![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার জীবন বৈচিত্রময় ! জীবনের প্রতিটা পদে পদে বাধা পেয়েছি কিন্তু এসব বাধা গুলো খুব সফল ভাবেই উত্তিণ্ণ হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ ।
৩৫-তম বিসিএস প্রিলিমিনারিঃ সুজন দেবনাথের জানালায় (অব্যয় অনিন্দ্য’র উঠানে)
আজ যারা ৩৩-তম বিসিএসে জয়েন করলেন, তাঁদের সবার প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের উত্তরসূরীদের জন্য কিছু লিখতে বসলাম।
৩৫-তম বিসিএস কবে হবে এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছে বিভিন্ন জায়গায়। বিসিএস যাদের passion, তাঁদের জন্য এ উৎকণ্ঠা অতি স্বাভাবিক এবং এটা পজিটিভ, এ নিয়ে কথা বলতে পরীক্ষার্থীদের ভাল লাগে – এটা ঠিকই আছে। তবে এসব প্রশ্নের কোন specific উত্তর নাই, সবাই আন্দাজে ঢিল মারে। কিছু মানুষ এসব নিয়ে একের পর এক তারিখের কথা বলে যায়, তাতে মনে হয়, পিএসসি বুঝি তাঁদের সাথে আঁতাত করেই সব কিছু করে। কিছু লোক তাঁদের ব্যবসার জন্য Panic সৃষ্টি করে - আর মাত্র কদিন পরেই পরীক্ষা, এখন তাঁদের কাছে না গিয়ে আর উপায় নাই! আর কিছু লোক আন্দাজে বলতে থাকে, যদি লাইগা যায়! কেউ কেউ আবার পিএসসির অফিসারদের সাথে কথা বলেছে বলে রেফারেন্স দেয়। বাস্তবতা হচ্ছে, পিএসসির সকল ডিপার্টমেন্টের অফিসাররাও জানে না সিদ্ধান্ত কোন দিকে যাচ্ছে। তাই এতসব বিশেষজ্ঞের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে নিজে হিসেব করে ফেলুন। এখনো সার্কুলার হয়নি, নতুন সিলেবাসের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিল শোনা গেছে। তো সেটা ফাইনাল হয়ে সার্কুলার হবে, আর সার্কুলার হবার পর ২ মাসের মত সময় হাতে থাকেই। মানে, যাই হোক ৩ মাস সময় আপনার হাতে আছে। তো ৩ মাস সময় প্রিলি পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট, যদি ঠিকভাবে কাজে লাগান সময়কে। তাই কবে পরীক্ষা এটা নিয়ে বেশি উৎকণ্ঠায় না থেকে, ৩ মাসের একটা প্যাকেজ পড়া শুরু করতে পারেন। যদি বেশি সময় পান, সেটা বোনাস। আর খুব বেশি সময় পাওয়া যাবে না বলেই মনে হচ্ছে (আমিও আন্দাজেই বললাম)।
এবার আসি - নতুন সিলেবাস প্রসঙ্গে।
যারা প্রথম পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য নতুন সিলেবাস কিন্তু অনেক ভাল জিনিস। নতুন সিলেবাস, সবার জন্যই নতুন। যারা অনেকদিন ধরে পড়ছে, আর যারা ৩ মাস পড়ছে, তাঁদের প্রিপারেশনের পার্থক্যটা কমে আসে। এতে Basic knowledge এর নির্ভর করে উৎরে যাওয়া যায়। তাই বিষয়টাকে পজিটিভলিই নিন। আগের সিলেবাস এবং প্রশ্ন ভালভাবে এনালাইজ করার পাশাপাশি দেখুন নতুন কী কী আসতেছে। যতদূর শোনা গেছে বিজ্ঞান, ভূগোল, আইটি, বাংলাদেশ বিষয়াবলী এসব বিষয়ে নম্বর বাড়বে, যদিও এটা সিউর না। তো এগুলোতে নতুন করে কী আসতে পারে সেটা একটু ভাবি চলুনঃ
