নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“I dream my painting and I paint my dream.”\n\n ― Vincent van Gogh

রাখাল.

“I dream my painting and I paint my dream.” ― Vincent van Gogh

রাখাল. › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুর বিকাশ

২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০৭

একটি কাজের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নির্ভর করে কাজ পূর্ববর্তী পরিকল্পনার উপর। যেমন ধরুন, আপনি কিছু ভুট্টার বীজ বপন করলেন, কিন্তু বীজ বাছাইয়ের সময় আপনি বীজের গুণগত মানের দিকে উদাসীনতা দেখালেন। ফলশ্রুতিতে কি হবে ? দেখবেন গাছগুলো যখন বড় হবে তখন একেকটা গাছ থেকে একেক রকমের ফল আসছে। কোন একটা বীজ থেকে হয়তো চারাই গজায়নি আবার কোনটিতে দেখবেন গাছ হয়েছে ঠিকই, তবে ফল ধরছে না।
অথচ গোঁড়াতেই যদি আপনি একটি পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিতেন। যদি আপনি বীজ বাছাইয়ের ব্যাপারটাতে অধিক গুরুত্ব দিতেন তবে তার ফল কিন্তু ভিন্ন হতে পারত।
তেমনি একটি শিশুর বিকাশের বেলায়ও গোঁড়াতেই আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রাখা উচিৎ। শিশুর বিকাশে প্রথম পাঁচটি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের। এই পাঁচ বছর যদি একটি শিশুর পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যা করা হয় তবে শৈশব আর কৈশোরের বাকি সময়টাতে তার ফল পাওয়া যাবে।
শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান দিকটি হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ। এই মস্তিষ্কের বিকাশ, যাকিনা আমরা বলতে পারি মানসিক বিকাশ কিংবা বুদ্ধিমত্তার বিকাশ, তার সিংহভাগই কিন্তু শিশুর জন্মের পর থেকে শুরু করে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই হয়ে থাকে। আর তাই এই পাঁচ বছর একটি শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিৎ।
এই পাঁচটা বছর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ধরার কারন হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কে নিউরন নামের এক ধরনের কোষ বিদ্যমান। এটি বিশেষ ধরনের একটি কোষ যাকিনা শরীরের অন্য সব কোষের থেকে একেবারেই আলাদা। এই কোষ শরীরের অন্য সব কোষগুলোর মত বৃদ্ধি পায়না। সদ্য জন্মান শিশুর মস্তিষ্কের নিউরনের সংখ্যা আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মস্তিষ্কের নিউরনের সংখ্যা সমপরিমাণ থাকে। কেবল একটি নিউরন অন্য একটি নিউরনের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করে। এই বন্ধনকে বলা হয় সিনাপ্স (Synapse) । আর এই বন্ধন তৈরি হওয়ার সময়কাল জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। এই বন্ধন কম হবে নাকি বেশি হবে তা নির্ভর করে শিশুকে বুদ্ধি বৃত্তির সহায়ক পদ্ধতিতে পরিচর্যার উপর। যেহেতু এই সিনাপ্স বা বন্ধন পাঁচ বছরের পরে আর সংগঠিত হয় না কাজেই এই পাঁচ বছরের উপরে মা-বাবাকে বিশেষ করে গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে জন্মের আগে যখন কিনা শিশুটি মাতৃগর্ভে থাকে তখন থেকেই কিন্তু পরিচর্যার কাজটি শুরু করে দেওয়া উচিৎ। সেটা গর্ভের প্রথম মাস থেকেই।
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীদের হালকা ব্যায়াম নবজাতক শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকেরা এমনটাই বলছেন।
এছাড়াও গর্ভবতী নারীর পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য ও অধিক আমিষ বা প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া , মানসিক কিংবা শারীরিক চাপ থেকে দূরে রাখা, নিয়মিত বিশ্রাম ও ঘুম, টিকা দেওয়া এই সমস্ত বিষয় গুলোর দিকে খেয়াল রাখলে প্রসবের পরে শিশুটি হবে সুস্থ স্বাভাবিক ও রোগবালাই মুক্ত। ফলস্বরূপ জন্মের পরে শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এবার আসা যাক শিশুর শৈশবের সময়টাতে। একটি শিশু জন্ম নেওয়ার পর থেকে কৈশোর বা বয়ঃসন্ধি কাল শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টাকে মূলত আমরা শৈশব কাল বলে থাকি। তবে বেশ কিছু সমাজে বয়ঃসন্ধি কালের সময়টাকেও শৈশবের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যদিও শৈশব আর বয়ঃসন্ধি কাল সম্পূর্ণ আলাদা।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই শৈশবকালের একটা নির্দিষ্ট বয়স সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই নির্দিষ্ট বয়স সীমা পার হতেই তারা প্রাপ্ত বয়স্কের কাতারে চলে আসে। বিভিন্ন দেশ ভেদে শৈশবের বয়স সীমা ১৫-২১ বছরের মধ্যে, তবে অধিকাংশ দেশে এ সীমা ১৮ বছর ধরা হয়।
