । আমি হতভাগার যেটায় মঙ্গল হয় সে মতো চালিও ।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.