বিজ্ঞান – আগের বছরগুলোতে নিয়ম হয়ে গিয়েছিল যে, বিজ্ঞানে আগের বছরের প্রশ্ন পড়লেই হবে। এখন যদি বিজ্ঞানে নাম্বার বাড়ে, তাহলে ওতে হবে না। একটু বেশী পড়তে হবে। ক্লাস IX-X এর বিজ্ঞান (সাধারণ বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান) একটু দেখতে পারেন। আর যে কোন গাইড পড়ে ফেলতে হবে। রিটেনের জন্য যে ডিটেইলস সিলেবাস দেয়া হবে, সেটা প্রিলিতে ফলো করবেন প্লিস। আর আগের প্রশ্ন দেখে কোন চ্যাপ্টারের কোথা থেকে প্রশ্ন এসেছে, সেরকম অন্যটা আসলে যেন পারা যায়, সেই প্রিপারেশন নিতে হবে।
ভূগোল - যদি ভুগোলকে আলাদা বিষয় করা হয়, তাহলে ক্লাস-VIII (ভূগোল অংশ - বিজ্ঞান ও সমাজ বই থেকে) ও ক্লাশ-XI এর ভূগোল বই দেখে ফেলতে পারেন। মোটাদাগে ভূগোলের তিনটা পার্ট – (i) সাধারণ প্রাকৃতিক ভূগোলঃ এতে সৌরজগত, নদী, পাহাড়, হ্রদ, বৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ, সাগর, মহাসাগর ইত্যাদি থাকে; (ii) বাংলাদেশের ভূগোল – বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, নদী, পাহাড়, দ্বীপ, সাগর, বন, হাওর, বিল, কোথায় কি শস্য ভাল জন্মে ইত্যাদি থাকে এবং (iii) আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূগোলঃ এতে বিভিন্ন মহাদেশের এবং সারা পৃথিবীর বৃহত্তম, ক্ষুদ্রতম, নদী, পাহাড়, সাগর, প্রণালী, আন্তর্জাতিক সীমারেখা ইত্যাদি থাকে। পৃথিবীর কোথায় কি ভাল জন্মে ইত্যাদি থাকে। তো ভূগোলের এসব বিষয় আগেই পড়তে হত। এখন ভলিউমটা বাড়বে।
আইটি বা কম্পিউটারঃ ক্লাশ IX-X এবং ক্লাস XI-II এর কম্পিউটার বই হতে পারে মেইন রেফারেন্স। এছাড়া বাজারে আইটি রিলেটেড MCQ বা এক কথায় উত্তরের কিছু বই আছে, ওগুলোর একটা কিনে নিতে পারেন। কিছু ব্যাংকের পরীক্ষায় আইটি প্রশ্ন থাকে, তাই ওগুলো দেখতে পারেন। তবে আইটি বিষয়ে MCQ প্রশ্ন বিভিন্ন চাকরীর পরীক্ষায় এত হাস্যকর হয় যে, যে কোন আইটির লোক দেখে দাঁত বের করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। আশা করা যায়, যদি বিসিএসে আইটি আলাদা বিষয় হয়, তাহলে অমনটা হবে না। যারা আগে আইটির MCQ পড়েননি, তাঁদেরকে বলব, একটু পড়তে। এনেক প্যাঁচের MCQ আছে, যেটা প্রাকটিক্যালি কোন বিষয়ই না, কিন্তু MCS হিসেবে confuse করে। তাই IT Abbreviation, Hardware, Software (কি সফটওয়্যার কি কাজ করে) , Operating System, Internet, Networking, Database, Bit-Byte, binary, Multimedia, Optical Fiber, বাংলাদেশের আইটি পলিসির ইতিহাস, Microsoft Office এর কিছু কমান্ড (কপি, পেস্ট...), আইটি হিস্ট্রি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ।
