নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! ব্যাটা নিয়াজী বলেছিলো, “বাঙালী মার্শাল রেস না”। ২৫শে মার্চের পরপরই যখন লক্ষ লক্ষ তরুণ লুঙ্গি পরে হাটু কাদায় দাঁড়িয়ে অস্র হাতে প্রশিক্ষন নিতে শুরু করল, বাঙালীর এই রাতারাতি মার্শাল রেস হয়ে যাওয়া দেখে পাকিস্তানি শাসক চক্র রিতিমত আহাম্মক বনে যায়। সেই অসম সাহস সেই পর্বত প্রমাণ মনোবল আবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে। দূর হোক দুর্নীতি, হতাশা, গ্লানি, অমঙ্গল। আর একবার জয় হোক বাংলার অপরাজেয় তারুণ্যের।
বিষণ্ন বিরিওজা - ৭
------------------------------ ডঃ রমিত আজাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)
রাত এখন দশটার উপরে। আমি ঘুমানোর প্রস্ততি নিয়ে শুয়েই পরেছিলাম প্রায়। এসময় আমার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে অপরূপ সাজগোজ করে আসা চপলমতি একটি তন্বী শ্বেতাঙ্গিনী তরুণী। আগে অনেকবারই ভেবেছি, মেয়েটি সুন্দরী নয়, কিন্তু এই মুহুর্তে প্রসাধনের গুন তাকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে। চোখ ফেরানো গেলেও কয়েক মুহুর্তের জন্য চোখ আটকে যাবে নিঃসন্দেহে। মেয়েটিকে এত রাতে এই সাজে রূমে ঢুকতে দেয়া ঠিক হবে কি? আমার স্থবিরতা দেখে ও তার স্বভাবসুলভ মিষ্টি হসে বললো,
তাতিয়ানাঃ আবারো পথ আটকে আছো! ঢুকতে দেবেনা?
আমি আরেকবার ভাবলাম এত রাতে এই সাজে মেয়েটাকে ঢুকতে দিলে লোকে কি বলবে? পরক্ষণেই আবার নিজের চিন্তায় নিজেরই হাসি পেলো, আমি কি বাংলাদেশে বসে আছি? এই ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে নারী-পুরুষ অবাধ সম্পর্কের দেশে বসে আমি এই কথা ভাবছি। এখানে তো এটা চা-বিস্কুট খাওয়ার মতই একটা সাধারণ ঘটনা। এই মুহুর্তেই দেখা যাবে এই ডরমিটরিতে অনেকেই বান্ধবীকে নিয়ে শুয়ে পরেছে। বান্ধবীতো ভালো অনেক সময় দেখা যায় আজই পরিচয় হলো এমন কারো সাথেই অবলীলায় রাত কাটিয়ে দিচ্ছে। আমার তাহলে ওকে ঢুকতে দিতে সমস্যা কি? ভিতর থেকেও কোন একটি চালিকা শক্তি আমাকে বলছিলো, "আসুক না মেয়েটা"। মৃদু স্বরে, "এসো" বলে দরজা ছেড়ে দাড়ালাম।
নিভৃত রাতে আমার ঘরে উপস্থিত হয়েছে সেই মেয়েটি, মনে মনে যার নাম আমি দিয়েছিলাম বার্চ বনের প্রণরেনী।আমি আরেকটু ভালো করে তাতিয়ানার দিকে তাকালাম। ও পোষাক পাল্টে এসেছে। কিছুক্ষণ আগে ওর পরনে ছিল ট্রাউজার আর শার্ট। আর এখন ওর পরনে হাটুর উপরে তোলা স্কার্ট, তবে মিনি স্কার্ট নয়। আর টাইট টপস। এই পোষাক অনেকটাই আবেদন ফুটিয়ে তোলে। অবশ্য এখানে এটা স্বাভাবিক পোষাকই। শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বলে ডিভানটা আমি ইতিমধ্যেই টেনে বেড বানিয়ে ফেলেছি। তার উপর বেডশীট ও ব্লাংকেটও ছড়ানো ছিলো। তাতিয়ানা প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলো, কোথায় বসবে। তারপর ডিভানেই বসে গেল। তবে পিঠ হেলান দেয়া যাবেনা বলে ও পায়ের উপর পা তুলে বসলো। স্কার্টের সাইজের কারণে এম্নিতেই হাটুর নীচের অংশ খোলা ছিলো, পা তুলে বসাতে আরো কিছুটা অনাবৃত হলো। ওর নীল চোখে ঘন কালো কাজল দিয়েছে। চোখের পাতার উপরে নীল ব্লাশন। কালোও নয় আবার সোনালীও নয় মাঝামাঝি একটা রঙের দীর্ঘ চুলগুলো পরিপাটি করে সাজানো। মুখে হালকা মেকআপের ছাপ। ঠোটে গোলাপী রঙের লিপস্টিক। সব কিছুই মানিয়েছে বেশ। মনে হচ্ছে প্রগলভা এই মেয়েটির ঠোট ভরা মধু, গাল ভরা লালিত্য। পুরুষ মনকে প্রলুদ্ধ করার জন্য যথেস্ট। হয়তো অনেককেই প্রলুদ্ধ করেছে। কে জানে কার কাছে ও ধরা দিয়েছে। নাকি কারো কাছেই ধরা দেয়নি?
