নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের প্রথম মোবাইলের মালিক হয়েছিলাম ২০০৮ সালের ৮ই এপ্রিল । সেদিন আমার মত খুশি ধরাধামে আর কেউ ছিল বলে আমার আজও বিশ্বাস হয় না । অবশ্য যখন আমি মোবাইলের মালিক হয়েছিলাম তখন বেশ বড়ই । ততদিনে আমার বন্ধু মহলের প্রায় প্রত্যেকেই স্ব-স্ব মোবাইলের মালিক বনে গিয়েছিল । এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রথম বারের মত বাড়ি থেকে দূরে অবস্থান করছিলাম । তাই পরিবারের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগের জন্য বাবা একটি মোবাইল সেট কিনে দিয়েছিলেন । নকিয়া ১২০০ মডেলের । সেটা পেয়েই তো আমি মহাখুশি । সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মোবাইল ব্যবহারে বিলাসিতা চলছে । বিজ্ঞানের কোন অনুষদই মানবতার অকল্যানের জন্য আনয়ন করা হয়নি । বিজ্ঞানের যে সকল আবিষ্কারকে আমরা মানবতার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছি , তার একটিও আবষ্কারক অকল্যানের জন্য প্রনয়ন করেননি । তবে কোন জিনিসের ব্যবহার সে জিনিসকে খারাপ বা ভালো হিসেবে মূল্যায়ণ করে ।
ডিনামাইডের আবিষ্কারক আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইড আবিষ্কার করেছিলেন মানুষের উপকারার্থে । বিশাল কোন ক্ষতিকর ইমারত যাতে অল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংস করা যায় সেজন্য তিনি ডিনামাইড আবিষ্কার করেছিলেন । তিনি ভেবেছিলেন বড় ধরনের কোন কাজ যদি অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা যায় তাহলে যেরকম করে সময় সাশ্রয় হবে তেমনি ভাবে অর্থও সাশ্রয় হবে । আলফ্রেড নোবেলের সে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল । আজকের পৃথিবীতে ডিনামাইড যতটা মানবতার কল্যাণে ব্যবহার করা হয় তার চেয়ে কয়েক হাজার গুন ব্যবহার করা হয় মানবতার ধ্বংসের জন্য । তাইতো ডিনামাইডের আবিষ্কারক ডিনামাইডের এমন ব্যবহার দেখে অনুতপ্ত হয়ে তার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে প্রবর্তন করলেন নোবেল পুরুষ্কার । বর্তমানে ডিনামাইড যে ধরনের কাজের জন্য ব্যবহার হচ্ছে যদি সে ধরনের কাজে ব্যবহার না হয়ে এটি আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার হত তাহলে কি ডিনামাইডের অপকারীতা লিখতে কেউ এগিয়ে আসত ?
বিশ্বের ক্রমবর্ধমান গতির পিছনে মোবাইলের ভূমিকা অনস্বীকার্য । এইতো শতাব্দী কাল আগেও এক স্থান থেকে অন্যস্থানে অথবা একদেশ থেকে আরেক দেশে একটি খবর পৌঁছাতে দিনের পর দিন এমনকি মাসের পর মাস লেগে যেত । আজ সেই খবর বা বার্তা পৌঁছাতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড মাত্র । তাইতো কবি বলতে সাহস পেয়েছেন “ বিশ্বজগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে ” । বাব-মাকে ছেড়ে সন্তান-সন্ততি দূর-বিদেশে থাকে । প্রিয়তমা স্ত্রীকে রেখে স্বামী জীবিকার প্রয়োজনে ভিনদেশে থাকে । আপনজনের এ বিচ্ছেদে চিন্তার কোন কূল-কিনারা থাকে না । অবশ্য আমরা যদি আরও কয়েক বছর আগে থেমে থাকতাম তাহলে চিন্তনের এ অবস্থাটা থাকত । কিন্তু আজ আর সে চিন্তা করতে হয় না । হাজার হাজার মাইল দূরত্বে অবস্থান করলেও আজ আর কোন চিন্তা নাই । ইচ্ছে হলেই যোগাযোগ করা যায় । খবরা-খবর জানা যায় ।
আমরা যারা দ্বিতীয় প্রজন্মের (2G) আওয়তাভূক্ত তারা এখন তৃতীয় প্রজন্মের (3G) আওতায় আসার স্বপ্নে বিভোর । প্রতি মূহুর্তেই প্রহর গুনছি কখন তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক বা বিস্তীর্ন জালিকা পাব । এ আশা আমাদের আরও অনেক আগেই করা উচিত ছিল । বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশে যখন পঞ্চম প্রজন্ম ব্যবহার হচ্ছে তখনও আমরা দ্বিতীয় প্রজন্মের গন্ডি পেরোতে পারিনি । এখন সময় এসেছে বদলাবার । ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৃতীয় প্রজন্মের সেবা বাংলাদেশে চালু হলেও কিছু বিশেষ এলাকা ব্যতীত এর প্রচলন এখনও হয়নি । তবে যেভাবে অপারেটরগুলো তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে তাতে সারা বাংলাদেশ তৃতীয় প্রজন্মের বিস্তীর্নজালে আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