এবার নতুন সিলেবাসের আলোচনা থেকে বের হয়ে আমার প্রিলি প্রিপারেশনের অভিজ্ঞতা বলিঃ
বিসিএস দেবার সিদ্ধান্তটা আসলে নিয়েছিলাম ২৮-তম বিসিএসের সার্কুলারের পর। ভুল করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ফেলেছিলাম, আর ইঞ্জিনিয়ারিং এর পোলাপাইন ৯০%-ই বিদেশে চলে যায়। তাই ফ্রেন্ডসার্কেলের মধ্যে বিসিএসের কোন নাম-গন্ধই ছিল না; সব বিদেশে যাবে, পিএইচডি করবে, টাকা কামাবে – এই রকম আলাপ-সালাপ। বিদেশ যাবার পোকাটার জ্বালায় ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিয়া ঢাকায় ফিইরাই GRE দিলাম। বেহুস হয়ে পড়তে থাকলাম ৩ মাস, কিন্তু GRE শেষে হুশে ফিরে দেখি অটোমেটিক্যালি বেকার সিল গায়ে লেগে গেছে। অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হইল, বন্ধুরা পিন মারে, আত্মীয়রা কী সব চাকরির সার্কুলার দেখায় – বুঝলাম বেকার জীবনে কত গমে কত রুটি! দিন যায়, নষ্ট সময় যায় না। একদিন দেখলাম ফ্যামিলিতে সমস্যা শুরু হইছে – আর যাই হোক, এখন বিদেশ যাওয়া যাবে না। হায় আমার একুল-ওকুল সবই গেছে। তড়িঘড়ি কইরা এক সফটওয়্যার কোম্পানিতে ঢুকলাম। তাঁর কিছুদিন পরেই মামা বিসিএস সার্কুলারের কথা বলল। আমার ভাঙ্গা নৌকা বিসিএসের দিকে রওনা করল। এত কথা বললাম, এই জন্য যে – অনেক দেরীতে সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রিলি পাশ করা যায়, যদি সময়টাকে সিস্টেমেটিক্যালি কাজে লাগানো যায়। আমি এপ্লাই করার পর যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম। তাই ৩ মাস ভালভাবে সময় দিলে প্রিলিতে টিকা সম্ভব।
যাই হোক এপ্লাই করতে গিয়ে চয়েস কি দিব? মামা নিয়ে গেল অডিট ক্যাডারের এক উপসচিব দাদার কাছে। তাঁর পরামর্শেই চয়েস দিলাম – ফরেনকে ফার্স্ট চয়েস দিতে বলল। ফর্ম জমা দিলাম। এখন প্রিপারেশন। প্রথমের কিনলাম কারেন্ট এফেয়ার্স। দেইখাইতো মাথা নষ্ট – আগের মাসে কোন দেশের প্রেসিডেন্টের মুরগীর খামারে কততম মুরগীর লড়াই হচ্ছে সেটা তারিখসহ পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরাইছে। ওমা! এ কী করে সম্ভব মনে রাখা। তো ২৭তম বিসিএসে হইছে, এমন এক পরিচিতকে কল দিলাম। সে বলল, গাইড কিন, আগের প্রশ্ন দেখ। আমি নীলক্ষেত গিয়ে প্রফেসরসের একসেট (সব সাবজেক্টের) গাইড কিনলাম। তখন এত বেশি কোম্পানীর গাইড ছিলও না। আর এক জনের