নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সড়ক দূর্ঘটনা, লাশের স্তুপ অথচ..........

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:১২

মৃত্যু সর্বযুগে, সর্বকালে, সর্বস্থানে সব পরিবেশের জন্যই বেদনা বিদিত । সে মৃত্যুটি যদি সড়ক দূর্ঘটনায় হয় তাহলে তো বেদনার সীমা থাকে না । স্রষ্টার বা প্রাকৃতিক কারনে যে সকল মৃত্যু হয় সেগুলো রোধে মানুষের করণীয় কিছু না থাকলেও অস্বাভাবিক মৃত্যু যেমন মেনে নেওয়া যায় না তেমনি এড়ানো যায় । একটু সচেতনা এবং সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই হাজার হাজার অপমৃত্যু থেকে আমাদের দেশের মানুষ রক্ষা পেতে পারে । প্রতি দিনের খবরের কাগজের পাতা উল্টালে কিংবা টেলিভিশনের চ্যানেল পাল্টালে মৃত্যের সংখ্যা গণনা কিংবা অপমৃত্যের স্বজনদের আহাজারি হররোজকার ব্যাপার । মৃত্যুকে মানুষ ভয় করে । স্বভাবসূলভভাবেই মৃত্যুকে এড়াতে চায় । যে সকল প্রকার মৃত্যু এড়ানো যায় তার মধ্যে সড়ক দূর্ঘটনা কবলিত হয়ে মৃত্যুবরণ বা পঙ্গুতবরণকে খুব সহজে এড়ানো যায় । আমাদের দেশের অতীতের দূর্ঘটনাগুলো যে সকল কারনে ঘটেছে সেগুলো পর্যালোচনা করে এবং ভবিষ্যতে এ কারনগুলো এড়িয়ে চললে দূর্ঘটনার মাত্রা প্রায় শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব ।



প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজ উল্টালে এত সংখ্যক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যের খবার পড়তে হয় যেটা প্রযুক্তির যুগে মেনে নেয়া আসলেই কষ্টকর । সড়ক দূর্ঘটনার খবর এমন সহজলভ্য হয়ে গেছে যাতে কোন মৃত্যু বা লাশ আমাদের দুঃখ ভারাক্রান্ত করে না কিংবা কষ্ট দেয় না । কেবল যাদের আত্মীয় স্বজন সড়ক দূর্ঘটনায় আহত কিংবা নিহত হন তারাই এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারে । আমাদের বিপদ আমরাই ডেকে আনি । ২০১০ সালের ৮ই জুলাই তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছিল বাংলাদেশে ৪,৫০,০০০ গাড়ী চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ভূয়া । গাড়ীর চালকেরা সে সকল প্রতিষ্ঠান থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পান সে সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও গাড়ীতে চলেন । কিছু টাকার লোভে তারা অপরের জীবনকে যেমন হুমকির মূখে পতিত করেন তেমনি নিজেদের জীবনকেও হুমকির মূখে ফেলেন । যে জাতির কাছে জীবনের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি সে জাতি যত পরিশ্রম করুক এবং যত মেধাবীই হোক বিশ্ব সভ্যতায় সভ্য এবং বুদ্ধিমান জাতি হিসেবে নাম লেখাতে পারবে না ।



বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১.৩ মিলিয়ন মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে এবং ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষ মারাত্মকভাবে পঙ্গুত্ববরণ করে । আয়তনে বিশ্বের ৯৩ তম অবস্থানে বাংলাদেশের অবস্থান থাকলেও সড়ক দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথম দশ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে (অষ্টম স্থানে) । বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১২ জন মানুষ অর্থ্যাৎ প্রতিমাসে ৩৬০ জন, বছরে ৪৩২০ জন মানুষ মারা যায় । অতি সম্প্রতি এ সংখ্যাটি আরও বেড়েছে । বিভিন্ন সংস্থা এবং সংগঠন জোর-তৎপড়তা চালিয়েও দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রনে তো আনতে পারছেই না বরং তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়ক দূর্ঘটনার মাত্রা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে । প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পথচারীসহ নানা স্তরের অসংখ্য মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হযে মারা যাছে । পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিটির এরকম অপমৃত্যুর কারনে অনেক পরিবারকে পথে বসতে হচ্ছে আবার অনেক পরিবার আহতের চিকিৎসা ব্যয় এবং পঙ্গুত্বের বোঝা বইতে বইতে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে । সড়ক দূর্ঘটনা কবলিত হয়ে যারা মৃত্যুবরণ করে তারা একপ্রকার বেঁচে গেলেও যারা বেঁচে থেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে তাদের আহাজারিতে এবং স্বজনদের দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে । প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনার কারনে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে । যা তৃতীয় বিশ্বের একটা উন্নয়ণশীল দেশকে বারবার পিছনে ঠেরে দিচ্ছে । সড়ক দূর্ঘটনা পিছনে যেমন প্রশাসনিক দুর্নীতি কাজ করে তেমনি মানুষের অসচেতনাতও বহুলাংশে দায়ী । মানুষ এমন ভাবে হুশ হারিয়ে জীবনের মূল্যকে তুচ্ছ করে ছুটছে যাতে কখন কোন দূর্ঘটনা ঘটে তার প্রতি আদৌ কোন ভ্রক্ষেপ নাই ।



কিছু টাকা বা কোন এমপি মন্ত্রীর সুপারিশে দেশের এমন কিছু মানুষ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্ত হচ্ছেন যাদের গাড়ী চালনা সম্পর্কে নূন্যতম যতটুকু জ্ঞান আবশ্যক তাও তাদের নাই । কিছুদিন আগে একটি দূর্ঘটনার পর ড্রাইভারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তিনি ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কেই অবগত নন । তিনিই একমাত্র ড্রাইভার নন যিনি ড্রাইভিং সম্পর্কে এমন অজ্ঞ । বাংলাদেশে তার মত এমন হাজার হাজার ড্রাইভার আছে যারা বিভিন্ন দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতীর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন । এদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া আর হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেয়ার মধ্যে খুব বেশি তফাৎ নাই । বাংলাদেশে যে সকল কারনে সড়ক দূর্ঘটনা হয় সেগুলের মধ্যে কিছু কারন আছে একেবারে সাধারন । অথচ এই সাধারণ কারনগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ না করার কারণে সিংহভাগ দূর্ঘটনা হয় । বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বিশিষ্ট জনের মতামতে জানাগেছে এরকম কয়েকটি দূর্ঘটনার কারন ।

* চালকের দক্ষতার অভাব,

* যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি,

* জনসাধারণের ও চালকের ট্রাফিক আইন না মানা,

* রাস্তাঘাটের পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাব,

* চালকের গতিসীমা না মানা,

* যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং করা,

* জনসাধারণের যত্রতন্ত্র রাস্তা পার হওয়া এবং ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা,

* অপরিকল্পিত নগরায়ণ,

* ডেসা, ওয়াসা, টেলিফোন লাইন স্থাপন,

* অপর্যাপ্ত, অপরিকল্পিত ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মান এবং

* রাস্তায় ডিভাইডারের অভাব ।



আইনে প্রয়োগের দূর্বলতা, আইনের অপব্যবহার এবং দোষীদের পূর্ণ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে সড়ক দূর্ঘটনা লাগামহীনভাবে বাড়তেই থাকবে । সড়ক দূর্ঘটনা রোধকল্পে বাংলাদেশের বিভিন্নমেয়াদের সরকার বিভিন্ন আইন প্রনয়ন করলেও সেগুলো বিভিন্ন জটিলতা এবং উদ্যোগের অভাবে বাস্তবায়নের মূখ দর্শন করে নি । রাস্তায় যান চলাচলের এমন একটি আইন করা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে । ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী গাড়ী, মোটরযান এবং মোটর সাইকেল সর্বোচ্চ ৭০ মাইল, মধ্যম আকারের কোষ্টার ৩৫ মাইল এবং মালবাহী যানের অবস্থা ভেদে ১০-৩৫ মাইল গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কিন্তু এই নির্দেশনা দেশের বেশিরভাগ ড্রাইভার জানেন না । জানলেও মানেন না । ফলে প্রতিনিয়তই তাদের সড়ক দূর্ঘটনার সম্মূখীন হতে হচ্ছে । গতিসীমা নিরুপণ এবং এ সকল দ্রুত গতিসম্পন্ন ড্রাইভারদের নিয়ন্ত্রন করতে হলে রাস্তায় তাদের গতিসীমা পরিমাপ করা উচিত । বাংলাদেশের দীর্ঘ ১৪ হাজার কিলোমিটার রাস্তায় মোটর যান গতি নির্ধারক যন্ত্র মাত্র ৩৮টি । সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করতে হলে এ গতি নির্ধারক যন্ত্র আরো কয়েকগুন বাড়াতে হবে ।