শৈশবের এই সময়টাকে আমরা তিনটি ভাবে ভাগ করতে পারি। তার মধ্যে শৈশবের প্রাথমিক সময় হচ্ছে একটি শিশুর জীবনে সব চাইতে গুরুত্বের। National Association for the Education of Young Children-এর মতে শৈশবের প্রাথমিক ভাগটা ৮ বছর বয়স পর্যন্ত।
একটি শিশুর বিকাশ মূলত দুটি দিক ধরে হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে তার শারীরিক বিকাশ অপরটি মানসিক বিকাশ । তবে এই শারীরিক ও মানসিক বিকাশের বেলায় অবশ্যই একটি ভারসাম্য রাখতে হবে। যার মানে হচ্ছে একটি শিশুর যদি শারীরিক বিকাশ ব্যহত হয় তবে শিশুটির মানসিক বিকাশও বাঁধাগ্রস্ত হবে। অপর দিকে মানসিক বিকাশ যদি বাঁধাগ্রস্ত হয় তবে তার প্রভাব শিশুটির শরীরের উপরেও এসে পরবে। তাই শিশুকে জন্মের পর থেকেই শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপর একই সঙ্গে নজর দেওয়া দরকার।
শিশুর মানসিক বিকাশের আবার কয়েকটি ভাগ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে শিশুর ধারণার জগতের বিকাশ। যার ফলে আশেপাশের বস্তু, মানুষ বা ঘটনা সম্পর্কে তার একটি ধারণা তৈরি হয়। অপর একটি হচ্ছে শিশুর নৈতিকতার বিকাশ। ভাল আর মন্দ, ভুল বা সঠিক এই সম্বন্ধে বোধ তৈরি হওয়া বা বিবেক তৈরি হওয়া সেটি এই নৈতিকতা বিকাশের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে।
একটি শিশু একা কখনো বেঁড়ে ওঠে না, সমাজের মধ্যে থেকেই সে কিন্তু বেঁড়ে ওঠে। ফলে তার আর একটি বিকাশ হয় যা কিনা সামাজিক বিকাশ।
শিশুর বিকাশে প্রধান ভূমিকা রাখে শিশুটির মা-বাবা, অর্থাৎ শিশুটির পরিবার। মা-বাবার প্রধান কাজ হচ্ছে তাদের শিশুটিকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। সন্তান যেমন মা-বাবার সবচেয়ে কাছের তেমনি সন্তানটিরও সবচাইতে কাছের এবং নির্ভরযোগ্য জায়গা হচ্ছে তার মা-বাবা। তাই যদি কোন মা-বাবা তাদের সন্তানটিকে পর্যাপ্ত সময় দিতে ব্যর্থ হন তবে এর ব্যাপক প্রভাব পরতে পারে শিশুটির বিকাশের ক্ষেত্রে।
শিশুর সাথে যত বেশি পারা যায় কথা বলা উচিৎ। সাত মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত শিশুর সাথে যত বেশি কথা বলা যায় শিশুর জ্ঞান অর্জন ক্ষমতা ততবেশি উন্নত হয়। Center on the Developing Child at Harvard University-এর গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
শিশুর সাথে কথা বলুন, শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। পারিবারিক ছোটবড় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় শিশুকে পাশে রাখুন। শিশুকে শুনতে দিন, তাতে করে তার মধ্যে এই বোধগম্যের উদয় হবে যে তারও একটি গুরুত্ব আছে, একটি সামাজিক অবস্থান আছে। তারফলে সে যখন সমাজের মানুষের সাথে মিশতে শুরু করবে তখন তার মধ্যে একটি আত্মবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের সমস্যা দেখা যায় আচরণগত সমস্যা। আমাদের দেশের শিশুদের বেলায় এ সমস্যাটা অনেক ব্যাপক আকারে দেখা যায়। বদ রাগী, কথা না শোনা, উচ্চস্বরে কথা বলা, জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলা তাছাড়া বেশি ছোটদের বেলায় থুতু ছুঁড়ে মারা, ধাক্কা দেওয়া বা মারপিট করা এই সমস্ত আচরণগত সমস্যা হামেশাই আমাদের শিশুদের বেলায় দেখা যায়। এই সমস্যা গুলোর সূত্রপাত কিন্তু দের থেকে দুই বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে যায়। কিন্তু মা-বাবা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই সময়টাতে এই ব্যাপার গুলোকে তেমন গুরুত্ব দেন না। তারা ভাবেন শিশুরা এমনটাই করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিপত্তি হয় তখন যখন শিশুটি ছয়-সাত বছরে পা দেয়। তখন এই সমস্ত আচরণগুলো সবার চোখে দৃষ্টিকটু হতে শুরু করে।
আর সেই সময় একটি শিশুর অভ্যাস পরিবর্তন করা একটু কঠিন হয়ে পরে। ফলশ্রুতিতে অভিভাবকদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়।
