নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক নাটকের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী তফসীল ঘোষনা করেছে । গত ২০ শে নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ ঘোষনা করেছিলেন আগামী ২৫ শে নভেম্বর সোমবার তফসীল ঘোষনা করা হবে । এর পরেই বি এন পি দীর্ঘ এক সপ্তাহ তাদের কর্মসূচীর বিরতি দিয়ে গত ২২ শে নভেম্বর শুক্রবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিরোধীদলীয় সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষনা করেন ,“ যদি কোন সমাধান ছাড়া নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে তাহলে তফসিল ঘোষনার পর থেকেই দেশ অচল করে দেয়া হবে” । নেত্রীর কথার সাথে সূর মিলিয়ে অন্যান্য নেতারাও সরকারী দল এবং নির্বাচন কমিশনকেও কঠোর হুঁশিয়ারি প্রদান করেন । তাদের মূল কথা ছিল , তফসিল ঘোষনা করা হলে দেশে হরতাল , অবরোধ সহ নানা কর্মসূচী দেয়া হবে । পরবর্তীতে গত ২৪ শে নভেম্বর বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের আলাপ কালে বলেন , আগামী কাল অর্থ্যাৎ সোমবার তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে না । এর কারন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন , যদিও তফসিল পুরোপুরি প্রস্তুত আছে কিন্তু আমরা আরেকটু সময় নিচ্ছি যাতে দুই বৃহৎ দলের মধ্যে চলমান সংঘাতের সমাধান হতে পারে । প্রধান কমিশনার মহোদয়ের এ ঘোষনায় আওয়ামীলীগ এবং বি এন পি এর পক্ষ থেকে নানা মূখী প্রতিক্রিয়া আসলেও সাধারণ নিরীহ মানুষ আশায় বুক বেঁধে ছিল । তারা কায়মন বাক্যে চাচ্ছিল যাতে সমস্যার সমাধান হয় । আমরা এর প্রতিক্রিয়াও দেখতে শুরু করেছিলাম । যদিও দালিলিক কোন প্রমান নাই তবুও দুই দলের সহাসচিব পর্যায়ের গোপন বৈঠক হয়েছিল । বি এন পি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্তৃক তাদের বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হলেও আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বৈঠকের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল । সত্য যাই হোক সংলাপ সমঝোতার ব্যাপারে দু’দলই সমান তাগিদ অনুভব করতে আরম্ভ করেছিল । কিন্তু নাটকের মোড় অন্যগল্পে রুপান্তর হতে সময় নিল না । যে কমিশনার মহোদয় ১২ ঘন্টা আগেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তফসিল ঘোষণাকে বিলম্বিত করছিলেন সেই হঠাৎ করে ঘোষনা দিলেন তিনি ২৫ তারিখ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন । নির্বাচন কমিশনাররা সকাল ১১ টা থেকে দফায় দফায় মিটিংয়ে বসলেন । সারা বাংলাদেশের সকল নির্বচান কমিশন অফিসগুলোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা হল । প্রধান নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তিনগুন বাড়িয়ে দেয়া হল । বিরোধীদল সহ অনেকেই অনুধাবন করে ফেললেন কি ঘোষণা আসতে যাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীবউদ্দীন আহমদের ভাষনে । বিরোধী দলও ঘোষনা করে দিল কাজী রকীব উদ্দীন আহমদের ভাষনের পর বিরোধীদলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বসবেন । জাতির আর বুঝতে বাকী রইল না আগামীর বাংলাদেশটা কোন রং ধারন করবে । হরতাল না অবরোধ কোনটা আসছে শুধু এটুকুই জানার বাকী ছিল । অবশেষে অপেক্ষার সে প্রহরটুকুও শেষ হল । রাত সোয়া পৌণে নয়টার দিকে জাতি জানতে পারল আগামী ২৬ তারিখ সকাল থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা অবরোধের চাদরে ঢাকা থাকবে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট ভূ-খন্ডটি । অবরোধের ঘোষণার পর মাত্র তিরিশ মিনিটের ব্যবধাণে বাংলাদেশ ছোট্ট একটা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হল । অর্ধ সহস্রের মত গাড়ি নিমিষেই ছাই হয়ে গেল । সংঘর্ষের কারনে নিহত হল একজন বি এন পি কর্মী । কাজী রকীব উদ্দীন আহমদের ঘোষণায় কি ছিল এমন মসল যাতে শীতের প্রকোপে কাঁপতে থাকা বাংলাদেশটা এমন তেঁতে উঠল যা দাবানলে রুপ নিতে চাচ্ছে । সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া কাজী রকীবউদ্দীন আহমদের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনের মূল কথাগুলো ছিল :
দশম জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহন আগামী ৫ ই জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে এবং ৬ ই জানুয়ারী ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে ।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত । ৫ ও ৬ ই ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে । তবে যদি কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে তবে তাবে ১৩ ই ডিসেম্বরের মধ্যে তা প্রত্যাহার করতে হবে ।
