নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের সর্বপ্রথম পাবলিক পরীক্ষা দিচ্ছে ৫ম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র সিফাত উল্লাহ । জীবনের প্রথম পরীক্ষা হওয়ার কারনে একদিকে যেমন ভীতি কাজ করছে তেমনি উচ্ছ্বাসেরও কমতি নেই । জীবনের প্রথম পরীক্ষা বলে কথা । প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর জন্য প্রস্তুতি ভালোই গ্রহন করেছে । তাকে নিয়ে বাবা মায়ের দিনরাত পরিশ্রম । পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ২০ শে নভেম্বর । প্রথম তিনটা পরীক্ষা রুটিন মত হয়েছিল । অবশ্য এ পরীক্ষা তিনটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল । তৃতীয় পরীক্ষাটা অর্থ্যাৎ ইংরেজী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার একদিন আগ থেকেই বাংলাদেশের সব কয়টা জাতীয় পত্রিকায় পাওয়া গিয়েছিল । তারপরও বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রনালয় সেই প্র্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহন করেছে । বাংলা এবং গনিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও ততোটা প্রচার পায়নি কেবল শহরের ছাত্র-+ছাত্রীদের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল । এ প্রশ্নপত্রের নাগাল গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ধরা দেয়নি । তারপরেও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কানে পানি যায়নি । এখন যদি গ্রামের ছাত্ররা দাবী করে বসে “ ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রেই যদি পরীক্ষা হয় তবে তাদেরকেও পরীক্ষার আগের রাতে এক কপি করে পৌঁছে দেয়া উচিত ছিল ” তখন তাদের কি বলে স্বান্তনা দিবেন ? বয়সে অপরিপক্ক হলে কি হবে তারা এখন বুঝে গিয়েছে এ দেশে ন্যায়ের ক্ষেত্রেও ন্যায় বিচার নেই আবার অন্যায়ের ক্ষেত্রেও ন্যায় বিচার নেই । প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর অভিবাকরা কামনা করেন তাদের সন্তানরা পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করুক কিন্তু কোন অনৈতিক অভিবাকও সম্ভবত এটা চাইবেন না তার ছেলে জীবনের শুরুতেই চুরি করা শিখুক । এ দেশের সমসাময়িক অবস্থা বিবেচনায় ন্যায় সঙ্গতভাবে কিছু কামনা করাও অন্যায় তা মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । সংবিধানে স্বাধীনতার কথা থাকলেও জীবনের কোন স্তরেই এখন আর স্বাধীনতা ভোগ করা যায় না । জোর যার মুল্লুক তার নীতিতেই এগুচ্ছে সকলে । বাচ্চারাই তাদের পরিনত বয়সে এ দেশের হাল ধরবে এই বিবেচনায় সরকার বুঝি তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলছে । বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বড় অংশ হাতে কলমে শিক্ষা না হলেও চুরি কিভাবে করতে হবে , কিভাবে চুরি করলে রাতারাতি বড়লোক হওয়া যাবে এ শিক্ষা দিতে সরকার একেবারেই পিছিয়ে নেই । পঞ্চম শ্রেনীর একটা ছেলের বয়স দশ বছরের বেশি হবে না । ভৌগোলিক অবস্থার কারনে এ দেশের দশ বছর বয়সী একটা ছেলের ভাল করে কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করার কথা নয় সেই ছেলেটি চুরি ভালবাবে শিখে যাচ্ছে । আমি অন্যায় করছি । পঞ্চম শ্রেনী পড়ুয়া ছেলের এ অনৈতিক কাজকে আমি চুরি বলতে পারি না । একটা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকাকে যা শিক্ষা দেয়া হয় তাই সে শেখে । ভাল মন্দের মন্দে পার্থক্য করার বোধ ততোটা তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়না । একজন ছাত্রকে জীবনে প্রায় নয়টির মত পাবলিক পরীক্ষা দিতে হয় । সে যদি তার প্রথম পাবলিক পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্নপত্র পেতে শুরু করে