তাতিয়ানাঃ কি দেখ?
আমি যদিও ওকেই দেখছিলাম। কিন্তু সেটা বলতে না চেয়ে বললাম,
আমিঃ দেখছি চাঁদটিকে।
তাতিয়ানা পাশ ফিরে তাকালো। সত্যিই জানালার বাইরে রাতের আকাশে এক ফালি চাঁদ দেখা যাচ্ছে। তার নীচে শহরের একাংশ। অসংখ্য বাতির তীব্র বিদ্যুৎ আলো জ্বলজ্বল করছে। সারি করে লাগানো গাছগুলি দাঁড়িয়ে আছে কালো মুর্তির মতো। আর তার সামনে বার্চ বনের প্রণরেনী। একে কি স্বপ্নপূরী আর তার রাজকন্যার সাথে তুলনা করবো?
তাতিয়ানাঃ (কপট অভিমান করে) চাঁদের মধ্যে দেখার কি আছে?
আমিঃ তোমাদের এই শীতপ্রধান দেশে তো সারা বছর চাঁদ দেখা যায়না। বছরের যে কয়মাস চাঁদ দেখা যায় সেই কয়মাস চাঁদটাকে খুব সুন্দর মনে হয়। দুর্লভের প্রতি বাড়তি আকর্ষণ আরকি।
তাতিয়ানাঃ উঁ, তুমি আছো চাঁদের সৌন্দর্য্য নিয়ে!
আমিঃ চাঁদকে ইর্ষা করোনা, ও অবুঝ।
তাতিয়ানাঃ কাব্য করছ? তুমি কি কবিতা লেখো?
আমিঃ লিখতাম একসময়।
তাতিয়ানাঃ (উৎফুল্ল হয়ে বললো)কবিতা লিখতে, বেশ তো! ছেড়ে দিলে কেন?
আমিঃ মনে হলো কিছু হচ্ছে না, নিম্নমান।
তাতিয়ানাঃ তাও লেখা উচিৎ ছিলো। ধীরে ধীরে মান বাড়তো। আচ্ছা আমাকে দেখাবে তোমার কবিতা।
আমিঃ তুমি কিছু বুঝবে নাতো। ওগুলোতো বাংলায় লেখা।
এরপর আমার দিকে হালকা কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
তাতিয়ানাঃ ঐ মেয়েটি কি তোমার বান্ধবী?
আমিঃ কে?
তাতিয়ানাঃ যে মেয়েটি এসেছিলো।
আমিঃ বান্ধবী হলে তো রাতে থেকে যেত, চলে যেত না।
তাতিয়ানাঃ যাহ্, কি যে বলো!
আমিঃ না, জোক করলাম। ও আমার বান্ধবী নয় ক্লাসমেট
তাতিয়ানাঃ তোমার বান্ধবী আছে?
আমিঃ না।
তাতিয়ানাঃ ফাইনাল ইয়ারে পড়ো, এখনো না!
আমিঃ সেরকমই।
তাতিয়ানাঃ নাকি ছিলো, কাট-আপ হয়ে গিয়েছে?
আমিঃ না থাকলে কাট-আপ হবে কোত্থেকে?
তাতিয়ানা আমার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকালো, তারপর চোখ নামিয়ে নিলো, তারপর আবার তাকিয়ে লাজুক কন্ঠে বললো,
তাতিয়ানাঃ বান্ধবী করতে ইচ্ছে হয়না?