আপাত দৃষ্টিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ ঘোষনা গ্রহনযোগ্য মনে হলেও দেশ অগ্নিগর্ভা হয়ে ওঠার কারন কি ? তা জানার কৌতুহল হওয়া অস্বাভাবিক নয় ।
২৪ অক্টোবর নবম জাতীয় সংসদের ক্ষমতাশীল দল কথিত ভাবে তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পরে বি এন পি অনেক দিন হরতাল আহ্বান করলেও তাতে উল্লেখ করার মত তেমন কোন ঘটনা ঘটে নি । সামান্য যা কিছু ঘটেছে তা ২৫ শে নভেম্বর দিনগত রাত্রেঘটা ঘটনার সামনে ম্লান হয়ে গেছে । বি এন পির মহাসচিব আহুত অবরোধ কর্মসূচী শুরু হওয়ার কথা মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে কিন্তু তার আগের রাতে কেন এত ধ্বংসযজ্ঞ ? তাহলে কি সারা বাংলার মানুষ নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা চায় ? গতকাল বিবিসির সান্ধ্য অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে তাদের অফিসিয়াল পেইজ “ বিবিসি বাংলার সামাজিক ফোরামে ” সকলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছিল : বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আজ জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন । এরপর রাজনৈতিক সমঝোতার আর কোন সম্ভাবনা কি অবশিষ্ট থাকবে ? আপনাদের কি মনে হয় : তাদের এ জিজ্ঞাসার উপর বিবিসির ৩৪৬ জন শ্রোতা মন্তব্য প্রদান করেছেন । এর মধ্যে প্রথম সারিতে যাদের মন্তব্য ছিল তা থেকে এক জনের মত উল্লেখ করা জরুরী মনে করছি । তার মতে , আওয়ামীলীগ যে দিন ক্ষমতা ছেড়ে ছিল সে দিনের পর থেকে বি এন পি এবং আওয়ামীলীগের মধ্যে সে রকম কোন সমঝোতার পথ সৃষ্টি হয় নি । এখন যেহেতু নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষনা করল সেহেতু সমঝোতার বাকি রাস্তটুকুও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম । নির্বাচন কমিশনও পাগলামীতে মেতে উঠেছে । যেখানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তর দল বি এন পি সরকারের স্বার্থবাদী অনেকগুলো সিদ্ধান্তের কারনে নির্বাচনে অংশগ্রহন করছে না সেখানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চলতি সমস্যার কোন সমাধান না করেই যে ভাবে তফসিল ঘোষণা করল সেটা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এবং তার অস্তিত্বের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে । বি এন পির অবস্থান ! গনতন্ত্র রক্ষার নামে তারা জনগনকে বাঁশদেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে । তবে বি এন পি নিরুপায় । হরতাল , অবরোধ ব্যতীত সরকারের টনক নাড়ানোর আর কোন অস্ত্র বিরোধী দলের হাতে নাই । আমি লিখতে বসার পূর্বে শপথ করেছিলাম আজকের লেখায় একপক্ষ অবলম্বন করব । কিন্তু আমার মন , বিবেক কোন সময়েই আমার প্রবৃত্তির কাছে জিম্মি হয় নি । আজ যে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বি এন পিকে রাজপথে হাজার হাজার লোকের জীবন নিয়ে খেলা করতে হচ্ছে তার মূলেও বি এন পি দায়ী । এ সমস্যার বীজ বি এন পি রোপন করেছিল ১৯৯৬ এর নির্বাচনে । তা থেকে শাখা প্রশাখা গজিয়ে ২০০৭ সালের নির্বাচনে কিছুটা ঝড়ের আভাস দিয়েছিল । তবে সবচেয়ে বড় আঘাতটা দিতে যাচ্ছে ২০১৪ সালের নির্বাচনে । ১৯৯৬ সালে যখন গোটা দেশের মানুষ তত্ত্ববধায়ক বিরোধী ছিল তখন বি এন পি সকল বাধা উপেক্ষা করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চালূ করে কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে ১৮ দিন ক্ষমতায় গিয়েছিল বি এন পি । সে সময় আওয়ামীলীগ একটানা ২২ দিন হরতাল অবরোধ দিয়েছিল । ক্ষতির পরিমানটা নাই বা উল্লেখ করলাম । ২০০৭ সালের নির্বাচনে তাদের দলীয়লোককে তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থার প্রধান করার জন্য নাটকের দৃশ্য জনগনের ভোলার কথা নয় । তবুও ভাগ্য তাদের সহায় হয় নি । সকল নাটকের অবসান ঘটিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার নাটক বাদ দিয়ে যাত্রাপালা শুরু করেছে । বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক দল হয়েও আওয়ামীলীগ যে জনমতকে অস্বীকার করবে সেটা অকল্পনীয় হলেও আওয়ামীলীগ সারা দেশবাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে । মাঠে দুই দলের লড়াইয়ে গ্যালারী ভর্তি দর্শক গগনবিদারী চিৎকার চেঁচামেচিতে মেতে ওঠে কারন সেখানে আনন্দের ফোয়ারা থাকে । কিন্তু যখন কোন দল মানুষের জীবন নিয়ে খেলায় মেতে ওঠে তখন আর তার জন্য আনন্দ থাকে না বরং ঘৃনার উদ্রেক হয় । কখনো কখনো সেটা প্রকাশ পেতে একটু সময় লাগে তবে যখন সেটা প্রকাশ পায় তখন সাইক্লোন , টর্নেডো হয়ে ছোটে ।
©somewhere in net ltd.