পরামর্শে বাংলার জন্য সৌমিত্র শেখরের ‘জিজ্ঞাসা’ বইটা কিনলাম। প্রশ্ন দেখে ভয় লাগল না, যেটা লেগেছিল কারেন্ট এফেয়ার্স দেখে। দেখলাম -অংকগুলা পারব, ইংরেজীর একটা অংশ পারব, বাংলার ২/১ গ্রামার পারব আর সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের তেমন কিছুই পারব না। ২/৩ দিন আরেক বন্ধুকে সাথে নিয়ে ৫-৭ বছরের প্রশ্ন এনালাইসিস করলাম, গাইডের সূচী ভাল করে দেখলাম আর গাইডে কোন চ্যাপ্টার থেকে কটা আর কি প্রশ্ন আসছে সেগুলা দাগাইয়া ফালাইলাম। দেখলাম, বিজ্ঞানের ৭০% প্রশ্ন আর ইংরেজীর ১০-২০% প্রশ্ন রিপিট হইছে...বাহ ভাল খবর। তার মানে আগের প্রশ্নরে গোলাইয়া খেয়ে ফেলতে হবে, সেটাই করেছিলাম পরে। সেই সাথে কিভাবে যেন রিটেনের সিলেবাস আমার হাতে আসছিল। সেইটাও তখুনি দেখলাম। বাংলার জন্য দেখলাম ২/৩ টা গ্রামার ছাড়া কিছু পারি না, কিন্তু প্রশ্নের ধারা এমন যে, সময় দিলে কিছু নির্দিষ্ট জায়গা থেকে অনেক কিছু আসে। সেই নির্দিষ্ট জায়গাটা কি-সেটা বের করতে হবে। রিটেনের সিলেবাসে দেখলাম-বাংলার সাহিত্যের ইতিহাসের কিছু জিনিস আর ১৮ জন কবি-সাহিত্যিকের নাম সরাসরি দেয়া আছে। প্রশ্নে দেখলাম – ইতিহাস আর ওই ১৮ জনের থেকে ১০-১২ টা প্রশ্ন প্রতি বছরই আসছে। তো টার্গেট করলাম, এই ১৮ জনের যা কিছু পাই পড়ে ফেলব। তো ‘জিজ্ঞাসা’ বইটা খুলে দেখি, এদের ডিটেইলস আছে। সেগুলো পড়ে ফেলব সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পরে তাই করছিলাম। আর বাংলাদেশের আধুনিক সাহিত্য কথাটা সিলেবাসে ছিল- তো শামসুর রাহমান, শহীদুল্লাহ কায়সার এমন বেশ কয়েকজন সাহিত্যিকদের সব কিছু ‘জিজ্ঞাসা’ থেকে পড়ব সিদ্ধান্ত নিলাম। এরপর বাংলা গ্রামার অংশে দেখলাম, যা আসছে তা আমরা নাইন-টেনের ব্যাকরণ বইটায় পড়ছি। তো তাড়াতাড়ি বোর্ডের সেই ব্যাকরণ বইটা জোগাড় করলাম আর চ্যাপ্টার ঠিক করলাম, আগে কোন কোন চ্যাপ্টার পড়ব। উপসর্গ, শব্দের শ্রেণীবিভাগ (উৎপত্তিগত ও গঠনগত), বাক্য, ধ্বনির উচ্চারণস্থান, বচন, লিঙ্গ, কাল এসব থেকে দেখলাম বেশি প্রশ্ন আসছে, তো এগুলো আগে পড়ব সিদ্ধান্ত নিলাম। এভাবে দেখলাম, বাংলার প্রস্তুতি ১-২ মাসে বেশ ভাল হওয়া সম্ভব। এর মাঝে ২/১ বন্ধুর সাথে দেখা হল যারা কোচিং করে। আলাপ হল- ওদেরকে মনে রাখার উপায় হিসেবে বিভিন্ন ছন্দ বা টেকনিক শিখায়, ২/১ টা দেখালও। তখন ভাবলাম, এগুলাতো আমরা ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় সময় শিখছিলাম, বানাইছিলাম, তো এখন কেন নয়। তখন ঐ যে ১৮ জন সাহিত্যিক যাদের নাম সিলেবাসে আছে,তাঁদের বইএর নাম দিয়ে নিজেরাই ছন্দ বানাতে শুর করলাম। আর নিজেদের বানানো ছন্দ মনেও ছিল ভাল। এভাবে বাংলায় একটা ভাল প্রিপারেশন হল। আমি বাংলায় ১৬টার মত পারছিলাম ২৮-তম প্রিলিতে।
