নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনের রাফখাতা

পিছন ফিরে তাকানোর বদলে সামনে তাকানোই বেশি সহজ

ট্রিপল এ

নিজেকে জানার একটা মাধ্যম হচ্ছে লিখে যাওয়া।লেখালেখি করার অভ্যাস নেই বললেই চলে,মাঝে মাঝে "আউল ফাউল"লেখার চেষ্টা করি একটু.....

ট্রিপল এ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কিন্তু বলতে গিয়েছিলাম

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৯

দেড় ঘণ্টা ধরে স্কোপে চোখ রেখে তাকাইয়া আছি রাস্তাটার দিকে ।একটা মানুষ তো দূরের কথা,একটা পাখির ডাক পর্যন্ত এখনো কানে আসেনাই......উত্তর কাজাখ বর্ডারের এই এলাকাটা দেখে মনে হয় অভিশপ্ত।প্রথম দেখায় এলাকাটা আর যেকোনো রুক্ষ মরুময় পার্বত্য এলাকার মতো হলেও স্ট্র্যাটেজিক ভাবে এই এলাকাটা সার্ব সন্ত্রাসীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের বানানো কেমিক্যাল ওয়েপন গুলো তারা এই পথেই বের করে।রাস্তাতে বেশ ভালো পাহারা থাকার কথা।তবে এটা তাদের উদাসীনতা ধরে নিব কিনা বুঝতে পারছিনা কারন এখনো কোন পাহারা চোখে পড়ছে না।এমনকি গত দুই দিনে এই এলাকায় লোকজন তেমন চোখে পড়েনাই,আমার স্কোপের আওতায় তো অবশ্যই না।কিন্তু আজকে সারিন গ্যাস ভর্তি কনভয় টা এই রাস্তা দিয়েই যাবে,এটা নিশ্চিত।এমন সময় হটাত পেছন থেকে আপন বললো"হেই এরিখ,আমাদের পেছনে মুভমেন্ট হচ্ছে"







আমি একটু চিন্তিত হয়ে স্কোপ থেকে চোখ সরালাম ।আমরা একটা ছোট পাহাড়ের ঢালে পজিশন নিয়েছি,ঠিক মতো ভোর হয় নাই এখনো,আমাদের পিছনে যদি মুভমেন্ট পাওয়া যায় তাহলে তো সমস্যা। তাই আপনকে জিগ্যেস করলাম,"রাতে পিছনে রেকি করেছিলা?"



-এরিখ,আমার কাজে ভুল হয়না।



-যেদিন ভুল হবে সেদিন শোধরানোর জন্য কিন্তু বেঁচে থাকবা না।



-বুঝলাম ।৫ মিনিট দাও,চেক করে আসি"-এই বলে আপন চলে গেলো পাহাড়ের চুড়ার দিকে।আমি আরেকবার রাইফেলটা চেক করে নিলাম।আজকের মিশনে অস্ত্র বেশি আনা হয় নাই।একটা জিপ আর ছোট একটা ট্রাক হচ্ছে আমাদের টার্গেট। এর জন্য খুব বেশি কিছু লাগেনা...কিন্তু বেশি এমুনিশন থাকলে একটু নিরাপত্তা পাওয়া যায় আরকি।অবশ্য যা আছে তা দিয়ে কাজ চলে যাবে.....মনে মনে অস্ত্রের লিস্ট করে ফেললাম একবার।অবশ্য আপন থাকাতে আজকের মিশনে একটু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছি।ছেলেটার সাথে সতেরোটা মিশন কমপ্লিট করেছি এবং এর মাঝেই সে নিজেকে সুপিরিয়রদের কাছে এসেট এ পরিনত করেছে।ছেলেটা এক্সপার্ট স্নাইপার আর আজকে যেহেতু উপত্যকায় বাতাস বেশি তাই শুট করার কাজ টা আমি তার উপরেই ছেড়ে দিয়েছি......