আমি ঠিক কি উত্তর দেব বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলাম।
তাতিয়ানা আবার বললো,
তাতিয়ানাঃ ইয়াং ছেলে বান্ধবী না থাকাটাই তো অস্বাভাবিক। (তারপর মুখ ফসকে বলে ফেলা কথাটায় বিব্রত হয়ে আবার বললো) না মানে এটা অবশ্য তোমার ব্যাপার।
আমি ওর সাথে কৌতুক করার জন্য বললাম।
আমিঃ কেউ তো তাকালো না আমার দিকে। তাই বেচারা এত নিঃসঙ্গ।
তাতিয়ানাঃ মনে তো হয়না, কেউ তাকায়নি। খুব সম্ভবতঃ তোমার দেখার চোখ নেই।
আমিঃ হ্যা, চোখে কিছুটা সমস্যা আছে বোধহয়।
তাতিয়ানাঃ ডরমিটরিতে তোমার রেপুটেশন আছে।
আমিঃ (অবাক হয়ে বললাম) কিসের রেপুটেশন?
তাতিয়ানাঃ সবাই বলে, তুমি খুব ভালো ।
আমিঃ ও বাবা এর মধ্যে সবার সাথে কথা বলে ফেলেছ!
তাতিয়ানাঃ (হেসে ফেললো তাতিয়ানা) সবাই না হলেও যে কয়জনার সাথে কথা হয়েছে, তারা তো তোমাকে ভালো বলেছে।
আমিঃ ওদের সাথে আবার আমার সম্পর্কে জানতে চাইলে কেন?
তাতিয়ানা হঠাৎ মাথা নীচু করে ফেললো। মনে হচ্ছিলো ও ঠিক কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছিলো না। আমি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললাম
আমিঃ তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে তাতিয়ানা?
তাতিয়ানাঃ (অনেকটা আক্ষেপের স্বরে বললো) না।
আমিঃ ছিলো বোধহয়, তাই না?
তাতিয়ানাঃ (তাতিয়ানা আরেকটু খেদ টেনে বললো) ছিলো, সে ছিলো। এখন কেউ নেই।
এই মুহুর্তে ওকে আমার দুঃখী মনে হলো। বুঝলাম, তাতিয়ানার মন চিরকালের একজনকে খুঁজে ফিরছে। সেই সন্ধানী মনের তন্বি দেহটিকে কি নিরালায় ছুঁয়ে দেখবো? তাতিয়ানার বয়সটা এত কম, যেন সদ্য ফোটা একটি প্রস্ফুটিত ম্যাগনোলিয়া। হাতদুটো অধীর হয়ে উঠছে। ভাবলাম ওর সর্বাঙ্গে স্পর্শ বুলিয়ে তার তপ্ত মাধুর্য্য সমস্ত দেহমন দিয়ে অনুভব করি।
জানিনা আমার মনের কথা বুঝতে পারলো কিনা তাতিয়ানা।
তাতিয়ানাঃ কিছু বলবে?
আমিঃ তোমার ঘুম পাচ্ছেনা তাতিয়ানা?
তাতিয়ানাঃ তুমি ঘুমাবে?
আমিঃ হু, তুমি চলে গেলেই ঘুমাবো।
তাতিয়ানা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো, মুখের ভাব বলছে, "আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছ!"
অনেকটা আহত ব্যাথিত হয়ে তাতিয়ানা উঠে দাঁড়ালো।
তাতিয়ানাঃ আমি আজ যাই তাহলে?
আমিঃ আচ্ছা, কাল দেখা হবে।
যে ভঙ্গিতে ও দরজার দিকে হেটে গেল, তা বলছে, 'আমার সাজ, পোষাক, প্রসাধন সবই বৃথা গেল।
তাতিয়ানা চলে যাবার পর আমিও কিছু সময় স্থবির বসে রইলাম। আমার জানালা গলে চাঁদের আলোর সাথে সাথে ডরমিটরির কোন রূম থেকে চাইকোভ্স্কীর সুর ভেসে এলো। বিমুর্ত এই সুর আনন্দ, বেদনা, হতাশা যে কোন মুহুর্তকেই অপরূপ করে তোলে। নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গতায় এই সুর যেন এক অদ্ভুত আবেশ সৃষ্টি করে।
(চলবে)
নয়ন ভরা জল গো তোমার, আচল ভরা ফুল,
ফুল নেব না অশ্রু নেব ভেবে হই আকুল।
মালা যখন গেঁথে ছিলে পাওয়ার সাধ যে জাগে,
মোর বিরহে কাঁদো যখন, আরো ভালো লাগে।
২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৫৮
রমিত বলেছেন: বিষণ্ন বিরিওজা - ৬ উপরের লিংকে পাবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৫৭
রমিত বলেছেন: বিষণ্ন বিরিওজা - ৬