নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সর্বদলীয় সরকারের শপথ : অজানা পথের শুরু

২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৭

গতকাল এরশাদ সাহেবের সংবাদ সম্মেলনেই মূলত নাটকের সূচনা । আজ অর্থ্যাৎ ১৮ ই নভেম্বর বেলা এগারোটায় সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক রাষ্ট্রপতি জনাব হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ মহাজোট ত্যাগ করেছেন মর্মে ঘোষনা করেন , সাথে সাথে দেশের সংকটময় অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি প্রধান বিরোধীদল হয়ে ১৪ দলীয় তথা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে তার জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে মর্মে ঘোষনা দেন । এ ঘোষনার সাথে সাথে সারাদেশে এবং দেশের বাইরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে । চায়ের দোকানের সরু বেঞ্চে গরম চায়ের কাপ সামনে নিয়ে মানুষের নানামূখী কথার ফুঁলঝুড়িতে চায়ের দোকানগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । বাক-বিতান্ডার যেন শেষ সীমা নাই । চরম উত্তেজনাকর মূহুর্তের মধ্য দিয়েই দুপুর গড়িয়ে বিকাল আসে । কাটায় কাটায় বিকাল তিনটা এগারো মিনিট । জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্যেই সম্পন্ন হয় “সর্বদলীয় সরকারের” মন্ত্রীবর্গের শপথ অনুষ্ঠান । এ মন্ত্রী বা তাদের সমপদমর‌্যাদায় স্থান পেয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ঝালকাঠী সদর আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আমীর হোসেন আমু , ভোলার তোফায়েল আহমেদ । এছাড়া মহাজোটের শরীক ওয়ার্কাস পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন জাতীয় পার্টি থেকে এরশাদ পত্নী রওশন এরশাদ ,আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমীন হাওলাদার । উপরের সবাই মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহন করলেও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেছেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সালমা ইসলাম । রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করান । এছাড়াও নবম জাতীয় সংসদে যে সকল মন্ত্রীরা ছিলেন তারা সকলেই পদত্যাগ পত্র জমা দিলেও তাদের মধ্য থেকে ১২ জনের পদত্যাগ পত্র গ্রহন না করে তাদেরকে মন্ত্রী হিসেবে বহাল রাখা হয়েছে । এরা হলেন আওয়ামীলীগের আবুল মাল আব্দুল মুহিত , সৈয়দ আশরাফূল ইসলাম , বেগম মতিয়া চোধুরী , ড. দীপু মনি , ওবায়দুল কাদের , ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ , নুরুল ইসলাম নাহিদ , আব্দুর রাজ্জাক , মহীউদ্দীন খান আলমগীর , ও হাছান মাহমুদ । জাতীয় পার্টি থেকে জি এম কাদের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু । টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর পদ না থাকায় জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলূকে উপদেষ্টা করা হয়েছে । এ শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন ভূঁঈয়া । সুতরাং আওয়ামীলীগের ১০ জন , জাতীয় পার্টির ৮ জন ,বামদলের ২ জন এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মোট ২১ জনের সর্বদলীয় সরকার গঠিত হল । শপথ অনুষ্ঠানের পর তাৎক্ষনিক ভাবে শপথ পাঠকারীদেরকে তাদের দফতর ভাগ করে দেয়া হয়নি । তবে আশা করা হচ্ছে দুই একদিনের মধ্যেই তাদের দফতর বুঝিয়ে দেয়া হবে । এতো গেল ১৮ তারিখের রোজনামচা । কিন্তু শপথ অনুষ্ঠানের পর দেশের সার্বিক ভবিষ্যত নিয়ে কতগুলো প্রশ্ন ও সংশয়ের উদ্রেক হয়েছে । বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০ টি । এর মধ্য থেকে মাত্র ৪ টি দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হল ! এটাও বড় কথা নয় যে ৪ টি দলকে নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হল তারা সবগুলোই আওয়ামীলীগ সমমনা এবং তারা ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে একই জোটভূক্ত হয়ে নির্বাচন করেছিল । তাতেও সমস্যা ছিল না , যদি সর্বদলীয় সরকারে বি এন পি থেকে কোন সদস্য থাকত । বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বি এন পি সংবিধানের ১৫ তম সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে , শুরু থেকেই তারা এটার বিরোধিতা করে আসছে এবং তখন থেকেই সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থা পূর্ণবহাল করার দাবীতে আন্দোলন করে আসছে । তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বি এন পি থেকে বারবার বলা হয়েছে তারা সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচনে যাবে না । ‍প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের দীর্ঘ সময়ের টেলিফোনালাপও সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে । আওয়ামীলীগের কর্মপরিকল্পনা দেখে মনে হয় তারা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে নির্বাচন তুলে নেবেন পক্ষান্তরে বি এন পির নিরন্তর প্রচেষ্টা , কিভাবে নির্বাচন প্রতিরোধ করা যায় । বি এন পির এক দাবী , তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থা পূর্ণবহাল ওদিকে আওয়ামীলীগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে কেয়ামত হয়ে গেলেও এ দেশে আর তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থা ফিরে আসবে না । বর্হিবিশ্বের চাপ এবং মাঠ দখলের লড়াইয়ে বি এন পি এতদিন চরম ভাবে এগিয়ে ছিল । কেননা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছে সবদলের অংশগ্রহন ব্যতীত কোন নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হবে না । বি এন পি ব্যাপক প্রচার চালিয়ে তিন চতুর্থাংশের মত জনমত তাদের পক্ষে নিয়ে গিয়েছিল । সরকারী দল দিধান্বিত হয়ে পড়েছিল , তারাও যে তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে পুনরায় ভাবে নি সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না । কিন্তু হঠাৎ করেই আস্তে আস্তে ফর্সা হতে থাকা বাংলার আকাশে আগমন ঘটতে শুরু করেছে ঘন কালো মেঘ । অতীতের মত এ ধ্বংসাত্মক অবস্থার ভূমিকার অবতারনা ঘটানোর জন্য বিতর্কিত এরশাদ সাহেবের আবারও উত্থান । বিগত দিনগুলোতে তিনি তার বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বার বার ঘোষনা দিয়েছিলেন , তিনি আর নতুন করে কোন বিতর্কে জড়াবেন না । মানুষ এখন আর তাকে স্বৈরশাসক বলেন না । তিনি ভবিষ্যতে এমন কোন কাজ করবেন না যাতে আবারও মানুষ তাকে স্বৈরশাসক বলে । সাম্প্রতিক সময়ে তিনি এক বক্তৃতায় বলেন “ সংবিধানের ১৫ তম সংশোধনী গ্রহনযোগ্য নয় । এটা গনতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক । কাজেই আমি যদি সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাই তবে মানুষ আমার মুখে থুতু নিক্ষেপ করবে ” । কিন্তু ১৮ তারিখের শপথের পর-পরই তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন , দেশের যে সংকটময় অবস্থা তাতে আমি যদি নির্বাচনে না যাই তবে মানুষ আমার মুখে থুতু দেবে । এরশাদ সাহেবের অতীতৈর কথামালার সাথে বর্তমান কথামালার বিস্তর পার্থক্য থাকার কারনে অনেকেই তার কথাকে পাগলের প্রলাপ হিসেবে ধরে নিয়েছেন এবং এ মর্মে মত দিয়েছেন যে , দেশে যে আশু ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে তার জন্য তিনিই দায়ী থাকবেন । তার বিরুদ্ধে সারাদেশে ঝাড়ু , জুতা মিছিল শুরু হয়েছে । বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করা হয়েছে । তার প্রতিকৃতিতে মানুষ মলমূত্র , থুতু নিক্ষেপ করছে সাথে সাথে তা পুরিয়ে দিচ্ছে । তার কপালে আরও কত কি আছে তার খবর বিধাতাই ভাল রাখেন । অতীতের নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে যে সকল দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তার থেকে এত সহজেই পদস্খলনের কারন অনেকেই খুঁজে ফিরছেন । তবে লোকমূখে ভেসে বেড়াচ্ছে , ভারতের দেয়া ‍বিপুল পরিমান অর্থই তাকে আবার দালালী করার পথে উৎসাহ দিচ্ছে । ওই যে কথায় বলে “ গাড়ী আর নারীতেই এরশাদের যত দূর্বলতা ’ । একথাটাকে শেষ বয়সে তিনি আবারও সত্যায়ন করে দিলেন । তাইতে “ মহা-বেঈমান ” “পল্টিবাজ” “ থুতুবাবা ” শব্দগুলো যেন এরশাদের সাথেই বেশী মানানসই ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.