আমার জীবনটা আমি ভালভাবে গোছাতে পারিনাই কখনোই......ড্যাড যখন মারা গেলো তখন মম অনেকবার নিষেধ করেছিলো আর্মি জয়েন করতে...কিন্তু এটা ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না...আমি ব্রিলিয়ান্ট ছিলাম না তেমন।হাই স্কুল পার করেছি টেনে টুনে।বেসবল খেলা আর ফ্রেন্ড দের সাথে ঘুরাই মনে হয় জীবন ছিল।নিউ জার্সির আর সব ছেলের মতো আমার লাইফটাও আমি টিপিক্যাল আমেরিকান স্টাইলে প্ল্যান করেই সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম।কিন্তু লিসা মেয়েটা যখন ফার্স্ট আমাদের স্কুলে এসেছিলো তখন অন্য সব ছেলের মতো আমিও তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।মেয়েটা অন্য সব মেয়ের চেয়ে আলাদা ছিল।আমি ভাবতাম বড় হয়ে আমি যখন ভালো জব করবো তখন আমি লিসা কে বলবো যে আমি তাকে স্কুল থেকেই কত ভালোবাসতাম। আমি তাকে নিয়ে অনেক ভাবতাম এবং পড়াশোনার দিকে মনযোগী হতে চাইতাম।আমি খেলাধুলা ছেড়ে শুধু পড়াশোনার দিকে মন দিয়েছিলাম কারন লিসার জন্য আমি সব কিছুই করতে পারি......কিন্তু ড্যাড মারা যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম যে আমার মতো একটা চালচুলোহীন ছেলে কখনো লিসার কাছে ভিড়তে পারবে না।আমার সব ফ্রেন্ডরা আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিয়েছিলো আর বলেছিল বেসবল খেলায় ফিরে আসতে,লোকাল যেকোনো টিমে আমি সহজেই চান্স পেতে পারতাম।কিন্তু ড্যাড বেঁচে থাকতে কোনদিন আমাকে বেসবল প্লেয়ার হতে দিতে চায়নাই,তিনি চাইতেন আমি যেন আর্মিতে জয়েন করি......তাই ড্যাডের কথা মতো মেরিনে জয়েন করলাম.........স্নাইপিং এর উপর আমার আগে থেকেই আগ্রহ ছিল এবং গানারি সার্জেন্ট হিসেবে আমি ভালই করছিলাম......কিন্তু ২ বছর পার হওয়ার পর বুঝলাম আমি লাইফের সব আনন্দ পিছনে ফেলে এসেছি।সব কেমন জানি একঘেয়ে মনে হচ্ছিলো দুনিয়ার সব কিছু।তাই যখন C.I.A আমাকে ব্ল্যাক অপস এ যোগ দেয়ার অফার দিলো তখন আমি কোন কিছু না ভেবেই তাদের হয়ে কাজ করতে চাইলাম।আমার লাইফটাকে এঞ্জয়েবল করে তোলার সমস্ত ব্যবস্থা তাদের ছিল কিন্তু মিশন গুলা ছিল খুব কঠিন.........জয়েন করার ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় আমি ফার্স্ট আপন কে দেখি......











আমার মিশনটা ছিল জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্টে ।সেখানে বাদের-মেইনহফ নামের একটা মাফিয়া গ্রুপের ড্রাগস কনসাইনমেন্ট এ ইন্টারসেপ্ট করতে হবে।আমাকে বলা হয়েছিল আমার স্পটারের সাথে লোকেশনে গিয়ে দেখা হবে আমার।হেলিকপ্টার থেকে নেমে দেখি সাউথ এশিয়ান একটা বাচ্চা ছেলে আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভাবলাম এই ছেলে হয়তোবা আমাকে আমার স্পটার এর কাছে নিয়ে যাবে ।ঠিক তখন ছেলেটা বললো,"হ্যালো এরিখ,আমি আপন।মিশনে তুমি আমার স্পটার"।আমি আমার কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।আমি তাকে বললাম,"কিন্তু শট নেয়ার জন্য হেডকোয়ার্টার তো আমাকে পাঠাইল"



-প্লান চেঞ্জ করা হইসে,H.Q এর সাথে কথা বল...বাতাসের স্পিড একটু বেশি তাই শুট গুলা আমি নিব।স্পটার তাই তুমি হবা।পারবা তো?