এরপর ম্যাথ- দেখলাম আগের প্রশ্নের বেশির ভাগ ম্যাথ পারি। কিছু কিছু পাটিগণিত ভুলে গেছি; লসাগু, গসাগু এর ক্ষুদ্রতম, বৃহত্তম সংখ্যার কিছু জিনিস মনে নাই – এমন আর কি। তো তখন গাইড থেকেই ম্যাথ করলাম। ক্লাশ VIII এর ম্যাথ বইটা নিলাম, নিয়ে কিছু পাটিগণিত দেখলাম। তো ম্যাথে যেটা দেখলাম, খুব দ্রুত করতে হলে অল্প জায়গায় অল্প কথা লিখে ক্যালকুলেটর কম ব্যাবহার করে হিসাব করতে পারলে তাড়াতাড়ি হচ্ছে, সেটা অভ্যাস করলাম। এ জায়গায় আমি আপনাদের বলতে চাই, ম্যাথের উপর বিসিএসের ভাল-খারাপ অনেকাংশে নির্ভর করে। যারা ম্যাথে ভাল, যদি ২০টা প্রশ্ন আসে, তাঁরা ১৮-২০ টাই সঠিক করে থাকে। তো এই জায়গায় তাঁরা অনেক এগিয়ে যায়। তাই যাদের ম্যাথ নিয়ে সংশয়, তাঁরা প্লিস ম্যাথে সময় দিন, এখানে যেন বেশী পিছিয়ে না যান। বিশ্বাস রাখুন, প্রাকটিস করলে ম্যাথের সমস্যা চলে যায়। এগুলো স্কুল ম্যাথ, তো আপনি চেষ্টা করলে অবশ্যই দ্রুত সঠিকভাবে করতে পারবেন।
এরপর ইংরেজীঃ PC Das এর গ্রামার বই তখন আমার হাতের কাছে তখন ছিল না, তাই আমার পরীক্ষার জন্য আমি পড়তে পারিনি। গ্রামার পড়ছিলাম গাইড থেকেই। আর কয়েক মাস আগে GRE পরীক্ষা দেয়ায় ভোকাবিউলারি ভালই ছিল। ইংরেজী সাহিত্য অংশটাও গাইড থেকেই পড়লাম। ফাইনাল পরীক্ষায় কিন্তু আমার ইংরেজি বেশি ভাল হয় নাই। ১২-১৩ টা হইছিল। তাই বলছি যাদের সময় আছে, তাঁরা গ্রামার বই আর ভোকাবিউলারি পড়েন।
বিজ্ঞানের জন্য আগের বছরের প্রশ্ন পড়ে ফেললাম। আর ক্লাশ নাইনের সাধারণ বিজ্ঞান আর পদার্থ বিজ্ঞান থেকে অতি অল্প কিছু যেমন, চুম্বক, শব্দ, আলো ইত্যাদি একটু দেখলাম। আর কিছু ডাক্তারি টপিক – স্ট্রোক, এইডস – এগুলা গাইড থেকে পড়লাম।
সাধারন জ্ঞান আমার জন্য সময়ই একটা ধাঁধা। আমি পড়েছি যতটুকু সময় পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ, দর্শনীয় স্থান, আন্তর্জানিক সংগঠন এগুলো আগে পড়ে ফেলেছিলাম। পরে যতটুকু সম্ভব, পড়েছিলাম। তবে সারাদিন সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বসে আমি ছিলাম না। সাধারণ জ্ঞানের জন্যও নিজেরা টেকনিক বা ছন্দ দিয়ে মনে রাখার মত কিছু বানাইছিলাম।
