নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পহেলা নভেম্বর-’১৪ রোজ শনিবার দেশব্যাপী ঘটে গেল বিদ্যুতের মহা বিভ্রাট । বেলা ১১ ঘটিকার কিছু পর থেকে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল সারা দেশ । সকল প্রকার ডিশ এ্যান্টেনার সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিদ্যুত বিভ্রাটের প্রকৃত খবরও জানা যাচ্ছিল না । একটির পর একটি সন্দেহ কেবল দাঁনা বাঁধছিল । শুধু মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানা যাচ্ছিল কোথাও বিদ্যুত নাই । অপেক্ষার পর অপেক্ষা । দুপুর গড়িয়ে বিকেল । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা । তবুও বিদ্যুত আসার নাম নাই । অবশেষে জানা গেল বিদ্যুতের গ্রিডে সমস্যার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি । তারপরেও কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারছিল না আসল কারণ সম্পর্কে । বিভিন্ন সন্দেহ এবং সংশয় নাগরিক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল । অন্যদিকে জন জীবনে নেমে এসেছিল চরম দুর্গতি । পানির সমস্যাই মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল । কোথায় পানি পাওয়া যাবে সে আতঙ্কে নগরের মানুষ দিক-বিদিক ছুটছিল । তাদের ছুটাছুটি দেখে চোখের সামনে ভেসে উঠছিল সেই স্মৃতির বিজড়িত মর্মন্তুদ কারবালার দ্বিতীয় পর্ব । যেদিন এক ফোঁটা পানির জন্য ইমাম হোসেনের সাথীরা প্রাণপণ চেষ্টা করছিল কিন্তু পায়নি । পহেলা নভেম্বর কি যে জনদূর্ভোগ হয়েছিল তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন । মোবাইল নেটওয়ার্ক ক্রমে দূর্বল হয়ে পড়ছিল । সেদিনের যোগাযোগের একমাত্র সম্বল মোবাইলের চার্জও ফুড়িয়ে যাচ্ছিল । চার্জ যদিও থাকে তবে ব্যালেন্স শেষ । নেটওয়ার্কের সমস্যা তাই লোডও বন্ধ । মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারগুলো বিদ্যুতের অভাবে ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল । তাই মানুষের মনে জেগেছিল নানা প্রশ্ন; নানা শঙ্কা । পরবর্তীতে ঘটনা যা জানা গেল তা হল, প্রথমে ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায় । পরে কাপ্তাই কেন্দ্র । বিদেশে থেকে আনা তদন্ত টিমের মাধ্যমে যদিও এখন দেশবাসী বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণ জানতে পেরেছে তবে সেদিন মানুষ খুব চিন্তিত ও বিচলিত ছিল । তবে সেই একদিনেই প্রমান হয়েছে, বিদ্যুত বিহীন আমরা কতটা অসহায় । বিদ্যুত বিভ্রাটে ডিজিটাল বাংলাদেশ এনালগ বানাতে খুব বেশি সময় নেয়নি । পহেলা নভেম্বর সারা দেশ পরিণত হয়েছিল এনালগ বাংলাদেশে । মানুষ খুঁজছে চাপকল কিংবা পুকুর । মোমবাতি কিংবা হারিকেন । দিনের আলোতেও যেন দেশ অন্ধকার লাগছিল । এসি, ফ্রিজ, ফটোকপি আর কম্পিউটারের সবগুলোই নিষ্ক্রিয় । বিদ্যুতের অভাবে প্রায পঙ্গু হতে বসেছিল বাংলাদেশ । এখানেই শঙ্কা । বাংলাদেশকে অকেজো করা কত সহজ ! মাত্র দুটি বিদ্যুত কেন্দ্রে সমস্যা দেখা দেয়ায় সারা দেশের চেহার বদলে গেল । এ যেন এক অচেনা বাংলাদেশ । এ ঘটনার পর অনলাইন মিডিয়া আর ফেসবুকে সবাই নানমূখী মত দিয়েছে । বিদ্যুত সেক্টরে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অগোচরে যত ভাষা আর ভঙ্গিমা ব্যবহার হয়েছে তা যদি কর্তৃপক্ষের চোখ কিংবা কান পর্যন্ত পৌঁছত তবে হয়ত লঙ্কাকান্ড ঘটে যেত । সমালোচকরা ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশন নিয়েও কম কথা বলেনি । আমাদের দেশে বিদ্যুত বিভ্রাটের ঘটনা এটাই প্রথম নয় । ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর সিডরের সময় এমনভাবে একবার বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল গোটা দেশ । তবে সে সময়কার প্রেক্ষাপট আর পহেলা নভেম্বরের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন । ১৫ই নভেম্বর বিদ্যুত বিভ্রাটের আলামত ছিল কিন্তু পহেলা নভেম্বরের সেরকম কিছুই ছিল না । না ছিল পূর্ব ঘোষণা কিংবা প্রাকৃতিক বিপরর্যয় । শুধু যে বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটেছে তাও নয় । আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতেও এমন ঘটনা ঘটেছে । বিগত ৩১-০৭-২০১২ সালে ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি গ্রিডে বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল দীর্ঘক্ষণ । উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ভারতে ঐ বিদ্যুত বিপরর্য্যয় ছিল পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বড় বিদ্যুত বিভ্রাট । যাতে প্রায় ৬৭০ মিলিয়ন মানুষ ভোগোন্তিতে পড়েছিল ।
পহেলা নভেম্বরের একদিনে বিদ্যুত বিভ্রাটে রাষ্ট্রের কতটাকা ক্ষতি হয়েছে তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেয়া সম্ভব নয় । তবে সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে উৎপাদনমূখী শিল্প খাতে । বিদ্যুতের অভাবে পণ্য উৎপাদন বন্ধ থাকায় একদিনে প্রায় ৪’শ কোটি টাকার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা । ঐ দিন বিদ্যুতের অভাবে সারা দেশে লাখ লাখ শিল্প কারখানার চাকা বন্ধ ছিল । অনেক কারখানা জেনারেটর দিয়ে সচল রাখতে হয়েছে । এতে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের উৎপাদন খরচ ৩০ শতাংশ বেড়ে যায় । এই অতিরিক্ত খরচের পুরোটাই লোকসান হিসেবে উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে যোগ হবে । চাঁদাবাজি, হরতাল, দুর্নীতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নানা ধরনের বিধি-নিষেধের কারণে এমনিতেই উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না । তার উপর বিদ্যুত বিভ্রাট ‘মরার উপর খড়ার ঘাঁ’ হয়েই দেখা দিয়েছিল । এদিকে ছোট-বড় মিলিয়ে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পোশাক শিল্প রয়েছে । এ শিল্পে প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছে । কিন্তু পহেলা নভেম্বর বিদ্যুত না থাকায় অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ছিল । কিছু কারখানায় বিদ্যুতের বিকল্প পন্থা হিসেবে জেনারেটর দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা করা হয় । কিন্তু টানা জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন সচল রাখতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে । ১২ ঘন্টার বেশি বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকায় জেনারেটর দিয়ে ৪ ঘন্টার বেশি উৎপাদন সচল রাখা সম্ভব হয়নি । বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রফতানিমুখী শিল্প খাতও । চলতি অর্থ বছরে রফতানি খাতের আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩২০ কোটি ডলার । ওই হিসাসে রফতানিমুখী শিল্প খাতের একদিনে আয় হচ্ছে ১১ কোটি ডলার । বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকায় পহেলা নভেম্বর মাত্র একদিনে ১১ কোটি ডলারের পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে । এতে বিদেশি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের সমস্যা হবে বলে মনে হয় । যার ফলশ্রুতিতে ক্রেতা হারানের শঙ্কা আবারও জোরদার হল ।
বিদ্যুত বিভ্রাটের ধাক্কার সামলে উঠতে না উঠতেই দেশবাসী শুনছে ২০১৫ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে সরকার বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে । এ লক্ষ্যে ডিসেম্বরে গণশুনানির আয়োজন করবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) । যদিও গণশুনানির আয়োজন করার কথা বলা হচ্ছে তবে সেটা আনুষ্ঠানিকতা বহি অন্যকিছু নয় । সংস্থাটি ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে । অক্টোবরে বিইআরসির কাছে ইউনিট প্রতি প্রায় ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৮১ পয়সা দরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রস্তাব দেয় বিদ্যুত উন্নয়ণ বোর্ড (পিডিবি) । উল্লেখ্য যে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুত খাতে বিদ্যুত উৎপাদনের আমূল পরিবর্তন এনেছে বলে দাবী করে । তাদের দাবী অনুযায়ী, সামান্য সময়ের মধ্যে তারা জাতীয় গ্রীডে ৩৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ করতে সক্ষময় হয়েছে । দেশের মানুষ এ খবর শুনে আশায় বুক বেঁধেছিল । জমিতে সেচের সমস্যা হবে না, কারখানার উৎপাদন বাড়বে । যার কারনে পূর্বের তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার প্রাপ্তিও বাড়বে । তবে আশার বানীর সম্পূর্ণ প্রতিফলন হয়নি । দৈনিক সমকালের সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের বিদ্যুত খাত নিয়ে একটি গবেষণামূলক নিবন্ধে সাংবাধিক মীর আব্দুল আলীম লিখেছিলেন, ‘সরকার বিদ্যুত উৎপাদনের নামে তরল জ্বালানি ভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্লান্টগুলোর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির ওপর বার্ষিক ২০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির দায় চাপিয়ে দিয়েছে । আগামী বছরের শুরুতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি কার্যকরী করার পূর্বে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল চলতি বছরের মার্চের শুরু থেকে । এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তখন বিদ্যুতের দাম প্রায় ৭ শতাংশ (৬.৯৬%) বৃদ্ধি করেছিল । এর পূর্বেও বর্তমান সরকারের পূর্বের মেয়াদে আরও ৬ বার দাম বাড়িয়েছিল এবং প্রতিবারই বলেছিল পরবর্তীতে আর দাম বৃদ্ধি করা হবে না । বিদ্যুত খাতে এত বিল্পবের কথা ঘোষণা করা হলেও বাস্তবতা কোথায় ? বরং বিল্পরেব চেযে ঘাপলাই বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে । বিদ্যুত উৎপাদন না করায় বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছে ৮ম জাতীয় সংসদীয় সরকারের । অথচ তখনকার অবস্থা আর এখনকার অবস্থায় খুব বেশি তফাৎ আছে বলে মনে হয়না । বর্তমান সরকার সামিট গ্রুপ ও দলীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা কুইক রেন্টালের নামে হরিলুটের ব্যবস্থা করেছিল বলে দাবী উঠেছে । জরিপ বলছে, কুইক রেন্টালের কারণে বছরের দেশের ক্ষতি ৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা । ২০০৯ থেকে ’১৪ সাল পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরে শুধু কুইক রেন্টালে লাপাত্তা হয়েছে ৩১ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা । যা বিগত বিএনপি-জামাআত জোট সরকারের ৫ বছরের মোট বিদ্যুত বাজেটের আড়াই গুন বেশি । উল্লেখ্য, গত বিএনপি-জামাআত জোট সরকারের ৫ বছরের বিদ্যুতে মোট বাজেট ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা । যদিও মইন-ফখরুদ্দীন গংরা বিদ্যুতে ২০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অপপ্রচার চালিয়েছিল । যেখানে মোট বাজেট ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা সেখানে ২০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয় কেমনে ?
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৩৫
সামসুন নাহার বলেছেন: টাকা পকেটে তো আর সোজা নিয়ে ভরা যাবে না। একটা বড়সড় ইসু্ চাই বড়সড় অংকের টাকা পকেটে নেয়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৯
পাপতাড়ুয়া বলেছেন: বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে গ্রাহকের দরজায় পৌছানো, এর সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন, পুরো ব্যপারটাই প্রকৌশল বিদ্যা। অথচ এই সেক্টরে নন টেকনিক্যাল পারসনরা ডিসিশান মেকার।
পহেলা নভেম্বরের বিপর্যয় সামাল দেয়ার ফুল ক্রেডিট বিভিন্ন লেভেলে কর্মরত প্রকৌশলীদের। অথচ আবার তারাই মূল্যায়নের বাইরে।