-কি যে বলনা?পারবোনা কেন?আচ্ছা তুমি কি কোন দেশের আর্মিতে ছিলা?



-আমি বাংলাদেশি।কিন্তু তোমারে কে বলল যে আমি আর্মিতে ছিলাম?আমি এইসবের ধারে কাছেও নাই।



-তুমি আর্মিতে না থাকলে ব্ল্যাক অপস এ আসছো ক্যামনে?আমি হাটছিলাম আর ছেলেটাকে এইসব হাবিজাবি জিগ্যেস করছিলাম।



-আমি ভালো শুটার,জিনিসটার মাঝে যেই আর্ট আছে সেটা বুঝি,তাই তোমাদের সুপিরিওররা আমাকে নিয়েছে।



-তোমার বয়স কত?দেখতে তো বাচ্চা বাচ্চা লাগে......



-২০ বছর বয়সে কি আমাকে বুড়া বুড়া লাগবে নাকি?এই কথা বলে সে আমার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসল।তার হাসি দেখেই বুঝলাম,ছেলে বয়সে ছোট তো কি হইসে,ভিতরে তেজ ঠিকমতই আছে...............















ওই মিশনে ৮ দিন আমাদের ব্ল্যাক ফরেস্টের ভিতরে আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধ করতে হয়েছিলো ।মিশন শুরুর ২-৩ দিনের মাঝেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ছেলেটা নিজের কাজ বুঝে ।সিভিলিয়ান তো কি হয়েছে,ভিতর দিয়ে এই ছেলে আস্ত সোলজার.....তারপর থেকে আমি সব মিশনে আপনকেই পার্টনার হিসাবে চাইতাম ।সুপিরিয়ররাও বুঝতে পেরেছিল যে আমাদের ২ জন এর কাজের বোঝাপড়া ভালই হচ্ছে ।আমাদের এক এক মিশন এক এক জায়গাতে পড়তো আর আমাদের মাঝে বোঝাপড়াটাও ছিল অসাধারন ।মাঝে মাঝে তাকে ছোট ভাইয়ের মতো ভাবার চেষ্টা করতে চাইতাম কিন্তু মন সায় দিতোনা।আজ পর্যন্ত যাকেই একটু কাছের মানুষ ভেবেছিলাম তারা সবাই চলে গেছে ।ব্ল্যাক অপস এ জয়েন করার সাত বছরের মাথায় মম মরে গিয়েছিল ।যখন কফিনে করে মায়ের লাশ কবরে নামাচ্ছিল তখন কেন জানি বার বার মনে পড়ছিল মম মরে নাই......খালি আমার সাথে লুকোচুরি খেলছে ছেলে বেলার মতো ।মম মারা যাওয়ার পরের দিন সন্ধ্যার সময় অনেকক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বিয়ার হাতে নিয়ে।তখন ভালো লাগছিলো না কিছুই কেনো যেনো। আকাশের পুব কোনে কিছু তারা ঝিকমিক করছে। আমার মনে হঠাত ভাবুক বোধ উদয় হলো। আচ্ছা, তারারা কি কথা বলতে পারে! হয়তো পারে। আমরা এখনো অনেক কিছুই জানিনা। জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় পেরিয়ে আমাদের বোধশক্তিগুলো অল্প কিছু জানা ব্যাপারগুলোতেই আটকে থাকে। আর পুরো সময়টা পেরিয়ে সেই জানা গল্পগুলোর সাথে আরো কিছু গল্প আর ঘটনার যোগে আমরা মনে করি অনেক কিছুই জেনে গিয়েছি। আমার পাশেই আপন বসা ছিলো।কথাগুলো তাকে বলা মাত্রই সে হাসল আর বলল,এরিখ,মেয়েটা কে?আমি একটু অবাক হয়েছিলাম তখন কারন আমি আপনকে অনেক কিছু বলেছিলাম কিন্তু লিসার কথা কখনোই বলিনাই।