প্রশাসন যদি উদ্যোগী হয় এবং আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ হয় তবে দূর্ঘটনা রোধ কঠিন কাজ নয় । সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে রাজধানী ঢাকাসহ এর আশে পাশের এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় ৬১৭টি মামলা দায়ের করা হলেও কেউ সাজাপ্রাপ্ত হয়নি । সমগ্র বাংলাদেশের একই চিত্র । যদি আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে অপরাধীরা মুক্তি না পেত তাহলে ২০০৯ পরবর্তী সময়ে সড়ক দূর্ঘটনা অবশ্যই কমে আসত । আইনের দূর্বলতা এবং প্রশাসনের দূর্নীতির কারনে সেটা হয়নি । যেকারনে ড্রাইভাররা দূর্ঘটনা করেও তেমনি বিচলিত হন না কিংবা দূর্ঘটনার পূর্বেও সতর্কতার সাথে গাড়ী চালান না । দূর্ঘটনা রোধের জন্য অন্যতম প্রয়োজন হল প্রশস্ত রাস্তা । উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শহরে ৩৮ ভাগ রাস্তা থাকা উচিত কিন্তু বাংলাদেশে তথা ঢাকাতে রাস্তার পরিমান মাত্র ৭-৮ভাগ । এছাড়াও দেশের সংকীর্ণ সড়কগুলিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাসসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন যোগ হচ্ছে । এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে রেজিষ্টার্ড ১৪ লাখ । কিন্তু রেজিষ্টার্ডবিহীন গাড়ী আছে ৩ লাখের উপরে । কাজেই সড়কে তুলনায় গাড়ীর পরিমান অত্যাধিক বেশি হওয়ায় সড়ক দূর্ঘটনার পরিমানও বাড়ছে ।



সকল সমস্যা এবং কারন উদঘাটনের পরেও দেশের সড়ক দূর্ঘটনা বন্ধ করে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না তবে জনসচেতনা এবং নিয়ম-নীতির অনুসরণ সড়ক দূর্ঘটনাকে অনেক কমিয়ে আনতে পারে । সেজন্য বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগনকে সচেতন এবং ট্রাফিক আইন কানুন সম্পর্কে জানতে হবে । সড়ক দূর্ঘটনা রোধে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের চলচিত্র জগতের পরিচিত মূখ ইলিয়াস কাঞ্চন । একক কোন প্রচেষ্ট দ¦ারা কোন বিশাল কাজে সফলতা পাওয়া যায় না । ইলিয়াস কাঞ্চন আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন । আমাদের ষোলকোটি হাত যদি তার হাতের সাথে জোটবদ্ধ হয় তবে অচিরেই দেশের কোন মানুষকে সড়ক দূর্ঘটনার অপমৃত্যু কিংবা কোন স্বজনকে স্বজন হারানোর আহাজারি নিয়ে বাঁচতে হবে না । দেশের সংস্কৃতি জগতের উজ্জ্বল নক্ষত তারেক মাসুদ কিংবা মিশুক মুনিরের মত আর কাউকে যেন সড়ক দূর্ঘটনার ভায়াল থাবা গ্রাস করতে না পারে । আজ এই মূহুর্ত থেকে আমাদের সকলের স্লোগান ইউক ‘সবার জন্য নিরাপদ সড়ক চাই’





রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.