নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭২ আর ৪৮ এ বন্দী প্রিয় স্বদেশ

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:৪৫

চলছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট । লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা দারুণ খেলে পৌঁছে গেছে কোয়াটার ফাইনালে । তবুও শিরোনামে প্রদত্ত সংখ্যাদ্বয় কোন রানের হিসাব নয় । পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী ৭২ সাল কিংবা বৃটিশদের থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরের বছর ৪৮ কেও নির্দেশ করার কোন ইচ্ছা নয় । ৭২ ও ৪৮ দু’টোই জোড় সংখ্যা । গাণিতিক বিবেচনায় বেশ স্বাস্থ্যবান সংখ্যাও বটে । তবে বর্তমানে এই সংখ্যা দু’টোতেই আটকে গেছে গোটা বাংলাদেশ । সপ্তাহের সর্বোমোট ১৬৮ ঘন্টার মধ্যে ১২০ ঘন্টার সংক্ষিপ্ত একটি হিসাব । হালের বাংলাদেশের এটিই এখন পরিচিত আলোচিত সংখ্যা । প্রায় মাস অবধিকাল থেকে সপ্তাহের শুরুতে ৭২ এবং মাঝামাঝি সময়ে ৪৮ সংখ্যাটি শুনতে শুনতে মানুষ কিছুটা আগ্রহ হারিয়েছে বটে তবে অজনা কৌতুহলও জন্মেছে নিত্যদিন । একপক্ষ এ সংখ্যার ঘোষণা শ্রবনের জন্য মুখিয়ে থাকে । এক সপ্তাহে কতঘন্টা-এই যোগ/গুন অঙ্কটি যারা ছোট বেলায় করেনি তারা তাদের ভূল শুধরে নেয়ার সহজ সুযোগ পেয়েছে । প্রতি শনিবার বিকালে আন্দোলনরত বিএনপির মূখপাত্রের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি ঘোষণা পত্র মিডিয়ার কাছে পৌঁছে যায় এবং মিডিয়ার সৌজন্যে দেশবাসী জানতে পারে রবিবার সকাল থেকে আগামী মঙ্গলবার সকাল পর‌্যন্ত মোট ৭২ ঘন্টা হরতাল । পূর্ব ঘোষিত বুধবার সকাল ৬টা উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরেকটি ঘোষণাপত্র মিডিয়ার কাছে পৌঁছে যায় যাতে শুধু লেখা থাকে বুধবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর‌্যন্ত অর্থ্যাৎ আরও ৪৮ ঘন্টা হরতাল বৃদ্ধি করা হয়েছে । শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা অর্থ্যাৎ এই ৪৮ ঘন্টা সরকারী ছুটি থাকায় বিএনপি-জোটও ছুটির মেজাজে একটু অবকাশ পালন করে । অবশ্য এটা তো তাদের পূর্বের অভ্যাস কেননা তারাও এক সময় ক্ষমতায় ছিল এবং তখন তারা ফুরফুরে মেজাজেই শুক্র ও শনিবার পার করে দিত । আজও সে অভ্যাস তারা ত্যাগ করতে পারেনি । বিএনপির কল্যানে আজকের শিক্ষার্থীরাও একটি কঠিন(!) অংক সহজেই শিখতে পেরেছে । এ শিক্ষার্থীদের যখনই জিজ্ঞাসা করা হবে-সপ্তাহে কয়ঘন্টা ? তখন তারা তোতা পাখির মত ঠোঁট উল্টিয়ে নির্ভূল ফল শুধু বলে দিবে; কোন প্রকার মস্তিষ্কের ব্যবহার ব্যতীতই । মিডিয়া কর্মীদেরও একটি স্থায়ী অভ্যাস গড়ে ওঠার মত অবস্থা হয়েছে । শনিবার কিংবা মঙ্গলবার বিকালে তারা বার্তা প্রাপ্ত হওয়া ছাড়াই হরতালের ঘোষণা দিতে পারেন । অবশ্য এদিনে হরতালের ঘোষণাপত্র তাদের কাছে পৌঁছতে গত মাসাধিকাল কোন কৃপণতা করেনি । দেশের সাধারণ মানুষও বেশ আস্থার সাথে বলতে পারেন, সপ্তাহে কতদিন, কিভাবে হরতালের ঘোষণা আসবে । দেশের সবাই যেন হরতাল বিশেষজ্ঞে উন্নীত হয়েছে ।