আমি সেদিন তাকে লিসার ব্যাপারে সব বলার পর সে আমার দিকে ফিরে বসে বিয়ারে চুমুক দিয়ে বলল,দেখো এরিখ,জীবনে যদি ভালবাসতে না শিখতে পারো,তাহলে অনেক কিছু তুমি কখনোই বুঝতে পারবা না।আমি কিন্তু সাধেই তোমাদের সরকারের হয়ে কাজ করি না ।আমি কিন্তু আমাদের দেশে একটা ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গ্রাজুয়েশন করে মোটামুটি মানের একটা জব করতে পারতাম,তোমার বাবার মতো শান্তিতে লাইফ কাটাতে পারতাম।কিন্তু কলেজ লাইফে আমি যখন ডিবেট করতাম তখন আমার ডিবেট শুনে এক মেয়ে আমার প্রেমে পড়েছিলো।ওই মেয়েটা আমাদের চেয়ে অনেক পয়সাওয়ালা ছিল।কিন্তু আমি তাকে ভালবাসতাম শুধু তার হাসিটার জন্য। ওই মেয়েটা দিন রাত ফ্রেন্ডদের সাথে পার্টি করত,ঘুরত আর আমি তোমার মতো স্বপ্ন দেখতাম যে আমি বড় হয়ে ভালো জব করবো আর তাকে বিয়ে করে সারাটা লাইফ অসাধারন ভাবে কাটাবো।তাকে আমি এতোটাই ভালবাসতাম যে তার কথা গুলা রেকর্ড করে রাখতাম যেন সারারাত খালি তার কণ্ঠই শুনতে পারি।শুধু তাকে বেশি করে সময় দেয়ার জন্য আমি গান শুনা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলাম অথচ আমার স্বপ্ন ছিল যে আমি বড় হয়ে একজন গিটারিস্ট হব......সেই মেয়েটা আমাকে একদিন কোন কারন ছাড়াই বলল যে তার নাকি আমার সাথে রিলেশন করতে ভালো লাগছেনা আর সেই রিলেশনে নাকি আমরা হ্যাপি হতে পারবনা।এই কথা বলে সে আমার কাছে থেকে চলে গিয়েছিলো।জানো এরিখ,এই কথা শোনার পর তিন দিন পর্যন্ত বুঝতেই পারিনাই যে কেন সে এই কথা বলল।এর পর অনেক দিন আমি ঠিক স্বাভাবিক ছিলাম না...কিন্তু আমি কন্ট্রোল হারাই নাই নিজের উপর......পরে আমি খুব ভালো করেই বুঝেছিলাম যে ভালোবাসাটা তার কাছে খালি নতুনত্ব ছাড়া কিছুই ছিল না ।আমি তার সাথে আর কোন দিন যোগাযোগ করিনাই ।তার ফ্রেন্ডদের কাছে খবর পেয়েছিলাম যে সে অবাক হয়েছে আমি উল্টাপাল্টা কিছু করিনাই দেখে ।আসলে সে ভেবেছিলো আমি তার জন্য উল্টাপাল্টা কিছু করবো,তাকে অনেক জোরাজুরি করবো কিতু আমি এইগুলা কিছুই করি নাই।তাই সে মনে করেছিলো যে ওই রিলেশন টা আমার কাছে খালি টাইম পাস ছিল।কিন্তু ওই মেয়ে কোনদিনই বুঝবেনা যে আমি তাকে কতোটা ভালবাসি।ও চলে যাওয়ার পর আমার লাইফটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিলো।দুনিয়ার সব মানুষ কে আমি হেইট করতাম বিশেষ করে বড়লোক গুলাকে দুই চোখে দেখতে পারতাম না তখন।শুটিং এ ভালো ছিলাম এছাড়া প্রিসিশন বুলেটের মডেল নিয়ে কিছু কাজ করেছিলাম বলে C.I.A আমাকে ব্ল্যাক অপসে ঢুকার অফার দেয় ।আমি না করিনাই কেন জানো?আমি ভেবেছিলাম যে স্নাইপার হয়ে যতগুলা পারবো মানুষ শেষ করবো।হোক না তারা খারাপ মানুষ,মরে গেলে তো আর ভালবাসতেও হবেনা আর ভালবাসার কষ্টও সহ্য করতে হবেনা............











