নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

http://www.somewhereinblog.net/blog/kauser_pranjal/category/17287

এগিয়ে যেতে চাই নিজের চেস্টায় এবং যিনি সৃষ্টি করেছেন কারও করুনায় নয়

আথাকরা

আমার জীবন বৈচিত্রময় ! জীবনের প্রতিটা পদে পদে বাধা পেয়েছি কিন্তু এসব বাধা গুলো খুব সফল ভাবেই উত্তিণ্ণ হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ ।

আথাকরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন ইউসুফ ভাই

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৮

16 january,2011 te deya ইউসুফ ইয়োহানা থেকে মোহাম্মদ ইউসুফ, পরিচিতজনদের কাছে ইউসুফ ভাই। মোহামেডানের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে খেলতে আসা পাকিস্তানের এই ব্যাটসম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক মাহমুদ প্রায় তিন মাস চেপে রাখার পর খবরটা জানাজানি হলো ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে। পাকিস্তান দলের ‘খ্রিষ্টান’ ক্রিকেটার ইউসুফ ইয়োহানা স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেছেন, খবর তো হতেই হবে! ধর্ম বদলে ইউসুফ ইয়োহানা হয়ে গেলেন মোহাম্মদ ইউসুফ, ইউসুফ ভাই। তাঁর স্ত্রী তানিয়া থেকে হয়ে গেলেন ফাতিমা। ধর্মান্তরিত হয়ে মায়ের বিরাগভাজন হয়েছেন, আত্মীয়স্বজনের অনেকেই ছিন্ন করেছে সম্পর্ক। তাতে কী? মোহাম্মদ ইউসুফ তত দিনে বদলে যাওয়া এক মানুষ। জীবনের মানেটাই অন্য। জাগতিক মায়া তাঁকে স্পর্শ করে না। এই যে তিনি নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে দলে সুযোগ পেলেন না, প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হয়তো বলতেন, ‘এটা এমন কিছু নয়। সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।’ কথা মিথ্যে নয়। মহাজগতে যা-ই ঘটে, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই তো ঘটে! ইউসুফ সে সত্যটাকেই করে নিয়েছেন জীবনের ব্রত। প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি পূর্ণতা-অপূর্ণতা সমর্পিত একজনের কাছেই। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে মোহামেডানের হয়ে খেলছেন। সেই সুবাদেই তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া। তা এ কাজটায় বেশ আন্তরিকই মনে হলো তাঁকে, অন্তত অনেক পাকিস্তানি ক্রিকেটারের মতো বিনিময়ে টাকা-পয়সা দাবি করে বসলেন না। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, কিংবা লারা বড় না টেন্ডুলকার, কোনো প্রসঙ্গেই ক্লান্তি নেই। ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম, মাঠস্বল্পতায় মনে হলো কিছুটা বিরক্ত। যে মাঠে বসে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন, মোহামেডানের অনুশীলনের সেই ধানমন্ডি ৪ নম্বর মাঠটাকে তো বলে দিলেন, ‘বাচ্চাদের মাঠ!’ তার পরও এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটকে অনেক পেশাদার মনে হয়েছে ইউসুফের কাছে, এখানকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট দেখে নাকি বিস্মিতও হয়েছেন। সব দেখেশুনে তাঁর উপলব্ধি, ক্রিকেট-উন্নয়নের চেষ্টা আছে এ দেশের সংগঠকদের। সাকিব কেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, সেটারও একটা ব্যাখ্যা পাওয়া গেল ইউসুফের কাছ থেকে, ‘সাকিব খুব সাহসী খেলোয়াড়। দলের প্রয়োজনে দ্বিতীয় ওভারেও বল করতে চলে আসে, পাওয়ার প্লেতে বল হাতে নেয়। সাহসিকতার সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতাই তাকে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার বানিয়েছে। সব সময়ই কিছু না কিছু করতে চায় সে।’ এ রকম আরও অনেক প্রসঙ্গই আছে, যেগুলোতে ইউসুফের ক্রিকেটার সত্তাটা বেরিয়ে আসে। লারাকে তাঁর টেন্ডুলকারের চেয়ে অনেক বড় ক্রিকেটার মনে হয়। কারণ, ‘দুজনই বড় ব্যাটসম্যান। কিন্তু লারার ইনিংসগুলো ভালো করে দেখলেই বুঝবেন, কেন সে এগিয়ে। “সে ম্যাচ উইনার” স্পট ফিক্সিং প্রসঙ্গে ইউসুফ একজন “কোড অব কন্ডাক্ট” মানা সতর্ক ক্রিকেটার। তবে মোহাম্মদ আমিরের জন্য একটু হতাশা আছে বুকে, খুব প্রতিভাবান বোলার। বিশ্বকাপে ওকে অবশ্যই মিস করবে পাকিস্তান।’ অথচ এ মানুষটাই নিজের বেলায় কী প্রচণ্ড অদৃষ্টবাদী! ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ—জীবনের সবই ছেড়ে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তার হাতে। বলতে পারেন, ক্রিকেটার ইউসুফের সংজ্ঞাই যেন, ‘যিনি দল থেকে বাদ পড়লে কষ্ট পান না, দলে ডাক পেলে আনন্দিত হন না।’ যখন জিজ্ঞেস করা হলো, বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী? ইউসুফের উত্তর, ‘সবই আল্লাহর হাতে। আমি তাঁর ওপর সবই ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ যদি আমাকে ১৫ সদস্যের দলে রাখতে চান, কেউ আটকাতে পারবে না।’ আবার যখন বলা হলো, আপনার ক্যারিয়ারজুড়েই তো উত্থান আর পতন। কখনো অবসর নিয়ে ফিরে আসা, কখনো ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার...। ইউসুফ তাতেও একই রকম, ‘এসবই জীবনের অংশ। আমি কখনোই এসব পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়িনি। কোনো সমস্যা মনে করিনি এসবকে। কারণ, আমি সব সময় মনে করেছি, এটা জীবনের অংশ, এর বেশি কিছু না।’ জীবনকে সহজ সমীকরণে ফেলতে পেরেছেন বলেই হয়তো কখনো জানতে চাননি, মাঝে কেন পিসিবি তাঁকে বহিষ্কার করেছিল, কেনই বা আবার ফিরিয়ে আনল। ‘আমি জানি না, জানি না কেন এসব হয়েছে। চেষ্টাও করিনি জানতে। আমি তো বলেছি, উত্থান-পতন জীবনের অংশ। এসব ঘটবেই। এই যে পৃথিবী, এখানে আমরা খুব বেশি দিনের জন্য তো আসিনি! সে জন্যই আমার খারাপ লাগে না। সবকিছুই খুব স্বাভাবিকভাবে নেই।’ ক্যারিয়ারের শুরু আর শেষ নিয়েও একই দর্শন। শুরু নিয়ে যেমন বললেন, ‘আমি খুব দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছি। এটাও আল্লাহর ইচ্ছা। আমরা শুধু চেষ্টা করি। আমি যে পাকিস্তানের হয়ে খেলব, সেটা কখনোই ভাবিনি। আল্লাহ চেয়েছেন বলেই এসব ঘটল।’ শেষ নিয়েও ইউসুফের একই কথা, ‘সুযোগ পেলে হয়তো এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ হবে। আবার এমনও হতে পারে, আরও খেলছি। আমি আসলে কিছুই বলতে পারব না। কোথায় গিয়ে ক্যারিয়ার শেষ হবে, জানি না। ভবিষ্যৎ কেউই বলতে পারে না। দেখা যাক কোথায় যাই...আল্লাহই আমাকে নিয়ে যাবেন।’ এই অদৃষ্টবাদী ইউসুফও অবশ্য একটা জায়গায় বেশ অহংকারী। টেস্ট ক্রিকেটে এক বছরে সবচেয়ে বেশি (১৭৮৮) রান করে ২০০৬ সালে ভিভ রিচার্ডসের ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিলেন। সেই কীর্তি এখনো চোখে ভাসে তাঁর, ‘সন্দেহ নেই অনেক বড় রেকর্ড ওটা। ১৭৮৮ রান, ১১ ম্যাচে ৯ সেঞ্চুরি...সহজ কথা নয়।’ এই যে গর্ব, রেকর্ড গড়ার অহংকার, ইউসুফ এর জন্যও কৃতজ্ঞতা জানালেন সৃষ্টিকর্তার কাছে, ‘রেকর্ডটা আল্লাহরই দেওয়া। তাঁর সাহায্য না পেলে কিছুই হতো না। তিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন।্রআমি শুধু চেষ্টা করছি কঠোর পরিশ্রম করতে।’ ২০০৫ সালে ইসলামধর্ম গ্রহণ করার ঠিক পরের বছরই করেছেন বিশ্বরেকর্ড। অর্জনটাকে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে উৎসর্গ তো করাই যায়। তবে ক্রিকেটটাকে ভালোবাসা মানলেও মুসলমান হওয়ার পর সব রকম অর্জন আর ব্যর্থতাতেই তিনি সমান প্রতিক্রিয়াহীন। জীবনের লক্ষ্যটাও বদলে গেছে এখন, ‘যদি কেউ চায় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ নিজের জীবনে ধারণ করতে, তাঁর মতো জীবন যাপন করতে, সবার মধ্যেই পরিবর্তন আসতে পারে। আমিও সেটাই করছি। এই জীবন নিয়ে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। মৃত্যুর পর আরেকটা জীবন আছে, সেটাই আসল জীবন।’ সাচ্চা মুসলমান, তারপর মোহাম্মদ ইউসুফ একজন মানুষ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন ক্রিকেটার। নইলে বিশ্বরেকর্ডের ‘১৭৮৮’ সংখ্যাটাকে কেন ব্যবহার করবেন নিজের ই-মেইল ঠিকানায়?..

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.