তাই শুরুতেই, অর্থাৎ দেড়-দুই বছর বয়স থেকেই এই সমস্ত আচরণগত সমস্যা গুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিৎ।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মা-বাবা তাদের সন্তানদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্থাৎ বিদ্যালয়ে পাঠান বা আক্ষরিক জ্ঞান অর্জনের উপরে বেশি মনযোগী। অপরদিকে সামাজিক দক্ষতা অর্জনের দিকে তারা তুলনামূলক কম গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। অথচ কেতাবি শিক্ষা অর্জনের চাইতেও কিন্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিৎ সামাজিক দক্ষতা অর্জন করা।
সামাজিক দক্ষত অর্জনের ফলে একটি শিশু তার জীবনের যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষ হয়ে উঠবে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পরিবার বা শিক্ষক বা সমাজ আর একটি কাজ করে থাকে শিশুদের ক্ষেত্রে, সেটি হচ্ছে শিশুকে ভয় দেখিয়ে কিছু করান।
গোটা পৃথিবী আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে। আমাদের দেশ আমাদের শহর গ্রাম-গঞ্জ সবটাতেই সে ছোঁয়া লেগেছে/লাগতে শুরু করেছে।
তবে আজও, সে হোক শহর কিংবা গ্রাম, একটি শিশুকে বড় করে তোলার প্রধান অস্ত্র হিসেবে মা-বাবা কোন এক দৈব কারনে যেন এই ভয়টাকেই বেছে নেন।
শিশুদের কোনো কাজ করানোর জন্য ভয় দেখালে তা তার মনে গেঁথে যায়। এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না, ডাক্তার হতে হবে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, অন্যথায় তোমার জীবনের কোন অর্থই থাকবে না, এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে শিশুর মনে একটা ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া, ফলশ্রুতিতে শিশুটি কিন্তু একটা বৃত্তের মধ্যে চলে আসে ছোটবেলা থেকেই। এর ফলে হয় কি, পরবর্তীতে শিশুটি যখন বড় হতে থাকে, যখন তার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা চলে আসে তখন কিন্তু সে যেকোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে গেলে ভয় পায়। আর এই ভয়ের কারনে তার মধ্যে একটি সংকীর্ণমনা ভাব চলে আসে, তার চারপাশের জগতটাকে সে ছোট করে ফেলে। এতে করে ওই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং আত্মবিশ্বাস কমে যায়। এতে শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশও বাঁধাগ্রস্থ হয়। তাই শিশুদের কোনোভাবেই ভয় দেখিয়ে কোন কাজ করান উচিৎ নয়।
শিশু জন্মের পর থেকে তার শৈশবের প্রাথমিক পর্যায়ের সময়টুকুতে অর্জিত শারীরিক মানসিক ও নৈতিক বিকাশের প্রভাবই কিন্তু শৈশবের মধ্যবর্তী সময় বা শেষ ভাগ তথা কৈশোর বা বয়ঃসন্ধির সময় পর্যন্ত পরবে। ফলে শৈশবের প্রাথমিক এই সময়টাতে বিশেষ করে মা-বাবা বা পরিবারের বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ।
বয়ঃসন্ধি কাল শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটিু সময়। আমরা বলে থাকি বয়ঃসন্ধিকালে শিশুকিশোরদের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়, ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। সমস্যা আসলে আমাদের বড়দের। স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক বিষয়টিকে আমরা এমন জটিল করে তুলে ধরি যে ব্যাপারটা শেষে প্রাকৃতিক থেকে অতি প্রাকৃতিক একটা বিষয়ে রূপ নেয়।
এই সময়টাতে শিশুকিশোরদের মধ্যে কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এমতাবস্থায় যদি তাদের চারপাশের পরিবেশ ও প্রতীবেশ অনুকূলে রাখা যায়, তাদের সাথে বিশেষ করে মা-বাবা যদি খোলা মেলা কথা বলে, বিজ্ঞান সম্মত ভাবে, মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে বা লুকোচুরি না করে কেবল যদি সাহস যুগিয়ে তাদের এই পরিবর্তনের সময়টাতে পাশে থাকেন তবে শিশুকিশোররা খুব সহজেই বয়সন্ধির এই সময়টা উতরে যেতে পারবে।
বয়ঃসন্ধির সময়টাতে শিশুকিশোরদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলার একটা প্রবণতা দেখা যায়। তার মধ্যে একটি অন্যতম দিক হচ্ছে শিশুকিশোররা নিজেদেরকে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে। শিশুকিশোরদের মাদক থেকে দূরে রাখতে প্রধান ভূমিকা পরিবারের। এরপর সমাজ। আর যারা মাদকাসক্ত হয়েই পড়েছে, তাদের সঠিক চিকিৎসার আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে যত তাড়াতাড়ি পারা যায়।