ঐদিন আপনের কথা গুলা শুনে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ছেলেটা এখনো সোলজার হতে পারে নাই। সোলজারদের দুনিয়াতে এতো আবেগ থাকে না। ছেলেটা শুধুমাত্র তীব্র অভিমান নিয়ে রাইফেলের স্কোপের জগতে টিকে আছে ।এর পর থেকে আমি কোন দিন তাকে উঁচাগলায় কিছু বলি নাই।ছেলেটা ছিল আমার ছোটভাইয়ের মতো।আপন আমাকে প্রায়সময়ই বলত লিসার সাথে যোগাযোগ করতে ।আমার যে যোগাযোগ করার ইচ্ছা ছিলোনা তা কিন্তু না।কিন্তু আমি কখনো তার সামনে পর্যন্ত যাই নাই কারন আগের সেই অভিমান আমার এখনো কমেনাই,কমবে বলে মনেও হয় না।অবশ্য আপনের লাইফের গল্পগুলো ছিল খুব মজার।আমি ঠিক করেছিলাম একবার তার সাথে বাংলাদেশে যাবো আর গিয়ে তার মমকে দেখব।কিন্তু সে না করেছিলো।আমি বললাম,তোমার মা কে দেখতে ইচ্ছা করেনা?তার জবাবটা ছিল খুব অদ্ভুত।আমার প্রশ্নের জবাবে সে বলেছিল যে তার মায়ের সাথে দেখা করলে তার মা কষ্ট পেতে পারে।আমি তখন অবাক হয়ে বললাম,ছেলে দেখা করলে তো বাবা-মা খুশি হয়,তোমার বেলায় উল্টা কেন?



-এরিখ,আমার মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল আমি আর্মিতে জয়েন করি.........আর আম্মু খুব ভালো করেই জানে আমার বেঁচে থাকার চান্স এই লাইনে কতটুকু।আমি মাঝে মাঝে ফোন করি আম্মুকে।আম্মু যদিও কষ্টও পায় যেহেতু আমাকে দেখেনা,কিন্তু আম্মু খুশি যে আমি তার স্বপ্ন পূরণ করছি।শোন,যদি কোন মিশনে আমার কিছু হয় তাহলে তুমি কিন্তু আমার দেশে যাবা আর আমার আম্মুর সাথে দেখা করবা,ঠিক আছে?



-স্নাইপারদের কিছু হয় নাকি বোকা?আমরা তো সবার আগেই পালাইতে পারি।এতো টেনশন কর কেন মরা নিয়া?দেইখো,তুমি আমার আগে মরবা না...