তবে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য তার শিক্ষার আগ্রহ মোটেও থাকবে কি ? অবশ্য বাংলাদেশে যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছে তাতে সারা বছর ঘুরে বেরিয়ে শুধু পরীক্ষার দিনগুলোতে পড়ালেখা করাই যখেষ্ট । একজন শিক্ষার্থীর বদ্ধমূল বিশ্বাস হয়েছে সে পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্নপত্র পাবে । বাস্তবতাও তাই । গতকয়েক বছর যাবত বিশেষ করে ১৪ দলের শাসনামালে শিক্ষা বস্থার করুন পরিনাতি হয়েছে । বিশ্বের এমন কোন জাতি নাই যারা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে দূর্ণীতি , অনিয়ম চালূ করেছে । তারা জানে , জাতি সম্পূর্ন ভাবে শিক্ষিত না হলে জাতীয় উন্নতি সম্ভব নয় । আমাদের দেশের অবস্থা ! আমরা যে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছি কাকে কতটুকু চোর বানাতে পারি । জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট . সেকেন্ডারী স্কুল সার্টিফিকেট , হ্যায়ার সেকেন্ডারী স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার একই অবস্থা । শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্রের সকল সেট পেয়ে যাচ্ছে । সকলে যে পাচ্ছে তা কিন্তু নয় । অবহেলিত জনপদের একবড় অংশ এ অমীয় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । যার ফলে প্রশ্নপত্র পাওয়া ছাত্রদের তুলনায় তাদের রেজাল্ট অনেক খারাপ হওয়া তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করতে পারছে না । কাজেই তাদেরে শিক্ষার প্রতি মনোযোগ থাকার পরেও ছিটকে পরছে । ভর্তি পরীক্ষায় শুধু যে গ্রামের ছাত্ররা ফলাফল স্কোরের কারনে পিছিয়ে পড়ছে তা কিন্তু নয় । বিভিন্ন ভর্তি কোংচিয়ের সাথে জড়িত অসাধু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কল্যানে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়ে যাছে । যার কারনে মেধাবীরা সবসময়েই উপেক্ষিত থাকে । বাংলাদেশে চাকরির বাজারে বিসিএস পরীক্ষার মান সবচেয়ে বেশী । কয়েক বছর আগেও এ পরীক্ষা ব্যবস্থায় অনিয়মের কোন প্রশ্ন ছিল না । দূর্নীতিতে বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হলেও বিসিএস পরীক্ষার মান নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তোলার অবকাশ পাননি । এখন বাস্তবতা ভিন্ন । এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও এখন আর গোপন থাকছে না । টাকার জোরে প্রথম শ্রেণীর চাকরিগুলো মেধাশুণ্যদের দখলে চলে যাচ্ছে । যার কারনে নৈতিকতা ক্রমেই এ ভূ-খন্ড থেকে পালানোর পথ খুজছে । কোন রাজনৈতিক দল বা বিশিষ্টজন এর বিপক্ষে সোচ্চার হচ্ছে না । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্ন ‘আপনারা কি আপনাদের কোন আত্মীয়ের রেজাল্ট ভালো করার জন্য প্রশ্ন ফাঁস করেন’ ? যদি হ্যা-বোধক উত্তর হয় তবে আপনাদের কাজে বিনীত আরজ , আপনাদের আত্মীয় স্বজনদের যে রকম ভালো চাইছেন সে ভালোর আমাদের দরকার নাই । আপানদের নীতি-নৈতিকতা ! আপনাদের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখুন । সমগ্র জাতিকে ধ্বংস করবেন না । সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে আপনারা যা করেন তার চেয়ে পশুর স্বভাব ভালো । জাতি হিসেবে পশুর চেয়েও নিম্নস্তরে যাতে না পৌঁছাই সে জন্য একটু দৃষ্টিপাত করেন । যে সময়টা অতীত হয়ে গেছে সে সময়ের পানে না চেয়ে থেকে ভবিষ্যতকে ঢেলে সাজাই । আমাদের আগামী প্রজন্ম যাতে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সে ব্যবস্থা করে আমরা যে অমর হতে পারি সে ব্যাপারে উদ্যোগী হই । আমাদের আগামীর সন্তনরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হোক এই যেন হয় কামনা ।
©somewhere in net ltd.