বর্তমান সময় পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রজন্মের (মোবাইল অপারেটর) সুযোগ ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা কয়েকটি মারাত্মক সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি । যে সমস্যাগুলো প্রয়োগের কারনে সমাজের বিভিন্ন স্তর হুমকির মুখে নিপতিত হয়েছে বা হচ্ছে । অবৈধ প্রেম এসকল সমস্যা সমূহের মধ্যে অনত্যম । উঠতি বয়সের কোমলমতি তরুন-তরুনীরা যার খপ্পরে বেশি আক্রান্ত হয়েছে । বয়সন্ধিকালের সাথে সাথে শরীরের যে উত্তাপ ছড়ায় তা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা জড়িয়ে পরেন প্রেম-ভালবাসা নামক এক মায়ায় । এদের মধ্যে কেউ কেউ তার সাথীকে চক্ষুদর্শন করলেও অনেকে জড়িয়ে পরেন কন্ঠ প্রেমে । এই প্রনয়ের পরিনতি কোন অবস্থাতেই ভাল হয় না । কাল-ভাদ্রে যা দু’একটির শেষ পরিনতি বিবাহ হয় তাতে সূখের ছিটে-ফোঁটা থেকে বঞ্চিত হয় । পাত্র-পাত্রীর মধ্যে মিল থাকলেও পরিবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় এ সম্পর্কের মধ্যখানে । আবেগের বয়সের অনূ্ভুতিকে প্রধান্য দিতে গিয়ে জীবনে নেমে আসে গাঢ়-অন্ধকার । বাবা মায়ের চিন্তার কারন হয়ে দাড়িয়েছে সন্তানদের কর্মকান্ড । এছাড়াও পরকীয়ার মায়া-জালে জাড়িয়ে ঘর ভাঙছে হাজার হাজার দম্পতির । সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় মোবাইল ক্লিপের মাধ্যমে তরুন-তরুনীর নগ্ন ভিডিও । যে সকল ভিডিও শুধু জড়িতদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে না বরং তাদের পরিবার পরিজনদেরকেও সমাজের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করছে । নগ্ন ভিডিওর কারনে সমাজ ছাড়া হতে হয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যাও নিছক কম নয় । মিথ্যার দৌরত্ব এমন ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যাতে সমাজের সকলকেই কম বেশি মিথ্যুক মনে হয় । তাইতো জাফর ইকবাল স্যার লিখেই বসলেন মিথ্যাকে বৈধতা দেয়া প্রসঙ্গে । ছেলে তার বাবার সাথে , মেয়ে তার মায়ের সাথে , স্বামী তার স্ত্রীর সাথে অনর্গল মিথ্যা বলেই চলছে । তবুও ভাল আজ আমার দ্বিতীয় প্রজন্মের অধিভূক্ত । যত অপরাধ হয় তার অনেকটাই কন্ঠ নির্ভর । অপরাধের এ মাত্রা কতদিন এ সীমায় থাকবে তার নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয় । বাঙালী অনুকরন প্রিয় । বিদেশী সংস্কৃতি বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী ভারতের বস্তাপঁচা সংস্কৃতিকে আমরা যে গতিতে অনুসরণ করছি তাতে তৃতীয় প্রজন্মের বিস্তীর্ন জালে প্রবেশ করার আগেই আমাদেরকে অনেক বিষয় সচেতন হতে হবে । না দেখে শুধু কথা বলে যে অপরাধ সমাজে সংগঠিত হত সেখানে ছবি দেখে কথা বললে কত কিছু হওয়া সম্ভব তা নির্বগ্নে বলা চলে । তৃতীয় প্রজন্মকে স্বাগতম করতে গিয়ে যাতে একটি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে না যায় সেদিকে বিশেষ ভাবে নজড় দিতে হবে । বাংলাদেশ সরকার , টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয় এবং মোবাইল অপরাটেরদের বিশেষ নীতিমালা থাকা দরকার যাতে মানুষ অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ঘটানোর সুযোগ না পায় । অন্যান্য দেশে কোন সংস্কৃতি প্রবেশ করার পূর্বে সেটাকে পরীক্ষা করা হলেও আমাদের দেশে অন্যদেশের সংস্কৃতি প্রবেশ করতে কোন বাধা পায় না । এরকম যদি চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের যুব সমাজ তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সে সংস্কৃতির ক্ষতিকর দিক গুলোক ব্যবহার করবে তাতে কোন সন্দেহ নাই । সুতরাং সময় মত ব্যবস্থা গ্রহন করাই বুদ্ধিমানের কাজ । তরুনদেরকে সাবধান হতে হবে , যাতে নিজেদের অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে না পড়ে ।
লেখক : রাজু আহমেদ । শিক্ষার্থী , কলামিষ্ট ও প্রাবন্ধিক ।
সরকারী বি এম কলেজ ,বরিশাল ।
©somewhere in net ltd.