![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের দেশে ইতিমধ্যে প্রায় বদ্ধমূল একটা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে কোনোক্রমেই আমৃত্যু জেলে থাকা বোঝায় না।অনেকে এটা মনে করেন যে সাড়ে ২২ বছর বা ৩০ বছর সাজা ভোগ করার পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।অনেকেই ২২ বা ৩০ বছর কারাভোগের পর ছাড়া পায় এটাও একটা অন্যতম কারণ। এটা নিয়ে সন্দেহ জাগার আরেকটি কারন হলো দন্ডবিধির ৫৭ ও ৬৫ ধারা।যাবজ্জীবন নিয়ে আরো ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় যখন ২০০৩ সালের CrPC সংশোধনে ৩৫ এর ক ধারা যুক্ত করে।
কিছু মামলার রায় আমাদের আরো বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয় যেমন: ‘ফরিদ আলী বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় বলা হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বলতে ত্রিশ বছরের কারাদণ্ড বলা যাবে।
‘অপরদিকে মো. হোসেন বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলে তার জীবনের সমস্ত দিনগুলো কারাগারে কাটাতে হবে না, বরং ৩০ বছর পর্যন্ত কারাগারে থাকার পর ছাড়া পেতে পারে। এই মামলাগুলো আরো বিতর্কের সৃষ্টি করে।
ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট অবশ্য এটার সুরাহা অনেক আগেই করে দিয়েছে - ১৯৬১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট প্রথম রায় দিয়েছিলেন যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে দণ্ডিত ব্যক্তির আমৃত্যু কারাবাস। অবশ্য ১৯৬১ সালের আগে ১৯৪৫ সালে পণ্ডিত কিশোরী লালের মামলায় ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিল একই উত্তর দিয়েছিলেন। কিন্তু এখানে অঙ্কের একটু জটিল হিসাব আছে বটে। সেই ষাটের দশক থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এক ডজনের বেশি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় খুঁজে পাই, যেখানে আদালতকে বারবার বলতে হয়েছে যে যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস।
সম্প্রতি বাংলাদেশের অনেকগুলো মামলায় যাবজ্জীবন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী আবদুল আলীমের রায়ের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ধোঁয়াশা রাখেনি ট্রাইব্যুনাল। স্পষ্ট করেই বলেছে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারাভোগ করতে হবে সাবেক এই মন্ত্রীকে। ২০১৪ সালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের মূল রায়দানকারী বিচারক ছিলেন বিচারপতি এস কে সিনহা। তিনি ওই রায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে মাওলানা সাঈদীকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। আর ওই রায়ে তিনি নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে যাবজ্জীবন কারাবাস মানে সাঈদী যত দিন বাঁচবেন, তত দিন কারাগারেই থাকবেন।
এবার আসি আমাদের দণ্ডবিধি ও ফোজদারী কার্যবিধি নিয়ে...
দণ্ডবিধির ৫৩ ধারায় আগে ট্রান্সপোর্টেশন ফর লাইফ বা আজীবন দ্বীপান্তরের বিধান ছিল। ৫৭ ধারায় লেখা ছিল ‘শাস্তির ভগ্নাংশ গণনায়’ আজীবন ট্রান্সপোর্টেশন ১৪ বছর বলে গণ্য হবে। পরে ট্রান্সপোর্টেশন বদলে ‘লাইফ ইম্প্রিজনমেন্ট’ এবং ১৪ বছরের পরিবর্তে আশির দশকের গোড়ায় ২০ বছর এবং ১৯৮৫ সালে তা ৩০ বছর করা হয়।