যেসমস্ত পরিবারের সদস্যরা মাদক গ্রহণ করে অথবা মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, সেসব পরিবারের শিশুকিশোররাই মাদকাসক্ত হয় বেশি।
মস্তিষ্কের মধ্যে কিন্তু আসক্তির (Addiction) বর্তনী একটাই। মাদকাসক্তি বলুন কিংবা মোবাইল আসক্তি বা ইন্টারনেট আসক্তি এই সমস্ত কিছুই কিন্তু একধরণের নেশা।
এই পরিস্থিতিতে যদি মা-বাবা শিশুকিশোরদের পাশে না দাঁড়ান তবে কিন্তু খুব ভয়ানক বিপদের মধ্যে পরে যাবে তারা। তাই বিশেষ করে মা-বাবাকে তাদের সন্তানদের এই আসক্তিগুলোর উপর বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
বয়স অনুযায়ী ধারাবাহিক ভাবে যদি শিশুকে যত্ন নেওয়া যায়, যেমন কোন বয়সে শিশু কথা বলতে পারবে, কোন বয়সে আশেপাশের লোকজনকে বা তাদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে সঠিক ধারণা জন্মাবে, কোন বয়সে তার নৈতিকতার বিকাশ ঘটবে ইত্যাদি বিষয়গুলো যখন তার বয়স অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে থাকবে তখন বলা যায় যে শিশুটির স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে।
একটি শিশু হচ্ছে এক তাল কাদা মাটি আর বাবা মা বলুন কিংবা স্কুলের শিক্ষক বা সমাজ তার সবাই হচ্ছে কুমার। তাই প্রত্যেকটা শিশুর ক্ষেত্রেই হোক শারীরিক বিকাশ কিংবা মানসিক বিকাশ তার পুরোটাই কিন্তু নির্ভর করছে আপনাদের উপর তথা বড়দের উপর।
শিশুরাই কিন্তু জাতীর ভবিষ্যৎ। তাই সমাজ বা জাতীরও কিন্তু বিশেষ ভূমিকা থাকে একটি শিশুর সুস্থ ও সুন্দর বিকাশের ক্ষেত্রে।
বড়দের যেমন আইনি অধিকার রয়েছে তেমনি ছোটদেরও কিন্তু আইনি অধিকার আছে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বা Convention on the Rights of the Child এর মতে ১৮ বছরের নিচে সব মানব সন্তানকে শিশু বলা হবে, যদি না শিশুর জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় ১৮ বছরের আগেও শিশুকে সাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ শিশু অধিকার সনদ অনুসারে শিশুদের অধিকারগুলোর মধ্য অন্যতম হলঃ-
• বেঁচে থাকার অধিকার ।
• মা-বাবার সঙ্গে বসবাসের অধিকার।
• মত প্রকাশের অধিকার ।
• শিশুর চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো।
• শিশুর সংঘবদ্ধ ও সমাবেশের অধিকার ।
• মর্যাদা ও সুনামের অধিকার ।
• চিকিৎসার অধিকার।
• সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার।
• শিক্ষা লাভের অধিকার।
• বিনোদনের অধিকার।
একটি প্রচলিত গল্প আছে। এক দ্বীপে থাকত একটি বানর, আর দ্বীপের চারপাশের পানিতে বাস করত এক রঙিন মাছ। দুজনের খুব বন্ধুত্ব, দুজন দুজনকে ভালোবাসত, মঙ্গল কামনা করত। দ্বীপের মধ্যে একদিন তুমুল ঝড় আর বৃষ্টি শুরু হল। ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে বানর আশ্রয় নিল গাছের কোটরে আর বৃষ্টি পেয়ে উৎফুল্ল মাছ লাফাতে লাগল পানির মধ্যে। গাছের কোটর
থেকে মাছের এই লম্ফঝম্প দেখে বানর ভাবল, মাছটি বোধহয় ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ডাঙায় আসার চেষ্টা করছে। বানর তখন নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝড়ের ভেতর পানিতে নেমে মাছটিকে ধরে এনে গাছের কোটরে পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দিল। ডাঙায় খাবি খেতে খেতে মাছটি লেজ ঝাপটাতে লাগল, বানর তখনো ভাবল মাছটি খুশিতে বুঝি লেজ ঝাপটাচ্ছে। এভাবে লেজ ঝাপটাতে ঝাপটাতে মাছটি একসময় নিথর হয়ে গেল।
কাজেই প্রত্যেক মা-বাবাকেই এটা লক্ষ্য রাখতে হবে যে আপনাদের সন্তানটি যেন অতিরিন্ত আদরের মধ্যে বা যেটাকে অন্ধ ভালবাসা বলে থাকি আমরা তার মধ্য দিয়ে বেড়ে না ওঠে, অন্যদিকে অতিরিক্ত শাসনের মধ্যেও যেন না থাকে। যেন ভাল করতে গিয়ে আপনার শিশুটির খারাপ না হয়ে যায়।
পরিশেষে একটা কথাই বলার, মা-বাবার থেকে ভাল পরিচর্যা একটি শিশুকে আর কেউ করতে পারে না। তাই একটু বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে, শিশুদের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপরে গুরুত্ব দিয়ে তাদেরকে বুঝতে শিখুন। আপনি যতই আপনার শিশুটিকে বুঝতে পারবেন আপনার শিশুটিও ততই আপনাকে বুঝতে পারবে। ফলে শিশুর বিকাশ হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২৪