ছোট বেলায় শুনেছিলাম ন্যায় বিচারকের গল্প । এ গল্পের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল, হাকিম নড়ে তবু হুকুম নড়ে না । আজ বিএনপির মধ্যেও তেমন একটি আলামত প্রকাশিত হয়েছে । হরতালের ঘোষণাদাতার পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু হরতালের রূপরেখার কোন পরিবর্তন নাই । প্রথম দিকে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী হরতালের ঘোষণা দিতেন । তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর আরেক জেষ্ঠ্য নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ এ ঘোষণা ধারাবাহিক করতেছিলেন । গত মঙ্গলবার রাতে নাকি সাদা পোশকাধারী ডিবি সদস্যরা রাজধানীর একটি বাসা থেকে সালাউদ্দিন আহমেদকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে-এমন দাবি করেছে তার পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে । অবশ্য ডিবি কিংবা অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা এ দাবী অস্বীকার করে আসছে । ব্যাপারটির রহস্য উদঘাটন হতে হয়ত আরও কিছুদিন সময় লাগবে । যেহেতু ব্যাপারটি আদালত পর‌্যন্ত গড়িয়েছে সুতরাং রহস্যের জট উম্মোচন হবেই । তবে সম্ভাব্য হিসেবে সালাউদ্দিন আহমেদ কোন পক্ষদ্বারা গুম হওয়া কিংবা ডিবি কর্তৃক উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার দু’টো সম্ভাবনাই থাকতে পারে । অতীতে যেহেতু বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ অনেকেই গুম হয়েছেন তাই গুমের ব্যাপারটিকেও উড়িয়ে দেওয়া যায়না । অন্যদিকে ডিবি তাকে উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে যতই অস্বীকৃতি জানাক কিংবা উঠিয়ে যদি নাও নিয়ে থাকে তবুও সন্দেহের তীর ডিবির দিকে থাকবেই কেননা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও সাদা পোশাকধারীরা উঠিয়ে নেয়ার পর প্রথমে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল কিন্তু কয়েকঘন্টা পর সে রহস্যও উম্মোচিত হয়েছিল । তাই তার পরিবারের দাবীর ব্যাপারেও সন্দেহ থাকাটা অস্বাভাবিক নয় । আগামীতে হয়ত রিজভী কিংবা সালাউদ্দিনের মত অন্য কোন নেতা হরতালের রূপরেখা ঘোষণা করবেন তবে সে ঘোষণা ৭২ এবং ৪৮ এর মায়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে মনে হয়না । বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে যেহেতু আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে কাজেই তিনি হয়ত অচিরেই গ্রেফতার হবেন । তখন হয়ত সংখ্যা দুটি একাকার হয়ে যাবে ।

গত ৬ জানুয়ারী থেকে অবরোধ এবং এর কিছুদিন পর থেকে ধারাবাহিক হরতালে দেশের অসংখ্য মানুষেকে জীবন হারাতে হয়েছে । প্রাণহানীর সংখ্যা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি । নতুন করে উচ্চারণ করতে গেলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণজনিত ব্যথানুভূত হয় । গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের নামে রাজনৈতিক আন্দোলনের অর্থ যদি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া হয় তবে সে আন্দোলনের মূখে নোংরা কিছু দিলাম । এ আন্দোলনে যারা পক্ষে-বিপক্ষে জড়িত তাদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছে তাদের ব্যাপারে সামান্যতম সহানুভূতি নাই কিন্তু যারা একেবারে নির্দোষ অর্থ্যাৎ জীবন ও জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হয়ে আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে কিংবা অন্যকোনভাবে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের ব্যাপারে কৈফিয়ত কে দিবে ? আমাদের দেশটি একটি উন্নয়ণশীল রাষ্ট্র । উজ্জ্বল ভবিষ্যত যাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে সেই দেশেটির অর্থনৈতিক মেরুদন্ড প্রায় ভেঙ্গে দিয়েছে টানা অবরোধ ও চলমান হরতাল । এখনো সমস্যার সমাধান হওয়ার কোন লক্ষণ নাই অথচ এখন পর‌্যন্ত যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠা আগামী দশ বছরেও সম্ভব কিনা তার গ্যারান্টি কেউ দিচ্ছে না । ক্ষমতাশীন দলের পক্ষ থেকে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক বর্ণনা করা হলেও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী গত দুই সপ্তাহ আগে বলেছিলেন, বিএনপি-জোটের আন্দোলনে এখন পর‌্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে । প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের বর্ণিত ক্ষতির অঙ্ক আর সেখানে থেমে নাই । ক্ষতির পরিমান ৩ লাখ কোটি ছাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে জানানো হচ্ছে । এখন পর‌্যন্ত রাষ্ট্রের যে পরিমান অর্থের ক্ষতি হয়েছে তাতে ১৬ কোটি মানুষের এ রাষ্ট্রটি আগামী দুই বছর হেসে খেলে কাটিয়ে দিতে পারত । ক্ষতির অঙ্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আন্দাজ করারও সাধ্য নাই । রাজনীতি যদি দেশের উন্নয়ণের স্বার্থে হয় তবে ক্ষমতাশীন ও তাদের বিরোধীরা যা করছে এই কি উন্নয়ণের নমুনা ? এক দাদু একদিন হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘দাদু ! দেশটা নিয়ে তোমরা যতই ভাব তাতে কোন লাভ হবে না । কারণ দেশটা যারা চালায় তারা এদেশ নিয়ে ততোটা ভাবে না । খোঁজ নিয়ে দেখ, এদেশের অনেক মন্ত্রী-এমপিদের ছেলে স্থায়ীভাবে বিদেশে বাস করছে । তারা কোন দিন এদেশের ফিরতেও চাইবে না’ । দাদুর কথায় সেদিন খোঁজ নিতে যাইনি কিংবা আজও যাব না । বিশ্বাস রাখি, যারা আমাদের দেশ পরিচালনায় আছে তারা দেশের কল্যানেই কাজ করেন । কথায় বলে, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদুর’ ।