এখন শাস্তির ভগ্নাংশ কথাটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। আইনের বইয়ের কোথাও লেখা নেই যে যাবজ্জীবন কারাবাস মানে ১৪, ২০ কি ৩০ বছর। এখানে ভগ্নাংশ কথাটির প্রয়োগ কেবল তখনই আসবে, যেখানে কাউকে আজীবন কারাবাসের সঙ্গে জরিমানাও করা হবে। যেমন অহিদুন্নেছা ২০০০ সালে ৩০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা ও অনাদায়ে ১ বছর সশ্রম দণ্ড পান। এই ১ বছর জেল দণ্ডিত ব্যক্তির অতিরিক্ত দণ্ড। তিনি টাকা না দিলে তাঁর সম্ভাব্য মুক্তির তারিখ ছিল ১৩ মে ২০৩১। কিন্তু এখানে যেহেতু ‘আজীবন কারাবাস’, আর জীবনের আয়ু নির্ণয়যোগ্য নয়, তাই ৩০ বছর নির্দিষ্ট করা হয়েছে, এই জরিমানার টাকা অনাদায়ে জেলের হিসাবটা করার জন্য।
দণ্ডবিধির ৬৫ ধারার বিধানমতে, যেকোনো অঙ্কের জরিমানা দিতে কেউ ব্যর্থ হলে কোনো দণ্ডিত ব্যক্তিকে তাঁর মূল সাজার সর্বোচ্চ এক-চতুর্থাংশ সাজা দেওয়া যাবে। এর মানে টাকা না দিলে (এবং অনাদায়ে সাজার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা না থাকলে) যাবজ্জীবন শাস্তিপ্রাপ্ত বন্দীর কারাবাসের মেয়াদ সর্বোচ্চ সাত বছর ছয় মাস যুক্ত করা যাবে। কিন্তু যাঁর আজীবন কারাবাস, তিনি ‘অতিরিক্ত সাজা’ কখন খাটবেন? উপরন্তু এই সাজার মেয়াদ গণনা ‘একের পর এক’ (কনজিকিউটিভ) বলে গণ্য হবে, একত্রে (কনকারেন্ট) খাটা যাবে বলে ধরা হবে না। এসব বিবেচনায় এটা মনে হচ্ছে, যদি যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু হয়, তাহলে আইনে বা কোনো গাইডলাইনে তা স্পষ্ট করা উচিত হবে।
অবশ্য শাস্তির ভগ্নাংশ গণনার সূত্র হিসাবে ৩০ বছর নির্দিষ্ট করার সঙ্গে আমার মতে যদিও সরকারের সাজা মওকুফ বা রেয়াতের এখতিয়ার অনুশীলনের প্রশ্নটিই বড়। যেমন সরকার চাইলে মূল কারাবাস রেয়াত করে শুধু জরিমানা আদায় করে কাউকে ছেড়ে দিতে পারে। রাষ্ট্রের তরফে উত্তম বিকল্প তৈরি করা হয়েছে। তবে ৩০ বছরের বিষয়টিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে চলবে না। একে দণ্ডবিধির ৫৫ ধারার সঙ্গে যুক্ত করে দেখলে এর মানেটা আরও পরিষ্কার হবে। সরকার যাবজ্জীবন দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির প্রতি উদার হতে গিয়ে আবার যাতে যথেষ্ট অনুদার না হয়, সে জন্য ৫৫ ধারাটা সাজা কমানোর ক্ষেত্রে একটা বাধানিষেধ আরোপ করেছে। যেহেতু কারাবাস আমৃত্যু, তাই সরকার যেন আবার সাজা কমিয়ে ৩০,৪০ বা ৫০ বছর নির্দিষ্ট করে না বসে, সে জন্য বিধান করা হয়েছে যে সরকার কারও সাজা কমাতে গিয়ে তার কারাবাসের মেয়াদ ২০ (ভারতে এটা ১৪) বছরের বেশি নির্ধারণ করতে পারবে না। দয়া দেখাতে গিয়ে রাষ্ট্র যাতে নির্দয় না হয় তার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ওপরের আলোচনায় এটাই পরিষ্কার যে যাবজ্জীবন কারাবাস মানে আমৃত্যু। আর সাজা কমানোর বিষয়ে সরকার যাতে তুঘলকি বা দলীয় সংকীর্ণতার পরিচয় না দিতে পারে, সে জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গাইডলাইন করে দিয়েছেন। আমাদের এ রকম কোনো গাইডলাইন নেই।আমাদের সুপ্রিমকোর্ট এরকম গাইডলাইন দিলে সরকার যে বিভিন্নভাবে দলীয় সংকীর্ণতার পরিচয় দেয় তা কিছুটা হলেও কমে আসতো
মিজানুর রহমান খানের লিখা প্রথম আলোয় যাবজ্জীবন নিয়ে লিখা কলাম থেকে তথ্য সংগৃহীত।
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫১
নতুন বিশ্লেষক বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম, ধন্যবাদ।
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১১
হাসান_রাকিব বলেছেন: ধন্যবাদ জিসান আহমেদ।আশা।করছি সামনে আরো কিছু আপনাদের উপহার দিতে পারবো।
৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৩
হাসান_রাকিব বলেছেন: ধন্যবাদ নতুন বিশ্লেষক।
৫| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬
জিসান অাহমেদ বলেছেন: শুভ কামনা রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২০
জিসান অাহমেদ বলেছেন: অাইন বুঝি না।পোষ্টটির মাধ্যমে কিছুটাও হলেও কারদণ্ডের অাইন সম্পর্কে ক্ষুদ্র একটা ধারণা পেলাম।অারো লিখা অাশা করছি। ধন্যবাদ।