-আর একটা কথা,এইটা তোমার রাখতেই হবে



ঐদিন আমি আপনের পরের কথা গুলো শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম।তার অনুরোধ ছিল তার কিছু হয়ে গেলে সেই মেয়েটাকে যেন আমি জানাই যে আপন তাকে সারা জীবন ভালোবাসতো।তার কথা শুনে আমি তাকে অনেক বকা দিয়েছিলাম।একটা মেয়ের জন্য এতদিন ধরে আবেগ জমিয়ে রেখে আবার আমাকে ভালোবাসা নিয়ে টিপস দেয়,যেন নিজে কি একখান সার্থক প্রেমিক।অবশ্য রাগ কমতে ২ ঘণ্টাও লাগেনি কারন একসাথে বসে বিয়ার শেষ করার পর কেন জানি শেষ পর্যন্ত আপনকেই কাছের বন্ধু মনে হয়,তাকে নিয়েই পরের মিশনে যেতে ইচ্ছা হয়...............











মাঝে মাঝে মিশন শেষে আমাদের ১৫-২০ দিনের জন্য ডে অফ মানে ছুটি দেয়া হতো।আমাদের ছুটি কাটানোর মতো তেমন কোন জায়গা ছিলোনা।আমরা সবাই আমাদের পরিবারকে দূরে সরিয়ে এই রাইফেল স্কোপের জগতে এসেছিলাম।আমাদের বন্ধু তাই আমাদের স্পটার,আমাদের পরিবার হয়ে গিয়েছিলো আমদেরই কলিগরা।তাই ডে অফ এর সময় সন্ধ্যা তাদের সবার সাথে গিয়ে বিচে বসে বারবিকিউ করাটাই আমাদের কাছে বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম।এরকম এক ডে অফে আমাদের এক নতুন জয়েন করা পামার নামের এক রেঞ্জার বললো,ধুর,এই নতুন নতুন গেজেট আর ভালো লাগেনা।আরও বিশ বছর আগে জন্মাইলে ভালো হইতো । এইটা নিয়া আমরা সবাই হাসাহাসি করছি এমন সময় পামার আপনকে জিগ্যেস করলো, আরও ত্রিশ বছর আগে জন্মাইলে কি করতা?



-আমি মুক্তিযুদ্ধে যাইতাম



-কেন? তোমার দেশ তো যুদ্ধ জিতেই গেছে , তো গিয়া লাভ কি?



আপন তখন আমাদের সবার দিকে তাকাইয়া বলা শুরু করলো -দেখো তোমরা জানো আমার দেশটা ছোট খাটো একটা দেশ।দেশটার জন্য আমি কিছুই করতে পারিনাই এই আফসোস আমার এখনো কমেনাই।আমার ভাবতে ইচ্ছা করে যে আমি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছি,দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি । আমার দেশের মানুষ খুব বোকা তো,তাই যুদ্ধের সময় যেই সাপ গুলা তাদের ছোবল দিয়েছিলো,তাদের বেশিরভাগগুলাকেই আমার দেশের বোকা মানুষগুলা মাফ করে দিয়েছে।আমি মুক্তিযোদ্ধা হইলে এই বোকামি কোনদিন করতাম না। একেকটা স্নাইপ শট নিতাম আর মনে মনে বলতাম যে একটা কইরা জানোয়ার কমাইলাম দুনিয়া থেইকা।মাঝে মাঝেই আমি এই স্বপ্নটা রাতে দেখি আর পড়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে আফসোস করি.........











"এরিখ,ঝামেলা হয়ে গেছে"-পিছন থেকে হটাত আপন নিচু গলায় বললো



-কেন কি হইসে?পিছনে কোন ঝামেলা?



-পাহাড়ের উল্টা দিকে ৪০-৫০টা আর্মি,কাজাখ...



-শুটিং স্পট চেঞ্জ করতে হবে নাকি?



-আরে গাধা পিছন দিকে পুরা পাহাড় ঘিরে ফেলসে তারা। আর সামনে দিয়ে কনভয় ভর্তি আর্মি আমাদের সামনে নামবে মনে হয়।আমরা যে এইখানে তারা আগে থেকেই জানে।আমাদের পজিশন কমপ্রোমাইজড হয়ে গেছে।



-তাহলেতো ডান দিক দিয়ে নেমে ইভ্যাক পয়েন্টে চলে যাইতে হবে।এতগুলা সামাল দেয়া যাবেনা.........



