নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে যখন আমাদের বিজয় উৎসবের ৪৩তম বার্ষিকি পালন করছি ঠিক সেই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মি পাবলিক স্কুলে বর্বর তালেবান হামলায় পৃথিবীর বৃন্ত থেকে ঝড়ে গেল ১৩৫ জন শিক্ষার্থীর জীবনসহ দেড় শতাধিক মানুষের তরতাজা প্রাণ । যে মাসে পাকিস্তানের ১৭ বছর বয়সী মালালা পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান পুরস্কার আলফ্রেড নোবেল প্রবর্তিত নোবেল পুরস্কার গ্রহন করল সে মাসেই তার বয়সী কিংবা তার থেকে কম বয়সী ১৩৫ জন শিক্ষার্থীর জীবন কেঁড়ে নিল পাকিস্তানের উগ্রপন্থি তালেবান গোষ্ঠী । মাত্র ৬ জনের একটি দল মুহুর্তের হামলায় নিভিয়ে দিল মালালার উত্তরসূরীদের সকল স্বপ্ন । পেশোয়ারের এ ট্র্যাজেডী প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে গোটা বিশ্ব শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে । পাকিস্তানের এ ঘটনাকে কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা চলে ? নৃশংসতা, বর্বরতা, পশুত্ব কিংবা হায়েনাদের আক্রমনও সম্ভবত এত সহিংস এবং নির্দয় হয়না । পাকিস্তান ১৬ ডিসেম্বরকে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডী’ ঘোষণা করে তিনদিনের শোক পালন করছে । তিনদিন কিংবা তিন সহস্রাব্দের শোক পালন করেও পাকিস্তান এ ক্ষত মুছতে পারবে কি ? বিশ্বের মধ্যে যতগুলো ব্যর্থ রাষ্ট্র রয়েছে তার মধ্যে বোধহয় সর্বশীর্ষে অবস্থান করছে এক কালের আমাদের অংশীদার এ রাষ্ট্রটি । রাজনৈতিক হানাহানি, ধর্মীয় উগ্রপন্থি, জঙ্গীবাদসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এ রাষ্ট্রটি আদৌ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা সন্দেহ । পাকিস্তানী সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র আফগানিস্তানে এককালে জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি থাকায় সে জঙ্গিরা এখন পাকিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে বেশ শক্ত ভাবেই শিকড় প্রথিত করেছে । পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দূরত্বের সুযোগ নিয়ে জঙ্গীরা বারবার তাদের শক্তি প্রদর্শণ করছে । অথচ পাকিস্তানের প্রশাসনের তাতে টনক নড়েনি । প্রশাসনের উদাসীনতার খেসারত দিতে হল শতাধিক স্কুল শিক্ষার্থীকে । মূহুর্তেই অন্ধকার করে গেল শত পরিবারে স্বপ্ন । এভাবে আর কতদিন টিকতে পারবে পাকিস্তান ? টিকবে মানবতা ? এ বর্বর হামলার পর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে । ১৮ ডিসেম্বর বিমান হামলার মাধ্যমে অন্তত ৫৭ জঙ্গিকে সেনাবাহিনী নিহত করেছে । সেনাপ্রধান আফগানিস্তান সফরে গেছেন যাতে আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারীকে ফেরত আনতে পারেন । প্রশ্ন জেগেছে, পাকিস্তানি সেনাবাহীনির এ লড়াই কতদিন ধারবাহিক হবে । পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলে প্রায় ২০০ জঙ্গি আটক রয়েছে যারা মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী । এদের নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষও চরম আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে কারণ জঙ্গীরা জেলেও আক্রমন চালাতে পারে । ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পেশোয়ারে যেভাবে নৃশংস হামলা হয়েছে এমন বর্বরোচিত হামলা সম্ভবত বিশ্ববাসী আর একবারও শিক্ষার্থীদের ওপর দেখেনি । অথচ এমন সব বর্বরোচিত ঘটনা পাকিস্তানের জন্য নতুন কোন অভিজ্ঞতা নয় । ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মিনগোরাতে স্কুল থেকে ফেরার পথে মালালা এবং তার দুই সহপাঠিনীকে তালেবানরা গুলি করে । বুলেট মালালার মাথায় আঘাত করলেও সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান পাকিস্তানের গর্ব মালালা । তালেবানদের আক্রমনের শিকার মালালার অপরাধ ছিল তিনি নারী শিক্ষা নিয়ে কথা বলতেন । উগ্রপন্থি তালেবান ধর্মান্ধরা এটাকে মেনে নিতে পারেনি । তারা চেয়েছিল পাকিস্তানে নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ থাকবে । অথচ ইসলাম নারী শিক্ষার ব্যাপারে ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছে । ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে এক জনসভায় তালেবান জঙ্গীদের গুলি ও বোমা হামলায় নিহত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টো । ২০০৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না । কেননা ঐ বছর লাহোরে শ্রীলঙ্কার টিম বাসে হামলা করে পাকিস্তানের কতিপয় বন্দুকধারী জঙ্গী । যে হামলায় নিরাপত্তারক্ষী আটজন লোক মারা গেলেও শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা গুলিবিদ্ধ হন কিন্তু প্রাণ হারাননি । এছাড়াও পাকিস্তানে এমন কোন সূর্য অস্ত যায়না যেদিন অসংখ্য লোক তালেবান জঙ্গীদের গুলি কিংবা বোমা হামলায় নিহত না হন । তালেবান গোষ্ঠী তাদের দলভূক্তদেরকে এমনভাবে ব্রেণ ওয়াশ করে যাতে আত্মগাতী স্কোয়াডের সদস্যরা মনে করে তারা নিহত হলে নির্ঘাত জান্নাত ! অথচ ইসলামে মানুষ হত্যাকারী এবং আত্মহত্যাকারীরা বিনাবিচারেই জাহান্মাম প্রাপ্ত হবে বলে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে ।
পাকিস্তান থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি দীর্ঘ চার দশকেরও কিছু বেশি সময় । এজন্য আমাদেরকে প্রত্যহ আলহামদুলিল্লাহ পড়া উচিত । পাকিস্তানে যেভাবে জঙ্গী হামলা হচ্ছে তা বিশ্বের শান্তিকামী কোন মানুষ কোনদিন সমর্থন দিবে না । পেশোয়ারের এ ঘৃণিত ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আরও খারাপ হবে, এতে কোন সন্দেহ নাই । পাকিস্তানের এ ঘটনার পর অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, আমরা বাংলাদেশীরা কতটা নিরাপদ আছি এবং কতদিন নিরাপদ থাকতে পারব । কিছুদিন পূর্বে আয়মান আল জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা এবং গত মাসে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত জরিপে, বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে যে সম্ভাবনার কথা ঘোষিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশকে কতটা নিরাপদ ভাবা যায় । পাকিস্তানের জঙ্গীবাদীদের সুযোগের অন্যতম কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব । বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ততোটা সুড়িত-পীড়িত না থাকায় জঙ্গী উত্থানের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না । কিছুদিন পূর্বে পুলিশ হেফাজত থেকে জঙ্গী ছিন্তাইয়ের ঘটনা কিংবা দেশের নেত্রীদ্বয়ের উপর হামলার পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকা জঙ্গীদের ভারত থেকে আটকের মাধ্যমে স্পষ্টতঃই বোঝা যায় জঙ্গীরা বসে নাই । শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইসহ অনেক জঙ্গীদের উত্থান এবং পতন তো এ ভূমেই হয়েছিল । তাদের মূল যে চিরতরে উপরে ফেলা গেছে এ দাবী করার যৌক্তিক কোন কারণ সম্ভবত এখন আর নাই । বিভিন্ন সময় বোমাসহ কিংবা বোমা তৈরি অবস্থায় জঙ্গীদের আটক করার মাধ্যমেই স্পষ্ট হয় জঙ্গীরা সর্বদা অঙ্কুর দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে । কাজেই প্রশাসনকে আরও সজাগ দৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গীদের ব্যাপারে কঠোর হতে বিনীত অনুরোধ জানাই । পাকিস্তানে যেভাবে ১৩৫ জন শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হয়েছে এভাবে আমার প্রিয় দেশের একজন শিক্ষার্থীও জীবন হারাবে এবং তা মেনে নিত পারব এমনটা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবি না ।