** এরপর আমি একটা মডেল টেস্ট গাইড কিনে মডেল টেস্ট নিজে নিজে প্রাক্টিস করছিলাম। আমি কিন্তু তখন চাকরি করতাম। তবে চাকরির বাইরে যতটুকু সময় পেয়েছিলাম, প্রায় পুরাটাই কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছি। কোচিং করি নাই বলে সময় নষ্ট হয় নাই (যদিও একাধিক কোচিং তাঁদের প্রসপেকটাসে আমার নাম দিয়েছিল বিনা অনুমতিতেই)। যাই হোক, এসব প্রিপারেশনে প্রেম কিন্তু খুব কাজের একটা জিনিস, Love এ লাভ হয়। যদি ওই সময়টা ঝগড়ামুক্ত প্রেম করতে পারেন, তাহলে প্রেমিক/প্রেমিকার কাছে রাত জেগে টেকনিকগুলা ফোনে বলতে পারবেন, তো তাঁর কাছে বলতে হইলে আপনারে ভাল ভাবেই শিখতে হবে, নইলে আলাপ জমবে না, ক্রেডিট নিতে পারবেন না; এভাবে প্রেম আপনাকে প্রিলি প্রিপারেশনে হেল্প করতে পারে (এইটা কিন্তু আমার জীবন থেকে নেয়া)। তবে সাধু সাবধান !! প্রেমে বেশি ঝগড়া হইলে কিন্তু প্রিলি শিকায় উঠে যাবে।
এরপর পরীক্ষার আগের রাত - সে এক বিশাল ঘটনাবহুল রাত। আমি আমার বন্ধুদের মেসে গেছি, ওখানে নাকি ভার্সিটি হল থেকে আউট হওয়া প্রশ্ন আসব। আগেরবার নাকি এই মেসের ব্যাপক সাফল্য ছিল। তো হলোও তাই, বন্ধুদের বন্ধুরা বিভিন্ন হল থেকে ফোন দিতে থাকল, আর ফোনে প্রশ্ন বলতে থাকল। আহা সে কি উত্তেজনা, একজন বলে বাংলার ১৫ টা পাইছে, সেইটা লিখা শেষ করার আগেই আরেকজন ফোন দিয়া বলে, শালা তোর মোবাইল ওয়েটিং, ২০ টাই ইংরেজী পাইছি। আমি দর্শক এবং শ্রোতা। আগের দিন পর্যন্ত পড়াশুনায় আমারে সবার দরকার ছিল, আর সে রাত্রে আমারে কারো দরকার নাই। দুঃখে নিজেরে অসহায় লাগছিল। ৩ টা বাজলে ভাবলাম, আর সহ্য হচ্ছে না, আমার ঘুমানো দরকার। কিন্তু ঘুমামু কেমনে। শোয়ামাত্র একজন ডাক দিল – অংক প্রশ্ন ফটো তুইলা পাঠাইছে, এখন আমারে দরকার সলভ করতে। রাত শেষ হইল – আমার বন্ধুরা যে পরিমান প্রশ্ন ফোনে সংগ্রহ করছে তা বিশটা প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সমান হবে – হুম, ২০০০ প্রশ্ন তো হবেই। তো পরীক্ষা হলে গিয়া আমি সেই রাতের কথা ভুইলা গেছি। এই জায়গায় আমি অবশ্যই স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দেই, তিনি আগের রাতের এফেক্ট আমার পরীক্ষার হলে আসতে দেয় নাই। ৭৪ টা উত্তর করেছিলাম। ২৮-তম এর প্রশ্ন কিন্তু কঠিন ছিল, সেবার ৪৫ পেয়েই চান্স পেয়েছিল। আমি মনে হয় ৭০-এর আশেপাশে পেয়েছিলাম। ম্যাথ, বাংলা, বিজ্ঞান খুব ভাল হল, ইংরেজী মোটামুটি আর সাধারণ জ্ঞান অর্ধেকের মত উত্তর করেছিলাম। আমার সেই আগের রাতের বন্ধুরা বের হয়ে বলতেছিল, হায়, ২০০০ গুল্লি মিস হইল, একটাও আইল না, যা পারত রাত জাগাতে সেগুলাও নাকি ভুইলা গেছে!! তাই পরীক্ষার আগের রাতে সাবধান। ভাল করে ঘুমানোই ভাল।
এবার আমার এই হিংগি-বিংগি অভিজ্ঞতা থেকে প্রিলির প্রিপারেশনের কিছু সাধারণ পরামর্শঃ