এর পরের কথাটা আমি মনে মনে কোনদিন শুনতে চাইনাই কিন্তু আপনটা কেন জানি বলেই ফেললো শেষ পর্যন্ত,"আমাদের একজনকে থাকতে হবে কাভার দেয়ার জন্য"



আমি বললাম,তাহলে তুমি যাও ২০ মিনিটের মাঝে চপার নিয়ে কাছে আসো,এর মধ্যে আমি এদের আটকাই।আপন আমার হাতের হেকলার অ্যান্ড কচ এইচ কে ৪১৭ অ্যাসল্ট রাইফেলটা দেখে হেসে দিয়ে বলল,"তোমার হাতের এইটা দিয়ে মশা মরবে,কাজাখ আর্মি না।আজকে মেইন শুটার যেহেতু আমি,তাই আমি শুটগুলা নিবো।তুমি জলদি যাও কারন এতো তারাতারি আমি মরলে পাবের মেয়েগুলার সাথে লাইন দিবে কে,তুমি?



-দেখো তোমার বয়স কম,তোমার স্পিড বেশি,তুমি যাও......



-এরিখ,প্লিজ জলদি যাও...........আপনের আদেশের চেয়ে অনুরোধটাই কানে আসলো বেশি।আমি ক্রল করে নিচে নামতে শুরু করেছি,৫-৬সেকেন্ড পর আপন হটাত ডাক দিলো।আমি যখন ফিরে তাকালাম তার দিকে তখন সে খুব ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,"আজকে কিছু হয়ে গেলে তোমাকে কি করতে হবে তা তুমি জানো।কাজটা কিন্তু করতেই হবে তোমাকে।আর মনে রেখো,ভালোবাসাকে আটকে রাখতে হয় না।লিসাকে জানিয়ো যে তুমি তাকে ভালোবাসো।নাউ মুভ মুভ মুভ...............







২ মাস পর



গতকাল আমি বাংলাদেশ এসেছি।আপনের বাসা বাংলাদেশের ক্যাপিটালেই,ঢাকাতে।আমার খুব অস্বস্তি লাগছিলো আপনদের বাসায় ঢুকতে।আমি কলিংবেল বাজানোর পর আপনের মা দরজা খুলে দিলো।ছবির সাথে মহিলার চেহারার বিন্দুমাত্র অমিল নেই।উনি জিগ্যেস করার পর আমি বললাম,"আমি আপনের স্পটার।তার কিছু জিনিস দিয়ে যেতে এসেছি।"বলার সাথে সাথে মহিলার চোখ যেন হটাত করে আলোশূন্য হয়ে গেলো।৩-৪ মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি বললেন,"বাবা ভিতরে আসো।"



আমি তাদের ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম।অনেক্ষন পর আপনের মা আমার সামনে আসলো।আমি তাকিয়ে দেখলাম তিনি হাসিমুখে আমাকে কিছু জিগ্যেস করছেন যদিও চোখগুলো সামান্য ফোলা ফোলা......



-বাবা আমার ইংলিশ খুব ভালো না।বুঝতে না পারলে জানিয়ো।



-না আমি বুঝতে পারছি।



-আসলে আমি আশা করি নাই কেও আসবে।তারা যখন খবরটা দিয়েছিলো তখন খুব খারাপ লেগেছিল যে ছেলের মুখটাও দেখতে পারিনাই বলে......আচ্ছা......বলেই তিনি থেমে গেলেন।কিছু জানতে চাচ্ছেন নাকি বুঝতে পারলাম না...............



-আচ্ছা বাবা,ও কি ভয় পেয়েছিল?