জীবন এবং সম্পদের কথা না হয় বাদ দিলাম । জীবনহানীর ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয় । যা ঘটে গেছে তা নিয়ে টানা-হেঁচড়া করলে আপদ আরও বাড়বে । কিন্তু সম্পদের ক্ষতির ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয় । আজকে যারা তরুণ তারা যদি সঠিকভাবে বেড়ে ওঠতে পারে তবে বর্তমানের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব । তবে তার সম্ভাব্যতা কোথায় ? ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখ শুরু হয়েছিল দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক পরীক্ষা । দেশের প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ১০ বছরের স্বপ্নের বাস্তবায়নে পদার্পণ করার সিঁড়িতে যে ধাক্কা খেল তা কিভাবে কাটিয়ে উঠবে ? এখন পর‌্যন্ত তারা যতগুলো পরীক্ষা দিয়েছে তার একটিও পূর্ব-নির্ধারিত রুটিনে দিতে পারেনি । শুক্র ও শনিবারেই শুধু পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে । এ দু’টো দিনেও কি পূর্ণ নিরাপত্তা আছে ? উচ্চাশিক্ষাকাঙ্খী দেশের ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধ্যয়ণরত । এমনিতেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ বছর মেয়াদী অনার্স শেষ হতে ৬ বছর লেগে যায় । ‘মড়ার ওপর খরার ঘাঁ’ হিসেবে এ বছরের পরীক্ষার সময় অর্থ্যাৎ ফেব্রুয়ারী, মার্চে হরতাল এবং অবরোধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে । দেখা যাবে, ছাত্র জীবন শেষ করতে করতেই এদের চাকরি পাওয়ার রাষ্ট্র নির্ধারিত বয়স শেষ ! ছোট বেলায় মজার দেশের গল্প নামক একটি কবিতা পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভূক্ত ছিল । যে কবিতায় স্বাভাবিক সব বিষয়ের বিপরীত কাজ করা হত । আজ গোটা বাংলাদেশ যেন মজার দেশে পরিণত হয়েছে । খোলার দিনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ থাকে আর ছুটির দিনে ক্লাস । ফেসবুক কিংবা অনলাইনে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে বাড়ীর কাজ দেন । দেশটা পুরো ডিজিটাল না হলেও অন্তত ডিজিটালের সামান্য ছোঁয়ায় অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতির স্বাদ পেতে শুরু করেছে । তাও যদি সমগ্র দেশ জুড়ে হত ! মফস্বলের শিক্ষার্থীরা না পারছে খোলার দিনে শিখতে না পারছে ছুটির দিনে ।

দেশের মানুষ মুক্তি চায় । মুক্তি কোন পথে আসবে তা এদেশের মানুষ নির্ধারণ করতে না পারলেও বিদেশীরা পরামর্শ দিচ্ছেন । সুতরাং শান্তির পথে হাটা উচিত । মানুষের বুকে পা দিয়ে ক্ষমতায় বসে থাকা কিংবা ক্ষমতায় যেতে চাওয়া-কোনটারই ফল ভালো হয় না । সোনার দেশটি আজ দাবানলের মত জ্বলছে । এ অশান্তি থেকে মুক্ত হতেই হবে । মানুষের জীবনের যেমন নিরাপত্তা চাই তেমনি নিরাপত্তা দরকার সম্পদের । তৃতীয় বিশ্বের এমন একটি দেশের এভাবে সম্পদের অপচয় করা আদৌ উচিত নয় । সপ্তাহের ১৬৮ ঘন্টা কিংবা মাসের ৭৪০ ঘন্টাই হোক এদেশেল উন্নয়নের । উন্নয়ণ আর অবনতির জন্য সপ্তাহকে ভাগ করার দিন শেষ হয়ে নতুন প্রভাতের সাথে আমরাও এগিয়ে চলতে চাই গণতন্ত্রের পিঠে চড়ে । ক্ষমতার মোহের চেয়ে দেশের কল্যানকামীতাকে প্রধান্য দেওয়াই হোক সকলের রাজনৈতিক লক্ষ্য ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.