নাঈম মুছা বলেছেন: জানিনা বাংলাদেশের হেফজ মাদ্রাসাগুলোর ব্যাপারে আপনার জানাশোনা কেমন। আমরা শিশুদের অধিকার, ভবিষ্যত, নিরাপত্তা, পরিচর্যা নিয়ে কথা বলি। খুবই করুণা হয়, কষ্টে বুকটা ফেঁটে যায় যখন দেশের আনাচে কানাচে হেফজখানায় অধ্যয়নরত দুধের শিশুদের কথা ভাবি। ওদের জন্য কেউ পরিচর্যার কথা বলে না। ওরা যুগে যুগে মাদ্রাসার চার দেয়ালের মাঝে হুজুর নামক কিছু অতি দানবীয় পশুদের দ্বারা নির্বিচারে নির্যাতিত হয়। ওদের দুঃখগুলো শোনার কেউ নেই। ভাবি ওদের শৈশব কতটা দুর্বিসহ আর যন্ত্রণাময়। ইস! দেশের সাধারণ জনগণ যদি ঐ শিশুগুলোর নির্যাতনের সামান্য কিছু দৃশ্য দেখতো তাহলে নির্ঘাত তারা মূর্ছা যেত। শিশুদের নিয়ে যারা কাজ করে তারা বলত শিশুদের প্রতি এমন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তাদের কল্পনারও বাহিরে। আমাদের এসব শিশুদের নিয়ে সরব হওয়া উচিত। আমার শিশু, আপনার শিশু শুধু ভালো থাকলে হবে না। তাদেরকেও ভালো থাকতে হবে। আর এটা নিশ্চিত করা আমাদের দ্বায়িত্ব।

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২৮

হাফিজ বিন শামসী বলেছেন: লেখাটা অনেক বড়। তবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অর্ধেকটা পড়লাম। সময়ের অভাবে শেষ করতে পারলাম না। পরে পড়ে নেব।

ধন্যবাদ।

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: শিশুর মানসিক বিকাশ ভালো ভাবে হওয়া দরকার। শিশুকে কিভাবে গড়ে তুলতে হবে এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ বস্তারিত বলেছেন। সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.