প্রতিটা বিষয়ের জন্যই আগের প্রশ্নই আপনার মেইন রেফারেন্স। প্রশ্নের উত্তর শুধু মুখস্ত করা নয়, এনালাইজ করুন কোন চাপ্টার থেকে কি এসেছে, কিভাবে এসেছে। ওই প্রশ্নের আলোকে চ্যাপ্টারগুলো পড়ুন যাতে একইরকম অন্য জিনিস আসলে উত্তর করা যায়, সেটাই লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিষয়ভিত্তিক টার্গেট অতি সংক্ষেপে বলতে চেষ্টা করছিঃ
বাংলাঃ বাংলার জন্য সোমিত্র শেখরের 'জিজ্ঞাসা' আর বাংলা ক্লাস IX এর বোর্ডের ব্যাকরণ বইটাই যথেষ্ট। আগের প্রশ্নের অনুসারে চাপ্টার বাছাই করে পড়বেন। এজন্য ৩৫-তম এর সার্কুলার দেবার পরে যে গাইড বাজারে আসবে তাঁর যে কোন একটা দেখতে পারেন। আর যদি সময় পেলে - হুমায়ুন আজাদের 'লাল-নীল-দীপাবলী', 'কত নদী সরোবর' একটু রিডিং পড়ে ফেলতে পারেন। অনেকে বাংলার পেছনে বেশী সময় দিতে নিরুৎসাহিত করেন যে – যতই পড়, বাংলায় নাকি ২০ এর মধ্যে ১২ এর আশে পশেই নম্বর থাকে। আমার অভিজ্ঞতা কিন্তু সেটা না। বাংলা সাধারণ জ্ঞান নয় যে, অনেক কিছুই প্রতিদিন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। বাংলার একটা নির্দিষ্ট জ্ঞান আছে যদিও তা অনেক ব্যাপক। জিজ্ঞাসা আর নাইন-টেনের বোর্ডের বই ভাল করে পড়লে ১৫-১৬ পাওয়া সম্ভব। আর এই প্রিপারেশনের একটা বড় অংশই রিটেনে ভীষণ কাজে লাগবে।
ইংলিশঃ ইংলিশের ৩টা অংশ – গ্রামার, ভোকাবিউলারি, ইংরেজী সাহিত্য। English for Competitive Examination, by Fazur Rahman – এ বইটা আগের বছরের বিসিএস এবং অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্নের সলিউশনের জন্য অনেকেই ফলো করে। কিছু ভুল বাদ দিলে এটা থেকে প্রশ্নের ভাল ধারণা পাওয়া যেতে পারে। ইংলিশের সব গাইডই ভুলে ভরা, তাই সাবধান হতে হবে।
গ্রামারঃ বিসিএস-এর ইংলিশ গ্রামার আসলে ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের। তাই যে কোন ইন্টার মিডীয়েট লেভেলের গ্রামার বই চলবে। গ্রামারের জন্য আমি প্রিফার করি - P. C. Das, বা Wren & Martin English Grammar এরকম কোন ইন্টার মিডিয়েট লেভেলের বই। যারা আগে এগুলো পড়েছেন, তাঁরা অবশ্যই এগুলোই পড়বেন। আর যারা আগে এগুলো পড়েননি, তাঁদের সময় থাকলে পড়ুন আর সময় না থাকলে ওই English for Competitive Examination, by Fazur Rahman এর থেকেই গ্রামার পড়ুন। আগের বিসিএস প্রশ্ন দেখে চাপ্টারগুলো পড়ুন, কোন গ্রামার বই পুরাটা পড়ার দরকার নেই। ভুল এড়াতে চাইলে গাইডের উত্তর আর একটার সাথে যাচাই করে নিতে পারেন।