বিশ্বব্যাপী জঙ্গী এবং উগ্রপন্থিদের ব্যাপারে রেড এ্যালাট জারি করার এখনি সময় । পেশোয়ারের মত আর যেন কোন মা-বাবা-ভাই-বোন কিংবা আত্মীয়-স্বজন, পারা-প্রতিবেশীকে আদরের দুলাল-দুলালীদের হারিয়ে শোকাচ্ছন হতে না হয় । কতিপয় জ্ঞানশূন্য মানুষ জঙ্গীদের এ বর্বরতার জন্য ইসলামকে দায়ী করে । অথচ ইসলামের সাথে জঙ্গীদের কিংবা এমন উগ্রপন্থী মনোভাবাপন্নদের ন্যূণতত সম্পর্ক নাই । যেহেতু বেশিরভাগ জঙ্গিরা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করে সেহেতু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে এটাই বোধহয় ইসলাম । তাদের জ্ঞাতার্থে বলতেই হচ্ছে, এটা ইসলাম নয় এবং ইসলাম মানুষ হত্যা সমর্থন করে না । তারপরেও যাদের সংশয় আছে তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে কিছুটা পড়াশোনা করার আহ্বান জানাই । ইসলামের যৎ-সামান্য ধারণা পেলে ইসলাম বিদ্বেষীরাই বলতে বাধ্য হবে ইসলাম জঙ্গীত্ব প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করে । ইসলাম প্রারম্ভ শান্তিরবানী প্রচারের মাধ্যমে হয়েছিল এবং এটা অনবরত শান্তি প্রচার করেই যাবে । যারা ইসলামিক জেহাদের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে জঙ্গীত্ববাদের দিকে ডাকে তারা নিশ্চয়ই কোন মুসলিম বিদ্বেষী চক্রের দালাল অথবা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ । জঙ্গীদেরকে রুখতে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে । বিশ্বের বুকে ইস্রাঈলকে যেমন বিষফোঁড়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তেমনি গোটা বিশ্বের শান্তির বিপক্ষে জঙ্গিত্ব এবং এদের কর্মকান্ড মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে । জঙ্গিদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে না পারলে শান্তির ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট থাকবে না । তবে খেয়াল রাখতে হবে জঙ্গী দমনের নামে যেন নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা না হয় । আমেরিকা যেভাবে জঙ্গীদমনের নামে নিরাপরাধ নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করেছে তা কোন অবস্থায় জঙ্গী দমনের পদ্ধতি হতে পারে না বরং তাদের এ পদ্ধতিও এক ধরনের জঙ্গিবাদ । পেশোয়ারের ঘটনার পর জঙ্গীরা দাবী করেছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং মার্কিন বাহিনী তাদের নিরাপরাধ নারী-শিশুদেরকে যেভাবে হত্যা করেছে এটা তার প্রতিশোধের একটি ধাপ মাত্র । আমাদের দেশের কোন কোন রাজনৈতিক দল জঙ্গীত্বের ইস্যু সৃষ্টি করে পশ্চিমাবিশ্বকে তাদের পাশে পাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে । তাদেরকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই । নিশ্চয়ই ছোট বেলায় মিথ্যুক রাখাল বালক এবং বাঘের গল্পটি সবাই কমবেশি পড়েছি কিংবা অন্যের কাছে শুনেছি । কাজেই আমাদের পরিণতিও যেন তেমনটি না হয় । জঙ্গীত্বের ইস্যু সৃষ্ট করে সকল বিরোধীদলকে যেন জঙ্গী আখ্যায়িত করে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া না হয় । সবাই মিলে প্রকৃত জঙ্গিদেরকে রুখতে হবে ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৫
নিলু বলেছেন: তাদের পরিণামও হচ্ছে বলে মনে করতে পারেন
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪১
সরদার হারুন বলেছেন: পাকিস্তান হারিয়েছে সন্তান তাদের সাথে আমরাও সম ব্যথিত। তালেবানের কোন লাভ হয়নি কিন্তু পাকিস্তানের লাভ হয়েছে এই যে সন্তান হারানোর বেদনা যে কত ভীষণ তা বুঝতে পেরেছে। এখন ভেবে দেখুন যে ১৯৭১ সালে বাংলার
যে শিশুদের তারা হত্যা করেছে তা আমাদের বুকে কি ব্যাথা দিয়েছে ।
লেখায় দিলেম +++++++++++++++