প্রশ্নটার জবাব দিতে গিয়ে আমি একটু চিন্তা করি।সেইদিন ব্যাকআপ নিয়ে আমাদের স্পটে পৌছাতে ৩ ঘণ্টার মতো লেগেছিল। তবে গিয়ে কোন লাভ হয়নি।রকেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত আপনের লাশ আর স্নাইপারের গুলিতে নিহত প্রায় চল্লিশ জনের মতো কাজাখ কসাইয়ের মৃতদেহ ছাড়া উদ্ধার করার মতো কিছুই ছিল না।আপন হয়তোবা সেইদিন বুঝতে পেরেছিল যে সে না থাকলে এতোগুলো পারফেক্ট শট আমি নিতে পারবোনা,তাই সে আমাকে থাকতে দেয় নাই।সেইদিন চপারে টার লাশটা উঠানোর সময় আমার হাত কেন জানি তার ভার নিতে পারছিলো না।কেন জানি মনে হচ্ছিলো যেন আবার মমের ডেডবডি নিয়ে কফিনে রাখছি।ছেলেটা আমাকে না বলেই চলে গিয়েছিলো সেদিন.........



-ম্যাম,আপনার ছেলে ভয় পায় নাই।আপনারা মুক্তিযোদ্ধার ফ্যামিলি,আপনার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা,আপনার ছেলে কেন ভয় পাবে?এই প্রশ্ন করে আমি সেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।হুমায়রা নামের মেয়েটার বাসা কাছেই,তাকে আপনের কথা বললেই এই দেশে আমার কাজ শেষ।











মেয়েটাকে তার বাসার সামনে থেকে ফলো করে একটা ক্যাফে টাইপের জায়গাতে গেলাম।নামটা জানি কেমন,আইসক্রিম পার্লার।মেয়েটার পিছন পিছন ঢুকে দেখি ৩-৪ টা ছেলের সাথে বসে লেগপুলিং করছে। আমি তাদের সামনের টেবিলে গিয়ে বসলাম।কানে বিক্ষিপ্ত ভাবে মেয়েটার sweetheart,lolzzzzz,omg টাইপ শব্দ শুনতে শুনতেআমি চিন্তা করছি মেয়েটাকে কিভাবে আপনের কথা বলবো।হটাত করে কেন জানি আপনের উপর আমার খুব মায়া হল।ছেলেটা তার সম্পূর্ণ ভালোবাসাটুকু ভুল একটা মেয়ের জন্য রেখে মারা গেছে-এই কথাটাই খালি মাথায় ঘুরতে লাগলো।আমি উঠে ক্যাফের দরজার দিকে পা বাড়ালাম।এয়ারপোর্টে যেতে হবে কারন ৯ টায় আমার ফ্লাইট।আপনের কাছে করা প্রমিসটা আমি রাখবো না। যদি আমি মেয়েটাকে আপনের কথাগুলা বলি তাহলে আপনের ভালোবাসার মুখে জুতা মারা ছাড়া কিছুই হবেনা।সবাই সব কিছু বুঝেনা,সবাই সবকিছু পাওয়ার যোগ্য না......................................





পরিশিষ্টঃএইটা আমার লেখা প্রথম গল্প।লেখাটা পড়ে কারো ভালো লাগবে এই আশা খুবই কম কিন্তু যদি কারো এই লেখাটা ভালো লাগে তাহলে ধরে নিবো থ্রিলার গল্পকে আবেগময় গল্পতে রুপান্তরের চেষ্টা করাটা তেমন বোকামি না.......

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫

ইখতামিন বলেছেন:
প্রথম গল্পটা আসলেই ভালো লেগেছে। কেনো জানি প্রথম গল্প মনে হলো না। আর থ্রিলারের সাথে রোম্যান্স.. দারুণ... চালিয়ে যান :)

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৬

ট্রিপল এ বলেছেন: ভাই এটা আসলেই আমার ফেবুতে লেখা প্রথম গল্প ছিল।আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.