ভোকাবিউলারিঃ বাজারের যে কোন ভোকাবিউলারি বই, অবশ্যই আগের প্রশ্ন আগে সলভ করবেন। আর যারা সময় নিয়ে ভোকাবিউলারি পড়তে চান, তাঁরা Word Smart (I &II) পড়তে পারেন। এছাড়া ভোকাবিউলারির জন্য আমার তৈরি করা ১২ টা ভিডিও টিউটোরিয়াল Youtube এ আছে, ওগুলো ডাউনলোড করে কয়েকবার শুনতে পারেন। ‘Sujan Debnath’ বা ‘অব্যয় অনিন্দ্য’ লিখে Youtube –এ সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে। প্রতিটা ৫-৭ মিনিটের এবং ৭-৯ মাগাবাইটের ফাইল, ১২ টাতে মোট ৭০ মিনিটের মত, ৩৯ টা গ্রুপে প্রায় ৪৫০ এর মত ওয়ার্ড আছে। যদি এগুলো প্রাকটিস করতে চান, তাহলে, আমার পরামর্শ হল- কয়েকবার শুনতে হবে আয়ত্ত্ব হতে হলে। ডাউনলোড করে গানের মত শুনলেও কাজে দিতে পারে। ভিডিওর শব্দগুলোকে খাতায় লিখে ফেলতে পারেন। এরপর যেখানে যে ওয়ার্ড পড়বেন সেটা যদি ওই ৩৯ টা গ্রুপের কোনটার সাথে মিলে যায়, সেখানে লিখে ফেলবেন। না মিললে নতুন গ্রুপ করে লিখে ফেলবেন। এভাবে আপনার নিজের একটা ভোকাবিউলারি খাতা হয়ে যাবে। ২-৩ সপ্তাহেই দেখবে অনেক অনেক কনফিডেন্ট হয়ে গেছেন। পরে ১৫দিন পর পর পুরা ওয়ার্ড খাতাটা রিভাইস করবেন। এই সিস্টেম আমার কাজে লেগেছিল। ভোকাবিউলারির কোন সাজেসশন হয় না, এক্ষেত্রে কনফিডেন্ট হতে পারাটাই আসল। শুধু ভোকাবিউলারি পড়লেই হবে না, আগের বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার যা এসেছিল, সেগুলোর মত প্রাকটিস করতে হবে।
ইংরেজী সাহিত্যঃ যে কোন গাইড থেকে অল্প সাহিত্য যেগুলো আগে এসেছিল, ওই রকমটা পড়ে ফেলতে পারেন।
ম্যাথঃ ম্যাথ যাতে কুইক, আর অল্প একটু লিখেই করে ফেলা যায়, সেই অভ্যাস করতে হবে। এটা প্রাকটিসে উন্নতি হবে। ম্যাথের যে কোন বিসিএস গাইড, বা অন্য কোন ম্যাথ গাইড ফলো করা যায়। ওই একই কথা-আগের প্রশ্নের আলোকে প্রাকটিস করুন। একই জিনিস সংখ্যা পাল্টে দিলে কত তাড়াতাড়ি করতে পারি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আর মুখে মুখে মানে ক্যালকুলেটর ব্যবহার না করে যত বেশি করা যায় তাতে সময় বাঁচবে। বাজারে শর্টটেকনিক কিছু গাইড আছে, সেগুলোও দেখতে পারেন।
বিজ্ঞানের কথা আগেই বলেছি।
সাধারণ জ্ঞানঃ সাধারণ জ্ঞানের জন্য যে কোন লেটেস্ট বই কিনবেন। এটা পরেও করতে পারেন মানে সার্কুলার হলে পর। MP3 সিরিজের বইগুলা একটু সাজানো, এগুলো দিয়েই সাধারণ জ্ঞান শুরু করা যায়।
** কারেন্ট এফেয়ার্স টাইপ কিছু ডিটেইল পড়বেন না, টাইম লস। শুধু মাসের বিশেষ খবরটা ভাল করে মনে রাখতে হবে। আর শেষে কিছু মডেল প্রশ্ন থাকে, ওগুলো দেখতে পারেন।
** আর নিজে নিজে মডেল টেস্ট দিবেন যত সম্ভব। সেটা যে কোন মডেল টেস্ট গাইড বা কারেন্ট এফেয়ার্সের শেষে থাকে, ওখান থেকে প্রাকটিস করা সম্ভব। এটা ভীষণ কাজে দেয়।
অনেক শুভকামনা... Ring the Time & Pave Your Dream.
..................
সুজন দেবনাথ
(অব্যয় অনিন্দ্য)....
©somewhere in net ltd.